একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-২৫

0
10405

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আমি আমার নাম্বারটা রাজদাকে দিয়ে দিলে রাজদা ছুটে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। এদিকে আমার তো আগের ঘটনার কথা ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আমার কাঁধে হাতের স্পর্শ পেলাম….

‘কোয়েল তুই? পেয়েছিস ওনাকে?’

‘আদিত্যদার খবর রাজই দিতে পারবে মৌ। সঠিক লোকই দায়িত্ব নিয়েছে।’

আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললাম,

‘আমার কেন জানি না ভীষণ ভয় করছে জানিস তো? মনে হচ্ছে…মনে হচ্ছে কিছু একটা বাজে হতে চলেছে।’

‘আমারও তাই মনে হচ্ছে মৌ। তুই আজকে সবার সামনে রণিতকে চড় মেরে ঠিক করিসনি। এতে তুই নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলি। তোকে তো বলেছিলাম ও একজন পলিটিশিয়ানের ছেলে যা কিছু করতে পারে।’

কোয়েলের কথা শুনে কাঁচুমাচু মুখ করে হাত কচলাতে কচলাতে বললাম,

‘আসলে…মাথার ঠিক ছিলো না ওই মুহূর্তে। তাছাড়া আদিত্য কে ওরকমভাবে দেখে…

‘কিরকম ভাবে দেখে?’

‘আরে…আরে, উনি খুব রেগে ছিলেন আগের থেকে যা বুঝলাম রাজদার কথায় কিন্তু আমাদের দিকে যখন তাকিয়ে ছিলেন তখন কেমন জানো মুখটা ফ্যাকাশে লাগছিলো।’

‘হ্যাঁ তো তাতে তোর কি?’

‘আমার কি মানে? কি বলছিস তুই?’

‘ভুল কি বললাম? তোর কি যায় আসে আদিত্যদার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে থাকলে? আর তাছাড়া তুই তো রণিতকে পছন্দ করতিস তাহলে একসেপ্ট করলি না কেন? ওর জন্যেই তো তুই আদিত্যদার সাথে মিসবিহেভ করেছিলি তাই না? তাহলে একসেপ্ট করে নিতিস।’

‘তোর মাথা ঠিক আছে? কিসব আজেবাজে কথা বলছিস তুই কোয়েল? আমি একজন বিবাহিতা মেয়ে আর আদিত্য আমার স্বামী! ওনার কিছু হলে আমার খারাপ লাগে। ওনাকে কষ্ট পেতে আমি দেখতে পারবো না আর ওনাকে ছাড়া অন্য…

‘থেমে গেলি কেন? বল! বল, ওনাকে ছাড়া অন্য…অন্য কাউকে তুই একসেপ্ট করতে পারবি না নিজের লাইফে, কি? তাই তো?’

কোয়েলের কথায় রেগে গিয়ে মুখ ফসকে কি বলে ফেলেছি খেয়ালই ছিলো না। অগত্যা চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় রইলো না। কোয়েল আবার বললো,

‘নিজের লাইফে অন্য কাউকে যখন মেনে নিতেই পারবি না তখন কেন আদিত্যদাকে সুযোগটা দিচ্ছিস না মৌ? আদিত্যদা তো চায় সবটা নতুনভাবে শুরু করতে তাই না?’

‘কিন্তু আমি চাই না কোয়েল। সবটা নতুন করে শুরু করতে গেলে আমাকে ওনার আগের করা ব্যবহারগুলো ভুলতে হবে। আর তাছাড়া আমি একজন বিবাহিতা তাই এভাবে কোনো ছেলে আমাকে বিনা অধিকারে টাচ করবে সেটা আমি মেনে নেবো না। আমি ওনার জিয়ার মতো মেয়ে নই। ডিভোর্স দিয়ে দেবো বলেই যে আমাকে এরপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই তাই না?’

‘তুই কি জানিস তুই নিজেই নিজেকে ঠকাচ্ছিস?’

‘আমি কেন নিজেকে ঠকাতে যাবো?’

‘এভাবে নিজের অনুভূতিগুলোকে মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করিস না মৌ। বিয়ে জিনিসটাকে মানিস তুই। আচ্ছা মানলাম তুই আদিত্যদাকে মেনে নিবি না, পছন্দ করিস না ঘৃণা করিস। সিঁথির সিঁদুর টা তোর কাছে এতটা ইম্পরট্যান্ট কেন যে চুলের আড়ালে সেটা একটু হলেও দিয়েছিস? ডিভোর্স হলে তো এমনিতেও পড়বি না তাহলে এখনই মুছে দে। কেন মানিস এতে আদিত্যদার ক্ষতি হবে? কি হবে ও মরে গেলে?’

‘কোয়েল! মুখ সামলে কথা বল। এমনিতেই উনি কীভাবে আছেন তার কোনো খোঁজ পাইনি আমি। কোথায় আছেন কি করছেন কিচ্ছু জানি না তার মধ্যে তুই এমন….

প্রথমে রেগে জোর দিয়ে কথা বললেও শেষ মুহূর্তে কেঁদে ফেললাম। হঠাৎ করেই কোয়েল আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘তুই জানিস তোর এতটা খারাপ কেন লাগছে আজকে আদিত্যদার কথা ভেবে?’

আমি কোয়েলকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলে কোয়েল বলে,

‘কারণ জিয়া যখন আদিত্যদার সাথে ক্লোজ থাকে তখন তুইও কষ্ট পাস। আজ তোর অবস্থায় আদিত্যদা দাঁড়িয়ে তাই তুই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছিস আদিত্যদা কেমন ফীল করছে। আদিত্যদা আর তুই এখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মৌ, আমি খুব ভালো ভাবে জানি তুই আদিত্যদাকে ভালোবাসিস। এবার হতে পারে তুই এটা বুঝেও অস্বীকার করছিস, মানতে চাইছিস না আদিত্যদার আগের ভুলগুলো ভেবে কিংবা তুই নিজের অনুভূতিগুলোর অর্থ বুঝতে পারছিস না। জানিস না তোর এই অনুভূতিগুলোর নাম কি।’

কোয়েল আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা করে দাঁড় করলে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি। ও আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আমার দু-গালে হাত রেখে বলে,

‘চিন্তা করিস না আদিত্যদার কিচ্ছু হবে না। ও একদম ঠিক থাকবে। যে গেছে আদিত্যদার খোঁজ করতে সে’ই কিছু হতে দেবে না আদিত্যদার। তুই চল এখন ভার্সিটি, আজকে আর ক্লাস করা লাগবে না।’

কোয়েলের সাথে হোস্টেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমি ওকে জিজ্ঞেস করি,

‘তুই কীভাবে শিওর হচ্ছিস যে রাজদা ওনার কিছু হতে দেবে না?’

‘(হেসে) শুধু আমি না, ভার্সিটির যে কাউকে জিজ্ঞেস করেনে যারা আদিত্যদা আর রাজকে চেনে। তারা সবাই আমার মতই বলবে।’

‘এমন কেন? ওরা বেস্ট ফ্রেন্ডস তাই?’

‘ওরা হলো গিয়ে ব্রাদার ফ্রম অনাদর মাদার! বাংলা ভাষায় যদি বলিস হরিহর আত্মা। দুজন দুজনকে সামলে রাখে সবসময়ই। আদিত্যদা কেমন? এটা যদি তুই কখনো জানতে চাস, তাহলে বলবো রাজের কাছে চলে যাবি। এ টু জেড সব ইনফরমেশন দিয়ে দেবে তোকে। তাই তো বললাম, চিন্তা করিস না আদিত্যদাকে রাজ ঠিক সামলে নেবে। একমাত্র ওই পারে আদিত্যদা রেগে গেলে তাকে শান্ত করতে…আপাতত!’

‘আপাতত টা এতো জোর দিয়ে বললি কেন? আপাতত মানে?’

‘আপাতত মানে এতদিন অবধি রাজ ছাড়া আদিত্যদার রাগকে কেউ সামলাতে পারেনি কিন্তু এখন তো তুইও এসে গেছিস। তাই বললাম আর কি! (মুখ টিপে হেসে)’

‘ইয়ার্কি মারবি না একদম। হুহ! আচ্ছা তুই আদিত্যকে আদিত্যদা বলিস কিন্তু রাজদা কে রাজ কেন? কি ব্যাপার?’

আমার কথায় কোয়েল চুপ করে গেলো। যাক, একদম সঠিক জায়গায় তীর গিয়ে বিঁধেছে তাহলে। অপেক্ষা করতে লাগলাম কোয়েলের উত্তরের আশায়। ও উত্তর না দিলে ওকে আবার জিজ্ঞেস করবো ঠিক সেই সময় কোয়েল বললো,

‘আদিত্যদা, রাজ, অঙ্কিত, আমি আর জিয়া সবাই একই স্কুলে পড়তাম। আদিত্যদা, রাজ আর অঙ্কিত সেইম ক্লাসে ছিলো, আমি আর জিয়া সেইম ক্লাসে ছিলাম। সেখান থেকেই সবার সাথে সবার পরিচয়। আমি ছোটো থেকেই আমার থেকে যারা বড়ো তাদের নাম ধরে ডাকি এবার সে দাদা হোক বা দিদি। আদিত্যদাকে আমার প্যারেন্টস চেনেন তাই শিখিয়ে দিয়েছিলো দাদা বলতে। তাও প্রথম প্রথম বলতে পারতাম না তাই মা বকেছিলো। তারপর থেকে দা বলি। বুঝলি? (হেসে)’

কোয়েল হাসলো ঠিকই কিন্তু আমার কেমন জানো খটকা লাগলো। কিছু বলবো তার আগেই কোয়েল হোস্টেল এসে যাওয়ায় হোস্টেলের ভিতর ঢুকে গেলো। আমিও যেই না ঢুকতে যাবো ওমনি আমার ফোন বেজে উঠলো। ফোন বার করে দেখি রাজদা ফোন করেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রাজদা বললো,

‘আদি একদম ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না।’

‘কোথায় আছে এখন?’

‘আমার সাথেই। আমি ওর বাড়িতেই আছি কদিন তাই অসুবিধা হবে না।’

‘আ..আচ্ছা।’

রাজদা কল কেটে দিলে আমি হোস্টেলের ভিতর চলে এলাম। ওনার খবর পেলেও কেন জানো মনটা খচখচ করছে। তাই চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে একটু শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম চিন্তা করতে করতে।

৪২.
ভার্সিটিতে আগে আগে এসে পড়েছি আজকে, কোয়েল একটু দেরীতে আসবে। গতকাল রাজদার খবর দেওয়ার পর আর কোনো খবর পাইনি। হস্টেল ফিরে ঘুমিয়ে পড়ায় ঘুম থেকে উঠতে রাত হয়ে যায়। যার ফলে রাজদা কে আর ফোন করতে পারিনি আর ওনাকে ফোন করারও সাহস হয়ে ওঠেনি। জানি না আজকে উনি আসবেন কি না ভার্সিটিতে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় অঙ্কিত পাশে এসে দাঁড়ালো।

‘কোয়েল কোথায়?’

‘পরে আসবে। তুমি কোথায় ছিলে?’

‘সেটা জেনে তোর কি কোনো কাজ আছে?’

‘এভাবে কেন বলছো?’

‘যেভাবে বলার সেভাবেই বলছি।’

‘আমি জানি তুমি কালকের ঘটনার জন্য রেগে আছো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কোনো ইচ্ছা ছিলো না রণিতের সাথে কথা বলার। তোমাদের কথামতো আমি ওর থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো ঠিক করেছিলাম কিন্তু ও হুট করেই ওরকম একটা কাজ করে বসলো…

‘আর তুইও ওকে চড় মেরে দিলি?’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম অঙ্কিতের দিকে। অঙ্কিত আমার রণিতকে চড় মারা নিয়ে রেগে আছে?

‘মৌ তোর আইডিয়া নেই রণিত কতটা খারাপ। ও যে কতটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াতে পারে তুই ভাবতেও পারছিস না। তুই কাজটা একদম ঠিক করিসনি। আজ অবধি রণিতের এরমভাবে অপমান কেউ করেনি তাও আবার সবার সামনে। আরে অপমান করা তো দূর, কেউ ভাবে পর্যন্তনি। না জানি ও কি ফন্দি আঁটবে তোকে ফাঁসানোর জন্য।’

অঙ্কিতের কথাগুলো শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। কেন যে না বুঝে কাজ করি কে জানে বাবা। এখন? এখন কি হবে? অঙ্কিত তো এই ইয়ারটাই ভার্সিটিতে থাকবে তারপর কি করবো আমি? এই ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি আদিত্য আসছেন, পাশে রাজদা। আমি একটু এগোতেই ওনার হাতের দিকে চোখ গেলো আমার। ওনার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা। কিছু বলবো তো দূর ওনার কাছে পৌঁছনোর আগেই উনি প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঘরে ঢুকে গেলেন।

‘এই মৌ, এভাবে দৌঁড়ে এলি কেন?’

অঙ্কিতের কথা শুনে শুধু ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম। রাজদা যে বলেছিলেন ওনার কিছু হবে না তাহলে ওনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন? কোয়েলও বলেছিলো রাজদা সামলে নেবে তাহলে কেন ওনার হাতে ব্যান্ডেজজজ! ভীষণ রকম মাথা গরম হচ্ছে ওনার উপর। রাগ হলেই কি নিজের ক্ষতি করতে হবে? বড্ড অসহায় লাগছে এবার নিজেকে। না না, এভাবে অস্থিরতার মধ্যে থাকবো কীভাবে আমি? আমাকে ওনার সাথে কথা বলতে হবে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here