#একঝাঁক_জোনাকি
#পর্ব |০৫| (বোনাস)
#ইশরাত_জাহান_অধরা
দরজা নক করতেই তিথি এসে দরজা খুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বাবার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো।অনিমার বাবা সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো।
অনিমা একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাবার জন্য পা বারাতেই পিছন থেকে অনিমার বাবা বলল,
– “সারাদিন কোথায় ছিলে?”
পিছন থেকে তিথির মা বলল,
– “কই আর থাকবে?নিহানের সাথেই ছিল!আমার মেয়েটার বিয়ে ভেংগে এখন অই ছেলের সাথেই ঘুরা হচ্ছে।কত্তবড় ফাজিল মেয়ে!”
-“আহ!তুমি চুপ থাকবে?আমি অনিমাকে জিজ্ঞেস করেছি। তোমাকে নয়।অনিমার উত্তর অনিমাই দিবে।তুমি কেন দিচ্ছো?ওর কি মুখ নেই?”
অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হলো বলছিস না কেন?তোর মা যা বলছে তা কি সত্যি?তিথির জন্য যে ছেলে দেখা হয়েছিল তার সাথে সারাদিন ছিলি?”
অনিমা মাথা নিচু করে বলল,
“আম্মু তো বলেই দিয়েছে।আমার বলার কি দরকার?”
অনিমার বাবা রাগে হাতে থাকা কাপটা স্বজোরে আছাড় মারলেন।কাপের হালকা ভাংগা অংশ ছিটকে অনিমার গালে গিয়ে লাগলো।চোখের একটু নিচে কেঁটে গেছে।রক্ত বের হচ্ছে।
“তোর এত বড় অধঃপতন হয়েছে?ছোটবোনের জন্য দেখা ছেলেকে হাত করে নিয়েছিস?লজ্জা নেই তোর?”
-“আমি হাত করে নিই নি।উনি নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছেন!”
-অই ছেলে তোকে বিয়ের কথা বলল আর তুই রাজি হয়ে গেলি?কেন হলি?”
-“আমি রাজি হয়েছি তোমাকে কে বলেছে?”
-“তাহলে তোর হাতে এগুলা কি?”
দরজার সামনে থেকে নিহান এসে বলল,
-“আমি ওকে দিয়েছি অইগুলা।”
-“তুমি?”
অনিমা দরজার দিকে তাকাতেই দেখল নিহান দাঁড়িয়ে আছে।অনিমার গালের ক্ষতটা নিহানের চোখে পরল সবার আগে।তিথি বলল,
“উনিই আমাকে দেখতে এসেছিলেন।এখন আপুকে বিয়ে করতে চাইছে।আর আপুও নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেছে।”
নিহান হেসে বলল,
-“কেমন বাবা আপনি?আপনার আদৌও বাবা হবার কোন যোগ্যতা আছে?আমার তো মনে হয় না আছে বলে?অন্যের কথা শুনে নিজের আপন, রক্তের মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আপনার একটুও বিবেকে বাধলো না?অনিমা রাজি হয়েছে কিনা সেটা না জেনেই কত্তগুলা কথা শুনিয়ে দিলেন মেয়েটাকে!তিথি আর ওর মা নাহয় ওর আপন, রক্তের না!কিন্তু আপনি?আপনি তো ওর বাবা।আপনি কি করে…..”
-“আমাকে জ্ঞান দিতে আসবে না একদম!আমি আমার মেয়ের সাথে কিরকম আচরন করব সেটা কি তোমার থেকে আমার শিখা লাগবে?”
-“আমি সে কথা বলিনি!আমি বলেছি কারোর কাছ থেকে কোন কিছু শোনার আগে বাচাই করে নেওয়া লাগে সেটা আদৌও সত্য কিনা!আপনি তা করেন নি।অনিমাকে আমি জোর করে নিয়ে গিয়েছি শপিং এ।সত্যি কথা বলতে শপিং এ নিয়ে যাওয়া আমার কোন উদ্দেশ্যই ছিলো না।কিন্তু অনিমা না খাওয়া ছিল।মেয়েটার শুকনো মুখ সহ্য করতে পারিনি।তাই শপিং এর নাম করে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম।যেটা করা উচিত ছিল আপনার।সেটা আমাকে করতে হয়েছে।একটা মেয়ে যদি নিজের বাসাতে সামান্য খাবারটুকু না খেতে পারে,তাকে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা হয়, বাজে কথা শুনানো হয় সেই মেয়েটার যে মানসিক ভাবে অসুস্ত হতে যে সময় লাগবে না তা কি আপনি জানেন?নাহ,আমি আমার হবু স্ত্রীকে এই পরিবেশে রাখতে পারব না।যেখানে ওকে পদে পদে অপমান করা হয় এরকম পরিবেশে ওর থাকা উচিতও না!আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই!আপনারা অনুমতি দিলেও আর না দিলেও।”
তিথির মা বলল,
-“এসব কি বলছ বাবা?তোমার সাথে ও থাকবে মানে?”
-“আমি আমার হবু স্ত্রীকে এরকম একটা পরিবেশে রাখতে পারিনা!মিস অনিমা, আপনি রেডি হয়ে আসুন।এক্ষুনি।”
অনিমার বাবা একটু এগিয়ে বলল,
-“তুমি আমার সামনে আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব?সেটা তুমি ভাবলে কি করে?”
-“ভাবিনি তো!আমি উনাকে নিয়ে যাবো।দেখুন সারাজীবন তো নিজের মেয়ের প্রতি বাবা হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা লাগে সেই দায়িত্বটাকে আপনি অবহেলা করেছেন,নিজের মেয়েকে আশ্রিতার মতো করে রেখেছেন।এখন অন্তত অনিমার ভালো কথা ভেবে হলেও আশা করি আপনি বাধা দিবেন না আমাকে।এখানে থাকলে অনিমার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।সাথে ওর পেটে যে বাচ্চাটা আছে তারও ক্ষতি হয়ে যাবে।একজন বাবা হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই তা চান না।আমি নিয়ে যাচ্ছি মিস অনিমাকে।”
বলেই অনিমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে অনিমার হাত ধরে দরজার দিকে হাঁটা দিলো।
তিথি গিয়ে তার বাবাকে বলল,
-“আব্বু!এটা তুমি কি করলে?নিহানের সাথে আপুকে যেতে দিলে কেন?”
তিথির মা এগিয়ে এসে বলল,
-“আমার মেয়েটা একমাত্র শুধু নিহানকেই পছন্দ করেছিলো।তুমি এটা কি করলে?”
-“আমি এখন কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।অনিমার গর্ভে যে সন্তান আছে সেটা বলোনি কেন তুমি আমাকে?”
-“অনিমাই তো বলে নাই।না বললে জানব কিভাবে?”
-“ওকে ঘরে আটকে রেখেছিলে কেন?আর কেন কোন খাবার দাওনি?”
তিথির মা এবার তুতলাতে তুতলাতে বলল,
-“অনিমা আমার মেয়ের বিয়ে ভেংগেছে।আমার অনেক রাগ হয়েছিল।তাই রাগের মাথায়…..”
অনিমার বাবা রেগে বলল,
-“তাই রাগের মাথায় আমার মেয়েটাকে না খাইয়ে রেখেছো?”
-“আমাকে মাফ করে দাও।আমি বুঝতে পারি নাই।”
অনিমার বাবা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্ঠা করলেন।রাগটাকে কমানোর জন্য সোফায় চুপ করে বসে রইলেন।
.
.
-“আপনি যে আমাকে এভাবে নিয়ে আসলেন। এখন কোথায় থাকব আমি?আমার শেষ থাকার ঠিকানাটাও আপনি শেষ করে দিলেন?”
নিহান কিছু না বলে হেঁটেই যাচ্ছে সামনের দিকে।
-“আপনি কি আমার কথা শুনছেন না?”
-“হ্যা শুনছি।কিন্তু উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছিনা।এখন একটা কথাও বলবেন না।গাড়িতে বসুন।”
-“আপনার ইচ্ছায় আমি সব করব?আপনি যা বলবেন তা করতে আমি কেন রাজি হবো?”
নিহান দুই কদম এগিয়ে অনিমার দুই কাধে হাত রেখে বলল,
-“আপনি এখন রেগে আছেন।আগে শান্ত হোন।নিজেকে শান্ত করুন।”
অনিমাকে গাড়ির সিটে বসে দিল।নিজেও গাড়ির দরজা খুলে নিজের সিটে বসে পরল।পিছনের সিট থেকে ফাস্ট এইড বক্সের ঢাকনা খুলে কোলের উপর রাখল।একটা অয়েনমেন্ট বের করে অনিমার দিকে সোজা হয়ে বসে বলল,
-“আমার দিকে ফিরুন।”
অনিমা কোন উত্তর দিল না।এই লোকটা এমন কেন?বলা নাই কওয়া নাই হুট করে এসে হুট করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসবে?আমার কাছ থেকে অনুমতিরও প্রয়োজন নেয় না?আমি রাজি আছি কিনা সেটাও জানতে চায় না!সবসময় নিজের যা মন চায় তাই করে!
-“আমার দিকে ফিরতে বললাম না?”
তাও অনিমার কোন উত্তর নেই।একটা শ্বাস ফেলে বলল,
-“আপনার রাগ করার যথেষ্ট কারন আছে।আপনার জায়গায় যে কেও থাকলেও রাগ করতো এটা স্বাভাবিক!কিন্তু আমি যা করেছি তা আপনার কথা ভেবে করেছি।আপনার অনাগত বাচ্চার কথা চিন্তা করেই কাজটা করেছি।অই বাড়িতে থাকলে বাচ্চাটা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতো না।একজন ডাক্তার হিসেবে বলছি।আপনি কি চান না আপনার বাচ্চা সুস্থ -স্বাভাবিক আর ৫ টা বাচ্চাদের মতো বেড়ে উঠুক?কোন ক্ষতি না হোক?চান তো?”
-“তা তো চাইই!কিন্তু এখন আমি কোথায় থাকব?আমার তো থাকার কোন জায়গা নেই।আমি তো কোন চাকরিও করিনা যে বেতনের টাকা দিয়ে নতুন আলাদা বাসা ভাড়া নিবো!”
-“আপনি কোন টেনশন করবেন না!যেহেতু আপনাকে আমি বাসা থেকে নিয়ে এসেছি সেহেতু আপনার খাওয়া-থাকার ব্যাবস্তা করা সম্পূর্ণ আমার দায়িত্ব।আর আমি দায়িত্ব থেকে এক ফোটাও পিছুপা হবো না!ভরসা রাখতে পারেন আমার উপর!এবার তো ফিরুন!”
অনিমা কিছু না বলে নিহানের দিকে ফিরল।নিহান একটু এগিয়ে এসে অয়েন্টমেন্টটা লাগাতে লাগাতে বলল,
“একটু জ্বলবে!সহ্য করে নিবেন।”
অয়েনমেন্ট লাগিয়ে একটা বেন্ডেজ লাগিয়ে সোজা হয়ে বসতে বসতে বলল,
-“এত অপমান সহ্য করেন কিভাবে?আমি হলে তো কবেই বেরিয়ে আসতাম।”
নিহানের কথা শুনে অনিমা হালকা হেসে বলল,
“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তেঁতো কথা শুনতেও মিষ্টি লাগে!আমার ক্ষেত্রেও সেইম হয়েছে।অপমান শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।এখন আর গায়ে লাগে না!মার ভাষ্যমতে গন্ডারের চামড়া কিনা!”
অনিমার কথা শুনে নিহান এক পলক অনিমার দিকে তাকালো।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে মুখ ফিরিয়ে নিলো।অই চেহারায় তাকানোর সাহস নিহানের নেই।গলা ঝেড়ে বলল,
“সবসময় অপমান সহ্য করতে হয় না!প্রতিবাদ করতে হয়।যে দোষ আপনি করেন নি তার জন্য কথা শুনবেন কেন?”
নিহানের কথায় অনিমা কোন উত্তর দিলো না।চুপ করে কাঁচের জানালার বাইরেই দৃশ্য দেখছে।দৃশ্য দেখছে বললে ভুল হবে।ভাবছে সে।আচ্ছা তার জীবনটা এমন কেম হলো?অন্য স্বাভাবিক মেয়েদের মতো হলেও তো পারতো?নিজের ঘরে নাহয় সুখ না ই পেলো। অন্তত সংসার জীবনে তো সুখ জুটলেও পারতো!তাও পেলো না!ও কি সুখ পাবার এতই অযোগ্য?নাকি সুখ শব্দের জিনিসটা তার কপালে সয় না?কি জানি!কোন একটা কারণ হবে হয়তো!
(চলবে)…
#গল্পঃ_একঝাঁক_জোনাকি
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, পরবর্তী পর্ব নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি…)