একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-৩১

0
10585

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৭.
কোয়েল: এভাবে এখানে একা বসে আছেন যে?

রাজ একা চুপচাপ লেকের পাশে বসে ছিলো আর এটাই রাজের কাজ যা কোয়েল জানে। তাই রাজের পিছু নেওয়ার দরকার পড়েনি কোয়েলের। প্রথম থেকেই দেখে এসেছে ও রাজ বেশিরভাগ সময় একা থাকতে ভালোবাসে। অনেকক্ষণের দ্বিধাবোধ কাটিয়ে কোয়েল আমতা আমতা করতে করতে রাজকে প্রশ্নটা করেই ফেললো। প্রতিউত্তরে শুধুমাত্র নীরবতা। কোয়েল একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে রাজ যেই বেঞ্চে বসে আছে তার অপর কোণায় বসলো।

কোয়েল: (মনে মনে– কি এতো আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে রাজ? প্রথম থেকেই দেখে এসেছি কোনো সিরিয়াস বিষয় হলে একা থাকতে। হয়তো আদিত্যদাও এই জন্যেই ওকে একা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু কি হয়েছে সেটাও তো জানাটা দরকার। আরেকবার বরং…

রাজ: সন্ধ্যে হয়ে আসছে, হস্টেল ফিরে যাও।

রাজ কোয়েলের ভাবনার মাঝখানেই শার্ট ফোল্ড করতে করতে উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো লেকটার দিকে তারপর পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। কোয়েল একটু চমকে গেলো, হঠাৎ করেই। মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে যেই না রাজের দিকে এগিয়ে যাবে তখনই…

__রাজ! তুমি এখানে কি করছো?

একটা সুন্দর দেখতে ছিমছাম চেহারার মেয়ে। রাজ সেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে এক গালে হাসলো তারপর সেদিকে ঘুরলো। মেয়েটি রাজের দিকে এগোতে শুরু করলে কোয়েল পিছতে শুরু করে। মেয়েটি রাজের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

__এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?

মেয়েটির প্রশ্নে রাজ আবারও এক গালে হেসে কোয়েলের দিকে তাকালো। কোয়েল তো শুধু বেকুবের মতো একবার রাজের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মেয়েটির দিকে। রাজের চাহুনি অনুসরণ করে মেয়েটি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো আর জিজ্ঞেস করলো,

__ও কে?

রাজ: (ভ্রু কুঁচকে) কি বললে টিনা?

টিনা: আসলে অন্ধকার তো তাই দেখতে পাচ্ছি না ঠিক ভাবে। (কাঁচুমাচু হয়ে)

রাজ: দেখতেও হবে না তোমায়। লেট’স গো।

রাজ হনহন করে বেরিয়ে গেলে টিনাও বেরিয়ে যায় রাজের পিছন পিছন কোয়েলের দিকে একবার তাকিয়ে। ওদের চলে যাওয়ার পর কোয়েল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল আড়াল করে নিজে নিজেই হাসে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উপরের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,

কোয়েল: সবসময় আমার ঠিক প্রমান হওয়াটা কি জরুরী? মাঝে মধ্যে আমিও ভুল প্রমাণিত হতে চাই কিছু কিছু জায়গায়।

কোয়েল মাথা নিচু করে চোখের জল মুছে রাস্তার দিকে এগিয়ে যায়। রাস্তায় উঠে কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটতে যেতে নিলেই কোয়েলের হাত ধরে কেউ হ্যাঁচকা টান মারে পিছন দিকে।

কোয়েল: আরেহহহহ! এভাবে কে টা…

কোয়েল এতটুকু বলেই থেমে গেলো, দুটো সবুজ চোখের মণি দেখে। এই মানুষটার চোখের মায়ায় যদি একবার কোয়েল আটকে যায় তাহলে কিছুতেই নিজেকে সেই মায়া থেকে ছাড়াতে পারে না কোয়েল হাজার চেষ্টা করেও।

কোয়েল: আপনি তো চলে গিয়েছিলেন, এখনও এখানে কি করছেন তাহলে?

কোয়েল নিজের কথার কোনো উত্তর না পেয়ে একটু রেগে বললো,

কোয়েল: রাজ! (জোরে)

রাজ: বল।

কোয়েল: আপনি এখানে কি করছেন?

রাজ: (নিশ্চুপ)

কোয়েল: আরে? তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি? একটা কথার উত্তর দিচ্ছো তো আরেকটা কথার উত্তর দিচ্ছো না। (অতিরিক্ত রেগে)

রাজ: তুই ভেবে দেখ কেন উত্তর দিচ্ছিলাম না। (মৃদু হেসে)

কোয়েল: পারছি না অতো ভাবতে। (রাগ নিয়ে)

রাজ: আমি যতদূর জানতাম তুই অচেনা লোকের সাথে আপনি করে কথা বলিস। আমার জানা মতে আমি অচেনা নই তাই উত্তর দিইনি। (চোখ টিপ দিয়ে)

কোয়েল: আজব!

রাজ: আজব কে? আমি নাকি তুই? আমি আজ এসেছি এতগুলো দিন হয়ে গেলো আর তুই কথা বলছিস কবে? আজকে, তাও আবার আপনি করে।

কোয়েল: (মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে) তুমিও তো কথা বলোনি।

রাজ: সুযোগটা কোথায় দিয়েছিস তুই আমাকে? যখনই কথা বলতে গেছি, হুড়মুড় করে কথা না বলতে দিয়েই চলে গেছিস। আমার দোষ?

কোয়েল আর কিছু উত্তর দিতে পারলো না। সত্যিই তো, সেই তো কোনোরকম সুযোগ দেয়নি কথা বলার তাহলে আজ কেন বললো নিজে থেকে কথা বলার কথা? তাহলে কি কোয়েলও আশা করে ছিলো রাজ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে?
হঠাৎ করেই রাজ কোয়েলের কোমর পেঁচিয়ে ধরে, তা বুঝতে পেরে কোয়েল তৎক্ষণাৎ রাজের দিকে তাকালে অনুভব করে রাজের গরম নিশ্বাস। রাজ আর কোয়েল এখন বেশ অনেকটাই কাছাকাছি রয়েছে।

কোয়েল: ছ..ছাড়ো আমাকে।

রাজ: হস্টেল তো এদিকে, তুই ওদিকে কোথায় যাচ্ছিলিস? (চোখ দিয়ে ইশারা করে)

কোয়েল: আব.. আমি, আমি, আমি তো…

রাজ: থাক, আর আমি আমি করা লাগবে না। গাড়িতে বস, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

রাজের কথা শুনে কোয়েল অবাক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ কোয়েলের চাহুনি দেখে হেসে ফেলে। কোয়েলের এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

রাজ: তাকিয়েই থাকবি এভাবে আমার দিকে? যাবি না? (হেসে)

কোয়েল: এসব…?

কোয়েলকে টেনে নিয়ে গিয়ে রাজ গাড়িতে বসিয়ে দিলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করতেই কোয়েল রাজকে জিজ্ঞেস করলো,

কোয়েল: গাড়িটা তোমার?

রাজ: একদমই না। আমি ড্রাইভারের কাজ করি।

কোয়েল: উফফ রাজ, মজা করো না। (বিরক্ত হয়ে)

রাজ: কেন? আমি তো এইসব কাজেরই যোগ্য তাই না? ভালো কোনো কাজ করার যোগ্যতা তো আমার নেই। (আনমনে)

কোয়েল: কি? কি উল্টো পাল্টা কথা বলছো তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? (রেগে)

রাজ: আ..আব কিছু না। এটা আমার ফ্রেন্ডের গাড়ি। (আমতা আমতা করে)

কোয়েল হাসলো রাজের কথা শুনে। রাজ চোখ বন্ধ করে না বোধক মাথা নাড়লো কোয়েলের হাসি দেখে।

কোয়েল: আজকাল ফ্রেন্ডও বানাচ্ছো তুমি? বেশ মজাদার ব্যাপার তো? (হেসে)

রাজ: ওকে ফাইন! পারি না আমি মিথ্যে বলতে। স্যরি! (ব্যর্থ হয়ে)

কোয়েল: তোমার ড্রেস আপ দেখে মনে হচ্ছে তুমি কোনো অফিসে কাজ করো।

রাজ: তোর আমার সম্পর্কে জানার ইচ্ছা আছে দেখে অবাক হচ্ছি আমি। নাহলে আমি তো জানতাম তুই আমাকে নিয়ে ভাবতে যখন চাস না তখন আমার সম্পর্কে জানারও কোনো ইচ্ছা থাকবে না। (চাপা স্বরে)

কোয়েল: আসলে তখন…

রাজ: ইটস ওকে। আমি আর এমন কে যে আমাকে নিয়ে ভাববি? হাহ! লেট ইট বি। (তাচ্ছিল্য হেসে)

কোয়েল: এতো তাড়াতাড়ি হস্টেল যাবো না। ওই দিক দিয়ে ঘুরে চলো। (রাজের হাতের উপর হাত রেখে)

রাজ নিজের হাতের উপর রাখা কোয়েলের হাতের দিকে তাকিয়ে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল হাত সরিয়ে নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। রাজ বাঁকা হেসে গাড়ি অন্যদিক দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো। এই রাস্তা দিয়ে গেলে হস্টেল পৌঁছাতে একটু বেশি সময় লাগবে। অর্থাৎ কোয়েল আরো কিছুক্ষন রাজের সাথে কথা বলতে চায়। এটা ভেবেই রাজের ভালো লাগছে কারণ যত বেশি সময় পাবে তত বেশি সুবিধা হবে নিজের অনুভূতি কোয়েলকে বোঝাতে আর কোয়েলের ওর প্রতি অনুভূতি বুঝতে।

কোয়েল: (মনে মনে– এখনই সময় রাজের থেকে সবটা জানার। আদিত্যদাও জানতে পারেনি পরেশবাবু কি বলেছেন ওকে, আমাকে কি বলবে? এটা না বলুক, এতদিন কোথায় ছিলো, কি করছিলো এগুলো অন্তত জানার চেষ্টা করি। এরপর না হয় আমার প্রতি ওর অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করবো।)

রাজ: এভাবে তাকিয়ে আছিস যে? কি বলতে চাস?

কোয়েল: গাড়িটা থামাও। সামনেই একটা চায়ের দোকান আছে, মনে আছে নিশ্চই জায়গাটা? (বাইরের দিকে তাকিয়ে)

রাজ: এই জায়গাটা ভোলার মতন নয়। (গাড়ি সাইড করে) চল।

রাজ আর কোয়েল গাড়ি থেকে নেমে চায়ের দোকানের সামনে গেল। কোয়েল গিয়ে বেঞ্চে বসলে রাজ দোকানদারকে দুটো চা দিতে বললো।

দোকানদার: আরে রাজ বাবা যে? এতদিন কোথায় ছিলে? আদি বাবা তো আমার দোকানে আসা বন্ধই করে দিয়েছিলো তুমি ছিলে না দেখে।

রাজ: এই তো আমি এসে গেছি। এবার থেকে তোমার আদি বাবা আবার আসবে। এখন তুমি দুটো চা দাও তো জলদি।

রাজ চা নিয়ে এসে কোয়েলের হাতে দিলে কোয়েল সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে ফুঁ দিতে থাকে। রাজ নিজে চা না খেয়ে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে কোয়েলকে দেখতে থাকলে কোয়েলের সেটার দিকে নজর যায়।

কোয়েল: কি ব্যাপার? আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? (রাজের দিকে তাকিয়ে)

রাজ: এখনো নিশ্চই জিভ পুড়ে যায় চা খেতে গেলে? (হেসে)

কোয়েল হেসে ফেলে রাজের কথায়। ছোটবেলায় আদিত্য আর রাজের সাথে এখানে এসে চা খেতে গেলে কোয়েলের জিভ পুড়ে যেতো। কারণ আদিত্য আর রাজ খুব তাড়াতাড়ি চা খেয়ে নিতো তাই ওদের দেখে কোয়েলও তাড়াতাড়ি করতে নিলে গরম চা থাকায় জিভ পুড়িয়ে ফেলতো।

কোয়েল: কোথায় ছিলে এই চার বছর?

রাজ: (কিছুক্ষন চুপ থেকে) সময় আসলে সবটা জানতে পারবে।

কোয়েল: সেই। তোমার বিষয়ে জানার অধিকার তো আমার নেই, আমিই ভুলে গিয়েছিলাম। (মুখ ছোটো করে)

রাজ কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বললো,

রাজ: আমার সব বিষয়ে জানার অধিকার তোর আর আদির ছাড়া কাওর নেই। তুই আমার জন্য কি, সেটা হয়তো তুই এখনও ফীল করতে পারিসনি। (উঠে দাঁড়িয়ে)

কোয়েল: তাহলে কেন কিছু না জানিয়ে ছেড়ে গেছিলে? কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি আমার সাথে। আমার কতটা খারাপ লেগেছে, আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তোমার ধারণা আছে? (কাঁপা গলায়)

রাজ: (কোয়েলের সামনে এসে) তুই একা না আমিও কষ্ট পেয়েছি। আমি, আমি সবটা বলবো তোকে, শুধু সময়ের অপেক্ষা।

কোয়েল: ঠিক আছে। এতদিন যখন অপেক্ষা করেছি তখন আরেকটু না হয় করবো কিন্তু আজ? আজ যেটা হলো সেটা নিয়ে কি বলবে তুমি? কেন এতটা রিস্ক নিতে গেলে রাজ? এখন যদি পরেশবাবু তোমাদের কোনো ক্ষতি করে? (চিন্তিত সুরে)

রাজ: (কোয়েলের দু-বাহু ধরে) আজ না হয় কাল এটা হতেই হতো কোয়েল। আদিত্য মৌমিতার প্রতি জিয়ার ব্যবহারে ভীষণ পরিমাণ রেগে ছিলো। জিয়া বাড়াবাড়ি করতো শুধুমাত্র পরেশবাবু ভার্সিটির বোর্ড মেম্বার ছিলেন তাই। এই কারণেই বোর্ড মেম্বার থেকে পরেশবাবুকে সরাতে আদি উঠে পড়ে লেগেছিল। বুঝতেই তো পারছিস, প্রেম ভালোবাসায় অবিশ্বাসী ছেলে প্রেমে হাবুডুবু খেলে যা হয় আর কি।

রাজের শেষের কথা শুনে রাজ আর কোয়েল দুজনেই হেসে দিলো। কোয়েল নিজের হাসি থামিয়ে বললো,

কোয়েল: তুমি কীভাবে হেল্প করলে আদিত্যদাকে?

রাজ: সেটা বলতে গেলে আজকে তোর হস্টেলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। (কোয়েলের দিকে ঝুঁকে) থাকবি নাকি আমার সাথে?

কোয়েল: ধ্যাৎ! ও…ওই মেয়েটা কে ছিলো তখন?

কোয়েল দূরে সরে হাত কচলাতে কচলাতে কথাটা জিজ্ঞেস করলে রাজ আলতো পায়ে কোয়েলের পিছনে দাঁড়িয়ে কানের কাছে আস্তে করে বলে,

রাজ: ওটা টিনা! আমার ওয়ান এন্ড অনলি গার্লফ্রেন্ড। (ঠোঁট চেপে)

কোয়েল কেমন জানো দমে গেলো রাজের কথাটা শুনে। মাথা নিচু করে শুধু বললো,

কোয়েল: গার্লফ্রেন্ড তো একটাই হয়। ওয়ান এন্ড অনলি বলার কি আছে?

রাজ: তাই নাকি? আমি তো জানতাম বউ একটা হয়, গার্লফ্রেন্ডও একটাই হয়? কিন্তু আমার তো…?? (কোয়েলের দিকে তাকাতেই) এই, এই, কোয়েল এটা রাস্তা!

রাজের কথা শুনে কোয়েল বুঝলো রাজ মজা করছিল। আর তা বুঝতেই রাজকে মারতে যেতে নিলে রাজ দৌঁড়ে গাড়ির কাছে চলে যায়। কোয়েলও রাজের পিছু নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়িকে কেন্দ্র করে গোলগাল ঘুরতে থাকে দুজনে। কিছু সময় পর একে অপরের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে ফেলে।

রাজ: (নিজের গাল বাড়িয়ে) নে, মেরে নে।

কোয়েল: হুহ! এটা তোলা রইলো। পরে সুদে আসলে ফেরত নেবো।

রাজ হেসে দোকানে গিয়ে টাকাটা দিয়ে আবার ফিরে এসে গাড়িতে দুজন উঠে বসলো। কোয়েল সিট বেল্ট লাগাচ্ছে সেই দেখে রাজ বললো,

রাজ: এইবার হস্টেল যাবি তো নাকি..??

কোয়েল: এইবার হস্টেলে না ফিরলে ম্যাডাম কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেবে। (হেসে)

রাজ: (মনে মনে– সময়টা যদি এখানেই দাঁড়িয়ে যেতো তাহলে আজকেই তোকে সবটা বলে দিতাম। বলে দিতাম আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আজ আমি যা কিছু সবটাই তোকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। সব সত্যি জানলে তুই কষ্ট পাবি আমি জানি কিন্তু সত্যি তো কখনো চেপে রাখা যায় না। তাই একদিন না একদিন তোকে এই কষ্টটা পেতেই হবে। খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিজের মনের কথা জানিয়ে নিজের করবো। আমার নিজেকে গড়ে তোলাটাকে সার্থক করতে হবে তো?)

কোয়েল: (রাজের চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে) কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলে?

রাজ: উহুম, কোথাও না।

রাজ নিজের মাথাটা একটু ঝাঁকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। সন্ধ্যা হতে চললো প্রায়, কোয়েল ভাবছে কথা তো আদায় করা গেলো না। তার উপর আজকে হস্টেলে গেলে বকা খেতে হবে।

রাজ: কি এতো ভাবছো?

কোয়েল: আজ আমি তোমার থেকে যা কিছুই জানতে চেয়েছি তুমি এড়িয়ে গেছো পরে বলবে বলে। সেগুলো আদৌ বলবে তো? (করুন ভাবে)

রাজ: তোকে বলবো না তো কাকে বলবো? (ছলছল চোখে)

কোয়েল: পরেশবাবু আজকে শেষে তোমাকে কি বলে গেলেন? তোমাকে কি ভয় দেখিয়েছে? প্লিজ রাজ, এটা অন্তত বলো। (চিন্তিত হয়ে)

রাজ কোয়েলের দিকে বুঝলো কোয়েল চিন্তা করছে ওকে নিয়ে। একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,

রাজ: এই সব বিষয়গুলো একে অপরের সাথে যুক্ত কোয়েল। তুই কেন, আদিও জানে না এইসব বিষয়ে। এই চার বছরে আমি কি কি ফেইস করেছি শুধু আমি জানি। একটা ঘটনা বলতে গেলে আরেকটা ঘটনা বলতে হবে নাহলে কিছুই বুঝবি না। তবুও, তুই চিন্তা করছিস দেখে বলছি, পরেশবাবু আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে।

কোয়েল: কি তোমার প্রিয় জিনিস? (শান্ত ভাবে)

কোয়েল অনেক আশা নিয়ে রাজের দিকে চেয়ে রইলো প্রশ্নটা করে। প্রশ্ন শুনে রাজও গাড়ি থামিয়ে কোয়েলের চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখই ছলছল করছে, কথা বলছে একে অপরের সাথে। অনেক না বলা কথা যা এতদিন জমে ছিলো। অনেক অনুভূতি যা বলে প্রকাশ পায় না তা হয়তো ওদের চাহুনি দ্বারা প্রকাশ পাচ্ছে।।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

বি:দ্র: ভুলবশত আমার হাত লেগে হুট করেই পার্ট টা ডিলিট হয়ে গেছে তাই আবার পোষ্ট করলাম 🙂💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here