#এক্কা_দোক্কা – ১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
রাত পেরিয়ে নতুন এক ভোর হয়েছে। অদূরের কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল রঙা সমুদ্র বইছে। সূর্যের তেজস্বী ক্রমে ক্রমে দ্বিগুণ হচ্ছে। সময়ের প্রহর বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে ঐশীর মস্তিষ্কের উষ্ণতা! আজ এই পৃথিবীতে এক অন্যায়ের নিধন হবে! রিয়াদ তালুদকারের পাপের রক্তে মাখামাখি হবে ঐশীর নরম হাত। সকাল থেকে ঐশীর তারই ছক সাজাচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে আজ জুভান বাসায় নেই। নাটকের শুটিংয়ের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে। সম্পূর্ণ বাড়িতে ঐশী একা। সার্ভেন্টদের সবাইকে ঐশী আজ ছুটি দিয়েছে। ছুটি, সে তো এক বাহানা মাত্র। ঐশী আজ খুন করবে, প্রমাণ লুটপাট করার জন্যে সর্বোচ্চ পরিকল্পনা করেছে ও।
ঐশী ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসল। রিয়াদ তালুকদারের বাড়িতে আজ একটা পার্টি হবে। নাইট পার্টি। শহরের সব গণমান্য ব্যক্তিগণ সেই পার্টিতে উপস্থিত হবেন। সে সব মানুষের চোখকে আজ ফাঁকি দিতে হবে ঐশীর। ঐশী হ্যাকিং সফটওয়্যার চালু করল। রিয়াদ তালুকদারের বাড়ীর সিসিটিভি কোড ঐশী জেনে গেছে। সেই সিসিটিভি কোড দ্বারা ঐশী রিয়াদ তালুকদারের বাড়ির হলরুম আর রিয়াদের ব্যক্তিগত বেড রুমের সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করে ফেলল। ঐশী একটা টাইমার সেট করল। ঐশী যে সময়ে রিয়াদ তালুকদার বাড়িতে প্রবেশ করবে, তখন ঐশীর হ্যাকিং অনুযায়ী সে বাড়ীর সিসিটিভি ক্যামেরায় দশ মিনিট আগের ফুটেজ দেখাবে। দশ মিনিট ধরে সেই একই ফুটেজ বারবার শো করবে। ঐশীর হাতে থাকবে মাত্র দশ মিনিট। এই দশ মিনিটে ঐশীকে রিয়াদ তালুকদারকে খুন করে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। অতঃপর, প্ল্যান ওয়ান সাক্সেসফুল!
ঐশী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মৃত্যু বার্তা এসে গেছে তবে। রিয়াদ তালুকদারের দোয়ারে অপেক্ষা করছে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু দুস্যু! আপসোস, এবার ঐশীর হাত থেকে কে বাঁচাবে তাকে?
___________________________
‘ তালুকদার মঞ্জিল ‘ ভীষণ ঝমকালো এক বাড়ি! চারিদিকে অর্ধ শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী। পার্টিতে ইতিমধ্যে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। ঐশী একটা রঙিন মাস্ক পড়ে নিল। মাস্কটা ঐশীর চোখ-নাক ঢেকে আছে। এটাই আজকের পার্টির থিম। কেউ কাউকে চিনবে না, জানবে নাম শুধু একজন আরেকজনের সাথে নাচে-গানে এনজয় করবে। প্রবেশদ্বারে লম্বা লাইনে। সিক্যুরিটি গার্ড সবাইকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। ঐশী লাইনের একদম পেছনে দাঁড়াল। ঐশীর সামনে একটা মেয়ে। ঐশী এবার তার প্রথম চাল চাললো। ঐশী মেয়েটার কাধে হাত রেখে ডাক দিল,
-” এক্সকিউজ মি? ”
ঐশীর ডাকে মেয়েটা ভীষণ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালো। মেয়েটার এই মুহূর্তে মাতাল হয়ে আছে। শরীরে হেলেদুলে লুটিয়ে পড়ছে ঐশীর গায়ের উপর। ঐশী মেয়েটাকে সামলে সোজা করে দাড় করালো। মেয়েটা আঙ্গুল নাচিয়ে মাতাল কণ্ঠে বললো
-” কি? ”
-” আমাকে একটু সাহায্য করবেন, প্লিজ। আমার জামার পেছনের একটু অংশ লোহায় আটকে কেটে গেছে। একটু ঠিক করে দেন প্লিজ। আমি হাত দিয়ে নাগাল পাচ্ছি না। ”
মেয়েটার বিরক্তি হলো হয়তো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” ওহ, অক্কে। পেছন ঘুরুন। ঠিক করে দিচ্ছি। ”
ঐশী বাঁধ সাধলো। বললো,
-” আসলে, এখানে সবার সামনে না। একটু ওদিকটায় চলুন, প্লিজ। ”
মেয়েটার এবার রাগ হলো। নাইট পার্টিতে এসে ঢং দেখাচ্ছে। সাধারণত এই পার্টিতে যারা আসে সবাই খুব মডার্ন। এসব লোকে দেখবে, এই মানুষিকতা এদের মধ্যে কারো নেই। মেয়েটা একবার ঐশীকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে নিল। কামিজ পড়া এক অতি সাধারন মেয়ে। মেয়েটা ভাবলো, হয়ত পার্টির কোনো সার্ভেন্ট। নাহলে এমন সাধারন ড্রেসে রিয়াদ তালুকদারের পার্টিতে কেউ আসে না। মেয়েটা ঐশীর কাধে হাত রেখে মাথা নাচিয়ে বললো,
-” ত ঠিক হে। চলো। ”
ঐশী মাতাল সেই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ীর পেছনে এল। মাতাল মেয়েটা চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখছে। এই জায়গায় হয়তো সে আগে আসেনি। ঐশী সেই সুযোগে তার গোপন পকেট থেকে একটা সিরিঞ্জ বের করে মেয়েটার ঘাড়ে পুশ করে দিল। মেয়েটা ব্যথায় মৃদু স্বরে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ঐশী এবার মেয়েটার শরীর টেনে হিচড়ে বাড়ির এক পরিত্যক্ত জায়গায় রেখে দিল। আধা ঘন্টা পর মেয়েটার জ্ঞান আসবে। ততক্ষণে ঐশীর কাজ হাসিল করতে হবে।
ঐশী মেয়েটার গায়ে থাকা আইডি কার্ড নিজের কাছে নিয়ে নিল। গলায় ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল প্রবেশদ্বারের দিকে।
নিয়মমাফিক ঐশীকে গার্ড পরীক্ষা করলো। কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই না পাওয়ায় ঐশীকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল।
বিশাল হলরুম। মানুষে একপ্রকার গিজগিজ করছে হলরুমে। এসি চালানো সত্বেও হলরুমটা বেশ গরম। হয়ত মানুষের নিঃশ্বাসের উত্তাপে। ঐশী ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল সামনে। তার মাস্কে ঢাকা চোখ দুটো খুঁজছে একজনকে। কোথায় সে?
একটু দূরেই মদের গ্লাস হাতে দেখতে পাওয়া গেল রিয়াদ তালুকদারকে। কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে সে। ঐশী হাসলো এবার। ওয়েটার ডেকে নিজের হাতে রতা উইস্কির পুরো বোতল নিয়ে নিল। এগিয়ে গেল রিয়াদ তালুকদারের সামনে।
-” হাই, হ্যান্ডসাম! ”
রিয়াদকে সম্বোধন করে ঐশী। রিয়াদ নিভুনিভু চোখে ঐশীর দিকে তাকায়। অত্যধিক মাত্রায় মদ পান করার ফলস্বরূপ রিয়াদ ঠিকঠাক দাড়াতে পারছে না। হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছে। রিয়াদ ঐশীর দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,
-” হেলো, হটি। ”
ঐশীর সম্বোধনটা একটুও ভালো লাগলো না। দাঁতে দাঁত খিঁচে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলো ও। ঐশী সহাস্যে এগিয়ে গেল রিয়াদের দিকে। রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে উইস্কির বোতল দেখিয়ে বললো,
-” ডু ইউ ওয়ান্না ড্রিংক? ”
রিয়াদ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। মাথা ক্রমাগত নেড়ে জানালো, সে উইস্কি পান করতে চায়। ঐশী রিয়াদের হাত থেকে ওয়াইনের বোতল নিয়ে টেবিলে রাখলো। অতঃপর নিজেই উইস্কির বোতলের ছিপি খুলে রিয়াদের মুখে ডুবিয়ে দিল। রিয়াদ ঢকঢক করে উইস্কি খাচ্ছে। একসময় রিয়াদের শ্বাস ফুরিয়ে আসতে লাগলো। সে ছটফট করতে আরম্ভ করলো। ঐশী এতেও রুখে গেল না। বোতলটা আরো একটু দাবিয়ে দিল রিয়াদের মুখে। রিয়াদ এবার ঐশীর হাত খামচে ধরে গোঙাতে লাগলো। ঐশী একসময় ছেড়ে দিল। রিয়াদ যেন দম ফিরে পেল। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। ঐশী ব্যস্ত গলায় বললো,
-” সরি, সরি। আমি বুঝতে পারিনি, আপনার এত কষ্ট হবে! আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি, মি হ্যান্ডসাম! ”
রিয়াদ মুচকি হাসল। ঐশীর গালে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল,
-” ইটস ওকে, ডার্লিং। ডু ইউ ওয়ান্ট টু সি মাই বেড রুম, ডার্লিং? ”
ঐশী মিহি হাসলো। সবকিছু তবে ঐশীর পরিকলনা অনুসারে এগুচ্ছে। ঐশী হেসে বললো,
-” ইয়েস, অফ কোর্স হ্যান্ডসাম। ”
#চলবে
আজকের পর্ব ছোট হয়েছে, জানি। আমি একটুও সময় পাইনি আজ। দুজন ম্যামের পড়া কাভার করতে করতে আমি কাহিল। পরবর্তী পর্ব বড় করে দেবো, পাক্কা।
গঠনমূলক কমেন্ট করবেন, প্লিজ। আমি আপনাদের সুন্দর কমেন্ট পড়ার জন্যে অপেক্ষায়।
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri