একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-২২

0
11710

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সন্ধ্যায়,

আদিত্য বাংলোর বাগানে বসে আছে একা একা। মাঝেমধ্যেই গাল মুছছে হাত দিয়ে কারণ, কারণ আদিত্য কাঁদছে। হ্যাঁ, আজ মৌমিতার কথাগুলো তার একটু বেশিই খারাপ লেগেছে। মৌমিতার কিছু কথায় যেমন রাগ হচ্ছে তার থেকে বেশিরভাগ কথায় সে কষ্ট পাচ্ছে। আদিত্য কোনোদিনও খুব না কষ্ট পেলে কাঁদে না, আজ পর্যন্ত নিজের বাবার ব্যবহার ছাড়া কাওর ব্যবহারে সে কাঁদেনি। এমন সময় কেউ একজন আদিত্যের কাঁধে হাত দেয়। আদিত্য পাশ ফিরতেই অবাক হয়ে বলে ওঠে,

‘তুই এখানে?’

‘কেন? কাকে আশা করেছিলি?’

আদিত্য পাশ ফিরে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারেও চিনতে অসুবিধা হয়নি আদিত্যের ছেলেটিকে। ছেলেটি আদিত্যের পাশে বসতে নিলে আদিত্য উঠে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে যার ফলে ছেলেটি একটু অবাক হয়ে যায়। ছেলেটি আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘কি হয়েছে ভাই? তোকে আপসেট লাগছে।’

‘রাজ! আমি ঠিক নেই। একদম ঠিক নেই।’

রাজ, একটু অবাক হলেও ও আদিত্যকে কিছুক্ষণ ধরে রেখে তারপর সোজা করে জিজ্ঞেস করলো,

‘আমি কি সেই আদিত্যকে দেখছি যে কি না অলওয়েজ স্ট্রং থাকতো। কোনকিছুই তাকে ভাঙতে পারতো না এটলিস্ট বাইরে থেকে তো না। আজ এমন কি হলো যাতে তুই ঠিক নেই? কি এমন হয়ে গেলো আমি না থাকায়?’

রাজের কথা শুনে জানো হুঁশ এলো আদিত্যের। আদিত্য নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে রাজকে বললো,

‘না, নাহ। তেমন কিছুই না। আমি ঠিক আছি। তুই বল, কেমন আছিস এখন? ভুলেই তো গেছিস আমাকে।’

আদিত্যের কথা এড়ানোর ধরণ দেখে রাজ হেসে বললো,

‘তুই আমাকে লুকানোর চেষ্টা করছিস?’

রাজের কথায় আদিত্য বেঞ্চে বসে পড়ে ধপ করে, দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেকে। রাজ এবার পুরোপুরি শিওর হয়ে গেলো আদিত্যের কিছু একটা তো হয়েছে। রাজ মনে মনে ভাবলো,

‘আদি এতটা আপসেট? এতটা ওয়ারিড? কিন্তু কি নিয়ে? কিছু না, বেশ বড়ো কিছুই হয়েছে।’

রাজ আদিত্যকে টেনে তুলে দাঁড় করালো আর বললো,

‘ভিতরে চল। আমি সবটা শুনতে চাই।’

৩৯.
‘কাজটা কি ঠিক হলো মৌ?’

কোয়েলের প্রশ্নটা শুনে কোনো উত্তর দিলাম না। আজকে আদিত্যের সাথে আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। এতটা করা ঠিক হয়নি তার উপর ওনার শেষের কথাগুলো ভুলতে পারছি না।

‘দেখ মৌ, আমি যা জানি আদিত্যদা কখনও কাওর নামে মিথ্যে কথা বলে না। আর, অঙ্কিতও আমাকে বলেছিলো রণিত ছেলেটা খুব একটা সুবিধার না। ও পলিটিশিয়ানের ছেলে।’

‘হোয়াট? তুই এটা এখন আমাকে বলছিস? আগে কেন বলিসনি?’

আমি রেগে কথাটা কোয়েলকে জিজ্ঞেস করলে কোয়েল চুপ করে যায়। আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো ব্যাপারটা দেখে।

‘কি হলো, বলবি কিছু?’

‘অঙ্কিত তোকে ভালোবাসে মৌ!’

‘কি? কি বলছিস এসব?’

‘ঠিকই বলছি। ও তোকে ভালোবাসে তাই তোর সাথে রণিতকে একদমই সহ্য করতে পারে না। এই কারণেই আমি ভেবেছিলাম হয়তো তোকে রণিতের থেকে দূরে রাখার জন্য অঙ্কিত মিথ্যে বলছে কিন্তু এখন যখন আদিত্যদাও এটাই বললো তখন আমি মানতে বাধ্য হলাম।’

কোয়েলের কথা শুনে আমার মাথায় হাত পরে গেলো। আমি আন্দাজ করেছিলাম অঙ্কিতের ব্যাপারটা কিন্তু এটা যে সত্যি হবে আমি ভাবিনি। এখন? এখন কি করবো আমি?

‘কি রে? কি ভাবছিস?’

‘কি করবো এখন?’

‘কি আবার করবি? কিছুই না। জাস্ট মজা দেখ।’

আমি কোয়েলের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘মজা দেখবো মানে?’

‘(হেসে) মানে এটাই যে আদিত্যদা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাও আবার সেটা নিজে থেকেই। তাই জন্যেই তো ও বললো যে, “সবটা নতুন করে শুরু করতে চায়।” তুই পুরোনো কথাগুলো, ওর ভুলগুলো একের পর এক মনে করিয়ে দিয়ে ওকে নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী বানিয়ে দিয়েছিস। এখন হয়তো ও আরো বেশি করে নিজের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করবে।’

‘এই তো বললি কাজটা ঠিক করিনি। তাহলে এখন সাপোর্ট করছিস যে?’

কোয়েল একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো,

‘তুই যেই কষ্টটা পেয়েছিস সেটা কোনোদিনই ভোলবার নয় জানিস তো? তাই আদিত্যদাকে একটু তো কষ্ট সহ্য করতেই হবে। ও যেইরকম ব্যবহারটা তোর সাথে করেছিলো ফুলশয্যার রাতে, আজ ও সেইরকম একটা ব্যবহার তোর কাছ থেকে পেয়েছে। তুই নিজেকে এতটা খারাপ ভাবিস না।’

‘তুই ভাব সেদিন আমি নিজে থেকে ওনাকে বললাম তারপর আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। ওনার চোখের সামনে রণিত আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এলো, অঙ্কিত ওভাবে আমাকে ধরে ছিলো তা দেখার পরেও উনি কিছুই বললেন না। আমি যখন বললাম আমাকে ধরতে তখন ধরলেন আর আজ এসেছিলেন আমার উপর অধিকারবোধ দেখাতে। কার না মাথাটা গরম হয় বল তো?’

কোয়েল আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘আদিত্যদা যেহেতু কোনোদিন বিয়ের কনসেপ্ট মানেনি তাই ওর তোর প্রতি এই অধিকারবোধ, জেলাসি, অনুভূতি আর ভালোবাসা সব কিছু বুঝতেই একটু সময় লাগবে। হ্যাঁ, এখন এমন একজন যদি কেউ আসে, যে আদিত্যদাকে বোঝাবে এসব তাহলে অতো বেশি কষ্ট করতে হবে না।’

‘ভালোবাসা? হাসাস না। উনি আমাকে কোনোদিনই ভালোবাসবেন না। আর না আমি বাসতে পারবো।’

‘হায় রে, ভালোবেসে বসে আছে আবার বলছে ভালোবাসতে পারবে না। আদিত্যদার মতো এরেও যে বোঝাতে হবে এটা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কোই নাহি, আদিত্যদা আগে বুঝুক তারপর ও নিজেই ওর বউকে বুঝিয়ে দেবে।’

আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিজে নিজে কিসব বিড়বিড় করে চলেছে। আমি ওর বাহুতে হালকা একটা চাপর মেরে বললাম,

‘কি বিড়বিড় করছিস তুই?’

‘ক..কি..কিছু না। চল, ম্যামের পড়া রেডি করতে হবে।’

‘আজব।’

অন্যদিকে,

‘এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমাকে কিছু জানাসনি আদি?’

