#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_৯
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
আজলান র্যাবের সদর দপ্তরে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েছে। বাড়ির সবাইকে বলে গেলেও তিথিকে কিছু বলেনি। গেল যে গেল প্রায় পনের দিন পার হয়ে গেলেও বাড়ি আসার নাম নেই। তিথি তার কাজবাজ নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। শুনেছে সে একটা ট্রেনিংয়ে গিয়েছে। ট্রেনিং শব্দটা শুনলেই তিথি বড়ো খুশি হয়। এতে করে আজলান শেখ বাড়িতে থাকেনা তাই সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে পারে।
বিয়ের পর তার এক মামাতো ভাই বলেছে ” তোর বর ক্রসফায়ারে মানুষ মারে। ”
তা শুনে তিথি অবাক হয়নি। জাঁদরেল লোকটাকে দেখলেই তার জান্তবের মতো লাগে। এতদিনে তাকে মারেনি এই বেশি। কিন্তু একদিন ঘরে ব্রাওনিং এম সেমি অটোমেটিক পিস্তল আবিষ্কার পরার তিথি যেন নিজের মধ্যে ছিল না। কি ভয়ানক জিনিসপত্র ঘরে রাখে লোকটা। আজলান দেখামাত্রই কেড়ে নিয়েছিলো। তিথি আর একটা শব্দও করেনি। তাকে চুপসে যেতে দেখে আজলান কোণা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো।
“এটা খায় না, মাথায় দেয়? ” এই প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করেনি সেটাই আজলানকে ভাবাচ্ছিলো তখন।
তিথির মাতৃকালীন সময় ছ’মাস। পেট সামান্য উঁচু হয়েছে। এখন হাঁটতে চলতে একটু অসুবিধা হয়। তবুও সে হাঁটে, ক্ষেত্রবিশেষে দৌড়ায়ও। আম্বিয়া বেগমের যত্নআত্তির এখন একটু বেড়েছে। আতিফা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে। আয়জার বিবাহের প্রস্তাব আসছে কয়েকদিন পরপর। বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় আছে সবাই তাই আর কোনোদিকে মনোযোগ দিচ্ছে না।
আজলান ট্রেনিংয়ে গিয়েছে শুনে হঠাৎ করে একদিন মফিজুর রহমান নিজে এসে হাজির হলেন শেখ বাড়িতে। তিথি তো মহাখুশি। ফাটাকেষ্ঠটা না থাকলে একের পর খুশিতে মেতে থাকে সে।
মেয়েকে দেখে মফিজুর রহমান আবেগী হয়ে পড়লেন। তিথির স্বাস্থ্য বেড়েছে আগের চাইতে, গায়ের রঙটা খুলে গিয়েছে, হাত পা হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। মা মা একটা ভাব চলে এসেছে তারমধ্যে । পরনে ছাইরঙা ম্যাক্সিটাতে তাকে কি সুন্দর মানিয়েছে। মেয়েটা যত্নে আছে দেখে উনার মন জুড়িয়ে গেল।
মেয়ের শ্বশুরবাড়ির মানুষ একটু ঠাটবাট বজায় রেখে চলেন এটা তিনি জানেন। যেহেতু মেয়েকে বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছেন সেহেতু আসার সময় একটু সংকোচে ভুগেন। জামাইটা ঘাড়ত্যাড়া গাদ্দার বলে উনার দুঃখ হয় নইলে মেয়েটা ঠিক জায়গায় গিয়ে পড়েছে।
কিছুদিন আগে সংসারটা একেবারে ভেঙে যাচ্ছিলো। মেয়েটাকে পাঠিয়েই দিয়েছিলো শ্বাশুড়ি। ফোনে বললো, “আদবকায়দা শিখিয়ে তারপর বিয়ে দিতে পারেননাই মেয়েকে? ” মফিজুর রহমান বড়ো দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তখন। বাচ্চা আসার খবর শুনে তাও একটু দমেছে সবাই। মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।
কিন্তু তার তিন মাসের মধ্যে মেয়ে নিজেই কেঁদেকেটে চলে এল। জানালো, তার বর তাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
কারণ জানতে চাইলে বললো,
” বাবা ওই আমি শুধু বলেছি আমার কলেজের একটা বান্ধবী খুঁতখু্ঁতে, ভীষণ পরিষ্কার, নাক সিটকানো টাইপ। ডেপুটি অফিসারের সাথে একদম মিল আছে।
ওর গায়ের রঙও এক্কেবারে লাল টকটকে, আমার মতো কালোনি নয়। থুঁতনির নীচে একটা তিল আছে। গালে দুটো বড় বড় টোল পড়ে। এক্কেবারে নায়িকাদের মতো দেখতে। মানে তোমার জামাইয়ের মনের মতো মেয়ে যাকে বলে। বললাম, আমাকে ছেড়েটেড়ে দিলে সমস্যা নেই। আমি কিছু বলব না। কিন্তু বিয়েশাদী করলে বলো। ওই মেয়ের সাথে তোমার একেবারে সবকিছুতে মিলে যাবে। ওর সাথে তোমার হাত করিয়ে দেব। ওর দাঁতগুলো এক্কেবারে সাদা ঝকঝকে, ব্রাশ না করলেও চলবে। চুলে শ্যাম্পু না দিলেও খুশবু থাকে, কাপড় চোপড়ে ধূলোময়লা লাগতে দেয়না, যে রঙের কাপড় পড়ে সেই রঙেই তাকে মানায়, তোমার মতো সেকেন্ডে সেকেন্ড হাত ধোয়। আরও কিছু কথা বলেছি যেগুলো তোমাকে বলতে পারছিনা।
আরেহ! কথাটা বলে শেষ করে উঠতে পারিনি। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। একেবারে বাড়ি থেকে। ভাবো একবার, ভুল কি বলেছি আমি! এমন লোকের সাথে কি সংসার করা যায়? ঠাট্টা মশকরা না বুঝলে সেইসব নিরামিষ মানুষের সাথে ঘর সংসার করা যায়? তুমি বলো আমার দোষ কোথায়? ”
মফিজ সাহেব রেগেমেগে বললেন, ” গোলামের পুত এক বাড়ি গাড়ি জুড়ায়ছে শুধু সেসবের কারেন্ট দেখায়। ওর কারেন্টের খেতাপুরি। ”
তিথি বললো, ” শুধু কারেন্ট দেখায় না। তেলে যেন পানি পড়ছে ওইভাবে ছ্যাত ছ্যাত করে উঠে আমি কোনো কথা বললে। আসলে বাবা সত্যি কথা কি জানো? আমার কথাগুলো একদম ঠিক জায়গায় গিয়ে লাগে। তাই ওমন করে। ”
মফিজুর রহমান মেয়ের কোনো ভুল দেখতে পাননি। মেয়েটা একটু কথাবার্তা বেশি বলে। বয়সই বা কত যে গুছিয়ে কথা বলতে পারবে। অতবড় দামড়াটা যদি একটা বউ সামলাতে না পারে, এটুকুনি মেয়েটার কথায় রেগেমেগে আগুন হয়ে যায় সেখানে আর কি বলার থাকতে পারে? তবে মালেকা বেগম মেয়েকে বেশ শাঁসিয়েছেন। ওই মহিলা মেয়ে জামাইয়ের অন্ধভক্ত। ওই দামড়াটা যা বলবে সেই মহিলা তাতেই মাথা নাড়বে।
মফিজ সাহেব অমন মেরুদন্ডহীন না। শ্বশুর জামাইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক বজায় থাকার জন্য উনি মানসম্মানের কথা ভেবে ফোনে কিংবা সামনাসামনি কিছু বলতে দ্বিধা করলেও মেয়েকে বারংবার সাহস দেন। বলেন,
” ওই দামড়ার কথা গায়ে মাখলে চলবে না। ওই গোলামের পুতের গায়ের চামড়া মোটা, ঘাড়ের রগ ত্যাড়া তাই এমন করে। ”
সেসব কথা কাটাকাটি, দুশ্চিন্তা তো গেল। ডিভোর্সের কথা পর্যন্ত উঠে এল। বাচ্চার এবোরশনের কথা পর্যন্ত উঠলো।
আবার কি মনে করে দামড়াটা হঠাৎ সেদিন বাড়ি বয়ে এসে মেয়েটাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল তার কারণটা আজও জানতে পারলেন না মফিজ সাহেব। অবশ্য তারপর আর কোনো বিচার দেয়নি মেয়ে। বাচ্চার কথা ভেবে হয়ত দামড়াটা শোধরে গেছে।
কিন্তু অত শোধরালো কই? মেয়েটার উপর অত্যাচার আর অপমান করা কমিয়েছে কিন্তু দামড়াটার ঘাড়ত্যাড়ামি কমেনি।
এইতো ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে বাজারে হঠাৎ দেখা হলো শ্বশুর জামাইয়ের। মুখে মাক্স পড়েছিলো তবুও মফিজ সাহেব তাকে চিনে ফেললো। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই তাকে বললো, ” ওদিকে পঁচা মাছ বিক্রি করে। ওদিকে কি করছিলেন? দেখি কি কিনেছেন? ”
মফিজ সাহেব থলে খুলে দেখালো। তিনি লইট্টা মাছ কিনেছেন দুই কেজি। একটু নরম হয়েছে কিন্তু খাওয়া যাবে। উনার অল্প রোজগারের টাকায় সংসারটা চলে। সেখানে বড়বড় রুই কাতলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সেজন্য মেয়েটাকেও এই অবস্থায় নাইওর আনতে পারছে না ভালোমন্দ খাওয়াতে পারবেন না বলে।
লজ্জা শরম পাশে রেখে মাছগুলো দেখিয়ে ফোকলা হেসে বললেন, ” তোমার শ্বাশুড়ি বড়ো পছন্দ করে লইট্টা মাছ। ”
আজলান জিজ্ঞেস করলো, ” এগুলো মনে হয় ফ্রেশ লইট্টাগুলো না। দেখি দেখি পলিথিনটা খুলুন। ”
মফিজ সাহেব পলিথিন খুলতেই আজলান বললো,
” ফ্রেশ লইট্টা চেনার উপায় হচ্ছে এরা লাল রঙের হবে। যেগুলোতে অলরেডি পচন ধরেছে সেগুলো ধূসর রঙের হয়ে যাবে গন্ধও ব্যাপক। মাছের গা নরম হয়ে আসবে। আপনার চশমার পাওয়া কমেছে নাকি নাসারন্ধ্রে কোনো সমস্যা? ”
মফিজুর রহমান চুপ করে রইলেন। দামড়াটা ভরা বাজারের মধ্যে ইজ্জৎ সম্মান রাখবে কিনা কে জানে! মাছগুলো নিয়ে মাছওয়ালাকে ফেরত দিয়ে বলল,
” এসব মাছ পঁচে গেছে। বয়স্ক মানুষ পেয়েছিস বলে ধরিয়ে দিয়েছিস নাকি? ”
মাছওয়ালা বললো,
” সবাই কিনতেছে বদ্দা। আপনি কিনলে কিনেন না কিনলে অন্য মাছ কিনেন। হাঁটের দিনে ঝামেলা করিয়েন না। ”
আজলান বলল, ” ফরমালিন দেয়ার পরও টাইম ওভার হওয়ায় সেগুলোতে পচন ধরেছে। তারপরও সেগুলো বেঁচছিস। আবার গলাও পাকাচ্ছিস! ”
মাছ বিক্রেতা বললো, ” জোর করে তো বেঁচতেছিনা। ”
আজলান বলল, ” সস্তায়ও তো বেঁচছিস না। ওই দোকানে যত দিয়ে বেঁচছে তুইও সেই দামে বেঁচছিস। তাহলো তফাত রইলো কোথায়? ”
দোকানদার অন্য ক্রেতার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেল। আজলান মাছগুলো ঢেলে দিয়ে বলল,
” ভালো থেকে মাছ দে। নয়ত টাকা ফেরত দে। ”
মাছ বিক্রেতা এবার রেগে গিয়ে বলল,
” ওই মিয়া অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করতেছি। আপনে পাইছেনটা কি? কম টাকার মাছ কিনে আবার বাহাদুরি। সমস্যা কি অ্যাহ? ”
বলতে না বলতেই লোকটা একেবারে অভদ্রের মতো চেঁচিয়ে মানুষ জড়ো করে ফেললো। মফিজুর রহমান বিপাকে পড়ে গেলেন। বললেন,
” ওরেহ রাগিস না। ও আমার মেয়ে জামাই। আইনের মানুষ। কথা বাড়াস না ভাই। অযথা ঝামেলা বাড়বো। ”
মাছ বিক্রেতা ঝিমিয়ে গেল। সেখানে আশেপাশে বাজার পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। তিনি এসে আজলানকে দেখে বললেন,
” আপনাকে চিনতে পারেনি তাই ভুল করছে। এমন আর কখনো হবে না। ওই স্যারের কাছে মাফ চা। ”
মাছ বিক্রেতা চুপসে গেল। মাথা নত করে রইলো।
আজলান বলল, ” ওসব নাটকের দরকার নেই। কথাটা ভালো করে শোন। এখানে যত পঁচা মাছ আছে সব ভাগাড়ে ফেলবি। সব এখান থেকে সরা। ভালো মাছগুলো সামনে রাখ। এই যাদের যাদের পঁচা মাছ আছে সবাই ওর মতো ভাগাড়ে ফেল পঁচা মাছগুলো। ”
একটা ছোটখাটো ভীড় জমে গেল সেখানটাতে।
ঝামেলা কমে যেতেই শেষমেশ কি কি যেন কিনে দিয়ে থলেটা উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দামড়াটা বলল,
” সোজা বাড়ি যান। আপনারা বাপ মেয়ের কারণে আমার মাথা নষ্ট হবেই। যেখানে যায় সেখানে একটা না একটা ঝামেলা না হয়ে শান্তি নেই। ”
মফিজ সাহেব থলেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আজলান ভুরু কুঁচকে বললো, ” কোনো সমস্যা? ”
মফিজ সাহেব সাহস করে মৃদুস্বরে বললেন,
” বলছিলাম কি বাবা। ওর মা বলেছে একটু ওকে নিয়ে যদি তুমি বাড়ি আসো। আসলে মায়ের মন তো। এইসময় মেয়েকে একটু কাছে রাখতে চায়। ”
আজলান সরাসরি মুখের উপর বলে দিল।
” অসম্ভব। ওর ট্রিটমেন্ট চলছে। ওর পেছনে গাধার খাটুনি খাটছে আমার মা বোন মিলে। এইসময় ওখানে যাওয়া মানেই রুটিনের হেরফের হওয়া। ওসব বাজে আবদার করে লাভ নেই। যান বাড়ি যান। মেয়ের জন্য অত দরদ থাকলে গিয়ে দেখে আসবেন। ”
মফিজ সাহেব ভীষণ রেগে গেলেন। মনে মনে বললেন, ” শালা তোরে যদি আমি কোনোদিন ফাঁদে ফেলতে না পারি আমার নামও মফিজুর রহমান নয়। তোর ঘাড়ত্যাড়ামি আমি চুটিয়ে ছাড়বো। ”
বাড়ি ফিরে মালেকা বেগমকে সব বলতেই উনি গর্বের সাথে বললেন, ” ভাবা যায় আমাদের জামাই কতবড় গুর্দাওয়ালা মানুষ! ”
মফিজ সাহেব বললেন, ” গুর্দাওয়ালা না গাদ্দার ব্যাটালোক। সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে ফেলেছে এক চিল্লানি দিয়ে। আমার মেয়ে ঠিকই বলে সকাল বিকাল নিয়ম করে ওর চিল্লানি শুনলে হার্টের রোগী হতে বেশি সময় লাগবে না। ”
মালেকা বেগম থলে থেকে বড় একটা কাতলা মাছ, তাজা লইট্টা মাছের পলিথিন, সাথে টমেটো, কাঁচা মরিচ, আর শাকসবজি বের করতে করতে বললেন,
” যাই বলো আমার জামাই কিন্তু লক্ষীটি। আজ বাজার থলেটা ভরে গেল তার ভাগ্যে। ”
___
বাবাকে পেয়ে তিথি যেমন খুশি হলো তেমন রাগ দেখালো কেন এতদিন একবারও তাকে আসেনি। মাকে কেন আনেনি। তার ভাইটাও কেন আসেনি। মফিজ সাহেব বললেন,
” তোর বর তো নেই। আজ যাবি? কয়েকদিন থেকে চলে আসবি আর কি। তোর শ্বাশুড়িকে আমি বুঝিয়ে বলি। ”
তিথি খুশি হয়ে গেল। বলল, ” আমার শ্বশুরআব্বাকে বললে হয়ে যাবে কিন্তু ওই লোক না শুনেমতো। শুনলে দেখবে উড়ে উড়ে চলে এসেছে আমাকে জব্দ করতে। ”
মফিজ সাহেব অনেক অনুরোধের পর আম্বিয়া বেগম রাজী হলেন। আফতাব শেখও অনুমতি দিল। আয়জা বলল,
” ভাইয়ার সাথে বাবা কথা বলবে। তুমি চিন্তা করো না ভাবি। কিন্তু সাবধানে থেকো। হ্যা? নইলে আমাদেরও রক্ষে থাকবে না। ”
তিথি মনে মনে বললো, ” আমি একবার শুধু বাড়িতে যাই তারপর নিজে ফোন করে জানিয়ে দেব ফাটাকেষ্ঠকে। চিল্লাক সেখানে বসে। ”
_______________
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে ১২টি হত্যাসহ ৮টি মামলার দায়ে আসামী হান্নানকে ক্রসফায়ারে মৃত্যু মৃত্যু দেয়ার আদেশ কার্যকর হয় গতরাত বারোটার দিকে। তন্মধ্যে শুটারের একজন ডেপুটি কমান্ডার আজলান শেখও ছিল।
অভিযান শেষ হওয়ার পর বেলা তিনটের দিকে সে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলো।
তিথি তখন সেজেগুজে ঠোঁটে লালরঙা লিপস্টিক মেখে, মুখে প্রাইমার, কনসিলার, ফাউন্ডেশন লাগিয়ে লুস পাউডার দিয়ে ঘষেমেজে গালের দুপাশে ব্লাশ লাগিয়ে, তারউপর হাইলাইটার দিয়ে সেজেগুজে বসে আছে। আয়নায় বারবার নিজেকে দেখে লাল হচ্ছিলো সে। ফাটাকেষ্ঠর সাথে থাকতে থাকতে সে সুন্দর, স্মার্ট হয়েছে তা বলতে বাকি রাখে না। নিজের মুখটা চকচক করছিলো দেখে লজ্জা পাচ্ছিলো সে। এবার সে বুঝতে পারলো এতদিন সে অসুন্দর ছিল না, গরিব ছিল।
খুশিমনে নীচে নেমে এসে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সালাম করে, আয়জা আর রমলা চাচীর সাথে গলাগলি করে হেসেখেলে বাবার সাথে বেরোনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সে। বোরকাটা সবেমাত্র হাতে নিয়েছে তক্ষুণি সদর দরজা পার হয়ে মঈন ঢুকে এল স্যুটকেস হাতে। মঈনের পিছুপিছু গটগট পায়ে হেঁটে বাড়িতে আজলান শেখ ঢুকলো ব্ল্যাক ইউনিফর্মে। জার্নি করায় ক্লান্ত তারপরও কেমন তেজ, হাঁটার ধরন আর চোখের নিস্তেজ চাহনির ধার! তিথিকে আঁড়চোখে দেখে হাঁটতে হাঁটতে আম্বিয়া বেগমের কথার জবাব দিল।
” ওমা না জানিয়ে এলি যে? ”
” বলে এলে এত সুন্দর একটা নাটক মিস করে যেতাম। মেহবুব ঘরে এসো। কুইক। ”
তিথির কান্না আটকে রইলো গলার কাছে।
চলমান….