একটুখানি_আশা পর্ব ৯
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
মুন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই নিচে কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব হতেই সে পায়ের দিকে তাকাতেই খুব সুন্দর একটা পায়েলের দিকে নজর পড়লো। মুন পা থেকে পায়েলটা খুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরলো। ছোট ছোট পাথরের পায়েল আর পাথরগুলো জ্বলজ্বল করছে। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর কিন্তু মুনের এমন পায়েল আছে বলে মনে হচ্ছে না আর সে নিজেই তো পায়ে এমন পায়েল দেইনি তাহলে কোথ থেকে আসলো পায়েলটা? কে আসলো তাঁর রুমে! মুন ভাবনায় পড়ে গেল। মুন রুমের আনাচে কানাচে দেখল কিন্তু কোনো কিছুর ছায়াও পেলো না আর রুমের দরজাও ভেতর থেকে আটকানো তাহলে কে আসলো! মুনের এখন ভীষণ ভয় ভয় লাগছে। সে ভীতু চোখে সারা রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো। হঠাৎ ব্যালকনির দরজায় চোখ পড়লো। মুনের যতটুকু মনে আছে সে তো ব্যালকনির দরজা আটকে শুয়েছিল। মুন ব্যালকনিতে গিয়ে কিছুই পেল না। মুন নিরাশ হয়ে রুমে এসে পায়েলটা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিল তবুও ঐটা থেকে চোখ যেন সরতেই চাইছে না, পাথরগুলো জ্বলজ্বল করা অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগছে। মুন আর কিছু না ভেবে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের ন্যয় কলেজে গেল মুন। সারাদিন এরিনদের সাথে ভালোই কাটলো।
কলেজ শেষে বাসায় ঢুকতেই দেখল অহনা সোফার উপর পা দুইটা তুলে হাটু মুড়ে বসে চিপস খেয়ে খেয়ে টিভি দেখছে। মুন ওখানে যেতেই অহনা মিষ্টি করে হাসলো,
-‘হাই আপু। কেমন কাটলো কলেজের এতটা দিন? ইউ নো হোয়াট আ’ম ওয়েটিং ফর ইউ।’
-‘হ্যাঁ ভালোই। কলেজ যাওনি?’
-‘নাহ আজকে ভালো লাগছিল না তাই। তুমি আসো গল্প করি।’
-‘আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর আড্ডা দিব।’
মুন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে দেখতে পেলো শাফিন ব্রাশ করতে করতে গুন গুন করে গান গেয়ে নামছে। মুনকে দেখেই হাত নেড়ে ‘শুভ সকাল’ জানালো। মুন মুচকি হেসে সম্মতি জানালো।
-‘শুভ দুপুর।’
-‘কলেজ থেকে আসছো বুঝি?’ শাফিন হাসিমুখে বলল।
-‘হ্যাঁ। আমি যায় ফ্রেশ হয়ে আসি।’
-‘আচ্ছা।’
মুন রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আবারও নিচে আসলো অহনার সাথে গল্প করার জন্য। অহনা তো মুনকে পেয়ে এতদিনের সব গল্প একসাথে জুড়ে দিল। মাঝখানে শাফিন কফি নিয়ে সেও আড্ডায় শামিল হলো। তাঁর আড্ডার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। মাসে মাসে সে নতুন রিলেশনে জড়ায়। তাঁর কথা অনুসারে বোঝা গেছে সে এগুলো নিয়ে মোটেও সিরিয়াস নয় জাস্ট টাইম পাস। আবার মাসে মাসে নতুন রিলেশনে জড়ানোর জন্য অহনাকে ট্রিট দিতে হয় কারণ ও আদ্রাফ ভাইয়াকে বলে দিবে বলে শাফিনকে ভয়ে দেখায়। এদের কথা অনুসারে বোঝা যাচ্ছে ওই ইতর আদ্রাফ ভাইয়াকে ভীষণ ভয় পায় দুজনেই। উনি না-কি অনেক রাগী।
সেইদিন কলেজে একটা প্রজেক্টের কাজ থাকার কারণে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ফুফি অবশ্য কয়েকবার বলেছিলো কাউকে মুনকে নেওয়ার জন্য পাঠাবে কিনা! কিন্তু মুন বারণ করেছিল। কেন শুধু শুধু সবাই সবার কাজ ফেলে মুনকে নিতে আসবে?
