একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-৮

0
12023

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

১৫.
আদিত্য জিয়ার বাড়ির সামনে এসে নিজের গাড়ি দাঁড় করালো। একটা নিশ্বাস ছেড়ে পাশে ঘুমন্ত জিয়ার দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিজের ফোন বার করে কল করলো। কল রিসিভ হতেই আদিত্য বললো,

‘আমি বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। দুজন মেইডকে পাঠান, রাইট নাও!’

আদিত্য কথাটুকু বলেই কল কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। একবার ঝুঁকে যেই দেখতে পেলো মেইন গেট দিয়ে দুজন মেইড আসছেন, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো আদিত্য। গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বললো,

‘ম্যাডামকে সাবধানে নিয়ে যান।’

‘এতই যখন চিন্তা তাহলে তো তুমিই নিয়ে যেতে পারতে, তোমার তো আর আমাদের বাড়িতে আসতে কোনো মানা নেই তাই না?’

আদিত্য পুরুষালী গলার স্বর শুনেই বিরক্ত হয়ে গেলো, তবুও সেটা প্রকাশ না করে পিছন ফিরলো। যা ভেবেছিলো তাই, জিয়ার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। জিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আদিত্য উত্তর দিলো,

‘আপনার মেয়ের জন্য এতক্ষন অবধি যতটুকু করেছি এতটাই যথেষ্ট। এর চাইতে বেশি করে ফেললে আবার আপনার মেয়ে উৎপাতটা বেশি করে করবে। এমনিতেই তো কম উৎপাত করে না আপনার মেয়ে। আপনি আপনার মেয়ের সব বাঁদরামি সহ্য করতে পারেন কিন্তু আমি করবো না। আজ যদি আপনার জায়গায় আমি থাকতাম না, তাহলে জিয়াকে চাপকে সিধা করে দিতাম নাকি এভাবে লাই দিতাম।’

‘আদিত্য!’

‘আওয়াজ নিচে! আমার সাথে আওয়াজ নিচে করে কথা বলবেন। আদিত্য ব্যানার্জীর সাথে জোর গলায় কেউ কথা বলে না কারণ আদিত্য ব্যানার্জী কখনও কোনো ভুল করে না। পারলে নিজের মেয়েকে শাসন করুন, আপনার টাকা আছে বলে একটু বেশিই লোককে নিচু করে। একটা কথা মাথায় রাখবেন, টাকায় কাওর নাম লেখা থাকে না, যার হাতে যায় তার হয়ে যায়। আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। গুড নাইট!’

আদিত্য নিজের গাড়িতে উঠে বেরিয়ে গেলে জিয়ার বাবা পরেশবাবু চোয়াল শক্ত করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন।

‘আজ জিয়ার জেদের জন্য তুমি বেঁচে যাচ্ছ আদিত্য। নাহলে আমাকে যতবার তুমি অপমান করেছো তার শাস্তি তুমি পেতে। শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য কিছু বলছি না আমি সেখানে তুমি আমার মেয়েকেও অপমান করছো? কালকেই জিয়ার সাথে কথা বলব আমি।’

মনস্থির করে পরেশবাবু হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন। এদিকে আদিত্য ড্রাইভ করে ইউনিভার্সিটিতে এসে পৌঁছেছে। গাড়ি থেকে নেমে যেই না আদিত্য ইউনিভার্সিটিতে ঢুকবে এমন সময় ওর কাছে একটা কল এলো। আদিত্য নিজের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করলো।

‘এনিথিং রং?’

ওপাশ থেকে যা উত্তর এলো তাতে আদিত্যর মাথায় হাত পরে গেলো। আদিত্য উত্তর দিলো,

‘থ্যাংক ইউ জানানোর জন্য।’

আদিত্য গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো তখন আবারও কল এলো। এইবার কলটা কোয়েলের।

‘বল।’

‘মৌ কে খুঁজে পাচ্ছি না আমি কোথাও। তুমি দেখেছো?’

‘আমি দেখছি। তুই রাখ আর নিশ্চিন্তে থাক।’

ফোন রাখতেই আদিত্যের কিছুক্ষণ আগের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। যখন আদিত্য জিয়ার কথায় তাল মিলিয়ে ওকে ”আই লাভ ইউ” বলেছিল।

‘মৌমিতা কি তাহলে আমাদের পুরো কনভারসেশনটাই শুনেছিলো? হয়তো তাই। কাজটা ঠিক করিনি আমি কিন্তু আমি কি করে জানবো মৌমিতা আমাদের কথা শুনছে? তখন জিয়ার মন রাখার জন্য কথাগুলো না বললেও হতো না। শিট!’

আদিত্য নিজের গাড়িতে একটা ঘুষি মেরে, উঠে পড়লো গাড়িতে।

‘আমার কেন এতো খারাপ লাগছে? আমি তো আর কিছু ইচ্ছে করে করিনি। সবটাই তো পরিস্থিতির চাপে হয়ে গেছে। ওহ গড কি হচ্ছে আমার সাথে?’

আদিত্য আর কিছু না ভেবে ড্রাইভ করা শুরু করলো ফোনে গুগল ম্যাপ খুলে। মাঝে মধ্যেই কপাল ডলছে দু-আঙ্গুল দিয়ে কারণ মাথা যন্ত্রণা করছে আদিত্যের। গুগল ম্যাপ ফলো করে একটা নির্জন মাঠের সামনে এসে দাঁড়ালো আদিত্য। পাশে ছোটো একটা শিব মন্দির আছে আর বসার বেঞ্চ তার পাশে। পুরো অন্ধকার জায়গা হলেও মন্দিরের আলোয় বসার জায়গাটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে ওইদিকেই এগিয়ে গেলো কারণ ওই বসার জায়গায় একটা মেয়ে চুপচাপ বসে আছে।

১৬.
‘আমি কেন এতো বোকা? শুধুমাত্র কালকের কয়েকটা ঘটনা, কিছু কথার কারণে আমি কি করে ভেবে নিলাম উনি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন? আমাকে মেনে নেবেন? উনি তো আমাকে বলেননি যে উনি আমাকে মেনে নেবেন তাহলে আমি কেন ভাবতে গেলাম? কেন বারবার ভুলে যাই আমি যে আমার কপালে এতো সুখ লেখাই নেই। শুধুমাত্র নিজের কারণে আজ আমি কষ্ট পাচ্ছি, শুধুমাত্র নিজের কারণে। কিন্তু আর না, এরপর থেকে আমি শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববো অন্য কাউকে নিয়ে না।’

চোখের জল হাত দিয়ে মুছতেই একটা হাত আমার দিকে রুমাল বাড়িয়ে দিলো যা দেখে আমি চমকে উঠলাম। এই নির্জন জায়গায় হঠাৎ কে আমার পাশে বসলো এটা ভেবে ভয় পেয়ে সেদিকে তাকালাম। আদিত্য? উনি এখানে কি করছেন? তাও আবার এই সময়? আর জানলেনই বা কি করে আমি এখানে আছি?

‘রুমালটা নাও। তখন থেকে কি এভাবেই কেঁদে চলেছো নাকি?’

আমার প্রশ্নগুলোর মাঝেই উনি প্রশ্ন করলে আমি আর কিছু বললাম না। ওনার সাথে কথা বলার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলেছি। অনিচ্ছায় বললাম,

‘লাগবে না। ধন্যবাদ।’

‘দেখো মৌমিতা আমি জানি না তুমি কতটা কি শুনেছো। আমি শুধু এটাই বলবো আমি জিয়াকে যা বলেছি ওর মন র…

‘আপনি আমায় কেন কৈফিয়ত দিচ্ছেন? আমি তো আপনার কেউ হইনা। আপনার আমাকে কোনোরকম কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না। আমার কোনো প্রয়োজন নেই এসব শোনার।’

আমি ওনাকে থামিয়ে কথাগুলো বললে উনি আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে রইলেন চুপ করে। আমি তা দেখেও না দেখার ভান করে উঠে দাঁড়ালাম, বললাম,

‘আজকের পর থেকে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলার। আপনি তো প্রথম দিনেই বলে দিয়েছিলেন আমি জানো নিজের আসল পরিচয় না দেই, আমি সেটাই মেনে চলবো। সত্যি তো, আপনরা বড়লোক মানুষ আপনাদের সাথে আমার মতো মেয়েদের যায় না। এইটাও হয়তো একটা কারণ বিয়েটা অস্বীকার করার। যাক, আমি সেসব কথায় আর যাচ্ছি না। আসি!’

আমি এগোতেই উনি পিছন থেকে বললেন,

‘অনেক রাত হয়ে গেছে। আমার গাড়িতে বসো আমি হস্টেল ছেড়ে দেবো।’

‘আমি যখন একা আসতে পেরেছি তখন একা যেতেও পারবো। আপনার হেল্প তো দূর, আমি আপনার সাথে কোনোরকম সম্পর্কই রাখতে চাইছি না মিস্টার আদিত্য ব্যানার্জী। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার জীবনটা নরক করে দেওয়ার জন্যে। আমি সারাজীবন আপনার কাছে এর জন্যে ঋণী থাকবো।’

কথাটুকু বলে আমি আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলাম না জোর পায়ে হেঁটে চলে এলাম। ওনার সাথে কথা বলার মতো কোনোরকম ইচ্ছাটাই আমার মরে গেছে।

অন্যদিকে,

মৌমিতা আপন মনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে আর আদিত্য তার পিছন পিছন গাড়ি নিয়ে আসছে যা হয়তো মৌমিতা টেরও পাচ্ছে না। মৌমিতা হোস্টেলে পৌঁছে গেলে আদিত্য হোস্টেলের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। গাড়িতে হেলান দিয়ে কোয়েল কে ফোন করলো,

‘মৌমিতা হস্টেলে পৌঁছে গেছে। তুই ওখানেই আছিস তো? আমি আসছি তোকে নিতে।’

‘আচ্ছা। কিন্তু মৌ কে পেলে কোথায়?’

‘গিয়ে বলছি।’

‘ফাইন। তাড়াতাড়ি এসো আমার এখানে আর ভালো লাগছে না একা একা।’

‘কামিং!’

ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আদিত্য। আজ প্রথমবার জিয়ার ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। মন চাইছে উচিত শিক্ষা দিতে।

‘কালকে জিয়ার কপালে বহুত দুঃখ আছে। আজ ড্রান্ক ছিলো বলে কিচ্ছু বলিনি মানে এই না যে অন্যদিনও ছেড়ে দেবো। সাহস হয় কি করে মৌমিতাকে এইভাবে বারবার ইনসাল্ট করার?মৌমিতাকে ইনসাল্ট করার শাস্তি ও পাবে। ও আমার ওয়াইফ…

আদিত্য থেমে গেলো। দু-হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সে বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার মধ্যে এই পরিবর্তন কেন? যেই মেয়েটাকে বিয়ের রাতে ঠিক করে দেখে পর্যন্তনি আজ তাকে কেউ অপমান করলে রাগ হচ্ছে, তার মন খারাপ হলে নিজের খারাপ লাগছে আবার মুখ ফসকে ওয়াইফও বলে ফেলছে। কেন হচ্ছে এমন? ও তো মানে না বিয়ের কনসেপ্ট তাই তো মেনে নেয়নি এই হুটহাট করা বিয়ে। গ্রহণ করেনি নিজের স্ত্রী হিসাবে মৌমিতাকে।

‘পাগল হয়ে যাবো এবার আমি এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে।’

আদিত্য গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় উপরের দিকে তাকালে মৌমিতাকে জানলার সামনে দেখতে পায়। মৌমিতা সরে গেলে আদিত্য হতাশ হয়ে পড়ে কিন্তু কিছু করার নেই তার। এভাবেই আদিত্য ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। কোয়েলকে হস্টেলে ড্রপ করে নিজের বাড়ি চলে যায় আর ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। মাথাটা ঠান্ডা করা প্রয়োজন কিন্তু কোনোমতেই মাথা থেকে মৌমিতা বা তার ভাবনাকে বার করতে পারছে না সে। ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে আদিত্য।

এদিকে কোয়েল হস্টেলে ফিরে এসে দেখে মৌমিতা শুয়ে পড়েছে তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। আদিত্যও তেমন ভালো ভাবে কিছুই বলেনি। কোয়েল সেই বিষয়ে না ভেবে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

সকালে,

কোয়েলের ঘুম ভাঙতেই কোয়েল ঘরে চোখ বুলিয়ে মৌমিতাকে দেখতে পায়না। ওয়াশরুমেও চেক করে পায়না। ঘরে এসে পড়ার ডেস্কে চোখ গেলে একটা সাদা কাগজের উপর চোখ পড়ে। সেটায় লেখা আছে,

‘কোলু,
আমি কয়েকদিনের জন্য কলকাতা যাচ্ছি। কিছু দরকার আছে আমার। তুই চিন্তা করিস না আমি কলে কন্টাক্ট করবো তোর সাথে। দুদিনের মধ্যেই ফিরে আসবো, আসলে কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজ হঠাৎ করে পরে গেছিলো তাই এভাবে চলে এলাম। তুই ঘুমাচ্ছিলিস তাই আর ডাকিনি। চিন্তা করিস না কিন্তু এর নিজের খেয়াল রাখিস, সবে জ্বর থেকে উঠলি।

কোয়েল চিঠিটা পরে মনে মনে ভাবলো,

‘ভালোই করেছিস। তোর একটা রিফ্রেশমেন্টের দরকার। আমি জানি তুই মুড ঠিক করার জন্যই গেছিস।’

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here