#এক্কা_দোক্কা – ১০
আভা ইসলাম রাত্রি
বৌভাতে ঐশীকে সবার সঙ্গে পরিচয় করানোর পূর্বেই জুভান সিদ্ধান্ত নিল, সে ঐশীর মেডিকেল টেস্ট করাবে। সারোগেসির জন্যে ঐশীর ইন্টার্নাল বডি কতটুকু সুস্থ আছে তা একবার যাচাই করে দেখা দরকার। সেদিন রাতে জুভান ঐশীকে জানিয়ে দিল কাল সকালে তৈরি হয়ে থাকতে। সেই সাথে এও জানিয়ে দিল, সারোগেসির জন্যে ঐশীর সমস্ত মেডিক্যাল চেকাপ আগামীকালই হবে। সব শুনে ঐশী খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেল। এখনই বাচ্চা পেটে এলে ঐশীর সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে যাবে। সেদিন সারারাত ঐশীর ঘুম এলো না। দুচোখে দুশ্চিন্তার সাগর বইয়ে দিয়ে ভাবল নিরন্তর। তবে এক জবরদস্ত পরিকল্পনা ঐশীর কুটিল মস্তিষ্কে আঘাত হানতেই ঐশীর ঠোঁটে বক্র হাসি ফুটলো। এবার মরবে সাপ আর ভাঙবে না লাঠি! হা হা হা!
উত্তপ্ত সূর্যের তেজস্বী রশ্মি চারপাশ ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। পিচডালা সড়কটাতেও আজ খালি পা ফেলা মুশকিল। পা’জোড়া বোধহয় আজ জ্বলেই যাবে। এই গরমেও জুভানের গায়ে ভারী টিশার্ট। টি শার্টের হাতা কনুই অব্দি গোটানো। শরীরে তীব্র ম্যান পারফিউমের সুগন্ধ। চুলগুলো উচুঁ হয়ে সেট করা। সর্বোপরি সে এক মহা সুদর্শন পুরুষ। এতক্ষণ ঐশী বিছানায় বসে ফ্যালফ্যাল চোখে জুভানের দিকে চেয়ে ছিল। মাথাটা ডানে হালকা কাত করে, হাত দুটি বিছানায় ঠেসে রেখে এক দৃষ্টিতে জুভানের তৈরি হওয়া দেখছে। মনেমনে দুবার ‘ মা শা আল্লাহ ‘ পড়েছে। মানুষটা বোধহয় একটু বেশিই সুন্দর। জনপ্রিয় গায়করা কি সবাই এরকম? একদম চকলেট বয় টাইপ? হবে বোধহয়। জুভান আয়নার প্রতিবিম্বে ঐশীর চাওনি লক্ষ্য করলো। তার কপালে ভাঁজ ফুটল। ঘন ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হল। সে টিশার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে খোঁটা দিল,
-” যেসব মেয়েরা আমার দিকে ওমন করে তাকিয়ে থাকে তাদের কাছে আমি সচারাচর ক্রাশবয়। বাট হোয়াটস অ্যাবাউট ইউ, ঐশী? তোমার চোখেও কি আমি সেই টাইপের কিছু? ”
জুভানের টিটকারী শুনে ঐশীর কাশি চলে এল। খ্যাকখ্যাক করে কয়েকবার কাশি দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো সে। সোজা হয়ে বসে ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,
-” কক্ষণো না। আই ডোন্ট লাইক বয়েজ। ”
জুভান হাসলো। বড্ড সুন্দর দেখালো সে হাসি। জুভান ধীর পায়ে ঐশীর দিকে এগিয়ে এলো। ঐশীর দুপাশে দুহাত ঠেসে রেখে মুখোমুখি হলো ঐশীর দু নয়নের। আজ ঐশীর চোখে জুভান কোনোরূপ রহস্য দেখতে পারছে না। কেমন যেনো নার্ভাস নার্ভাস চোখ তার। ঐশীর চোখে নিজ কথা দ্বারা নার্ভাসনেস তৈরি করতে পেরে জুভান মনেমনে অনেক খানি গর্ববোধ করলো। ঐশীকে আরো একটুখানি নার্ভাস করে দিতে জুভান ওর একটু কাছে ঘেঁষে এলো। ঐশীর নার্ভাস চোখে চোখ রেখে বললো,
-” বাট ইউ হ্যাড বিন স্টেয়ারিং অ্যাট মি ফর অ্যা লং টাইম, মিস ঐশী খন্দকার। এখনো কি বলবে, ইউ ডোন্ট লাইক বয়েজ? ”
ঐশী নার্ভাসনেস এবার দ্বিগুণ হল। সে মাথাটা খানিক পিঁছিয়ে খ্যাক করে বলল,
-” সরে দাঁড়ান তো। এমন করে গায়ে পড়ে যাচ্ছেন কেন? অসভ্য লোক। ”
‘ অসভ্য লোক ‘ শব্দটা বোধহয় জুভানের খুব একটা পছন্দ হলো না। সে বিনা বাক্য ক্ষয়ে মুখখানা থমথমে করে সরে দাঁড়ালো। মুখে কালো রঙের মাস্ক পরিধান করে ঐশীর উদ্দেশ্যে বললো,
-” দেরি হচ্ছে আমাদের। চলো। ”
ঐশী বুঝতে পারলো, জুভান রাগ করছে। এতে ঐশীর কি? ঐশী পাত্তা দিল না। সে গায়ে ওড়না জড়িয়ে জুভানের পিছু পিছু চললো।
গাড়িতে উঠে ঐশী নিজে নিজে গাড়ীর সিটবেল্ট লাগাল। জুভান প্রথমে ভেবেছিল, ঐশী সিটবেল্ট লাগাতে পারবে না। আশ্রমের মেয়ে, কখনো গাড়িতে উঠেছে বলে মনে হয়না। তবে জুভানকে ভুল প্রমাণ করে ঐশী ঠিকই ঠিকঠাক করে সিটবেল্ট লাগিয়ে ফেলল। জুভান মুখে চুইংগাম পুড়ে নিয়ে গাড়ি চালু করল।
গাইনী বিভাগের মহিলা ডাক্তার জুভানের বাল্যকালের বন্ধু। জুভান তার কেবিনে প্রবেশ করতেই হিয়া নামক মহিলা ডাক্তারটি চেয়ার থেকে উঠে এসে জুভানকে জড়িয়ে ধরলো। জুভান একহাতে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কেমন আছিস? ”
হিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
-” ভালো। তোর কি খবর? ”
হিয়ার চোখ ঐশীর দিকে পড়তেই সে আগের প্রশ্নকে উহ্য করে মিহি হেসে বললো,
-” তোর ওয়াইফ, জুভান? ”
জুভান গম্ভীর সুরে বললো,
-” হ্যাঁ। ”
– ” বাহ্, কবে বিয়ে করলি রে? আমাকে জানালি না অব্দি? কষ্ট পেলাম। ”
জুভান মুখের উপর থেকে মাস্ক খুলতে খুলতে জানালো,
-” কাউকেই জানানো হয়নি। গোপনে বিয়ে করেছি। এখন এসব বাদ দে। তোকে যে কথাটা বলেছিলাম, সেটা বল। ”
হিয়া এবার একটু সিরিয়াস হলো। বললো,
-” জুভান আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না, তুই কেনো সারোগেসি পদ্ধতি নিবি? তোরা ন্যাচারালিই তো বেবি নিতে পারিস। ইনফ্যাক্ট এটাই ভালো হবে। সো হোয়াই আর ইউ ডুইং দিস বুলশিট? ”
জুভান এবার বিরক্ত হলো। হিয়ার সবসময় এই বেশি বোঝার অভ্যাসটা জুভানের পছন্দ না। জুভান পায়ের উপর পা তুলে বসল। ক্রমাগত পা নাড়াতে নাড়াতে কর্কশ কন্ঠে জানালো,
-” বেশি বোঝার অভ্যাস তোর কবে যাবে, হিয়া? যা করতে বলেছি, জাস্ট ডু দ্যাট। নো মোর সিলি টক, ওকে? ”
জুভান রেগে যাচ্ছে দেখে হিয়া দমে গেল। সে আগের কথা ছেড়ে বলল,
-” আচ্ছা, আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি। সেগুলো আজই করিয়ে নে। রিপোর্ট কালকের মধ্যেই দিয়ে দিবে। তখন একবার এসে জেনে নিস বাকি বিষয়গুলো। ”
জুভান মাথা হেলালো। ঐশীর এতক্ষণ চুপটি করে শুনছিল হিয়ার কথাগুলো। রিপোর্ট কালকের মধ্যে দিয়ে দিবে। তাই যা করার আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে তাকে। হিয়ার কথামত জুভান ঐশীকে নিয়ে টেস্ট করাতে নিয়ে গেল।
জুভান মাস্ক পড়ে আছে। ইচ্ছে করেই চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছে। একটু অদ্ভুত বিহেভ করছে যাতে মানুষজন তাকে চিনতে না পারে। ঐশী জুভানের এসব পাগলামি হা হয়ে দেখছিল। টেস্ট করাতে যখন ঐশীকে তার স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করা হল তখন ঐশী অকপটে বললো,
-” ইজহার জুভান মির্জা। ”
নার্সটা ঐশীর স্বামীর নাম শুনে ঐশীর মুখের দিকে তাকালো। শকুনি চোখে ঐশীর আগাগোড়া লক্ষ করে বললো,
-” আপনার স্বামী কি দ্য গ্রেট সিঙ্গার, ইজহার জুভান মির্জা? ফাজলামি করার জায়গা পান না? উনি এখনো সিঙ্গেল, জানেন না সেটা? আপনার সাহস দেখে তো আমি আশ্চর্য হচ্ছি। সত্যি করে বলুন, আপনার স্বামীর নাম কি? ”
ঐশী বড়ই বিরক্ত হলো। জুভান দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ইচ্ছে করেই ঐশীর পাশে দাঁড়ায় নি সে। হসপিটালে সে কোনোরূপ সিনক্রিয়েট চাইছে না। তাই ঐশী আর নার্সের মধ্যে কথোপকথন সমূহ তার কানে আসছে না। নার্সের কথা শুনে ঐশী একবার বাঁকা চোখে জুভানের দিকে তাকালো। ফেমাস লোক বিয়ে করলে এই এক ঝামেলা। বিরক্তিকর! ঐশী কড়া কণ্ঠে বললো,
-“আশ্চর্য্য, এই পৃথিবীতে শুধু একজনের নামই কি ইজহার জুভান মির্জা? আর আমার স্বামীর নাম নিয়ে আমি কেনো মিথ্যে বলব। আপনার কাজ আপনি করুন। আমার সত্য মিথ্যা আপনাকে যাচাই করতে হবে না। আর বেশী তর্ক করলে আমি কিন্তু আপনার নামে উপরতলায় কমপ্লেইন করবো। মাইন্ড ইট! ”
‘কমপ্লেইন’ কথাটা শুনে নার্সের মুখের রক্ত শুকিয়ে গেল। সে এক ঢোক গলাধঃকরণ করে বলল,
-” সরি, ম্যাম। এই নিন আপনার টিকেট। কেবিনটা
ঐদিকে। ”
ঐশী ছোঁ দিয়ে নার্সের হাত থেকে টিকেটটা নিয়ে নিল। অতঃপর নার্সের দেখিয়ে দেওয়া কেবিনে চলে গেল সে।
টেস্টের রিপোর্ট একটু পরেই কম্পিউটারাইজড হবে। ঐশী প্ল্যান অনুযায়ী এগুলো। জুভান তখন কার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ঐশী পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছোট বাচ্চাকে ডেকে আনল। তার কানেকানে কিছু একটা বললো। বাচ্চাটার হাতে একটা ক্যাটবেরি চকলেট ধরিয়ে দিলে বাচ্চাটা হেসে উঠে। ঐশীর গালে চুমু খেয়ে দৌঁড়ে সেই নার্সটার কাছে যায়। তার সামনে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-” আন্টি, আন্টি, ওই দেখ দ্য গ্রেট সিঙ্গার জুভান দাঁড়িয়ে আছে। কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। ”
বাচ্চাটার কথা শুনে নার্স এর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সে মুখে হাত চেপে বাচ্চাটার দেখানো লোকটার দিকে তাকাল। পেছন থেকে অবিকল জুভানের বডি স্ট্রাকচার। নার্স বিস্ময়ে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হতে হাত ছাড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-” ও আমার ভগবান। জুভান! জুভান আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কি স্বপ্নে দেখছি? ”
নার্সের চিৎকার শুনে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই চোখ বড়বড় করে জুভানের দিকে তাকাল। ঐশী পেছনে দাঁড়িয়ে কুটিল হাসছে। খেলা জমে উঠেছে তবে!
#চলবে
আশা করি, গল্পটা এবার আর বোরিং লাগবে না। এখন থেকে প্রতি পর্বে ধামাকা থাকবে। সুতরাং, পড়তে থাকুন।
গল্পটা যারা পড়বেন, রেসপন্স করার অনুরোধ। পেইজের রিচ অনেক কমে গেছে। আপনাদের একটা রিয়েক্ট কিংবা কমেন্টই পারে পেইজের রিচ বাড়াতে। ধন্যবাদ!
লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri