একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-৩০

0
11003

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৬.
আমি আর কোয়েল ক্লাস করলাম না, অপেক্ষা করতে লাগলাম আদিত্য আর রাজদার বাইরে আসার। আমি কিছুক্ষণ আগের কথা কোয়েলকে বললাম,

মৌমিতা: তুই কি খেয়াল করেছিলি পরেশবাবু বেরিয়ে যাওয়ার সময় তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো?

কোয়েল: কই না তো। উনি রাজের সাথে কথা বলার সময় আমার দিকে একবার তাকিয়েছিলেন কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও কি..??

মৌমিতা: হ্যাঁ। বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও উনি তাকিয়েছিলেন সেটাও খুব অদ্ভুত ভাবে। তোর দিকে তাকানোর পর উনি আবার রাজদার দিকে তাকান। আচ্ছা কোয়েল, উনি তোকে নিয়ে রাজদাকে কিছু বলেননি তো?

কোয়েল: (বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে) কি যা তা বলছিস বল তো তুই। আমাকে নিয়ে রাজকে কেন কিছু বলতে যাবে? আমি কে হই রাজের? (আস্তে করে)

মৌমিতা: তাহলে উনি ওভাবে তাকালেন কেন? তুই বুঝতে পারছিস না কারণ তুই দেখিসনি। আমি দেখছি ওনার চাহুনি কতটা ভয়ানক ছিলো। উনি যেভাবে অপমানিত হয়েছেন তার বদলা তো উনি নেবেনই। (ভয়ে ভয়ে)

কোয়েল: বিপদ আদিত্যদার উপর বেশি, আদিত্যদা কাজটা করেছে মৌ। তুই এখন যতটা পারিস আদিত্যদার সাথে থাকিস। আদিত্যদার মতি গতির যেমন ঠিক নেই তেমন টেম্পারেরও কোনো ঠিক নেই। হুটপাট রেগে যায় আর কিছু একটা করে বসে।

মৌমিতা: আর রাজদা? রাজদার জন্যেই আদিত্য কাজটা করতে পেরেছেন এটা কেন ভুলে যাচ্ছিস তুই? তাছাড়া জিয়া আদিত্যকে ভালোবাসে, পরেশবাবু নিজের মেয়ের ভালোবাসার তেমন কোনো ক্ষতি করবে না। দেখলি না, উনি কিন্তু বেশি কথা রাজদার সাথেই বললেন। রাজদাকেই উনি শাসিয়েছেন, আমি শিওর!

কোয়েল: ওর কথা ভাবতে হবে না তোকে। ও নিজেকে সামলাতে জানে আর কিছু হলে তো আদিত্যদা আছে, আদিত্যদা ওকে সামলে নেবে। বাদ দে ওর কথা, আমি ভাবতে চাই ন…

মৌমিতা: রাজদা!

কোয়েল কথাগুলো একনাগাড়ে বলে যাওয়ায় আমি কিছুতেই কোয়েলকে থামিয়ে বলতে পারছিলাম না যে, ওর পিছনেই রাজদা আর আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন। বাধ্য হয়ে আমি রাজদার নাম নিতেই কোয়েল চুপ হয়ে গেলো। কোয়েল পিছন ফিরতেই রাজদা কোয়েলের দিকে তাকিয়ে এক পা, দু-পা করে পিছতে পিছতে পিছন ফিরে চলে গেলেন।

মৌমিতা: এটা তুই কি বললি কোয়েল? এভাবে বলাটা তোর উচিত হয়নি।

কোয়েল এখনও রাজদার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলে আদিত্য এগিয়ে আসেন। কোয়েলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

আদিত্য: পরেশবাবু ওকে কি বলেছেন আমি জানি না। খুব সম্ভবত ওর উইক পয়েন্টকে টার্গেট করবেন। এটা শোনার পর থেকে রাজ চুপ করে গেছে কারণ ও ওর প্রিয় মানুষটাকে হারাতে চায় না আরেকবার। আমার কিছুই হবে না যদি না আমি জিয়াকে নিজের থেকে দূরে সরাই। আমি এতদিন জিয়ার এতো বাড়াবাড়ি তো সহ্য করছিলাম এই দিনটার জন্যেই। এটা তুই খুব ভালোভাবেই জানিস। কিন্তু এটা কি জানিস রাজের কাছে জিয়ার মতো কেউ নেই? পরেশবাবু অ্যাকচুয়ালি কি বলেছে ওকে, এটা জানাটা দরকার যেটা আমি এতক্ষণেও জানতে পারি…

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই কোয়েল চলে গেলো সেদিকে, যেদিকে রাজদা গেছেন। কোয়েল চলে গেলে আমি আদিত্যের দিকে তাকাই, উনি এখনও ঐদিকেই তাকিয়ে আছেন। ওনার কথাগুলো শুনে প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে অবাক হলাম। উনি এইজন্য জিয়াকে এতটা প্রশ্রয় দিয়েছিলেন?

আদিত্য: এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি হস্টেল যাবে?

মৌমিতা: আপনি জিয়াকে এতদিন প্রশ্রয় দিয়েছিলেন ওর বাবাকে শাস্তি দেওয়ার পরে সেটার লাভ নেওয়ার জন্য? আপনি জিয়াকে ইউস করছেন? জিয়া যদি সবটা জেনে যায় কি হবে ভেবেছেন?

আদিত্য: (হেসে) বিশ্বাস করবে না জিয়া, ওর বাবার কথা। আগেও এমন অনেক কিছু করেছি আমি তারপরেও জিয়ার বাবা জিয়ার জন্যেই আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

মৌমিতা: আর আপনি সেটারই সুযোগ নিয়ে আজ একাজ করলেন তাই না? কাওকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। (অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)

আদিত্য: এটাই তো জিয়াকে বুঝতে হবে। আসলে, মানুষ যতক্ষণ না নিজে পরিস্থিতির স্বীকার হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারে না, বুঝতে চায় না! তাছাড়া জিয়ার ও শাস্তি পাওয়াটা দরকার।

কথাটুকু বলে আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তেই আমি ওনাকে এ বিষয়ে আমার শেষ প্রশ্নঃটা করলাম,।

মৌমিতা: তাহলে এতো দিন কেন কিছু করলেন না? রাজদার সাহায্যের অপেক্ষা করছিলেন নাকি অন্য কোনো কারণের জ…

আমার প্রশ্ন শেষ করার আগেই উনি আমার চোখে চোখ রাখলে আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়তে শুরু করে। আমি যেটা ভাবছি সেটাই কি সত্যি? ওনার চোখ অন্তত তাই বলছে আমার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। এ কি? উনি আবার আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন? ওনাকে এগোতে দেখলে আমি পিছতে নিলেই উনি খপ করে আমার হাতটা ধরে নেন আর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলেন,

আদিত্য: (মনে মনে– তুমি যদি সত্যি বুঝতে যে যেন আমি এখনই এমনটা করলাম তাহলে কতই না ভালো হতো। আচ্ছা তোমার কি একবারও মনে হচ্ছে না যে কেন তুমি আসার পরই আমি জিয়াকে শাস্তি দিলাম? একবারও মনে এই প্রশ্নটা আসছে না কেন? কারণ আমি চাই না তোমাকে কেউ হ্যারাস করুক, এর প্রমাণ তো তুমি আগেও পেয়েছো তাহলে কেন বুঝতে পারছো না আমাকে?) রাজ যেমন নিজের প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় পায় তেমন আমিও চাই না কেউ আমার উইক পয়েন্টকে টার্গেট করুক। চলো, হস্টেল পৌঁছে দিচ্ছি।

আমার দিকে কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থেকে হুট করেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলে আমার মনে প্রশ্নগুলো আবার জেঁকে বসলো।

মৌমিতা: (মনে মনে– জিয়াকে এই সময়ই শাস্তি কেন দিলেন? আমি আসার আগেই তো দিতে পারতেন তাই না? আর একটু আগে কি বললেন উনি? কোয়েল যা বলছে সেটাই কি ঠিক তাহলে?)

আদিত্য: বসো।

ওনার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলতেই ওনার দিকে তাকালাম, উনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ইশারা করতেই দেখলাম ওনার গাড়ির দরজা উনি খুলে রেখেছেন। আমি সেটা দেখে একটু লজ্জায় পরে গেলাম।

আদিত্য: কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হ… (একটু থেমে) থ্যাংক ইউ এই শীতের মধ্যে এতক্ষন দাঁড় না করিয়ে রাখার জন্যে।

উনি উনার কথা শেষ করার আগেই আমি বসে যেতেই উনি আমাকে পিঞ্চ করে কথাটা বললেন। আমি ভেংচি কাটতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে গাড়ির জানলার উপর দুহাত রেখে তার উপর চিবুক রাখতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। উনি সামান্য হাসলেন! ওনার এমন হাসি আমার বুকে গিয়ে বিঁধলো।

আদিত্য: আমার কথা ভেবে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলে? অবশ্য এটাই স্বাভাবিক আমি মানুষটাই এমন যে আমার কথা সবাই ভাবে। (মুচকি হেসে)

মৌমিতা: অঙ্কিত অনেকদিন ধরে ভার্সিটি আসছে না। চিন্তা হচ্ছে আমার ওকে নিয়ে, কি যে হলো ওর…

আমার কথা শেষ করার আগেই আদিত্যর হাসি হাসি মুখটা নিমিষে গাম্ভীর্যে পরিণত হলো। চোয়াল শক্ত করে নাক ফুলিয়ে উনি উঠে গেলেন আমার সামনে থেকে আর আমি মুখে হাত চেপে হেসে ফেললাম। উনি ড্রাইভিং সিটে বসতেই আমি নিজের হাসি কন্ট্রোল করে বাইরের দিকে তাকালাম।

মৌমিতা: সত্যি, উনি জেলাস? তাও আবার আমাকে নিয়ে? (আদিত্যের দিকে একবার তাকিয়ে, পুনরায় চোখ সরিয়ে নিয়ে) আমি এত সহজে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো না আবেগের বশে। আমাকে বুঝতে হবে উনি কি চাইছেন, কতটা ভাবছেন আমাদের সম্পর্ককে নিয়ে। এখনই যদি ওনাকে ধরা দিয়েদি তাহলে হয়তো সবটা বদলে যেতে পারে আবার। (আদিত্যের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে) কিন্তু উনি এরকম চুপ করে গেলেন কেন? তখনের কথাটা কি একটু বেশিই বলে ফেলেছি?

ঠিক করলাম, আদিত্যের সাথে কথা বলবো। কিন্তু কি নিয়ে? কোয়েলের বিষয়েই বরং বলি।

মৌমিতা: বলছি, আমি চলে এলাম কিন্তু কোয়েল? ও তখন কোথায় গেলো কিছুই তো জানতে পারলাম না।

আদিত্য: ও ঠিক আছে, যেখানে আছে। এখন বিষয় ওর ঠিক থাকা নিয়ে নয়, ওর ঠিক রাখা নিয়ে।

মৌমিতা: মানে? কাকে ঠিক রাখবে ও আবার? (অবুঝের মতো)

আদিত্য: (এক গালে হেসে) সঠিক সময়ে সব জানবে।

ওনার উত্তরের পরিবর্তে আমি আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না। চুপ করে রইলাম। ভাবছি, জিজ্ঞেস করবো মনে যেই প্রশ্নটা চলছে? না থাক!

মৌমিতা: আচ্ছা আপনি কি রেগে…

আদিত্য: হস্টেল এসে গেছে।

আমি আদিত্যের কথা শুনে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলাম হস্টেলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িটা। ওনার কথা বলার ধরণেই বুঝতে পারলাম উনি রেগে আছেন তখনের কথাটা নিয়ে।

আদিত্য: অনেক দেরী হয়ে গেছে। হস্টেলে যাও নাহলে ম্যাডাম…

মৌমিতা: আমি তখন মজা করেই কথাটা বলেছিলাম। আপনার খারাপ লাগবে বুঝতে পারিনি, স্যরি! সাবধানে বাড়ি ফিরবেন।

কথাটা বলে দরজা খুলতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বাঁধা দিলেন। আমার দিকে হঠাৎ করে এগিয়ে এলে আমি শকড হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি। উনি আমার চোখে চোখ রেখেই আস্তে করে বলেন,

আদিত্য: সিট বেল্ট না খুলেই নেমে যাবে?

ওনার কথা শেষ হতেই বুঝতে পারলাম উনি আমার সিট বেল্টটা খুলে দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেলাম গাড়ি থেকে।

আদিত্য: ঘরে ঢুকে টেক্সট করবে আমাকে। আর অযথা হস্টেল থেকে একা বেড়াবে না। মনে থাকে জানো কথাটা।

আমি ওনার ধমক শুনে চুপচাপ চলে এলাম ঘরে। ব্যাগটা রেখে ফোন হাতে নিয়ে একটা টেক্সট করে জানলার সামনে দাঁড়ালাম। দেখলাম উনি গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে এক হাতে ফোন দেখছেন আর অন্য হাতে সিগারেট খাচ্ছেন। আমার ফোনে সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ এলে আমি সেটা ওপেন করি,

“ঘরে যাও। ঠান্ডার মধ্যে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।”

আজব ব্যাপার, উপরের দিকে না তাকিয়েও কীভাবে টের পেল আমি জানলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি? রিপ্লাই করলাম,

“আপনিও ঠান্ডার মধ্যে গাড়িতে বসে সিগারেট খান আর সিধে বাড়ি যান।”

রিপ্লাই দেওয়ার পর উনি আমার দিকে তাকালেন আর সিগারেটটা একটানে শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলেন।

“ঘরে যাও।”

“আপনি যাবেন না?”

আমার মেসেজের রিপ্লাই এলো না কোনো। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here