আমার ওজন যখন ৭০ কেজি,ঠিক সেই সময় আমার পাগড়ী পরা বরের ওজন আমার থেকেও ১০ কেজি কম।
মানে তখন তার ওজন ৬০ কেজি।
স্টেজে আমাদের দুজনকে দেখে নানান মানুষের কটু কথা।
টম এন্ড জেরি কাপল,হাতি এবং মশা।
আরো নানান কথা।
যখন শুভ্র বিয়ে করে আমাকে ওদের বাড়ীতে নিয়ে এলো,তখন আরো কথা শুনতে হলো।
কি সুন্দর ছেলেটা কি একটা মেয়ে বিয়ে করে এনেছে।
আমি চুপচাপ মুখ বন্ধ করে শুনেছি এগুলো।
বাসর ঘরে শুভ্রকে আমি কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
কেন আপনি আমার মত একটা মোটা মেয়েকে বিয়ে করতে গেলেন?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,
আমার চোখে যে তুমিই সব থেকে সুন্দর।
বিয়ের দু দিন পর যখন শুভ্র আমাকে কলেজে নিয়ে যায়,
সেদিন আমার বান্ধবীরা আমার আড়ালে হাসতে হাসতে বলে,
মা আর ছেলে যায় দেখ।
আর কিছু ছেলেরা তো কত আজেবাজে কমেন্ট করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বিয়ের ৬ মাসের মাথায় আমার ওজন বেড়ে গেলো আরো ৫ কেজি।
মানে আমার ওজন এখন ৭৫ কেজি আর শুভ্রের সেই আগের ৬০.
বাসা থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দিলাম লজ্জায়।
শুভ্রর বন্ধুরাও আজেবাজে কথা বলতো।
এলাকার মানুষ জনও যা মুখে আসতো বলতো।
শুভ্র শেষমেস একটা হাতি বিয়ে করলো।
শুভ্র আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইতো।
আমি যেতে চাইতাম না লজ্জায়।
এই সাস্থ আমার জীবন টাকেই বিষিয়ে দিয়েছে।
অথচ বাবা মায়ের কাছে তাদের এই মোটা মেয়েটাই ছিলো কত না আদরের।
যদিও বান্ধবীরা মাঝেমধ্যেই টিটকারি দিয়ে অনেক কথাই বলতো।
কিন্তু আমি গায়ে মাখতাম না।
মনে মনে ভাবতাম,আমার সাস্থ্য আল্লাহ্ তায়ালা দিয়েছেন।
আমাকে এমন আমার আল্লাহ্ বানিয়েছেন।
আমি কেন মন খারাপ করবো কারো কথায়।
কিন্তু বিয়ের পর যে এই স্বাস্থ্যই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে আমি তা ভাবতেও পারিনি।
দেখতে দেখতে বিয়ের দুই বছর কেটে গেলো।
আমার ভাড়ি স্বাস্থ্য নিয়ে আমার বরের কোন আক্ষেপ নেই।
তার কাছে আমি সব অবস্থাতেই সুন্দর।
কিন্তু সমস্যা হলো তখনই আমরা যখন বাচ্চার জন্য ট্রাই করলাম।
ডাক্তার দেখালাম,দুজনের সব টেস্ট করালাম।কারো কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু বেবী কনসিভ হয়না।
আর শুরু হলো আশেপাশের মানুষের,নানান কথা।
মোটা বলে নাকি আমার বেবী আসেনা।
অনেকটা পাগলের মত হয়ে যেতে লাগলাম সবার কথায়।
বাসার সব কাজ করতাম আমি একা একা।
শাশুড়ি আমার বিয়ের পর থেকে একটা মরিচের বোটাও বেছে খেতোনা।
সব করতাম একা একা।
সারাদিন কাজ করেও শরীর থেকে এক কেজিও কমতোনা।
ডাক্তার বল্লো,মোটা শরীরেও মানুষ বেবী কনসিভ করে।
তবুও যেহেতু আপনাদের কোন সমস্যা নেই।কোন সমস্যা ধরা পড়ছেনা সেহেতু চেষ্টা করুন একটু ওজন কমানোর।
হয়তো ওজন কমলে বেবী কন্সিভ হবে।
এদিকে শুভ্রের বন্ধু বান্ধব,ভাই বোন সবাই বাবা মা হয়ে যাচ্ছে।
বিয়ের চলে সাড়ে তিন বছর।
দেড় বছর ট্রাই করে কোন রেজাল্ট পাচ্ছিনা।
প্রতিবেশীদের কাছেই যেন আমি বোঝা হয়ে যাচ্ছি।
আমার বাচ্চা হচ্ছেনা,কিসের মূল্য আমার।
আর শাশুড়ি তো আছেই।
বিয়ের চার বছর শেষ।
এখন শুভ্রও যেন অনেকটা কেমন হয়ে যাচ্ছে।
ঠিক মত কথা বলেনা,
অফিস থেকে এসেই খাওয়াদাওয়া করে মোবাইল টিপতে টিপতে ঘুমায়।
আমাকে সময়ও দেয়না।
আমি কিছু বললেই রেগে কথা বলে।
আমি বুঝতে পারি কেন ও আমার সাথে এখন এমন করে।
তাই ভেবে চিন্তে,শুভ্রকে এক রাতে বললাম।
_আপনাকে একটা কথা বলবো?
_কি বলবে বলো!
_আপনি না সুন্দর দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করেন।স্লিম একটা মেয়েকে বিয়ে করেন।
যার সাথে আপনাকে মানাবে।
_তুমি বলছো?
_হ্যাঁ আমি আপনাকে অনুমতি দিলাম।
শাশুড়ি আমার কথা দরজার আড়াল থেকে শুনেই তার বড় বোনকে ফোন দিলো,
আপা,শুভ্রর জন্য সুন্দর একটা মেয়ে দেখো।
এই মুটিকে আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিবো।
চলবে..
#একজন_মোটা_মেয়ের_আত্মকাহিনী
#শতবর্ষী_আনবার
#১ম_পর্ব