আদিত্যের সব কথা শুনে রাজ রেগে গেলে আদিত্য অভিমানের সুরে বললো,

‘তুই’ই তো কোনো যোগাযোগ রাখিসনি।’

রাজ পারে না আদিত্যের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

‘কেন রে হারামজাদা? তোর কাছে আমার কন্টাক্ট নাম্বার ছিলো না? আমি করিনি তাই তুইও করিসনি? আরে বাবা আমি তো আসতাম এক্সাম দিতে। এমন তো না যে আমার তোর সাথে ঝগড়া হয়েছে। আলাদাই অভিমান করে বসে আছিস তুই।’

রাজ আদিত্যের পাশে চুপ করে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেও যখন দেখলো আদিত্যের কোনো রিয়াকশন নেই তখন পাশে তাকাতেই দেখলো আদিত্য চুপ করে বসে আছে। রাজ আদিত্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বললো,

‘আমি আর যাচ্ছি না কোথাও। পারমানেন্ট এসে পড়েছি তোর কাছে।’

আদিত্যের কোনো রিয়াকশন নেই।

‘আরে বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই। আমি যেই অবস্থায় ছিলাম সেই সময় আমি কাউকে কিছু জানাতে পারিনি।’

‘আমি কেউ হয়ে গেছি। হম, ঠিকই আছে।’

‘বাপ আমার আমি সেটা বলিনি। তুই কেন এমন করছিস? আমি ফিরে এসেছি তো?’

আদিত্য রেগে উঠে বলতে শুরু করলো,

‘তোর এই ভুল হয়ে গেছে বলায় সবটা ঠিক হয়ে যাবে না রাজ। আমি যেই কষ্টটা পেয়েছি সেটা তুই কমাতে পারবি না। সবাই জানতো তোর আর আমার সম্পর্কটা কি রকম ছিলো। সেই ছোটোবেলা থেকে আমরা একে অপরকে ছাড়া চলিনি, একে অপরকে না বলে কোনো কিছু করিনি হরিহর আত্মা ছিলাম। আর তুই কি করলি? আমাকে না জানিয়ে হুট করে কোথায় একটা চলে গেলি। এখন এসেছিস স্যরি বলতে? আইডিয়া আছে আমি কতটা একা পরে গেছিলাম? খোঁজ রেখেছিস আমার? শুধু কো….

‘আরে ভাই আমার শান্ত হ তুই। আমি বলছি তো আমার মনের অবস্থায় ভালো ছিলো না নাহলে তোকে ছাড়া আমি কাকেই বা বলবো আমার কথা? তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? আমি নিজেও তো তোকে ছাড়া একাই ছিলাম। আমার কথা শোনার মতো, ভাবার মতো কেউ ছিলো না ভাই। এখন যখন আমি ফিরে এসেছি তখন প্লিজ ভুল বুঝিসনা আমায়।’

আদিত্যকে থামিয়ে দিয়ে রাজ আদিত্যকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো। আদিত্যও আর কথা না বাড়িয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরলে রাজ স্বস্তি পায়। কিছুক্ষণ পর আদিত্যকে ছেড়ে বলে,

‘তোর বউ তো তোকে ভালোই শিক্ষা দিয়েছে।’

‘মানে? কি বলতে চাইছিস?’

‘তুই বুঝিসনি? তুই নিজের মধ্যে নিজের পরিবর্তন বুঝিসনি আদি?’

আদিত্য রাজের কথা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কিছুই বুঝতে পারছে না সে রাজের কথা। রাজ সেটা বুঝতে পেরে আদিত্যকে বসিয়ে বললো,

‘তুই মৌমিতার সাথে যেটা করেছিস সেটা যে ভুল তুই সেটা বুঝতে পেরেছিল, শুধু এটাই না মৌমিতা যে এটাতে কতটা কষ্ট পেয়েছে সেটা আজ ওর করা ব্যবহারের তুই অনুভব করেছিস। তাই তো আমাকে বললি যে, এখন আমার স্যরি চাওয়ায় তোর পাওয়া কষ্টটা কমবে না। ঠিক যেমন তোর করা আগের ব্যবহারে মৌমিতার কষ্টটা কমবে না তোর এখনকার স্যরিতে।’

আদিত্য চুপ করে রইলো রাজের কথা শুনে। কিছু সময় পর আদিত্য নীরবতা ভেঙে বললো,

‘আমার সাথে যে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ভার্সিটিতে মৌমিতা আসার প্রথমদিন থেকেই আমি ওকে চেয়েও এভয়েড করতে পারছি না। বারবার মাথায় ঘুরছে জিয়া ওর জন্য কি না কি প্রবলেম ক্রিয়েট করবে, ওকে ফাঁসাবে তখন? তখন কি হবে? আমি চাই’ই না মৌমিতা কোনো প্রবলেম ফেস করুক।’

‘আর? আর কি কি চলছে এখন তোর মাথায়?’

আদিত্য কিছুক্ষণ ইতস্ততবোধ করতে করতে একটা সময় বলেই দেয়,

‘প্রথমে আমার মৌমিতার সাথে অঙ্কিতকে সহ্য হচ্ছিলো না কিন্তু এখন, এখন…

‘এখন রণিতের সাথেও তুই মৌমিতাকে সহ্য করতে পারছিস না। তোর মন চাইছে অঙ্কিত হোক বা রণিত তুই ছাড়া কেউই জানো মৌমিতাকে টাচ তো দূর ওর আশেপাশেও জানো না ঘেঁষে। তাই তো?’

আদিত্য হা করে রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাজ জোরে হেসে ফেলে। আদিত্য বোকার মতো মুখ করে রাজকে জিজ্ঞেস করে,

‘তুই কি করে জানলি?’

রাজ কোনোরকমে নিজের হাসি থামালেও আদিত্যের মুখ দেখে আবার হেসে ফেলে। এতে আদিত্য বিরক্ত হয়ে গেলে রাজ নিজেকে স্বাভাবিক করে। করে বলে,

‘ইউ আর ইন লাভ ব্রো! ইউ আর ফল ইন লাভ উইথ মৌমিতা।’

রাজের কথা শুনে আদিত্যের বিষম লেগে গেলো। রাজ সেটা দেখে হেসে আদিত্যকে জল দিলে আদিত্য সেটা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। তারপর চোখ বড় বড় করে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে,

‘কি বললি?’

‘তোর মত অবস্থা আমারও। আমি নিজেই ভেবে পাচ্ছি না তুই, আদিত্য ব্যানার্জী! ভালোবেসে ফেলেছে। মাই গড!’

‘ভাই, কি বলছিস এসব?’

‘দেখ আদি, আমি জানি তুই এসব প্রেম-ভালোবাসা, বিয়েতে বিশ্বাসী নস কিন্তু বিয়ে এমন একটা জিনিস যা সবাইকে বদলে দেয়। তুই মুখে বলেছিস ঠিকই তুই এই বিয়েটা মানিস না কিন্তু তোর মনে মনে এটা আছে যে মৌমিতা তোর বউ। প্রথমত, ঠিক এই জন্যেই তুই চাস না মৌমিতা কোনো প্রবলেম ফেস করুক, মৌমিতাকে কেউ হ্যারাস করুক। এটা তোর মৌমিতার উপর কর্তব্যবোধ। দ্বিতীয়ত, তুই চাস না মৌমিতা অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলুক, মিশুক। তোর কথা মতো ও চলুক এটা চাইছিস তুই। এটা তোর ওর উপর অধিকারবোধ কারণ তুই জানিস মৌমিতা তোর!’

রাজের “মৌমিতা তোর” কথাটা আদিত্যের বুকে এসে লাগলো। এই দুটো শব্দই জানো ওর মনে দাগ কেটে গেলো। ও নিজের অজান্তেই মনে মনে আওড়াতে লাগলো, “মৌমিতা আমার!” রাজ বুঝলো আদিত্য বুঝতে শুরু করেছে তাই আবারও বলতে শুরু করলো,

‘তোর মাথায় সারাক্ষন মৌমিতার কথা ঘুরছে। যেখানে আজ অবধি তুই কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবিসনি। তুই আমাকে বললি মৌমিতা পায়ে চোট পেয়ে কষ্ট পাওয়ায় তোর কষ্ট হয়েছে। আজ অবধি কোনো মেয়ের কষ্টে তোর কষ্ট হয়েছে আদি? যখন মৌমিতা ডান্স কম্পিটিশনের গ্রীন রুমে বলেছিল ওর পরিবারের জন্য মন খারাপ করছিলো তখনও তোর খারাপ লেগেছিল তাই তুই ওর পরিবারকে নিয়ে চলে এসেছিলি। মৌমিতা যখন জিতেছিলো তখন ওর খুশিতে তুই খুশি হয়েছিলি কিন্তু তার সাথে তোর খারাপও লেগেছিলো কারণ তুই ওর সাথে পারফরম্যান্স করতে পারিসনি। সিরিয়াসলি? আদিত্য ব্যানার্জী কোনো মেয়ের সাথে পারফরম্যান্স করতে না পারার জন্য কষ্ট পেয়েছে? আচ্ছা তোর শরীর খারাপের সময় কেন তুই চাইছিলি মৌমিতা তোর সাথে থাকুক?’

‘আমার ভালো লাগে ও আমার কাছে থাকলে।’

‘এক্সাক্টলি! তোর ভালো লাগে। তুই মৌমিতার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চাস কারণ ও কাছাকাছি থাকলে তোর ভালো লাগে। যেখানে জিয়াকে তুই সহ্যই করতে পারিস না, শুধু জিয়া কেন অন্য কোনো মেয়েকেই তুই সহ্য করতে পারিস না।’

আদিত্যের কাছে একে একে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। যেই প্রশ্নের উত্তর ও এতদিন খুঁজছিলো তা একে একে সব সে পেয়ে গেছে। সে সত্যি রাজের কথা অস্বীকার করতে পারছে না। তবুও রাজকে বললো,

‘তুই ভুল বুঝছিস রাজ। আমি আর ভালোবাসা? না, না আমি ভালোবাসি না। কি বলছিস এসব?’

‘আচ্ছা তুই ভালোবাসিস না? তাহলে কেন মৌমিতার ডিভোর্স দেওয়ার কথায় তোর খারাপ লেগেছে? মৌমিতার বলা প্রত্যেকটা কথায় তোর এতটাই খারাপ লেগেছে যে তোর চোখে জল এসেছে, তুই কেঁদেছিস। অঙ্কিত আর রণিতের সাথে শুধু না মৌমিতা যদি অন্য যেকোনো ছেলের সাথে ক্লোজ হয় তুই সেটা সহ্য করতে পারবি না আদি।’

‘তেমন কিছুই না রাজ। রণিত ভালো না তাই আমি মৌমিতা কে বারণ করেছি।’

‘আর অঙ্কিত?’

‘আগে অঙ্কিতের সাথে কথা ছিল না ত..তাই রাগ ছিলো এখন ক..কোনো প্রবলেম নেই।’

‘আচ্ছা তাই? ঠিক আছে তাহলে মৌমিতার সাথে তোর ডিভোর্স করিয়ে অঙ্কিতের সাথে ওর বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দে…

‘রাজ একদম বাড়াবাড়ি করবি না বলে দিলাম। লিমিট ক্রস করছিস তুই।’

আদিত্য রাজের কলার ধরে কথা বললে রাজ কোনো রিয়াক্ট করে না। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। আদিত্য নিজের রিয়াকশন বুঝে সঙ্গে সঙ্গে রাজকে ছেড়ে দিলো। রাজ আদিত্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘ভাব একটু এই বিষয়ে। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে তোর কাছে। আমি জাস্ট তোকে হেল্প করার জন্য পয়েন্টগুলো ক্লিয়ার করে দিলাম। ওকেই?’

রাজ কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলে আদিত্য চিন্তিত হয়ে পড়ে কিন্তু মৌমিতার কথা মনে পড়তেই নিজের অজান্তে ও হাসে। তারপর সেটা বুঝতে পেরেই আদিত্য চুপ করে গেলো আর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here