#এক্কা_দোক্কা – ১১
আভা ইসলাম রাত্রি
নার্সের চিৎকার হসপিটালে উপস্থিত সবার কাছে পৌঁছে গেছে। একে একে সবাই জুভানের দিকে তাকাচ্ছে। সত্যি জুভান তো? সবাই যখন মনেমনে সত্যতা যাচাই করতে ব্যস্ত তখন নার্স মহিলাটা নিজের গায়ের ইউনিফর্ম খুলে টেবিলের উপর রেখে জুভানের দিকে দৌঁড়ে গেল। নার্সের দেখাদেখি আরো অনেকেই তার পিছু পিছু দৌঁড় লাগাল। নার্স পেছন থেকে ডেকে উঠে,
-” মিস্টার জুভান মির্জা? এই যে, শুনছেন? জুভান? ”
কারো কণ্ঠে নিজের নামখানা শুনে জুভান বেশ অবাকই হলো। সে ফোন কানে রেখে পেছন ফিরে তাকাল। তার পেছনে এত মানুষ দেখে জুভান একপ্রকার হোঁচট খেল। সে ফোন কেটে পকেটে পুড়ে ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকাল। এদের দেখে ত মনে হচ্ছে, সবাই জুভানকে চিনে গেছে! ওহ, শিট! জুভান মাথায় চাপড় মারল। এখন কি হবে? আজ সাথে করে বডিগার্ডও আনেনি। জুভান তাড়াহুড়ো করে ফোন লাগালো তার গাড়ির ড্রাইভারকে। বডিগার্ডকে মেসেজ করে বিষয়টা জানিয়ে দিল। ড্রাইভার এসে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপারটা সামলাক পরে নাহয় বডিগার্ড এসে এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। জুভানের ফোন করতে করতে ততক্ষণে সবাই জুভানকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সবার হাতে ফোন নাহলে নোটবুক। একটা সেলফি কিংবা একটা অটোগ্রাফের জন্যে সবাই জুভানের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এত এত মানুষের নিঃশ্বাসের গরমে জুভান অতিষ্ট হয়ে পড়ল। তবুও হাসিমুখে একে একে সবার অনুরোধ সে পূরণ করতে লাগলো। এসব দেখে তার অচেতন মন মনেমনে প্রশ্ন করল, ‘ ঐশী কোথায়? ‘
সম্পূর্ণ হল এই মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে গেছে। সবাই জুভানের কাছে ভিড় জমিয়েছে। ঐশী এবার কাজে লেগে পড়ল। হল ঘরের সব সাদা লাইট নিভিয়ে দিয়ে হালকা ভোল্টেজের একটা লাইট চালু করল। একটু আগে নার্সের রেখে যাওয়া ইউনিফর্ম আর মাস্ক পরিধান করে হাতে একটা গ্লাভস লাগিয়ে নিল। এই গ্লাভস তার ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেক্ট করতে বাঁধা দেবে। ঐশী সব ঠিকঠাক করে কম্পিউটারের সামনে এসে দাঁড়াল। সকল ফাইল ঘেঁটে ঐশীর রিপোর্ট বের করল। তাছাড়া আরেকটা নাম সার্চ দিল, ‘ মিথিলা সিকদার ‘
এখানে আসার আগে ওয়েটিং রুমে একজন দম্পতিকে সে লক্ষ্য করেছিল। তারা দুজনেই ভীষন চিন্তিত ছিলেন। মহিলাটা স্বামীর হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলছিল, ‘ আমাদের বাচ্চা এবার আসবে তো, জাহিদ? সারোগেসি রিপোর্টে কি আবারও বলবে, যে আমরা এখনো প্রস্তুত নই। প্লিজ বলো না জাহিদ? ”
ঐশী তখনই ভেবে নিয়েছিল, তার রিপোর্ট অদলবদল করবে এই মহিলার সাথে। ঐশী তখনই মনেমনে পুরো প্ল্যান সাজিয়ে নেয়। কম্পিউটারে কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাটি করতেই কাঙ্ক্ষিত নামটা পেয়ে যায় ঐশী। মহিলাটার রিপোর্ট এবারেও নেগেটিভ এসেছে। ঐশীর ঠোঁটে কুটিল হাস! তার এই অদলবদলের খেলা একজনকে যেরূপ মা যাওয়ার আশ্বাস দিবে অন্যজনকে সেইরূপ তার বদলা নিতে সাহায্য করবে। ঐশী নিজের রিপোর্ট এর নাম বদলে মিথিলা সিকদার করে ফেলল। সেইসাথে মিথিলা সিকদারের রিপোর্ট নিজের নামে করে ফেলল। ব্যাস, কাজ হয়ে গেছে। ঐশী যখন পেছনে ফিরবে ঠিক তখন পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,
-” ঘর এত অন্ধকার কেনো? লাইট কে নিভিয়েছে? আর এখানের সবাই কোথায় গেলো? এই সাদিয়া, যাও ডেকে নিয়ে আসো সবাইকে। ”
ঐশী বুঝতে পারলো, সেই নার্সের নাম সাদিয়া। ঐশী কথা বললো না। চুপচাপ মাথা হেলিয়ে সায় দিল। লোকটা চলে গেল। ঐশী ইউনিফর্মসহ বাথরুমে চলে গেল। সব কাপড় বদলে ঠিকঠাক হয়ে বের হয়ে এল। নার্সের ইউনিফর্ম আবারও নিজ স্থানে রেখে দিল। তবে অতি সাবধানতা অবলম্বন করে। নার্সটা যেভাবে কাপড় রেখে গেছিল, ঠিক সেইভাবে ঐশী কাপড় রাখলো। অতঃপর গেটের বাইরে বেরী পড়ল।
দূর থেকে জুভানকে লক্ষ্য করে ঐশী। জুভানের মুখের মাস্ক থুতনিতে কাছে স্থান পেয়েছে। কপাল-নাক ঘেমে চৌচির। গায়ের টিশার্টটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। বডি গার্ড জুভানকে আগলে নিয়ে সবাইকে সরাচ্ছে। একে একে সবাই সরে গেলে জুভান গাড়িতে উঠে বসে। ঐশী ব্যাগ থেকে ফোন বের করে জুভানকে কল করে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে জুভান। ঐশী হ্যালো বলতেই জুভান হন্তদন্ত হয়ে বলে,
-” কোথায় তুমি, ঐশী? ”
-” আমি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আপনাকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেনো? কোথায় আপনি? ”
-” ওকে, ওকে! তুমি এক্ষুনি মেইন রোডে চলে এসো। আমি গাড়ি নিয়ে সেখানেই ওয়েট করছি। এখানে গাড়িতে উঠলে আবার পাবলিকের হাতে পড়ার চান্স আছে। সো, কাম ফাস্ট। ”
ঐশী জুভানের কথামত মেইন রোডে এসে গাড়িতে উঠলো। জুভান পেছনে বসে আছে। ঐশী গাড়িতে উঠলেই জুভান ঐশীর হাতে চেপে ধরে শক্তকরে। ঐশীর নরম দেহ নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,
-” কোথায় ছিলে তুমি? ”
জুভানের কণ্ঠে রাগ। ঐশী থতমত কণ্ঠে বলে,
-” আমি, আমি তো হসপিটালে ছিলাম। ”
জুভান ঐশীর কথা বিশ্বাস করে না। ঐশীর হাত আরো একটু চেপে ধরে বলে,
-” মিথ্যা কথা। আমি শাহাদাতকে পাঠিয়ে ছিলাম ভেতরে। ও তো তোমায় কোথাও খুঁজে পায়নি। সত্য করে বলো, কোথায় ছিলে তুমি? ”
ঐশী কিছুক্ষণ ভাবলো। অতঃপর খানিকটা নতকণ্ঠে বলল,
-” ওয়া-ওয়াশরুমে ছিলাম। ”
জুভান ভ্রু কুঞ্চিত করে। ঐশী এখনো কেনো মিথ্যা বলছে, বিষয়টা জুভানের বোধগম্য হয়না। সে ঐশীর হাত ছেড়ে দেয়। ঐশী ছিটকে পড়ে পাশে। জুভান নিজের কপাল চুলকায়। একটু পরও যখন রাগ কমে না, সে তখন ফোন হাতে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঐশী কিছুক্ষণ স্থির চোখে জুভানের দিকে তাকায়। জুভানের হাত অস্থির হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে ঘুরছে। সে রেগে আছে, তার রাগ ঐশীর জন্যে বিপদজনক। ঐশী চিন্তায় পড়ে গেল। এখন থেকে তাকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। জুভানের সন্দেহ হয় এমন কিছুই সে করতে পারবে না। নাহলে তার সমস্ত প্ল্যান মাঠে মারা পড়বে। ঐশী জানালার দিয়ে পথের দিকে চেয়ে রয়।
____________________________
জুভান-ঐশীর বৌভাতের জন্যে ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়েছে। জুভানের বিশাল বাসভবনেও করা হচ্ছে নানা আয়োজন। সম্পূর্ণ বাড়ি সুসজ্জিত করা হচ্ছে। যখন বৌভাতের আমন্ত্রনলিস্ট তৈরি করা হচ্ছিল তখন ঐশী সেখানে বসে ছিল। আমজাদ হোসেন চৌধুরী একে একে সব অতিথিদের লিস্ট তৈরি করছেন। ঐশী মনেমনে ভাবছে, বৌভাতে সে আসবে তো? ঐশী ভাবলো একবার জিজ্ঞেস করবে! পরক্ষণেই ভাবলো, না, থাক। কারো মনে সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। সবার লিস্ট তৈরি করে আমজাদ হোসেন দম ফেললেন। লিস্টটা পুনরায় যাচাই করার জন্যে আমজাদ হোসেন সবার নাম পড়লেন। যখন তিনি বললেন, ‘ রিয়াদ তালুকদার ‘ তখনই ঐশীর কপাল কুঁচকে গেল। সে আসছে তবে! এই বৌভাতে রিয়াদ তালুকদারের মরণ যজ্ঞ আয়োজন করা হবে। এই বৌভাতের পর তার জীবন জাহান্নামে পরিণত হবে। ঐশীর ঠোঁটে রহস্যময় হাস! একে একে সবাই মরবে! ঐশী নিজে তাদের এক জগন্য মৃত্যু দিবে। কেউ বাঁচবে না, কেউ না।
#চলবে
টিকা দিয়েছি আজ। তাই এটুকুই লিখতে পারলাম।
গল্পটা যারা পড়বেন, রেসপন্স করবেন প্লিজ। আপনাদের ছোট্ট রিয়েক্ট-কমেন্ট পারে আমাকে উৎসাহ প্রদান করতে। ধন্যবাদ!
লেখিকার পাঠকমহলে
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri