একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-১৪

0
12880

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৪|| (বোনাস পার্ট)
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আমি অবাক হয়ে ভাবছি এসব কি করে হলো? আর চোখে দেখলাম জিয়া হাসছে। বুঝতে বাকি রইলো না কে কাজটা করেছে। আমি বেরোচ্ছি না দেখে ম্যাম আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরতে যাবেন এমন সময়….

‘এক মিনিট ম্যাডাম।’

আমরা সবাই দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম আদিত্য একহাতে ভর করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার কপালে গোল করে ব্যান্ডেজ করা।

‘একি আদিত্য? তুমি এখানে কি করছো?’

ম্যাডামের কথা শুনে আদিত্য এগিয়ে আসতে শুরু করে ম্যাডামের দিকে। উনি একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছেন দেখে ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন,

‘একি আদিত্য? তোমার এমন অবস্থা কি করে? এই অবস্থায় কেন এসেছো তুমি?’

উনি ম্যাডামের কথায় মুচকি হেসে ডান হাতে একটা কপি ম্যাডামের দিকে এগিয়ে দিলেন। ওনার ডান হাতেও ব্যান্ডেজ করা। উনি আমার দিকে তাকালেন কিন্তু আজ আমি চোখ সরালাম না। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে ম্যাডামকে বললেন,

‘আমি চাই না আমার জন্য আর কোনো ক্ষতি হোক কাওর। তাই চলে এসেছি।’

ম্যাডাম কপি টা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘এটা তো মৌমিতার কপি। তোমার কাছে কি করে গেলো?’

‘ম্যাডাম মৌমিতা যখন আপনাকে কপিটা সাবমিট করেছিল তখন এই কপিটাই করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে ওটা চেঞ্জ করে দেওয়া হয়। সবাই কম্পিটিশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো তাই কাওর চোখে পড়েনি, আমার চোখে ভাগ্যবশত পরে গেছিলো।’

‘কি বলছো এসব? কে করেছে এমন কাজ?’

আদিত্য ম্যাডামের কথা শুনে একটু পিছিয়ে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘কাজটা যে করেছিস সে এই ক্লাসেই আছিস এখন। আমি চাই সে নিজের মুখে স্বীকার করুক তাহলে হয়তো শাস্তিটা কম হবে আর যদি তার নাম আমাকে বলতে হয় তাহলে পরিণাম ভালো হবে না।’

‘আদিত্য এসব কি বলছো তুমি?’

ম্যাডামের প্রশ্ন শুনে আদিত্য অনেকটা রেগেই উত্তর দিলো,

‘ম্যাডাম অনেকে হয়তো ভুলে গেছে আমি কে, কি করতে পারি। সহ্য করছি বলে যে যা ইচ্ছে তাই করবে সেটা এবার থেকে আর হবে না। তাই আবারও বলছি, শাস্তি কম পেতে চাইলে নিজেই স্বীকার করুক নাহলে…

‘আ..আমি! আমি করেছি।’

আমি অবাক হয়ে গেলাম জিয়া কে দাঁড়াতে দেখে। আমি ভাবিনি জিয়া স্বীকার করে নেবে। কিন্তু এখন আমার চোখ আর মন শুধুমাত্র আদিত্যের দিকেই তাকিয়ে থাকতে চাইছে আর কথা বলতে চাইছে। উনি এখনও উত্তর দিলেন না কিভাবে এরকম অবস্থা হলো ওনার। জিয়া উঠে দাঁড়াতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলেন যাতে আমার বুকের ভিতর টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো।

‘আমার কাজ শেষ ম্যাডাম, আমি আসছি।’

‘দাঁড়াও, আমি সাহায্য করছি। তুমি বললে না কি করে হলো এমনটা?’

‘না না ম্যাডাম আমি ঠিক আছি। সামান্য একটা একসিডেন্ট হয়েছিল দ্যাট সেট।’

‘কোনো কথা শুনছিনা। আমি এগিয়ে দিচ্ছি।’

ম্যাডাম আদিত্যের দিকে হাত বাড়ালে উনি ম্যাডামের হাতের উপর হাত রেখে একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর জিয়ার দিকে তাকালেন। দরজার কাছে গিয়ে ম্যাডাম কে কিছু একটা বলতে লাগলেন,

‘ম্যাডাম আমার হয়ে শাস্তিটা আপনিই বলে দিন।’

‘কিন্তু আদিত্য আমি কি শাস্তি দেবো বলো?’

‘আমি ভাবতেও পারছি না ভার্সিটির সব থেকে রাগী ম্যাডাম এই কথাটা বলছেন?’

‘বলছি তার কারণ জিয়ার বাবা মোটেও ভালো মানুষ নন। যে কাওর ক্ষতি করে দিতে পারেন উনি। আর কদিনের মধ্যেই ডিরেক্টর হবেন আমাদের ভার্সিটির।’

‘এমন শাস্তি দিন যাতে সাপ ও মরে আর লাঠিও না ভাঙে।’

ওনারা কি কথা বলছেন শোনা যাচ্ছে না। আমি শুধু অপেক্ষা করছি কখন ম্যাডাম ছুটি দেবেন আমি ওনার কাছে যাবো। সেই কাল রাত থেকে হওয়া অস্বস্তির কারণ বোধহয় এটাই। ওনার ক্ষতি হয়েছে বলেই হয়তো মনটা এতো অশান্ত হয়ে উঠেছিল। ইশ, একটা ফোন করতে পারতাম আমি। কেন যে…

‘সো স্টুডেন্টস, আমি বাকি কপিগুলো নেক্সট ডে চেক করে তোমাদেরকে ফেরত দেবো। আজকে আমি নিউ একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি তোমাদের যেটা তোমাদের করতে হবে না।’

‘মানে? ঠিক বুঝলাম না ম্যাম।’

‘মানে এটাই যে তোমাদের সকলের অ্যাসাইনমেন্ট জিয়া কমপ্লিট করে আনবে। এটা ওর দায়িত্ব বলতে পারো। তা জিয়া, তুমি করে আনবে তো? নাহলে কিন্তু পানিশমেন্ট পেতে হবে।’

ম্যামের কথা শুনে বুঝলাম এটা নিয়ে আদিত্যের সাথে কথা বলছিলেন উনি। আমার জানো আর তর সইছে না বাধ্য হয়ে ম্যামকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘ম্যাম, আমি কি যেতে পারি? আসলে ওনাকে থ্যাংক ইউ বলা হয়নি তাই…

‘অফকোর্স! তুমি যেতে পারো আর হ্যাঁ, আমার ব্যবহারে কিছু মনে করো না।’

‘ইটস ওকে ম্যাম।’

আমি নিজের ব্যাগটা নিয়ে পড়ি কি মরি করে ছুটলাম আদিত্যের কাছে যাবো বলে। কিন্তু উনি কোথায়? নিশ্চই ভার্সিটির বাইরের দিকে গেছেন। যেভাবে হাঁটছিলেন তাতে মনে হয় না ভার্সিটির বাইরে যেতে পেরেছেন বলে তাই আমি আগে পৌঁছে যাবো যদি অন্যদিক দিয়েও যান। যেই ভাবা সেই কাজ ছুটলাম ভার্সিটির গেটের দিকে।

২৮.
আদিত্য রীতিমতো খোঁড়াচ্ছে। শরীরটা জানো চলছে না তার। পায়ে জোরই পাচ্ছে না এগিয়ে যাওয়ার জন্য। একটু করে হাঁটছে তো একটু করে দাঁড়াচ্ছে। অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে হেঁটে আসার ফলে। ডক্টর বলেই দিয়েছিল হাঁটাচলা করতে না কয়েকদিন। চোটটা বেশ ভালোই লাগে মাথায় আর পায়ে। কিন্তু মৌমিতার কথা মনে হতেই ডাক্তারের সব কথা সে ভুলে গেছে, শুধু এটাই মনে হয়েছে মৌমিতাকে হ্যারাস হতে দেওয়া যাবে না, কোনোমতেই না! তাই তো সে কোনো কিছুর পরোয়া না করেই ছুটে এসেছে। এসবই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবার পর আদিত্য পা বাড়াতে নিলে কেউ পিছন থেকে ধাক্কা মারে।

আমি ছুটে আসছিলাম এমন সময় দেখলাম আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ওনার দিকে এগোতে শুরু করলেই দেখলাম একটা ছেলে ওনাকে ধাক্কা মারলো তাই সঙ্গে সঙ্গে ওনার সামনে গিয়ে ওনাকে ধরে নিলাম।

‘আদিত্য! আপনি ঠিক আছেন?’

ঠিক সময়ে আমি আদিত্যকে না ধরলে উনি পরেই যেতেন। উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকালে দেখলাম মুখটা লাল হয়ে গেছে। উনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, তাতেও যে কষ্ট হচ্ছে সেটা মুখভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারলাম।

‘আমি ঠিক আছি। থ্যাংক ইউ।’

‘থ্যাংক ইউ তো আমার বলার কথা।’

‘কি জন্য? তোমার কপি টা ঠিক সময় সাবমিট করেছি তার জন্যে?’

‘না। আমাকে নিয়ে এতটা ভাবার জন্যে।’

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকালেন। আমিও ওনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি। জানি না কেন এই কথাটা আমি বললাম। নিজের আনমনেই বলে ফেলেছি কথাটা কিন্তু ভুল কিছু বলিনি। আমার জন্য ভাবেন বলেই তো এই অবস্থায়, এতটা কষ্ট সহ্য করে আজ এখানে এসেছেন। উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত করে বললেন,

‘আমি, আমি বাড়ি যাচ্ছি। পরে কথা হবে।’

আদিত্য আমার হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আমি আরও শক্ত করে ওনার হাতটা ধরলাম। উনি আমার দিকে সেটা দেখে তাকালে আমি বললাম,

‘আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে। আর ক্ষতি করার লোকের তো অভাব নেই বলুন? আমি সাহায্য করছি চলুন।’

আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে সামনের দিকে তাকালে আমিও সেদিকেই তাকাই, উনি হেসে বলেন,

‘ক্ষতি করার লোক যতই থাকুক, এভাবে শক্ত করে হাত ধরে থাকার লোক থাকলে কোনো কিছুই কেউ করতে পারবে না। তুমি খুব লাকি যে প্রথম থেকেই ভালো বন্ধু পেয়ে এসেছো।’

কথাটা উনি সৌভিকদার দিকে তাকিয়ে কোয়েল আর অঙ্কিতের উদ্দেশ্যে বললেন তা বুঝতে বাকি রইল না। ওনাকে ধাক্কাটা সৌভিকদাই মেরেছে। ফ্রেশার পার্টিতে আদিত্য যে ব্যবহার করেছিলেন সেটারই হয়তো প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন আদিত্যের এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে। আমি কথা না বাড়িয়ে আদিত্যকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। ভার্সিটির বাইরে আসতেই আদিত্য বললেন,

‘তুমি ক্লাসে চলে যাও। আমি যেতে পারবো, গাড়ি এনেছি।’

আমি ওনার কথা শুনে অবাক হয়ে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ড্রাইভার এনেছেন?’

‘না। একাই পারবো যেতে। তুমি যাও।’

‘আপনার কি মাথায় চোট লেগে মাথা খারাপ হয়ে গেছে? না মানে এই অবস্থায় আপনি নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছেন আবার এখন নিজে গাড়ি চালিয়ে যাবেন? সত্যি কি যে বলবো আপনাকে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। চুপ! চুপ একদম, চলুন আপনার গাড়ির সামনে।’

উনি কিছু বলতে গেলে ওনাকে থামিয়ে দিয়ে ওনার গাড়ির সামনে যেতে লাগলাম। যেতে যেতে উনি দাঁড়িয়ে গেলেন হঠাৎ করেই।

‘কি হয়েছে? মাথা ঘুরছে নাকি?’

কোনো কিছু না বলেই উনি আমার কাঁধে ডান হাত রেখে আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরলে, আমিও বাঁ হাত দিয়ে ওনার কোমর ধরে নিলাম। ওনার কানের কাছে বললাম,

‘খুব কষ্ট হচ্ছে?’

উনি এখনও কিছু বলছেন না। চোখে জল চলে এসেছে আমার ওনার এই অবস্থা দেখে। কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যেই আমরা ওনার গাড়ির কাছে পৌঁছালাম।

‘অনেক হয়েছে মৌমিতা। এবার তুমি ক্লাসে যাও। নাহ আর নয়, অনেক হেল্প করেছ তুমি আমার। আমি চাই না আমার জন্য তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক। একটা কথা কি বলো তো, মানুষ নিজের অজান্তে কোনো ভুল করলে সেটাকে ভুল বলে মেনে নেওয়া যায় আর জেনে বুঝে ভুল করলে সেটাকে অন্যায় বলা হয়। আর আদিত্য ব্যানার্জী না কোনোদিন নিজে অন্যায় করেছে আর না কোনো অন্যায় সাপোর্ট করেছে। তুমি চলে যাও। কোয়েল আর তোমার অঙ্কিত খুঁজছে হয়তো তোমায়।’

আমাকে কোনো কথা না বলতে দিয়ে উনি নিজের কথা শেষ করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠতে গেলে আমি বাঁধ সাধলাম।

‘চুপচাপ এখানে বসুন। বসুন বলছি!’

‘আরে, কিন্তু কেন?’

‘বসতে বলেছি বসবেন আর একটাও বাড়তি কথা নয়। কি হলো বসুন!’

ধমক দিতেই উনি চুপচাপ উঠে বসলেন আর আমি সামান্য হেসে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলাম। সিট বেল্ট লাগিয়ে ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন,

‘চাবি টা দিন। এভাবে কি দেখছেন?’

‘তুমি ড্রাইভিং জানো?’

‘কেন? মিডিল ক্লাস মেয়েরা বুঝি ড্রাইভিং জানতে পারে না?’

ওনার থেকে চাবিটা নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতেই উনি বললেন,

‘জিয়ার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলোনা। আমি মানুষকে ইম্পরটেন্স দি, তার ক্লাসকে নয়।’

আমি হাসলাম ওনার কথা শুনে কারণ এটা আমি অনেক আগেই জানি যে, উনি জিয়ার মতন নয়। ইনফ্যাক্ট উনি কাওর মতোই নন। সবার থেকে আলাদা উনি।

‘একসিডেন্ট টা হলো কীভাবে?’

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

‘ভুলবশত রাগের মাথায় বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেছিলাম। রাগের মাথায় ড্রাইভ করলে একসিডেন্ট আমার হয়ই। বাট রাগ এতটাই ছিলো যে কি করছিলাম, কি বলছিলাম কোনো রকম হিতাহিত জ্ঞানই কাজ করছিল না আমার।’

‘এতো রাগের কারণ?’

আমার এই প্রশ্নে আদিত্য চুপ করে গেলেন। কিছু একটা ভাবছেন মনে হচ্ছে,

‘সেটাই তো জানি না আমি মৌমিতা। কেন কালকে আমি তোমার সাথে অঙ্কিতকে দেখে নিজেকে ঠিক
রাখতে পারিনি আমি জানি না। শুধু এটুকু জানি তোমার সাথে অঙ্কিতকে সহ্য করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার সাথে অঙ্কিতের কথা বলা, ওর টোনার হাত ধরাতেই আমি রেগে গেছিলাম। আমার মাথার ঠিক ছিলো না, কিন্তু কেন এই রাগ আনার হয়েছে আমি জানি না। সত্যিই জানি না!’

‘আমার সাথে অঙ্কিতের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্বের।’

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকালেন যা আমি ড্রাইভ করতে করতে লক্ষ্য করলাম। জানলার দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন,

‘সেটুকু থাকলেই ভালো।’

মনে মনে হাসলাম ওনার কথা শুনে। কালকে থেকে যে অস্বস্তিটা হচ্ছিল তা ওনার সাথে থাকার ফলে চলে গেছে তা ভালোই বুঝতে পারছি। দেখতে দেখতে ওনার বাড়ির সামনে এসে পড়লাম। ওনাকে নামতে বারণ করে আমি নিজে নেমে ওনাকে নামতে সাহায্য করলাম। কিছুক্ষন আগের মতোই ওনার ডান হাত নিজের কাঁধের উপর নিয়ে, এক হাতে ওনার কোমর জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে ওনার বাম হাত শক্ত করে ধরলাম।

‘হরি কাকা, ওনার রুমটা খুলে দাও তো।’

হরি কাকা আসতেই হরি কাকে বলে দিয়ে আসতে আসতে ওনাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে অনেক ধীরে ধীরে উঠলাম ওনাকে, প্রচুর কষ্ট হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বোঝাই যাচ্ছে। না জানি কীভাবে নেমেছিলেন। ওনার ঘরে গিয়ে ওনাকে বিছানায় বসিয়ে দিতেই হরি কাকা এলেন।

‘কাকা, আপনি ওনার খেয়াল রাখবেন। উনি জানো এক পা ঘরের বাইরে না ফেলেন পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’

‘আমি কেন, তুমিই তো ওনার খেয়াল রাখতে পারো বউমা।’

হরি কাকার কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। আড় চোখে দেখলাম আদিত্য আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছে কিন্তু কেন?

‘কাকা তোমার বউমার পড়াশোনা আছে। তার আমার জন্য সময় নেই।’

আদিত্যের কথায় আমি ওনার দিকে চোখ বড়ো করে তাকাতেই আদিত্য মাথা নিচু করে ঠোঁট উল্টে ফেললেন বাচ্চাদের মতো। ওনার উপর রাগ দেখাবো না কি করবো আমি বুঝতে পারছি না এই মুহূর্তে। হরি কাকাকে বললাম,

‘তুমি ওর জন্যে একটু সুপ নিয়ে আসো। আমি খাইয়ে চলে যাবো।’

এরপর আদিত্যর দিকে তাকাতেই দেখলাম আদিত্য হাসছেন, আমি তাকাতেই চুপ করে গেলেন। আমি ছোটো ছোটো চোখ করে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘মতলব টা কি হম?’

‘আরেকটু থাকো না।’

খুবই আস্তে কথাটা বললেও আমি শুনতে পেলাম কিন্তু উনি কথাটা আমায় শুনতে দিতে চাইনি বলে ভান করে থাকলাম না শোনার। তাহলে কি ওনারও আমার মতোই অনুভব হয়? আমার যেমন ওনার সাথে থাকতে, সময় কাটাতে ভালো লাগে তেমন কি..?? ধুর, কিসব যে ভাবছি। নিজে নিজেই এসব ভাবছি আর লজ্জা পাচ্ছি, ধ্যাৎ!

কিছুক্ষণ পর হরি কাকা সুপ দিয়ে গেলে আমি সেটা ওনাকে খাওয়াতে খাওয়াতে অনেকরকম গল্প করতে থাকলাম। সব শেষে আমি যখন বেরোতে যাবো তখন উনি হঠাৎই আমার হাত পিছন থেকে টেনে ধরলেন। ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,

‘আমি যে কদিন ভার্সিটি যেতে পারবো না সে কটাদিন খুব সাবধানে থাকবে। জিয়া আর সৌভিক একা তোমাকে পেলে অনেক কিছুই করতে পারে তাই কোয়েল আর, আর অঙ্কিতের সাথেই থাকবে। বন্ধুর মতো, ঠিক আছে?’

ওনার শেষের কথাটা শুনে না হেসে পারলাম না। এদিকে উনি আমার হাসি দেখে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলালে আমি আরো জোরে হেসে ফেললাম। উনি ফোন হাতে নিয়ে কাওকে ফোন করে বললেন,

‘ম্যাডাম নীচে যাচ্ছে। ওনাকে ওনার হস্টেলে ঠিক ভাবে পৌঁছে দিয়ে তারপর আসবে।’

‘আপনার ড্রাইভার থাকা স্বত্বেও নিজে পাকামী মেরে ড্রাইভ কেন করেছেন এই অবস্থায়?’

আমার প্রশ্ন শুনে উনি একটা ক্যাবলা হাসি দিলে আমি নিচে চলে আসি।

নিচে নামতেই আমার ফোনে মেসেজ আসে, “সাবধানে যাবে।” হে ভগবান! একসিডেন্ট হয়েছে ওনার আর খেয়াল রাখছে উনি আমার। কেন এত খেয়াল রাখছেন আমার? এটা নিয়ে আর না ভেবে আমি হস্টেলে চলে এলাম। কিন্তু ওনাকে এভাবে একা ছেড়ে আসতে কেন জানো মন চাইছে না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here