একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️ পর্ব-৪৬

0
9012

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আদিত্য হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রাজ গিয়ে বেডে বসে পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, তখনই….কোয়েল ঘরে ঢোকে। রাজকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,

কোয়েল: তুমি ঘুমাওনি? এভাবে বসে আছো যে?

রাজ: না মাথাটা একটু ধরেছে তাই। আদি এসেছিলো ঘরে তখনই ঘুমটা ভেঙে গেছে।

কোয়েল: কিছু বলেছে তোমাকে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা সম্পর্কে?

রাজ: হম। আপসেট ছিলো খুব। বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছি বউদির কাছে।

কোয়েল: তোমার মাথা ধরেছে যখন আমি কফি আনবো?

রাজ: না, না কফি খেয়েই ঘুমিয়েছি আর খাবো না।

কোয়েল: তাহলে মৌয়ের কাছ থেকে বাম নিয়ে আসি?

রাজ: এমনি মাথাটা একটু টিপে দাও তাহলেই হবে।

কোয়েল রাজের কথা শুনে বেডের পিছনে গিয়ে রাজের মাথাটা ম্যাসাজ করে দিতে থাকে। কিছু সময় বাদে রাজ কোয়েলের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কোয়েল সেটা দেখে বিড়বিড় করে বললো,

কোয়েল: এমন ভাব করছে জানো আমি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নিয়েছি, হুহ!

রাজ: করে নিয়েছই তো! শুধু স্বীকার করছো না। ব্যাপার না সময়ের সাথে সাথে ঠিক স্বীকার করে নেবে। ভালো করে ম্যাসাজ করো আপাতত।

কোয়েল মনে মনে কিছুক্ষণ রাজকে বকে নিলো। তারপর রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলো আর আস্তে আস্তে চুলগুলো টেনে দিতে লাগলো।

অন্যদিকে,

ডক্টর আসায় কোয়েল চলে যায় আদিত্যকে ডাকতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিত্য ঘরে আসলে আমি ওনাকে একঝলক দেখেই মাথা নামিয়েনি ডক্টর আমার ক্ষত স্থানগুলো দেখে নিয়ে বললেন,

ডক্টর: চিন্তার বিষয় নেই, দুদিনে ফিট হয়ে যাবেন। শুধু আজকের রাতটা একটু কষ্টদায়ক হবে। আমি পেইনকিলার দিয়ে দিচ্ছি খাওয়া-দাওয়ার পর ওটা খেয়ে শুয়ে পরবেন আর এই মলমগুলো লাগাবেন।

ডক্টর প্রেসক্রিপশনটা আমার দিকে এগোতেই আদিত্য পিছন থেকে এসে ওটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নেয়। আদিত্যকে দেখে ডক্টর জিজ্ঞেস করেন,

ডক্টর: আপনিই কি কল করতে বলেছিলেন?

আদিত্য: হ্যাঁ।

ডক্টর: আপনি ওনার..

আদিত্য: হাজবেন্ড।

আমি ডক্টরের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই আদিত্য উত্তর দিয়ে দিলেন। আমি কি উত্তর দিতাম? ডক্টরকেই তো উনি প্রশ্ন শেষ করতে দিলেন না। ডক্টরের কাছে উনি নিজেকে আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দিলেন? কিন্তু কেন? এভাবে তো সবটা জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ডক্টর ওনাকে আরেকবার সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলে উনি প্রেসক্রিপশনটা ভালো ভাবে দেখতে থাকেন। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করি,

মৌমিতা: এটা কি ঠিক হলো?

আদিত্য: ডক্টর বাইরে গিয়ে কিছু বলবেন না। তোমাকে এই নিয়ে না ভাবলেও চলবে। চিন্তা করো না কেউ জানবে না তুমি বিবাহিত তাই অনেক প্রপোজাল পাবে। আমি ওষুধগুলো আনতে পাঠাচ্ছি।

কথাটা বলেই উনি বেরিয়ে গেলে আমার ভীষণ রাগ ওঠে। বদ লোকটা বলে কি এসব? আমি? আমি প্রপোজাল পাওয়ার জন্য চাই না কেউ জানুক আমাদের বিয়ে সম্পর্কে? নাকি উনি নিজে বারণ করে দিয়েছিলো আমাকে কাওকে আমাদের বিয়ে সম্পর্কে না জানাতে। বেমালুম আমার উপর দোষ চাপিয়ে চলে গেলো? আসুক, একটা কথা বলবো না আমি। হুহ!

আদিত্য: কি হয়েছে? এভাবে রাগে ফুঁসছো কেন? (ঘরে ঢুকে)

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলে আদিত্য এসে আমার সামনে বসেন আর গাল ধরে টেনে নিজের দিকে আমার চোখ ফেরান। আমি ভ্রু কুঁচকে, নাক ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলে উনি হেসে ফেলেন।

আদিত্য: (গাল ছেড়ে দিয়ে) ডক্টর যতই বলুক দুদিনে সেরে যাবে, আমি তোমাকে কোথাও বেরোতে দেবো না। একবারে ফেরার দিন বেরোবে।

ওনার কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আমি কেঁদে উঠতেই উনি আমাকে হালকা ধমকের সুরে বললেন,

আদিত্য: একদম কাঁদবে না আমার সামনে। এত ব্যাথা পেয়েও ঘুরতে যাওয়ার শখ ষোলো আনা হুহ!

মৌমিতা: আমি একা একা কেন থাকবো? আমিও যাবো। (বাচ্চাদের মতো করে)

আদিত্য: আগে আমি দেখব তোমার ব্যথা সেরেছে তারপর। নাও এখন রেস্ট নাও, আমি আরেকটু পরে এসে ওষুধ গুলো দিয়ে যাচ্ছি।

আদিত্য আমার আরেক পাশের গাল টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেলে আমি আমার গালে হাত দিয়ে বসে থাকি ঠোঁট উল্টে। বেশ কিছুটা সময় পর কোয়েল ঘরে আসে।

কোয়েল: কি রে ব্যাথা করছে নাকি? এরকম মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? (চিন্তিত সুরে)

মৌমিতা: তোকে কে বলেছিলো ওনাকে ডাকতে যেতে? ভালো লাগে না ব্যাঙ! (বিরক্তি নিয়ে)

কোয়েল: আমি ডাকার আগেই আদিত্যদা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলো।

মৌমিতা: তারমানে উনি নিজে থেকে এসেছিলেন?

কোয়েল: হ্যাঁ। কিন্তু হয়েছে টা কি? তোর মন খারাপ কেন?

আমি কোয়েলকে সব বললে কোয়েল ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকে। সেই সময় দরজার টোকা পরতেই কোয়েল দরজা খুলতে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে প্যাকেট থেকে ওষুধ বার করে নিয়ে আমার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে দেয়। আমি প্যাকেটটা ধরে কিছু বলবো তার আগেই অনুভব করি প্যাকেটটা ভর্তি, কিছু একটা তো আছে। প্যাকেটের ভিতরে দেখতেই দেখলাম দুটো বড়ো বড়ো চকলেট। সেটা দেখে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল হেসে বললো,

কোয়েল: আদিত্যদা এটা দিয়ে গেলো। বললো, ওষুধ বার করে নিয়ে প্যাকেটটা তোকে দিতে।

মৌমিতা: দুটোই কি..?

কোয়েল: হ্যাঁ রে বাবা দুটোই তোর। আমি একটু আসছি, অঙ্কিত ডেকেছিল আমায়। তুই কিন্তু একদম পাকামী করে নিজে নিজে নামবি না। আজকের রাতটা পুরো রেস্ট নে দেখবি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেছিস। (হেসে)

কোয়েল চলে গেলে আমি দুটো চকলেট বার করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলি।

মৌমিতা: বসেই তো আছি, একটা বরং খাই হিহিহি।

৬৮.
আদিত্য রাতে ব্যালকনিতে পায়চারি করছে। আজকে আর কেউ ঘুরতে বের হয়নি। সবাই কালকে সকাল সকাল বেরোবে আর ঠান্ডাটাও বেশ ভালো পরেছে তাই ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আদিত্যের ঘুম আসছে না কিছুতেই। রাজ ঘরে কম্বলের ভিতর থেকে মুখ বার করে জোরে হাঁক দিয়ে বললো,

রাজ: ঘুমাবি না নাকি?

আদিত্য রাজের হাঁক শুনে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে আসে। আদিত্যের মুখভঙ্গি দেখে রাজ বুঝলো আদিত্য কিছু নিয়ে চিন্তিত। তাই জিজ্ঞেস করলো,

রাজ: এই ঠান্ডার মধ্যে বাইরে কি করছিলিস, ঠান্ডা লেগে যাবে তো? এমনিতেই বৌদির এই অবস্থা তাঁর মধ্যে তুই শরীর খারাপ করলে হয়ে গেলো ট্যুরের দফারফা।

আদিত্য: ডক্টর বলেছিলো রাতে ব্যথা বাড়বে। মৌমিতা ব্যথার ওষুধটা খেয়েছে তো? কথা হয়নি আমার। এখন হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই আর ফোন করতে চাইছি না। কিন্তু যদি ব্যথার জন্য ঘুম না আসে? তখন? (অতিরিক্তিচিন্তিত সুরে)

আদিত্যকে এরকম ভাবে দেখে রাজ একপ্রকার টাস্কি খেলো। মাথাটা একটু ঝাঁকিয়ে নিয়ে বললো,

রাজ: তুই ওদের ঘরে গিয়ে একবার দেখে আয়। এখন সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।

আদিত্য: ওরা ওদের ঘরের দরজা খোলা রেখেছে নাকি? আমি এখন গিয়ে ডাকলে হয়তো ওকে নামতে হবে দরজা খুলতে। কোয়েল তো ঘুমিয়ে পরেছে। (মন খারাপ করে)

রাজ: আমি কোয়েলকে বলেছি শোয়ার আগে দরজাটা ভেজিয়ে রাখতে। ও কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে, তুই যা।

আদিত্য: তো তুই এটা আরো আগে বলবি না? ননসেন্স একটা। শুধু শুধু আমি এতক্ষণ চিন্তা করছিলাম, ডিসগাস্টিং!

আদিত্য হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আর রাজ আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,

রাজ: যাহ বাবা! তুই আমাকে না বললে বলতাম কীভাবে?

আদিত্য কোনো পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলে রাজ কিছুটা বিরক্ত হয়ে নিজে নিজে বলে,

রাজ: এই ছেলেটা বউয়ের জন্য পুরোই পাগল হয়ে গেছে। আগে যেমন ছিলো ভালোবাসায় অবিশ্বাসী, এখন হয়ে গেছে ভালোবাসায় পাগল। ধুর! আমি ঘুমাই, আমারটা তো আমাকে পাত্তাই দেয় না।

কথাটা বলেই রাজ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে।🤣 ওদিকে আদিত্য পা টিপে টিপে মৌমিতাদের ঘরে আস্তে করে ঢুকে দরজাটা শব্দ না করে ভেজিয়ে দেয়। তারপর কোয়েলকে ঘুমাতে দেখে আস্তে আস্তে মৌমিতার পাশে গিয়ে বসে। মৌমিতা একটু একটু কোঁকাচ্ছে ব্যাথায় সেটা দেখে আদিত্যর চোখ ছলছল করে ওঠে। আস্তে করে হাঁটু গেড়ে বসে মৌমিতার ক্ষত স্থানের চারিপাশে আঙুল ঘোরাতে থাকে। এমন কিছুক্ষণ করাতেই মৌমিতা শান্ত হয়ে যায় আর আদিত্য সেটা দেখে মৌমিতার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়। এরপর আদিত্য উঠে আসতে নিলেও উঠে আসতে পারে না। হাতে টান পরায় পিছনে তাকিয়ে দেখে মৌমিতা আদিত্যের একটা আঙুল ধরে রেখেছে। আদিত্য সেটা ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা না করেই আবার নিজের জায়গায় বসে পরে। বসে বসে মৌমিতাকে দেখতে দেখতেই আদিত্য বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে,

কোয়েলের ঘুমটা হঠাৎ করেই ভেঙে গেলে কোয়েল চারিদিকটা দেখে নিয়ে সোজা হয়ে শোয়। কোয়েলের চোখ ডানদিকে যেতেই কোয়েল তৎক্ষণাৎ উঠে বসে।

কোয়েল: রাজ বলেছিলো আদিত্যদা আসতে পারে কিন্তু আদিত্যদা এখনও যায়নি? রাতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল নাকি? আদিত্যদাকে কি আমি ডেকে দেবো? তাই করি, মৌ তো ঘুমাচ্ছে।

কোয়েল আস্তে করে বেড থেকে নেমে আদিত্যের পাশে বসে খুব ধীরে ধীরে আদিত্যকে ডাকতে শুরু করে। একটু ডাকতেই আদিত্যের ঘুম ভেঙে যায়। সাথে সাথে কোয়েল বলে,

কোয়েল: আদিত্যদা আমি! তুমি তাড়াতাড়ি ঘরে চলে যাও সবাই উঠে পরবে নাহলে, সকাল হয়ে গেছে।

আদিত্য: হ..হম।

কোয়েল: তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো, আমি মৌয়ের খেয়াল রাখবো ঘুমাবো না আর।

আদিত্য: আচ্ছা। তুই ওকে জানাবি না যে আমি এসেছিলাম।

আদিত্য উঠে দাঁড়ায়, একভাবে বসে থাকায় অনেকক্ষন একটু কষ্ট হয় কিন্তু ম্যানেজ করে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। গিয়ে রাজের পাশে শুয়ে পরে আর নিমিষেই ঘুমিয়ে যায় আবার। গতকালের ধকলের পর সারারাত ঠিকভাবে না ঘুমালে যা হয় আর কি।

সকাল ১০টা,

কোয়েল আমাকে ধরতে নিলে আমি ওকে আটকে বলি,

মৌমিতা: আরে আমি পারবো। ব্যাথাটা অনেক কম, নেই বললেই চলে। একটু চেষ্টা তো করতে দে আগে?

কোয়েল: ঘটনাটা গতকাল ঘটেছে, আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে আগামীকাল থেকে চেষ্টা করিস।

মৌমিতা: আচ্ছা তুই পাশে দাঁড়া আমি নিজেই দাঁড়াচ্ছি পরে গেলে ধরবি। এমনও কিছু ব্যাথা পাইনি যে নিজে দাঁড়াতে পারবো না। হুহ!

আমি সাহস নিয়ে আস্তে আস্তে দাঁড়ালাম, কষ্ট একটু হলো কিন্তু দাঁড়াতে পেরেছি। হাঁটুতে কেটে যাওয়ার ফলেই দাঁড়াতে, বসতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ওষুধগুলোর জোর আছে বটে, একদিনেই অনেকটা ব্যাথা সারিয়ে দিয়েছে।

মৌমিতা: দেখলি দাঁড়াতে পারলাম? চল এবার আমার হাতটা একটু ধর তাহলেই হবে।

কোয়েল আমার হাতটা ধরতেই আমি বেশ ভালোই হাঁটতে পারলাম। নীচে নামার সময় সিঁড়ি বাইতে একটু কষ্ট হলেও হাঁটতে কোনো অসুবিধা হয়নি। নীচে আসতেই স্যার ম্যাডাম এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছি আর কেন আসতে গেলাম। আমি সেসবের উত্তর দিয়ে এদিক ওদিক ওনাকে খুঁজছি, কোথায় উনি? বেশ কিছুক্ষণ পর আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম, সিঁড়ির দিকে তাকাতে। জ্যাকেটের স্লীভস কুনুই অবধি টানতে টানতে নামছেন। পিছন পিছন রাজদাও আসছেন পকেটে হাত গুঁজে। আমি ভালো ভাবেই জানি এসে আমাকে দেখলেই রেগে যাবেন তাই বলে কি আমি ফিট হবার চেষ্টা করবো না নাকি? হুহ! উনি বললেই হলো আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন না? আমি ঠিক যাবো, আজকে না যাই আগামীকাল থেকে সকল, দুপুর, বিকেল, রাত প্রত্যেকবেলায় বেড়াবো আর উসুল করবো দুদিনের না ঘোরা।

আদিত্য: ফিট হয়ে গেছো বলো ঘুরতে যাওয়ার জন্যে?

উনি জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে খোঁচা মেরে কথাটা বললে আমি ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নি।

আদিত্য: চকলেটগুলো খাওয়া হয়েছে?

মৌমিতা: উম, একটা বাকি আছে।

আদিত্য: বাহবা! আমি তো ভাবলাম চকলেট শেষ হয়ে প্যাকেটগুলোও খেয়ে হজম করে ফেলেছো। (মুখ টিপে হেসে)

মৌমিতা: বদ ব্যাটা! মজা নিচ্ছে।😒

আদিত্য জোরে হেসে ফেললে আমিও হালকা হাসি। সেদিন সবাই ঘুরতে গেলে আমি যাই না। আমার জন্য কোয়েলও যাবে না বললে আদিত্য বলেন উনি আমার সাথে থাকবেন আর কোয়েলকে জোর করে রাজদার সাথে পাঠিয়ে দেন, রাজদাকে সব দায়িত্ব দিয়ে। ওনার সাথে সেই সময়টুকু গল্প, খুনসুটি আর হাসাহাসি করতে করতেই কেটে যায়।

পরেরদিন,

ডক্টরের কথামতো দুদিনেই আমি ফিট। হাঁটা চলা করতে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তাই ঘুরতে যাবো বলে সকাল থেকেই আনন্দ করছি। এই দেখে আদিত্য কয়েকবার এসে আমাকে রাগিয়ে গেছে এই বলে যে, আমাকে নিয়ে যাবে না। হুহ! আমি তো যাবোই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা সকলে টাইগার হিল দেখার উদ্দেশ্য রওনা দেই। টাইগার হিলে উঠবো এমন সময় আদিত্য আমাকে বলেন,

আদিত্য: না উঠলে হয় না? রাতে যদি ব্যাথা বাড়ে?

মৌমিতা: কিচ্ছু হবে না। আপনি এতো চিন্তা করবেন না। চলুন।

আমি আদিত্যের কথা আর না শুনেই এগিয়ে আসি। এই অবধি প্রতিটা মূহূর্তে উনি আমাকে চোখে চোখে রেখেছেন, আমার কেয়ার করেছেন যে সবাই দেখেছে। আমি আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারিনি। জানি না উনি কেন এমন করছেন। উনি কি সকলকে জানিয়ে দিতে চান আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা? কথাটা মনে আসতেই আমি হাসলাম। হঠাৎই চোখ গেলো আমার জিয়ার দিকে ও খাদের অনেকটা ধারে রয়েছে। আমাদের বাকি বন্ধুরা সব এগিয়ে গেছে। ও কি করতে চাইছে? কোনো উল্টো পাল্টা কিছু না তো?

কথাটা মাথায় আসতেই আমি জিয়া বলে চিৎকার করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ও কোনো কর্ণপাত করলো না আমার কথার। ও খাদের দিকে আরো এগিয়ে গেলে আমি দ্রুত ওর কাছে যাই আর ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দি ফলে ও হুমড়ি খেয়ে পরে।। সাথে সাথে পিছন থেকে আমাকে কেউ সজোরে ধাক্কা মারে আর আমিও হুমড়ি খেয়ে পরে যায় সামনের দিকে। পিছনে তাকাতেই দেখি, আদিত্য নীচে পরে যায় মাটি ধসে।

মৌমিতা: আদিত্যওও!!

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here