মুনের কাজ শেষে ওদের ফ্রেন্ডস গোলস থেকে এরিন মুনকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এরিককে পাঠিয়েছিল। অবশ্য মুন বারণ করেছিল কারণ এরিক মুনকে পছন্দ করে এটা মুন বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু এরিন আর এরিক কেউই মুনের কথা শুনেনি। এরিক কোনো বাক্য বিনিময় না করে তাঁর গাড়ি নিয়ে মুনকে বাসায় পৌঁছে দেয়। গাড়ি থেকে নেমেই মুন বাসায় চলে আসতে নিলে পিছন থেকে এরিকের ডাক শুনে মুন থেমে যায়।
-‘মুন, কেন আমাকে এত ইগনোর করছো এভাবে?’ ঠান্ডা স্বরে ইংরেজিতে বলে উঠলো এরিক।
-‘কেন শুধু শুধু ইগনোর করব! তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। আর ভুলটা শুধরে নিলেই বন্ধুত্বের বন্ধনটা আবার আগের মত হবে।’ মুন এই বলে আর পিছনে না থাকিয়ে বাসায় ঢুকতে নিলেই উপরের ব্যালকনির দিকে চোখ পড়লো। উপরের ব্যালকনিতে তাকাতেই আদ্রাফ ভাইয়ার সাথে চোখাচখি হলো। আদ্রাফ এক দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুন চোখ নামিয়ে বাসায় ঢুকে গেল।
এরিক কিছুসময় মাথা নিচু করে থেকে মুনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি নিয়ে ওই স্থানটা প্রস্তান করল।
মুন বাসায় ঢুকে কিচেনে ফুফিকে বলে রুমে যেতেই হাতে টান অনুভব করল। আদ্রাফ তাঁর রুমে মুনকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে দুহাত রেখে মুনকে আবদ্ধ করে নিলো। আদ্রাফের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আদ্রাফ মুনের হাত জোরে ধরার জন্য ব্যথায় মুনের চোখ দিয়ে অঝোড়ো ধারায় পানি পড়তে লাগলো। মুন হাত ছাড়াতে নিলে আদ্রাফ আর জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো মুনকে।
-‘ভাভাইয়া..ব্যথা পাচ্ছি।”মুন কোনোমতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো।
-‘অন্য ছেলের সাথে আর যেন না দেখি।’ আদ্রাফ রাগিভাবে কথাগুলো বলে মুনকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর মুন স্তব্ধ। সে তাঁর ফ্রেন্ডের সাথে মিশলে আদ্রাফের কী সেটাই মাথায় আসছে না মুনের! সারাদিন প্রজেক্টের কাজ করায় ক্রান্ত মুন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। মাঝরাতে আবারও সেইরাতের মত কারো অস্তিত্ব তাঁর রুমে আবিষ্কার করল মুন। মুন চোখ খুলে লাইট জ্বালাতেই কাওকে পেলো না। এরপর আর ঘুম না আসার কারণে কিছুক্ষন রুমে হাটাহাটি করল মুন। হঠাৎ মোবাইলে কল আসায় মুন মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার থেকে আসছে। মুন কল না ধরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। মোবাইলে পর পর কল আসাতে মুন বিরক্ত হয়ে পাঁচবারের মাথায় কল ধরলো।
মুন কল ধরে ‘হ্যালো’ বলার পরেও ওই পাশ থেকে কোনো প্রতিত্তর আসলো না। মুন বার বার করে ‘হ্যালো’ বলার পরেও ওইপাশ থেকে কোনো উত্তর না আসাতে মুনের রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেল। সে কয়েকটা গালি দিয়ে ফোন রেখে দিতে গেলে ওই পাশ থেকে কারো অট্টহাসি শুনে থেমে গেল।
-‘চিনতে পেরেছো?’
-‘আআহান..!’
-‘এত দ্রুত চিনে ফেলেছো? বাহ্! আর কতদূরই বা বাঁচতে পারবে এই আহানের হাত থেকে তুমি? খুব দ্রুতই তোমার জীবন নরকে পরিণত করার জন্য আমি আসছি।’
মুন দ্রুত ফোন কেটে দিল। ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথে একটা টেক্সট আসলো। মুন টেক্সটা ওপেন করতে হার্টবিট বেড়ে গেল। টেক্সটটা আসছে আহানের নাম্বার থেকেই। ওই মেসেজে মুনের জাপানের সব ডিটেলস দেওয়া।
মুন তাড়াতাড়ি করে বাসায় কল দিল। ওই পাশ থেকে বাবা কল ধরেই বলল,’মা সাবধানে থেকো।’
বাবার এই কথা শুনেই মুন যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। মুন আরিফাকে কল দিল। আরিফা কল ধরে বলল, আহান আজকেই জামিন পেয়েছে আর কিছুক্ষন আগে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে গিয়েছে বাবা-চাচাদের, যেমনই হোক খুঁজে বের করবে মুনকে।
এরমধ্যে আবারও আহানের মেসেজ আসলো। মুন মেসেজ ওপেন করতেই দেখল,’আ’ম কামিং সুন বেবি।’
মুন স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না! একদিকে এই আদ্রাফ ভাইয়া আর অন্যদিকে আহান। এতদূর আসলো সুন্দর একটা ভবিষ্যত এর জন্য তাও কিছুদিনের মধ্যেই আহান জামিন পেয়ে গেল আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মুনের খোঁজ পেয়ে গেল। তাঁর মানে আহানের জাপান আসা কোনো ব্যাপার না! মুন মাথা চেপে ধরে মেঝেতে বসে পড়লো। জাপান এসেও শান্তি পেলো না।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। আমার মডেল টেস্ট এক্সাম কাল থেকেই শুরু, শেষ হবে ১৬তারিখ। এর ভেতর আমি মোবাইল নিতে পারবো না। এই পর্বটা অনেক কষ্ট করে পড়ার ফাঁকে চুরি করে লিখেছি আর এই এক্সামে যেমন করেই হোক আমার টিকতে হবে তাই চাইলেও গল্পটা এখন আর কন্টিনিউ করতে পারছি না। এরপর ডিসেম্বর এ আবার বোর্ড এক্সাম সব মিলিয়ে এখন অনেক চাপ আমার তাই এই গল্পের বাকি পর্বগুলো ১৬তারিখের পর মানে ১৭ তারিখ থেকে কন্টিনিউ করে আপনাদের মাঝে নিয়ে আসবো । আমি গল্পটার সবকিছুই এই পর্বে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি কারণ পুরোপুরি সব কথা আসছে না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত অপেক্ষা করানোর জন্য পারলে মাফ করবেন দয়া করে। পারলে অপেক্ষা করিয়েন। ভালোবেসে যতটুক পাশে ছিলেন আমি আলহামদুলিল্লাহ। হাজারো শুকরিয়া আপনাদের কাছে। আমি আবারও দুঃখিত আপনাদের কাছে। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ইন শা আল্লাহ 💙)