একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-১০

0
12632

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

১৯.
‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন্ট! আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ডান্স কম্পিটিশনে সামিল হওয়ার জন্য। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে আমাদের এই কম্পিটিশন। তাই আমি আপনাদের অবগত করতে চাইছি কম্পিটিশনের রাউন্ড সম্পর্কে। আমাদের ফাস্ট রাউন্ড হলো – যেকোনো ধরণের ইস্টার্ন ডান্স অর্থাৎ ভারতনাট্যম, কথক, ওডিশি ইত্যাদি। সেকেন্ড রাউন্ড হলো – বলিউড সং। এবং থার্ড মানে আমাদের ফাইনাল রাউন্ড যা একটু কঠিন হতে চলেছে। এই ফাইনাল রাউন্ডের দুটো ভাগ আছে, প্রথম ভাগে – আমাদের কম্পিটিটররা তাদের পছন্দসই পার্টনারদের সাথে হিপহপ বা সালসা করবে এবং দ্বিতীয় ভাগে – ব্যালে করবে। এই সব রাউন্ড হওয়ার পর জাজেস্টরা ঠিক করবেন কে আমাদের এই কম্পিটিশনের উইনার। আর যদি কোনো পার্টিসিপেন্টএর নাচে অনেক ভুলত্রুটি থাকে তাহলে জাজেস্টরা তাদের এলিমিনেট করতে পারে।’

হোস্টের কথা শেষ হতেই পুরো হল ঘর হাততালির আওয়াজে ভরে উঠলো। হোস্ট হাসি মুখে স্টেজ থেকে নেমে গেলে স্টেজের উপর থাকা স্পট লাইট আবার অফ করে দেওয়া হয়।

‘অ্যানাউন্সমেন্ট তো হয়ে গেলো, তুই রেডি তো?’

আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গয়না ঠিক করছিলাম সে সময় কোয়েল আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করায় আমি ওর দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলাম,

‘আমি অনেক আগেই পুরোপুরি রেডি হয়ে গেছি কোয়েল। এই নিয়ে তুই চার থেকে পাঁচ বার কথাটা জিজ্ঞেস করলি। এত নার্ভাস হচ্ছিস কেন বল তো তুই? কম্পিটিশনে ভাগ আমি না তুই নিয়েছিস মনে হচ্ছে তোর নার্ভাস হওয়া দেখে।’

‘সেটাই তো। যেখানে কম্পিটিশনে নামই দিতে চাইছিলি না তুই, কান্নাকাটি করছিলিস সেখানে আজ কম্পিটিশনের দিন তুই এতো কনফিডেন্ট! কি ব্যাপার? এই কনফিডেন্ট হওয়ার রহস্য কি? আমি যা আন্দাজ করছি তাই নাকি? হম, হম, হম?’

কোয়েল আমাকে কুনুই দিয়ে হালকা গুঁতো মারতে মারতে কথাটা বললে আমি অস্বস্তিতে পরে যাই। ওকে ধমক দিয়ে বলি,

‘এই তুই চুপ করবি? আমাকে আমার ডান্স ফোকাস করতে দে। খালি আজে বাজে কথা।’

কোয়েল কে কাটিয়ে গ্রীন রুম থেকে বেরিয়ে এলাম লাজুক হাসি নিয়ে। কোয়েল যদি এভাবে দেখতো তাহলে আবার উল্টো পাল্টা বলা শুরু করতো। উফ, পারেও বটে মেয়েটা। কোয়েল কে নাহয় বুঝতে দিলাম না যে আমি নার্ভাস কিন্তু আসলে তো তা নয়। আমার তো ভীষণ নার্ভাস লাগছে, আমি পারবো তো?

হঠাৎ কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলে আমি পিছন ফিরে তাকাই, অবাক হইনা কারণ এ কদিনে তার স্পর্শ আমি খুব ভালো ভাবেই চিনে গেছি। আমি কিছু বলতে যাবো সেই মুহূর্তে কোয়েল চলে এলো,

‘পরে কথা বলিস এখন চল, গ্রীন রুমে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম এসেছেন।’

কোয়েলের কথা শুনে আমি কোয়েলের সাথে চলে এলাম শুধু একবার পিছন দিকে তাকিয়ে। গ্রীন রুমে আসতেই ম্যাডাম কে দেখে আমি নমস্কার করলাম। তারপর পিছিয়ে এসে দেখলাম আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে যারা যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই উপস্থিত আছে, জিয়াও! আমি কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল আমার হাত শক্ত করে ধরে আমার পাশে দাঁড়ালো। ম্যাডাম বলতে শুরু করলেন,

‘আমি শুধুমাত্র এখানে তোমাদের এটাই বলতে এসেছি যে আমাদের ইউনিভার্সিটির প্রেস্টিজ তোমাদের হাতে, এইভেবে জানো নার্ভাস হয়ো না। এটা সামান্য একটা কম্পিটিশন, তোমরা এখানে তোমাদের বেস্ট টা দেবে দ্যাট সেট। ইউনিভার্সিটির প্রেস্টিজ কথাটা মাথাতেই রাখবে না, নরমাল কম্পিটিশনের মতো দেখবে তাহলেই লক্ষ্য পূরণ হবে। আর হ্যাঁ, একে অপরকে বিট করার কথা তো মাথাতেও আনবে না কারণ এতে ক্ষতি বই লাভ হবে না। অল দ্য বেস্ট মাই স্টুডেন্টস!’

