এক্কা দোক্কা পর্ব-১৫

0
859

#এক্কা_দোক্কা – ১৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ওপাশ থেকে শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-” স্যার, আপনি কোথায়? এদিকে তো মহাকান্ড ঘটে গেছে। আপনার আর ইউশা ম্যাডামের একটা স্ক্যান্ডাল ফেসবুকে ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে! স্যার, স্যার, আপনি শুনতে পারছেন?”
জুভান হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। মস্তিষ্কে চাপ প্রদান করে মনে করার চেষ্টা করলো ইউশার সাথে তার কোন স্ক্যান্ডাল আছে! তবে তেমন কিছু মনে পড়ল না। জুভান শান্ত সুরে বললো,
-” ঐশী কোথায়, শাহাদাত? ”
-” ম্যাম নিজের রুমে বসে আছেন স্যার। ”
-” ও কি ভিডিওটা দেখেছে? ”
-” আব.. হ্যাঁ স্যার। ”
জুভান নিজের চুল খামচে ধরলো। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জুভান বললো,
-” ফোন রাখো, শাহাদাত। ঐশীর কাছে যাও। আমি না আসা অব্দি তার পাশে বসে থাকো। মাথায় রাখবে ও যেন কোনোরূপ গন্ডগোল না করে। আমি শীঘ্রই আসছি। ”
-” জ্বি, স্যার। ”
জুভান ফোন কেটে দিল। পাশে ইউশা আগ্রহ দৃষ্টিতে জুভানের দিকে চেয়ে আছে। জুভান ফোন কাটার সঙ্গেসঙ্গে ইউশা জিজ্ঞেস করল,
-” কি হয়েছে, জুভান? ”
জুভান সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে বললো,
-” একটা প্রশ্ন করব! ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিবে। তোমার আর আমার এমন কি কোনো ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল যা নিয়ে স্ক্যান্ডাল হতে পারে? ”
জুভানের কথায় ইউশা নিজেও বেশ চিন্তিত হল। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। জুভানের মেয়ে নেশা থাকলেও ইউশাকে জুভানের পছন্দ না হওয়ায় জুভান কখনোই তার সাথে ইন্টিমেন্ট হয়নি। জুভান নিজের পছন্দ অনুযায়ী মেয়েদের সাথে ইন্টিমেট হয়, এটা জুভানের বৈশিষ্ট্য। ইউশা মাথার উপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করল। নাহ, তেমন কিছুই মনে পড়ছে না। ইউশা বলল,
-” তেমন কিছুই তো আমাদের মধ্যে হয়নি। তাহলে কিসের স্ক্যান্ডাল ফাঁস হলো? ”
জুভান নিজের চুল এলোমেলো করে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে নিল। একহাতে কপাল ঘষে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করল। অতঃপর জুভান হুট করে বলে উঠলো,
-” তোমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট আছে? ”
-” হ্যাঁ, আছে।”
-” তাহলে সার্চ দাও। রিসেন্ট নিউজ ঘেঁটে দেখো। আমাদের নিয়ে কি দেখাচ্ছে, জানাও আমাকে। ”
ইউশা দ্রুত ফেইসবুক সার্চ করল। বেশ কষ্ট করতে হয়নি তার। রিসেন্ট একটা নিউজে দেখাচ্ছে জুভান আর ইউশার একটা ঠোঁট চুম্বন সিন ফাঁস হয়েছে। যেখানে জুভান আর ইউশার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ইউশার যতদূর মনে পড়ে, এটা একটা পার্টির দিন ছিল। জুভান ড্রাংক হয়ে সেদিন ইউশার ঠোঁটে চুম্বন করেছিল। শুধু চুম্বন! এর বেশি জুভান এগুয় নি। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। সেদিনের কথা ইউশা কখনোই ভুলেনি। জীবনের প্রথম চুম্বন! সেই চুম্বনটা যদি হয় একান্ত ভালোবাসার মানুষের ঠোঁটের, তবে তা হয় স্বর্গীয়! ইউশা এখনো সেই ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের মধ্যে অনুভব করে। সেই একই শীতলতা, একই নিঃশ্বাসের শব্দ, একই উত্তেজনা! সব একই আছে। পার্থক্যটা তো একটাই। মানুষটা আর নেই। সে তো অন্যতে মত্ত।
-” ইউশা, কি ভাবছো। নামো গাড়ি থেকে। আমাকে শীগ্রই বাসায় ফিরতে হবে। ”
জুভানের কথায় ইউশার ধ্যান ভাঙল। সে বিমর্ষ বদনে গাড়ি থেকে নেমে দাড়াল। জুভানের দিকে চেয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুভান গাড়ি চালু করে শো করে পার্কিং থেকে বেড়িয়ে গেল। ইউশা হাসল। মনেমনে দুবার বিড়বিড় করল,
” ঐশী, নামটা কী ভীষণ ভাগ্যবতী! ”
_________________________
-” শাহাদাত, ঐশী কোথায়? ”
বাড়িয়ে প্রবেশ করে এটাই জুভানের প্রথম প্রশ্ন ছিল। শাহাদাত মাথা চুলকে বললো,
-” স্যার, ম্যাম নিজের ঘরে কাজ করছেন। আমি উনার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বের করে দিয়েছেন। ”
জুভানের রাগ হলো ভীষণ। সে চেতে উঠে বললো,
-” ও বললো আর তুমি বেরিয়ে গেলে? আমার আদেশ মাথায় ছিল না? ”
শাহাদাত মাথা নত করল,
-” সরি, স্যার।”
-” রাবিশ! ”
জুভান হনহনিয়ে ঐশীর ঘরের দিকে চললো।

ঐশী কাপড় ভাজ করছিল। জুভান পেছনে দাঁড়িয়ে উশকুশ করছে। এই প্রথম জুভান নিজের মধ্যে নার্ভাসনেস উপলব্ধি করতে পারছে। কপালে ঘাম জমেছে! বুকের মধ্যে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে। ঐশীর এমন হেয়ালিপনা জুভানের বিরক্তির কারন হচ্ছে। জুভান মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিল। ঐশীর পেছনে এসে গলা ছেড়ে কাশলো। ঐশী একটু সময়ের জন্যে পা থামালো। অতঃপর আগের ন্যায় পুনরায় কাজে মন দিল। জুভান আবারও গলা ছেড়ে কাশলো। ঐশী এবার চমকাল না। জুভান একসময় নিভুনিভু গলায় বলল,
-” ঐশী, আসলে… ওই ভিডিও …আমি….”
জুভান তোতলাচ্ছে। বিষয়টা হাস্যকর বটে। ঐশী আড়চোখে জুভানের দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। জুভান মনেমনে নিজেকে দুবার গালি দিল। এসব কি হচ্ছে তার সাথে। সে কেনো ঐশীর মত এক সামান্য মেয়েকে ভয় পাচ্ছে! সামান্য একটা লিপকিসই তো। এতে এত ভয় পাওয়ার কি আছে? জুভান, রিলাক্স! ওকে, জাস্ট রিলাক্স। জুভান এবার পুরোদমে নিঃশ্বাস নিল। বললো,
-” ঐশী, মেয়েটার নাম ইউশা। আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার দু বছরের রিলেশন ছিল। একটা পার্টিতে ড্রাংক হয়ে অ্যাক্সিডেন্টলি লিপকিস হয়। আমরা কখনোই ইন্টিমেন্ট হইনি। বাট মিডিয়ার তো কোনো কাজ নেই। কোথাকার সিম্পল কাহিনী এত ঘটা করে নিউজ করেছে। তুমি কি আমার কথা শুনতে পেরেছ, ঐশী? ”

ঐশীর হাত আটকে। হাতে থাকা অর্ধ ভাজকৃত একটা কামিজ। ঐশী ছোট্ট করে বললো,
-” ওহ, ভালো। ”
জুভানের ভ্রু কুচকে গেল। সে অধিক মাত্রায় বিরক্ত হলো। ঐশীর এ ধরনের ডোন্ট কেয়ার ভাব তার একটুও হজম হলো না। সে আচমকা ঐশীর হাত ধরে ঐশীকে নিজের সাথে চেপে ধরল। ঐশী থমকে গেল। হাতের থাকা ভাজ করা কামিজ পড়ে গেল মাটিতে। ঐশীর এক হাত জুভানের বুকে, অন্যহাত জুভানের কোমরের শার্ট খামচে। ঐশী ফ্যালফ্যাল চোখে জুভানের দিকে চেয়ে আছে। কি হচ্ছে তার কোনো কিছুই ঐশীর বোধগম্য হচ্ছে না। জুভান ঐশীকে নিজের সাথে আরো একটু চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-” কি সমস্যা তোমার? কথা বলছ না কেন? এমন ভাব ধরছ যেন আমার এসব কথা তোমার কানেই যাচ্ছে না। নিজেকে সবজান্তা মনে করছ, নাকি? ”
ঐশী হাসল। নিজেকে জুভানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে গেলে জুভান ছাড়ে না। বরং হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে সে। ঐশী জুভানের চোখের দিকে চেয়ে স্পষ্ট কণ্ঠে বলে,
-” আপনার লাইফ, আপনার মর্জি। আপনি কাকে কিস করবেন, কাকে বিছানায় আনবেন, এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যপার। আমাকে এসবে একটুও ইন্টারেস্ট নেই। ”
জুভান ভ্রু উচু করে বললো,
-” সিরিয়াসলি, তোমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই? ”
-” না। একটুও না। ”
জুভান আলতো হাসল। কেমন করা হাসি। সচরাচর সে এমন কি হাসে না। তবে এ কেমন হাস? জুভান ঐশীর কানের পেছনে চুল গুঁজে দিল। শীতল কণ্ঠে বললো,
-” ওকে, দেন। যেহেতু তোমার আমার লাইফ স্টাইল নিয়ে কোনোপ্রকার কোনো ইন্টারেস্ট নেই, রাইট? তো এখন যদি আমি আবার আগের ন্যায় হয়ে যাই, এতেও তোমার কোনো সমস্যা থাকার কথা না, ইজন্ট ইট? আমি মেয়ে নিয়ে আসবো, তুমি পাশে বসে শুধু দেখবে, কিন্তু একটুও জ্বলবে না। কারণ তুমিই তো বললে আমার যা ইচ্ছে তাই করতে। সো, ফ্রম নাও আই উইল ডু হোয়াটএভার আই ওয়ান্ট! গেট রেডি টু বি জেলাস, বেবী! ”

জুভান কথাটা বলে ঐশীকে ছেড়ে দেয়। ঐশীর দিকে চেয়ে অদ্ভুত হাসি দিয়ে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। ঐশী ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে। জুভানের শান্ত কণ্ঠ ঐশীর সুবিধার লাগছে না। কি করতে চাইছে এ ছেলে?

#চলবে
গঠনমূলক কমেন্ট করার অনুরোধ! গল্পটা কেমন লাগছে, দু লাইনে জানিয়ে যাবেন। আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ার জন্যে লেখিকা অপেক্ষায়!

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here