#একজন_মোটা_মেয়ের_আত্মকাহিনী
#শতবর্ষী_আনবার
#২য়_এবং_শেষ
আপা,শুভ্রর জন্য সুন্দর একটা মেয়ে দেখো।
এই মুটিকে আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিবো।
আমি ভেবেছি এতে শুভ্র অনেক টা খুশিই হবে।
কিন্তু শুভ্র আমাকে অবাক করে দিয়ে দিলো এক ঝাড়ি,
_বিয়ে করবো,না?স্লিম বউ আনবো?আমার কাছে আমার মুটি বউ ই ভালো।আমার দরকার নেই কোন স্লিম বউ এর।
এই শরীর দেখে বিয়ে করেছিলাম না?
তাহলে এখন সমস্যা হবে কেন?
_তাহলে যে আপনি আমাকে এভয়েড করে চলেন।আগের মত ভালবাসেন না।
আমার কেয়ার করেননা।
_শোনো,আমিও একজন মানুষ তো নাকি?একজন মানুষকে যদি সবাই দুমড়ে মুচড়ে আজেবাজে কথা বলে তখন মন খারাপ থাকার কথা নয় কি?
আর তাছাড়া অফিসের কত বড় দায়িত্বও তো আমার উপর।
সারাদিন অফিস করে এসেও ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
তুমিও তো পারো আমার সামনে একটু সেজে গুঁজে আসতে।
পারো আমার মন ভালো করতে।কিন্তু না,তুমিও ভেতর থেকে ভেঙেচুড়ে বসে আছো।
পাগলী মেয়ে,ভালবাসিতো।
ছেড়ে দিতে হাত টা ধরিনি।
আমি শুভ্রর কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বল্লাম,আমাদের সন্তান হয়না বলে মন খারাপ হয় আপনার তাইনা?
_তা একটু হয়।তবে সন্তান তো আল্লাহ্র দান।আল্লাহ্ যেদিন চাইবেন সেদিনই তো দিবেন।
এতে নিজেকে দোষী ভেবোনা,কেমন?
সেদিন শুভ্রর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমি যেন নতুন জীবন পেলাম।
আর সেদিন থেকে মনে মনে শপথ করলাম।
যেই মানুষ টা আমাকে এত ভালবাসে,যেই মানুষ টার আমার এই শরীর নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
তার জন্য আমি নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে পারবোনা?
অবশ্যই পারবো।
চেষ্টা তো করে দেখি,
পারি কি না পারি সেটা পরের কথা।
সবাই ভাবছে আমার স্বাস্থ্যর জন্য বেবী কনসিভ হচ্ছেনা।
তাহলে না হয় একটু স্বাস্থ্যটা কমিয়ে দেখি,যদি পারি স্লিম হতে।
অন্তত আমার মনের বোঝা টা তো হালকা হবে।
আমার তো আর মনে কোন সংশয় থাকবেনা যে আমার এই মোটা শরীরের জন্য বাচ্চা হচ্ছেনা।
পরের দিন থেকে আমি ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে কিছু ডায়েট চার্ট ফলো করলাম।
আর কিছু ব্যায়াম দেখে নিলাম।
আর শুরু করে দিলাম এগুলো মেইন্টেন করে চলা।
এক মাস ডায়েট করলাম।কিন্তু কিছুই বুঝলাম না পরিবর্তন।
কিন্তু দুই মাস হতেই আমার গায়ের জামা গুলো ঢিলেঢালা হতে শুরু করলো।
অনেকে বলতে লাগলো আমি নাকি শুকিয়েছি।
কিন্তু কেন যেন নিজের কাছে তা মনে হচ্ছিলোনা।
তিন মাস ডায়েট +ব্যায়াম করার পর আমি আমার ওজন মাপি।
আর ওজন দেখে নিজেই নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,
আমার ওজন ৭৫ থেকে এক লাফে ৬৬ তে চলে এসেছে।
নিজের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেলো।
আমি দেখতে আগে যেমন সুন্দরি ছিলাম।তার থেকে বেশি সুন্দরি হয়ে গেলাম।
মোটার কারণে এত দিন আমাকে যতটা না সুন্দর লাগতো,মিডিয়াম স্বাস্থ্য হওয়াতে আমাকে তার থেকেও তিন গুণ সুন্দরি লাগে এখন।
শুভ্রও আমার পরিবর্তন দেখে অবাক।
সাথে আমার শাশুড়ি এবং আশেপাশের মানুষ জনও।
ওই দিকে আমার বর এবার হঠাৎ করেই মোটা হতে লাগলো।
আমি আরো দেড় দুই মাস ডায়েট এবং ব্যায়াম ফলো করে কমালাম ছয় কেজি।
আমি আসলাম,৬০ কেজিতে।
আর আমার বর হলো ৬৫ কেজি।
এখন আমাদের পার্ফেক্ট জুটি লাগে।
দুজনকে খুবই সুন্দর লাগে এক সাথে।
শুভ্র আমাকে বল্লো আমি যেন আর ডায়েট না করি।
৬০ এ ই আমি অনেক সুন্দর আর পার্ফেক্ট।
ওহ বলাতো হয়নি,
যখন আমি ডায়েট শুরু করি তখন প্রথম দিকে আমার খুব কষ্ট হতো।
শুভ্র আমাকে ডায়েট করতে দিতে চাইতোনা।
বলতো,হতে হবেনা স্লিম।করতে হবেনা এত কষ্ট।ও রাগ করতো।
কিন্তু আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে গেছি।
এখনো ৬০ এ আসার পর,ও আমাকে না করে যাচ্ছে।
কিন্তু আমার ইচ্ছে আমি ৫০-৫৫ তে আসবো।
আর আমার হাইট অনুযায়ী এটাই ঠিক।
কিন্তু শুভ্রর সাথে সাথে আল্লাহ্ও বোধয় চাননি আমি আর ডায়েট করি।
তাই তো ডায়েটের ছয় মাসের মাথায় ই আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সুখবর দেন।
আমার গর্ভে দান করেন শুভ্র আর আমার সন্তান।
এ কয় মাস ডায়েট এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি আল্লাহ্র কাছে কান্নাকাটি করে একটা সন্তান ভিক্ষা চেয়েছি।
নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করেছি।
বাচ্চার জন্য ৭ টা রোজা রেখেছি।
আর অবশেষে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।
প্রেগন্যান্সি কিটে দুটো লাল বর্ণের রেখা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
তাইতো শুভ্রকে কাঁদতে কাঁদতে ডেকে বললাম,দেখোতো এখানে দুটো দাগ ই না?দুটো দাগ ই উঠেছে না?
শুভ্র ঘুম ঘুম চোখে কিট টা দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো।
আর বল্লো,খুব সাবধানে থাকবে আজ থেকে।
আমরা মা বাবা হতে যাচ্ছি।
ওর মা এবং আমার আম্মুকে সু খবর টা ও নিজেই দিলো।
আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালাম।আমি মা হতে চলেছি।আর শুভ্র বাবা।
আর তাই আমি ওই ৬০ এই আটকে গেলাম।
অফ করে দিলাম সকল ডায়েট+ব্যায়াম।
চালিয়ে যাচ্ছি আল্লাহ্র ইবাদত।
আসলে মানুষ চাইলে সবই করতে পারে।
শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য্য আর চেষ্টা।
আর অবশ্যই আল্লাহ্র রহমত।
ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান।
ইনশাআল্লাহ আপনি আপনার লক্ষ্যে একদিন পৌছাবেনই।
আমি পেরেছি।আপনি কেন পারবেন না?
আলহামদুলিল্লাহ্ আমি এবং শুভ্র খুব খুব ভালো আছি।
আর অপেক্ষার প্রহর গুণছি,কবে আমাদের সন্তানকে আমরা কোলে নিবো।
সবাই আমাদের অনাগত সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।
(এক আপুর বাস্তব জীবনী)
সমাপ্ত