ম্যাডামের কথায় একটু হলেও কনফিডেন্স আর রিলিফ, দুটোই পেলাম।

‘চিন্তা করিস না সব ঠিক হবে। আর ম্যাডামের লাস্ট কথাটা মনে রাখিস, কাওকে টেক্কা দেওয়ার জন্য এই কম্পিটিশন নয়।’

আমি বুঝলাম কোয়েল কথাটা জিয়াকে টোন করেই বললো কারণ কথাটা বেশ জোরে বলেছে কোয়েল, যার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। আমি তো পাশেই ছিলাম, আস্তে বললেই পারতো। আমি জিয়ার দিকে তাকাতেই ও মুখ ফিরিয়ে নিলো, ওর হাবভাবে বোঝাই যাচ্ছে ম্যাডামের লাস্ট কথার গুরুত্ব ও দেবে না। যায় হোক, সেসব না ভেবে আমার নিজের ডান্সে ফোকাস করা উচিত।

২০.
আমাদের নেক্সট পার্টিসিপেট “মৌমিতা ব্যানার্জী।” উনি আমাদের সামনে পারফরম্যান্স করবেন, ভারতনাট্যম।

‘এ মৌ, যা তোর নাম ডেকেছে।’

আমি স্টেজে উঠবো ঠিক সে সময় দেখলাম জিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে দিয়ে যেতেই ও একটা হাত আমার সামনে বাড়িয়ে, রাস্তা আটকে বললো,

‘এখনও সময় আছে, পার্টিসিপেট করিস না। জিততে তো পারবিই না বরং নিজের ক্ষতি হয়ে যাবে।’

‘এই থ্রেড টা কিছুদিন আগে দিলেও ভেবে দেখতাম। এখন আমার ভাবার সময় নেই। স্যরি!’

আমি কথাটা জিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে মাথা নিচু করে এগোতেই দেখলাম জিয়া একটা পা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি লাফ দিয়ে ওর পা যে উপেক্ষা করে পিছন ফিরে বললাম,

‘পুরোনো টেকনিক! নিউ কিছু ট্রাই কর।’

কথাটা বলে স্টেজের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম হাত জোড় করে। আড়চোখে দেখলাম জিয়া দাঁত মুখ শক্ত করে চলে গেলো আর কোয়েল দু-হাত দিয়ে অল দ্য বেস্ট বললো। আমি ভারতনাট্যমের প্রণাম দিয়ে স্টেজ ছুঁয়ে মাথায় ঠেকিয়ে নিজের নাচ শুরু করলাম।

‘জিয়া জ্বালে জান জ্বালে
জিয়া জ্বালে জান জ্বালে
ন্যায়নোতালে ধুয়ান চালে
ধুয়ান চালে’

ঘোর কাটলো হাততালির আওয়াজে। নমস্কার করে, নাচের প্রণাম জানিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আস্তেই কোয়েল জড়িয়ে ধরলো।

‘ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ ভালো হয়েছে। এক্সপ্রেশন, স্টেপস সব একদম ঠিকঠাক।’

‘নেক্সট রাউন্ড কখন?’

‘চিন্তা করিস না দেরী আছে। সব তো প্রোগ্রাম শুরু হলো, এখন সকাল এগারোটা বাজে। আজকেই যেহেতু রেজাল্ট দেবে তাই প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত বারোটা হয়ে যাবে। একদিনেই শেষ করার প্ল্যান করেছে আর তাছাড়া খুব একটা বেশি পার্টিসিপেন্টস না তো।’

‘আমি যাই ফ্রেশ হয়ে নেই।’

‘হ্যাঁ।’

২১.
স্টেজ অন্ধকার, হঠাৎই স্টেজের উপর একটা সুর ভেসে এলো এবং তার সাথে নুপুরের শব্দ। আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছে একটি মেয়ে স্টেজের উপর স্টেপস করছে। স্পট লাইট পরলো তখন যখন গান শুরু হলো,

‘মেরা ঝুমকা উঠা কে লায়া ইয়ার ভে
জো গিরা থা বারেলি কে বাজার মে
মেইন তো ঠুমকা লাগাকে শারমা গায়ি
বলি ঘুঙ্গার বাধা দেঙে মেইন আ গায়ি
মুঝকো নাচাকে নাচলে
আজা নাচলে নাচলে মেরে …
ইয়ার তু নাচলে
ঝানাক ঝানাক ঝাঙ্কার…’

সেকেন্ড রাউন্ডের বলিউড সংগের পারফরম্যান্সও শেষ করলাম কোনো ভুলত্রুটি ছাড়া। মনে কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারবো যেমন প্র্যাক্টিস করেছিলাম তেমনই নিজের বেস্ট টা দিতে পেরেছি কিন্তু… শেষ রাউন্ডে কি করবো?

‘কি রে? কি ভাবিস এতো?’

কোয়েল কখন চলে এসেছে গ্রীন রুমে টেরই পাইনি। ওকে বললাম,

‘ফাইনাল রাউন্ড নিয়ে ভাবছিলাম।’

‘ভাবা বন্ধ করে কিছু খেয়েনে। দুপুর হয়ে গেছে জানিস না নাকি?’

‘এখন আবার খেতে হবে? আমি পারবো না, নামবেই না গলা দিয়ে কিছু।’

‘ম্যাডাম কি বলেছে মনে নেই? বেশি নার্ভাস হতে না আর পেটে খিদে থাকলে কোনো কাজ ঠিক করে হয় না বুঝলি? চুপচাপ খা।’

কোয়েলের কথায় বাধ্য হয়ে ওর আনা খাওয়ার খেতে শুরু করলাম। ও বললো,

‘তোর ফাইনাল রাউন্ডের ফাস্ট পার্ট বিকেলে আর সেকেন্ড মে বি ওই ৮টা নাগাদ। আর এখন বাজে দুপুর তিনটে। তাই চুপচাপ খা, হজম হয়ে যাবে।’

‘আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। ফাস্ট রাউন্ডের থেকে সেকেন্ড রাউন্ডের এতটা ডিস্টেন্স মানে চার ঘণ্টা। সেকেন্ড রাউন্ড থেকে পার্ট ওয়ানের ডিস্টেন্স ওটার থেকে একটু কম মানে ছটা আবার পার্ট টুয়ের ডিস্টেন্স আরেকটু কম মানে ৮টা। এমন কেন? চার ঘণ্টা, তিন ঘন্টা আর দু ঘন্টা? সিরিজ চলছে নাকি?’

আমার কথা শুনে কোয়েল হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে গেলো তাও হাসি থামছে না। জল খেয়ে আবার হাসছে। বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি ওর হাসি দেখে।😒

‘বাপ রে বাপ! তুই এতো হিসাবও করে ফেললি? বসে বসে কি এই হিসাব করছিলি নাকি?’

‘বললে বল না হলে বাদ দে।😒’

‘আরে বাবা, শোন শোন বলছি। আসলে প্রথমে যতজন পার্টিসিপেট করেছিলো ততজন তো আর নেই।’

‘মানে?’

‘মানে কয়েকজন ডিসকলিফাই হয়ে গেছে।’

‘অ্যা?’

‘ভয়ের কিছু হয়নি। আসলে কয়েকজনের নাচতে নাচতে ঘুঙুর খুলে গেছে যেটা রুলসের বাইরে। নাচের সময় পা থেকে ঘুঙুর খুলে গেলে ডিসকলিফাই তো হবেই, এটাই তো নিয়ম। নাচের এক্সাম এর সময়েও তো তাই হয়। আর তাছাড়া কয়েকজন আসেনি, তাদের জায়গায় নতুন করে অনেকজন নাম দিয়েছে সোর্স খাটিয়ে। আর যাদের নাচ একদমই জাজেস্টদের পছন্দ হচ্ছে না মানে ভুলভাল স্টেপ বেশি তাদের এলিমিনেট করা হয়েছে। এটা তো বলেইছিলো কম্পিটিশন শুরু হওয়ার আগে। তাই একটু সময়ের গোলমাল হয়েছে।’

‘সব বুঝলাম কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না।’

‘আবার কি?’

‘তুই জানলি কি করে নাচ করাকালীন ঘুঙুর খুলে গেলে তাকে ডিসকলিফাই করা হয়? এক্সাম এর সময় হলেও সেম রুল। এটা তো নাচের রুলস, তুই তো বলেছিলি নাচ সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই তাহলে?’

‘ইয়ে, এটা ওই হোস্টটা বলেছিল সেটাই বললাম আর কি। যাই হোক, আমি আসছি হ্যাঁ। বাইরে কি হচ্ছে দেখি। তুই কনসার্নট্রেট কর ভালো ভাবে।’

পড়ি কি মরি করে কোয়েল চলে গেলো। জানো কিছু লুকোচ্ছে, এমনটা কেন? থাক, এখন এসব ভাবার সময় নেই। ওদিকে, গ্রীন রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে কোয়েল বড়ো একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here