‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪৪.
আমি আর কোয়েল ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শেষ করলাম কিন্তু একবারও আদিত্য বা রাজদাকে কোথাও দেখলাম না। এদিকে অঙ্কিতও দু-তিন দিন ধরে ভার্সিটি আসছে না। ব্যাপারটা কি?
মৌমিতা: এই কোয়েল?’
কোয়েল: হ্যাঁ, বল?’
মৌমিতা: অঙ্কিতের কি খবর রে?’
কোয়েল: আব, জানি না রে ঠিক। কথা হচ্ছে না।’
মৌমিতা: কোয়েল? কিছু লুকাচ্ছিস আমার থেকে তুই?’
কোয়েল: ল..লুকাবো কেন? আর কি বা লুকাবো বল তো। আমি সত্যি জানি না যে অঙ্কিত কোথায়। শুধু অঙ্কিত? আদিত্যদা আর র.. (একটু থেমে) রাজকেও কোথাও দেখছি না।’
মৌমিতা: তুইও খেয়াল করেছিস ব্যাপারটা?’
কোয়েল: হ্যাঁ, করবো না কেন? বুঝতে পারছি না হুট করে কি হলো।’
কোয়েলের কথা শুনে আমি একটু কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। কিছু দূর হাঁটার পর কোয়েলকে সন্দেহজনক ভাবে বললাম,
মৌমিতা: আমার না একটা কথা মনে হচ্ছে জানিস তো?’
কোয়েল: কি কথা?
মৌমিতা: আদিত্য আর রাজদা কিছু একটা করতে চলেছে জানিস তো?
কোয়েল: মানে? ওরা আবার কি করবে? (অবাক হয়ে)
মৌমিতা: যেদিন থেকে রাজদা এসেছে সেদিন থেকে ওনার হাব-ভাব বদলে গেছে।
কোয়েল: (হেসে) আরে তোকে তো আমি বললাম ওরা হরিহর আত্মা। দুজন দুজনের শক্তি ওরা। এতদিন রাজ না থাকায় আদিত্যদা তেমন কিছুই বলতো না কাওকে, কাজে করে দেখাতো। বেশিরভাগ সময় নিজের বই নিয়ে বসে থাকতো কাওর সাথে তেমন কথা বলতো না। আর এখন? সারাক্ষনই রাজের সাথে বকবক করতে থাকবে।
মৌমিতা: এক্সাক্টলি! এটাই তো করা উচিত ওনার কিন্তু উনি সেটা করছেন না। আর এখানেই আমার সন্দেহ হচ্ছে।
কোয়েল: ধুর! আমি কিছু বুঝতে পারছি না তুই আমাকে খুলে বল।
মৌমিতা: আমি রাজদা আসার পর থেকেই ওনাকে ফলো করছি। রণিত যেদিন আমাকে প্রপোজ করলো সেদিনও উনি চুপ ছিলেন। চুপ করে বেরিয়ে গেছিলেন ওখান থেকে আর তারপর…
কোয়েল: তারপর?
মৌমিতা: সেদিন ওনার হাতের ব্যান্ডেজের কারণ কি জানিস?
কোয়েল: আদিত্যদা রণিতকে মেরেছে? আর এই জন্যেই ওকে দেখা যাচ্ছে না? (হাইপার হয়ে)
মৌমিতা: চুপ, চুপ, চুপ! এতো জোরে বলিস না। কেউ শুনে নিলে খারাপ হবে।
আমার কথা শুনে কোয়েল শান্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো,
কোয়েল: মাই গড! তুই এটা আমাকে আগে কেন বলিসনি?
মৌমিতা: বেকার চিন্তা করবি তাই বলিনি।
কোয়েল: মৌ! তোর জন্য আদিত্যদা ফাস্ট টাইম কোনো ছেলের গায়ে হাত তুললো। আজ অবধি ও কোনোদিনও এসব মারপিটে নিজের নাম জড়ায়নি। সব থেকে বড়ো কথা একটা মেয়ের জন্য আদিত্যদা এতোটা ফেরোসিয়াস হয়ে উঠেছে। আমি তোকে বলছি আদিত্যদা সত্যি তোকে ভালোবাসে। সহ্য করতে পারছে না ও তোকে অন্যকাওর সাথে।
মৌমিতা: উফ, কোয়েল তুইও না। কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলি বল তো? (ব্লাশ করে)
কোয়েল: উহুম উহুম, ব্লাশও করা হচ্ছে।
মৌমিতা: ধুর! যেটা বলছিলাম সেটা শোন।
কোয়েল: হম, বল।
মৌমিতা: এই কদিন আমি যতবার ওদেরকে কথা বলতে দেখেছি ততবারই আদিত্য রাজদা কে কিছু বলছিলেন আর ওনার মুখে রাগ স্পষ্ট ছিলো।
কোয়েল: ওহ এই ব্যাপার?
মৌমিতা: (অবাক হয়ে) এই ব্যাপার মানে? তোর অবাক লাগলো না ব্যাপারটা?
কোয়েল: হম, লেগেছে তো। তুই ঠিকই বলেছিস, ওদের মধ্যে কোনো একটা কিছু তো চলছে। কিছু একতা ঘোট ওরা পাকাচ্ছে কিন্তু যা করবে সব ভেবে চিন্তেই করবে আমার মনে হয়।
মৌমিতা: আমার কেন জানি না খুব টেনশন হচ্ছে। (ভয় ভয়ে)
কোয়েল: বুঝতে পারছি। আচ্ছা চল খোঁজ করে দেখি ওর দুজন এসেছে কি না। না আসলে না হয় আমি ফোন করবো আদিত্যদাকে, ওকে?
মৌমিতা: হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটাই ভালো হবে।
আমি আর কোয়েল নিজেদের জায়গা থেকে একটু এগোতেই পিছন থেকে আওয়াজ এলো,
__কোথায় যাচ্ছিস? আদিত্যকে খুঁজতে?
আমরা পিছন ফিরে দেখলাম জিয়া দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকালেই ও বাঁকা হাসে, সেই দেখে কোয়েল কিছু বলতে নিলে আমি কোয়েলকে বাঁধা দেই। এখন ওকে কিছু না বলাই ভালো, হয়তো ও খোঁজ দিতে পারবে আদিত্যের।
মৌমিতা: তোর কেন মনে হলো আমি আদিত্যকে খুঁজতে যাচ্ছি?
জিয়া: (হেসে) সারাক্ষন তো ওর পিছনেই ঘুরঘুর করিস।
মৌমিতা: (হেসে) হাসালি জিয়া। আমি সারাক্ষণ ওর পিছনে ঘুরঘুর করলে তোর কি হবে? ওটা তো তার চাকরি। আমারই চাকরির দরকার নেই রে।
আমার কথা শুনে কোয়েল মুখ টিপে হাসলে জিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
জিয়া: আমি আদিত্যের পিছনে ঘুরি না। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই একসাথে থাকি। আর এই জন্য আমি জানি ও কোথায় আছে, কি করছে। ওর সব খবর ও আমাকেই বলে কারণ আমিই ওর একমাত্র নিজের। তাই বেকার তুই ওর পিছনে পরে থাকিসনা কোনো লাভ হবে না। তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে ও ডিসার্ভ করে না।
কোয়েল: আর তুই আদিত্যদাকে ডিসার্ভ করিস না। চল মৌ!
কোয়েল আমাকে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে এলো আর রাগে গজগজ করতে থাকলো একা একা।
কোয়েল: কি মনে করে নিজেকে? গায়ে পড়া ফালতু মেয়ে একটা। সবসময় ছেলে দেখলেই গায়ে ঢলে পড়তে হবে। নেকিমাসি একটা তার আবার এত বড়ো বড়ো ডায়লগ। যেই ছেলে দেখতে সুন্দর, টাকা আছে সেই ছেলের গায়ে গিয়েই ঢলে পড়তে হবে। যত্তসব!
মৌমিতা: (আমতা আমতা করে) ইয়ে মানে, এটা কি সেদিন রাজদাকে জড়িয়ে ধরেছিলো সেটার রাগ?
আমার কথা শুনে কোয়েল আমার দিকে এমন একটা রাগী লুক দিলো যে আমি ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দাঁড়ালাম।
কোয়েল: ধুর, থাকবোই না আমি এখন এখানে।
কোয়েল গটগট করে চলে গেলে আমি হেসে ফেলি কিন্তু আবার ওনার কথা মনে পড়তেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। সেদিন কেমন জানো রাগ নিয়ে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের কেবিনে ঢুকলেন। কি করতে চলেছেন উনি?
কয়েকদিন পর,
কোয়েল: খবর পেয়েছিস কোনো?
মৌমিতা: উহুম। খোঁজ পেলে কি আর এতো টেনশন করতাম?
কোয়েল: কোথায় যেতে পারে বল তো দুজন তাও আবার এরমভাবে হুট করে? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।
মৌমিতা: ফোন করেছিলি?
কোয়েল: ধরেনি আর কল ব্যাকও করেনি। তুই কি রাজকে ফোন করেছিলি?
মৌমিতা: হ্যাঁ। একই অবস্থা। না রিসিভ করেছে আর না কল ব্যাক করেছে। কি যে করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
কোয়েল: এই মৌ, এই? ওটা আদিত্যদার বাবা না?
আমি কোয়েলের কথা শুনে ভার্সিটির গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা গাড়ি থেকে নামছেন। উনি এখানে কেন? আগেরদিন মায়ের সাথে কথা বললাম কই আমাকে তো বললেন না বাবা আসছেন? কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
কোয়েল: এইবার আমারও টেনশন হচ্ছে মৌ। হঠাৎ জ…আঙ্কেল এখানে কেন বল তো?
মৌমিতা: চল তো একটু এগিয়ে দেখি।
কোয়েল আর আমি ওনার পিছনে এগোতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা গিয়ে প্রথমে আদিত্যকে জরিয়ে ধরলেন তারপর রাজকে জড়িয়ে ধরলেন। ভার্সিটির অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই…….
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী