এক্কা দোক্কা পর্ব-১৪

0
888

#এক্কা_দোক্কা – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

‘ খুন’ শব্দটা খুব ভারী! সচরাচর মানুষ খুন শব্দটা শুনলেই ভয়ে কেমন যেন নেতিয়ে যায়। দুর্বলমনা মানুষজন বুকে দুবার বিসমিল্লাহ বলে ফুঁ দিয়ে এই আপদকে এড়িয়ে যেতে চান। তবে খুন করা বিষয়টা ততটা সহজ না। বেশ শক্ত কাজ বটে! খুন সবাই করতে পারে! কিন্তু খুনের প্রমাণ সবাই লুকাতে পারেনা। খুন করার পর হাত কাপা যাবে না, বুকের ভেতরে ধরাশ-ধরাশ করা যাবে না, কপালে ঘাম জমা যাবে না। বরং ঠান্ডা মাথায়, বিন্যস্ত আত্মা কর্তৃক যারা খুন করে প্রমাণ লুটপাট করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা হলেন মহামানব। তাদের পায়ের ধূলো নেওয়া উচিত!

‘রিয়াদ তালুকদার’ দেশের শীর্ষনেতাদের একজন! যার গায়ের দুপাশে সবসময় দুজন দেহরক্ষী বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে। তাকে হত্যা করা চাট্টিখানি কথা নয়। আর এই কঠিন কাজই করতে যাচ্ছে ঐশী! জ্বর একটু কমতেই সে নিজের পার্সোনাল ল্যাপটপ খুলে বসে পড়েছে। উদ্দেশ্যে রিয়াদ তালুকদারের ব্যক্তিগত তথ্য জানা! ঐশী একটা আইডেন্টিফাই সফটওয়্যারে রিয়াদ তালুকদারের নাম্বার লিখে সার্চ দিল। লোডিং হচ্ছে! অপেক্ষা করতে হলো কিছুক্ষণ! সফটওয়্যারটা খুব স্লো। তবে ভালো কাজ করে। ঐশী কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে এটা। কয়েক সেকেন্ড পেরুতেই স্ক্রিনজুড়ে দৃশ্যমান হলো বলিষ্ট দেহের এক পুরুষ! দেহের সাথে জড়ানো সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি! তবে মনটা এই পাঞ্জাবির মতোই ধবধবে কালো! ঐশী সফটওয়্যার ঘেঁটে রিয়াদ তালুকদারের সম্পূর্ণ তথ্য জেনে নিল।
নাম – রিয়াদ তালুকদার
বাবার নাম – মুরশেদ তালুকদার
মায়ের নাম – রাবেয়া বেগম
পেশা – ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট নেতা!
বাসস্থান- তালুকদার মঞ্জিল, বনানী- ১০১২
মোবাইল নম্বর – ০১৮………..

এটুকু তথ্যই যথেষ্ট! ঐশী ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল। শরীরটা আবার ম্যাজম্যাজ করছে। বোধহয় জ্বর পুনরায় গায়ে আক্রমন করতে চাইছে! শীত লাগছে খুব! গোসল করা দরকার! শীতে শীতে কাটাকাটি হবে! জ্বর কমবে সেইসাথে শরীরটাও চাঙ্গা হবে। একদিনেই কেমন যেন গা থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে! ঐশী গায়ের কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাড়াল। পা চলছে না। বোধকরি, এখনি লুটিয়ে পড়লো সে। ঐশী গায়ে ওড়না চাপিয়ে বাথরুমে চলে গেল। পানি আগে থেকেই মেশিন কর্তৃক গরম করে রাখা! বড়লোক বাড়ির বড়লোকী কারবার! সারাজীবন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা মেয়ে বিয়ের পর টাটকা গরম পানি দিয়ে গোসল করছে! একেই হয়তো কপাল বলে!
_________________________
ইউশা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মাথায় ঝুলিয়ে রাখল। একটু ম্যামসাহেব ম্যামসাহেব লাগছে ওকে। জুভান তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে আছে ইউশার দিকে। মেয়েটির এমন হেয়ালিপনা তার ঠিক সহ্য হচ্ছে না। ইউশা চমৎকার হেসে বললো,
-” এত উত্তেজিত হচ্ছো কেন? তোমার গাড়িতে লিফট দেবে? আমার গাড়িটা আজ ওয়ার্কশপে দিয়েছি।”
জুভান শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে ইউশার দিকে না তাকিয়ে বললো,
-” ইম্পসিবল! গাড়ি না থাকলে রিকশা করে যাও। ”
অতঃপর ইউশাকে একপ্রকার অগ্রাহ্য করে সে চোখে সানগ্লাস পড়ে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগুলো। গাড়ি স্টার্ট দিলে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা টাইপ ইউশা গাড়ির সামনের সিটে উঠে বসল। জুভান থমকে গেল। রাগে তার কান লাল হয়ে যায়। এবারেও হয়েছে। গৌড়বর্ন হওয়ার কারণে কানের মধ্যে লাল রং খুব চোখে লাগছে। জুভান রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-” এটা কেমন অভদ্রতা ইউশা? নামো আমার গাড়ি থেকে। ”

কথাটা বোধহয় ইউশার কানে গেল না। সে বললো,
-” আজ কি গরম পড়েছে! আমার মেকাপ সব গলে যাচ্ছে, জুভান। দ্রুত গাড়ি চালু করে এসি অন করো। আমি মরে যাচ্ছি গরমে। ”
জুভানের রাগ এবার আকাশ স্পর্শ করলো। হয়তো আকাশ বেরিয়ে মহাকাশও স্পর্শ করে গেল। তার মাথা টগবগ করে ফুটছে। মাথার ভেতর শব্দ হচ্ছে, গুড়ুমগুড়ুম! জুভান ইউশার একহাত চেপে ধরলো। ইউশার নরম কবজি জুভানের শক্ত হাতের স্পর্শে লাল হয়ে গেল। জুভান সেসব পরোয়া না করে দাঁত খিচিয়ে বললো,
-” ক্যান্ট ইউ গেট ইট? আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে! গেট লস্ট ফ্রম ম্যাই কার, ড্যাম ইট! ”
ইউশা হাসলো। অতীব সুন্দর নায়িকা হওয়ায় তার এই চমৎকার হাসির জন্যে হাজারো যুবক কুরবান হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্য্য জুভানের সেই হাসি দেখে গা জ্বলে উঠলো। সে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরলো ইউশার হাত। ইউশা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে বললো,
-” আহ্, ব্যথা পাচ্ছি। ছাড়ো, জুভান। ”
-” চুলোয় যাক সব ব্যথা! কি চাস তুই? বল? আমি জানি তুই এমনি এমনি আমার কাছে আসিস নি! তোর কোনো উদ্দেশ্যে আছে। সো ন্যাকামিটা বাদ দিয়ে সোজা পথে আয়!
ইউশা হাসলো। জুভানের কানের কাছে মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” তোমাকে চাই! দেবে আমায়? কথা দিচ্ছি, খুব যত্ন করে রাখবো! ”
জুভান অতিষ্ট হলো। সে নিজের থেকে ইউশাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” আমি বিবাহিত, ইউশা! ”
-” আমি ভালোবাসি তোমায়! তোমার সবকিছু জেনেই আমি তোমায় ভালোবাসি, জুভান। আমি কখনো তোমার স্ত্রীর স্থান চাইবো না। তবুও আমায় একটুখানি ভালোবাসো! আমি
মরে যাচ্ছি! একটুখানি রহম করো আমার উপর, প্লিজ! ”

জুভান সব শুনেও আজ নিশ্চুপ! কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। জুভান ইউশাকে ছেড়ে দিল। সিটে হেলান দিয়ে খামচে ধরলো নিজের ঘন চুল! ঘাড়ে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে! মন থেকে কি এই ব্যথার উৎপত্তি? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না! কে জানে কার মনের খবর?
কিছুসময় এইভাবেই নিশ্চুপ বসে রইলো জুভান। মাথাটা নত করে, চুল খামচে। আর ইউশা চেয়ে আছে তার দিকে। চোখে মুখে আতঙ্ক! জুভান কি তাকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে? হঠাৎ জুভান নিভুনিভু কণ্ঠে বলে উঠলো,
-” আমি ঐশীকে ভালোবাসি, ইউশা! যতটা ভালোবাসলে এই পৃথিবীর আর কাউকে ভালোবাসা যায়না আমি তাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি! আমার বুকের সমস্ত অঞ্চলজুড়ে তার দখল! তাকে ছাড়া আমার চলবে না, একটুও না! তুমি আমার ভালবাসার অভাবে পুড়ছ,, আর আমি তার ভালোবাসার অভাবে ক্রমাগত জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছি! এভাবে আর বেঁচে থাকা যাচ্ছে না! এমন দহন আর একটুও সহ্য হচ্ছে না! ”

ইউশা কাতর চোখে জুভানের দিকে চেয়ে রইল! এই সে জুভান, যার সাথে ইউশা দুবছর রিলেশনে ছিল। তবে এই রিলেশন শুধু একপাক্ষিক ছিল। জুভানের মধ্যে এই রিলেশন নিয়ে কোনোরূপ তোয়াক্কা ছিল না। তবুও ইউশা হাল না ছেড়ে জুভানের সাথে ছিল! চেয়েছিল তাদের এই নড়বড়ে সম্পর্ক বিয়ে অব্দি এগিয়ে নিয়ে যেতে! তবে জুভান তা দেয়নি হতে। হঠাৎ একদিন ফোন করে সব সম্পর্কের সমাপ্তি টানে সে। তারপর আর কি…… কদিনের মাথায় ঐশীকে বিয়ে করে সে। ইউশা করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে জুভানকে,
-” ঐশী তোমায় ভালোবাসে তো জুভান? নাকি তুমিও আমার মত একপাক্ষিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছ? একটা কথা কি জানো জুভান? যন্ত্রণার কয়েকপ্রকার হয়! তবে ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণাটা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও হাজারগুণ বেশি গভীর, তিক্ত। ”

জুভান থেমে গেল। জুভান কিছুক্ষণ বিমূর দৃষ্টিতে পিচঢালা রাস্তায় চেয়ে রইল। কিছু বলার নেই তার! সে ফেঁসে গেছে! এক কোমলবতি পবিত্র নারী জালে বিশ্রী ভাবে ফেঁসে গেছে সে! বেরুনোর পথ নেই! তবে কে বেরুতে চাইছে? জুভান তো আটকে যেতে চাইছে! সাথে আটকাতে চাইছে এই ভুবন, আকাশ-পাতাল! সম্ভব কি এসব? বোধহয় নাহ!

ভাবনার মধ্যে হঠাৎ জুভানের ফোন বেজে উঠল। জুভান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরল! ওপাশ থেকে শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-” স্যার, আপনি কোথায়? এদিকে তো মহাকান্ড ঘটে গেছে। আপনার আর ইউশা ম্যাডামের একটা স্ক্যান্ডাল ফেসবুকে ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে! স্যার, স্যার, আপনি শুনতে পারছেন?”

#চলবে
গল্পটা নিয়ে অনেকের হয়তো অনেক অভিযোগ আছে। তারমধ্যে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, আপু গল্পটা পড়ে মজা পাচ্ছি না। কেমন যেন একঘেয়েমি লাগছে।
আমার উত্তর – আমি নিজেও লিখে মজা পাচ্ছিনা! গল্পটা আমি দ্রুত শেষ করে দেওয়ার চেষ্টায় আছি। আর একটু সহ্য করুন! তবে শেষটা ভালো করার ট্রাই করবো! ভালোবাসা!

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here