‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
২৯.
মৌমিতা চলে যাওয়ার পর আদিত্যের কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলো মনে পড়তে থাকলো। যতটুকু সময় মৌমিতা তার সাথে ছিলো ততটুকু সময় একটা আলাদাই অনুভূতি হচ্ছিল আদিত্যের।
‘আজ কেন এমন হচ্ছে? মন চাইছিলো আজ মৌমিতাকে এখানেই রেখে দি। ওর সাথে মেশার পর থেকেই মনে হয় সবসময় ওর আশে পাশে থাকি যেটা আগে কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে মিশে হয়নি। বরং সব মেয়েদের থেকেই দূরে থাকতে পছন্দ করতাম আমি। এখনও তাই শুধু মৌমিতা ছাড়া, ও কাছে থাকলে মনে হয় সময়টা থেমে গেলে ভালো হতো। তাই হয়তো আজকে হরি কাকার সামনে বলেই ফেলেছিলাম ওকে থেকে যাওয়ার কথা। হোয়াট ডাজ দিজ মিন? ইজ শি স্পেশাল টু মি?’
আদিত্য কথাটা ভাবতেই ব্লাশ করতে করতে শুয়ে পড়লো। আজকাল সারাক্ষণ আদিত্যের মাথায় মৌমিতার কথা ঘুরতে থাকে। আদিত্য টের পাচ্ছে তার এই অনুভূতি বদলের কিন্তু পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছে না। এতো কিছু ভাবতে ভাবতে আদিত্যের চোখটা লেগে এলো।
অন্যদিকে,
আমি হস্টেলে ফিরে ড্রাইভারকে বলে দিলাম যাতে আদিত্যকে বলে দেয় আমি ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছি আর ঠিক ভাবেই থাকবো। আমাকে নিয়ে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবতে। রুমে আসতেই দেখলাম কোয়েল নেই, তার মানে এখনো ভার্সিটিতেই আছে। বিকেল হতে চললো, তাহলে কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে। আমি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে একটা বই নিয়ে বসলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসলো না, বারবার খালি আদিত্যের কথা মনে পড়ছে। আর যতবার ওনার কথা মনে পড়ছে ততবার মনে হচ্ছে ওনাকে এভাবে একা ছেড়ে আসাটা ঠিক হলো না। যেভাবে ওই অবস্থায় নিজে ড্রাইভ করে গেছেন তারপর আবার হেঁটেছেন তাতে যদি জ্বর আসে? গা-টা তো কেমন জানো গরম ছিলো।
‘এই মৌ! তুই কোথায় গেলি তখন ওরকম ছুটে? আদিত্যদার সাথে দেখা হয়েছিল?’
‘ওহ তুই এসে পড়েছিস? হ্যাঁ ওনার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু…
‘কিন্তু কি?’
‘তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আগে। তারপর সবটা বলছি।’
কোয়েল ফ্রেশ হতে চলে গেলো আমার কথা শুনে। ওর ফ্রেশ হয়ে আসার পর আমি ওকে সবটা বলতে শুরু করলাম। সব শোনার পর ও বললো,
‘তুই আদিত্যদার বাড়ি গেছিলি?’
‘আব, হ্যাঁ। ওনাকে ওভাবে ড্রাইভ করতে দেওয়াটা ঠিক হবে না মনে হলো তাই।’
‘না না ঠিক করেছিস। কি জানি রাতে মনে হয় জ্বর আসবে।’
কোয়েল কথাটা আনমনে আস্তে করে বললেও আমি সেটা শুনতে পেয়ে যাই।
‘কি? ওনার জ্বর আসবে?’
‘আ..আব, হ্যাঁ। আদিত্যদার এরকম একসিডেন্ট অনেকবার হয়েছে। আসলে আদিত্যদা ব্যাথা ঠিক সহ্য করতে পারে না তাই জ্বর চলে আসে। সেখানে আজ ওরকম অবস্থায় ড্রাইভ করেছে, হেঁটেছে। আমি তো বুঝতে পারছি না আদিত্যদার মধ্যে এতটা চেঞ্জ কিভাবে হলো। মানে যেই ছেলেটা নিজের ছাড়া আর নিজের আপনজন ছাড়া অন্যকাওর কথা কোনোদিন ভাবেনি সে আজকে এতো…?’
কোয়েল থেমে গেলে আমার মাথায় কোয়েলের কথাগুলো ঘুরতে লাগলো। সত্যি তো আজ আমারও এটাই বারবার মনে হচ্ছিলো, কেন উনি এভাবে ছুটে এলেন? কি এমন হতো কপিটা সাবমিট না করলে? যত দিন যাচ্ছে ততো বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে আমাদের সম্পর্কটা।
‘কি রে তুই আবার কোথায় হারিয়ে গেলি?’
‘ন..না না। বল।’
‘দেখলি, আজ আদিত্যদা জিয়াকে কিভাবে শাস্তি দিলো? আমি বলেছিলাম না আদিত্যদা জিয়াদের মতো না। শাস্তিটা বেশ ভালোই পেয়েছে জিয়া। ম্যাডাম দারুন শাস্তি দিয়েছে তাই না?’
‘নাহ।’
‘মানে?’
‘মানে এটাই যে শাস্তিটা আদিত্য দিয়েছেন ম্যাডাম না। ম্যাডাম তো নিমিত্ত মাত্র। আমি দেখেছি ম্যাডাম আর আদিত্য কথা বলছিলেন আর তারপরেই ম্যাডাম জিয়াকে বলেন সবার অ্যাসাইনমেন্ট করে আনতে।’
‘ওয়াও! জীবনে প্রথম একটা ভালো কাজ করেছে আদিত্যদা।’
কোয়েলের কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম সাথে কোয়েলও। এরপর পড়তে বসলেও আমি মনে লাগাতে পারলাম না। রাত যত বাড়ছে আমার ধৈর্য জানো ততো হারাচ্ছে। রাতের খাবারটা কোনোমতে খেয়ে কোয়েলকে আস্তে করে বলেই ফেললাম,
‘শোন না, কোয়েল। বলছিলাম যে…
‘কি হয়েছে?’
‘না মানে, আদিত্যকে একবার ফোন করে খবর নিলে ভালো হতো না?’
‘হ্যাঁ, সেটাই করতে যাচ্ছিলাম আমি।’
‘তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কর না তাড়াতাড়ি। না মানে, উনি আমার জন্য এতো কিছু সহ্য করছেন আমার তো খবর নেওয়া উচিত তাই না? তাই বলছি আর কি।’
কোয়েল আমার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালে আমি কোনোরকম সামাল দেওয়ার জন্য কথাটা বলি। ও কিছু না বলে কল করে আদিত্যকে। এটা তো আমিও করতে পারতাম, নাম্বার তো ছিলো কিন্তু করাটা ঠিক হবে না ভেবে আর করিনি। হরি কাকার নাম্বারটা নিয়ে আসলে ভালো হতো বা ড্রাইভারটার..
‘কি? জ্বর এসেছে? ডাক্তার ডেকেছিলে?’
কোয়েলের কথা শুনে আমিও ঘাবড়ে গেলাম। ও ফোন রাখতেই বললো,
‘আদিত্যদার খুব জ্বর এসেছে মৌ। ডাক্তার দেখে গেছেন কিন্তু জ্বরটা নামছে না কিছুতেই। জানতাম এমনটা হবে।’
‘কোয়েল চল। আমরা ওনার বাড়িতে যাই, আমি চিনি ওনার বাড়ি।’
কোয়েল আমার হাত ধরে আটকে বললো,
‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? এতো রাতে আমরা দুটো মেয়ে আদিত্যদার বাড়ি গেলে লোকে কি বলবে বল তো? যা করার কালকে সকালে করবো। এখন চাইলেও কিছু করতে পারবো না এখন। বোঝার চেষ্টা কর।’
কোয়েলের কথাটা ফেলতে পারলাম না কিন্তু আমার মনও তো মানছে না। আজ আমার জন্য এই অবস্থা ওনার, ওনাকে ওই অবস্থায় রেখে কি করে আমি ঘুমাবো?
৩০.
‘এই কোয়েল, কোয়েল। ওঠ, সকাল হয়ে গেছে।’
কোয়েল চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তুই, তুই ঘুমাসনি?’
‘এসব কথা পরে হবে। তুই আগে যা ফ্রেশ হ। আদিত্যের বাড়ি যেতে হবে তো?’
‘ওহ, হ্যাঁ।’
কোয়েল রেডি হয়ে নিলে আমরা বেড়িয়ে পড়ি আদিত্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অসুবিধা হয়নি কারণ আমি আর কোয়েল দুজনেই ওনার বাড়ি চিনি। ওনার বাড়ি আসতেই হরি কাকা এলে আমি কোয়েলকে উপরে যেতে বলেদি।
‘আরে বউমা…
‘চুপ, চুপ, চুপ। হরি কাকা কোয়েল জানো জানতে না পারে আমি আদিত্যের স্ত্রী। ঠিক আছে?’
‘কিন্তু কেন?’
‘সব পরে বলব। আগে বলুন উনি কেমন আছেন?’
‘একদম ভালো না। জ্বর রাতের দিকে নামলেও মাঝরাত থেকে ধুম জ্বর।’
‘কি?’
আমি কথাটা শুনেই দৌঁড়ে উপরে উঠে গেলাম। ঘরে ঢুকে দেখলাম কোয়েল আদিত্যের মাথার পাশে বসে আছে। আমি এগোতেই ও উঠে গেলো।
‘আরে উঠছিস কেন? তুই বস।’
‘নাহ। তুই বস, তোকে খুঁজছে আদিত্যদা।’
আমি কোয়েলের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। কোয়েল বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে, ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো ও ব্যাপারটা ভালো ভাবে নেয়নি। যাই হোক, এখন এসব নিয়ে ভাবলে হবে না। আমি ওনার মাথার পাশে বসতেই দেখলাম উনি গোঙাচ্ছে। ওনার কানের কাছে মুখ নিতেই শুনলাম,
‘ম..মাম! মাম।’
ওহ, আমার না শাশুড়ি মায়ের নাম নিচ্ছিলেন উনি। কোয়েল তাহলে হয়তো ভুল…
‘ম..মৌ..
আমি তৎক্ষনাৎ উঠে বসলাম। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। উনি আমার নাম নিচ্ছেন? কিন্তু কেন? হয়তো, কালকে আমি ছিলাম ওনার সাথে তাই। হ্যাঁ, তাইই হবে।
‘আদি বাবা কালকে রাত থেকে মাম মানে কর্তামা আর মৌ, মানে তোমার নাম নিচ্ছে বউমা। এতদিন অবধি শুধু আমাদের কর্তামার নাম নিতো, খুব ভালোবাসে তো তাই। এখন তোমার নামও নিচ্ছে তারমানে তোমাকেও…
‘হরি কাকা তুমি এক বাটি জল আর একটা কাপড় নিয়ে আসুন। ওনাকে জলপট্টি দেবো।’
‘আমি দিয়েছিলাম রাতে ডাক্তার বাবু ওষুধ দেওয়ার পরে আর দেইনি।’
‘ঠিক আছে, এখন নিয়ে আসুন।’
উনি যেতেই কোয়েল এলো। আমি আলতো করে ওনার কপালে হাত রাখতেই বলে উঠলাম,
‘ওনার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।’
‘চিন্তা করিস না। আমি ডাক্তারবাবু কে ফোন করেছি উনি আসবেন বলেছেন। এখন তো অনেকটা সকাল, এখনই হয়তো পারবেননা কিন্তু চলে আসবেন।’
আমি ওনার গায়ে কম্বলটা ভালো ভাবে দিয়ে দিলাম। হাতটা ধরে কম্বলের ভিতরে রাখবো ঠিক তখনই দেখলাম উনি আমার হাতটা ধরে রেখেছেন। আমি সেটা দেখে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে কোয়েল বললো,
‘থাক না। জ্বরের ঘোরে ধরেছে। থাকতে দে। কিছুক্ষণ পর এমনিই ছেড়ে দেবে।’
‘তুই এতো কি করে জানলি?’
‘হ্যাঁ? আ..আমি? ইয়ে, আমারও তো এমন হয়, তাই বললাম।’
‘ওহ।’
‘হ্যাঁ। আমি আসছি, হরি কাকার থেকে জলের বাটিটা নিয়ে আসি আর বলে দি একটু সুপ করে দিতে।’
আমি বসে রইলাম ওনার পাশে। আস্তে আস্তে ওনার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেলো কোয়েলের কথা মতো। কোয়েল এতটা ভালো কিভাবে চেনে আদিত্য কে?
‘এনে।’
কোয়েল জলের বাটিটা নিয়ে এলে আমি জলপট্টি দেওয়া শুরু করি। প্রায় অনেকক্ষণ জলপট্টি দেওয়ার পর কোয়েল বললো,
‘আমি আরেকবার ডাক্তারবাবু কে কল করছি।’
আমি শুধু মাথা নাড়লাম কোয়েলের কথায়। এখন অনেকটা ঠিক লাগছে আদিত্যকে। জ্বরটা সামান্য কমেছে।
‘কালকে রাত থেকে আদিত্যদার খবর পাওয়ার পর থেকে সারাটারাত মৌ ছটফট করেছে। ও যে ঘুমাইনি তা আমি বুঝতে পেরেছি ভালোভাবে,সারারাত পায়চারি কিংবা এদিক ওদিক করে কাটিয়েছে। সকাল হতে না হতে ছুটে এলো এখানে। এদিকে আদিত্যদাও মৌয়ের নাম করছিলো। এছাড়া আসার পর থেকে মৌকে চোখে চোখে রাখছে। ব্যাপার টা কি? সবটাই কি স্বাভাবিক নাকি আমি যেটা ভাবছি সেটাই সত্যি?’
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী