এক্কা দোক্কা পর্ব-২

0
1180

#এক্কা_দোক্কা – ২
আভা ইসলাম রাত্রি

মানুষের জীবনে সবচে’ বড় শত্রু হলো তার আপন মন! কখনো কখনো এই মনের কাছে হেরে যায় কঠিন বিবেকও। মানুষ চায় মনকে পরাজিত করতে! কিন্তু মনের স্রোত সর্বদা জয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। মন আর মস্তিষ্কের এই জয় পরাজয়ের খেলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় হাজারো সম্পর্ক, শত ভালোবাসা। অবশেষে ঐশীর মনের জয় হলো। সে রাজি হলো জুভানের দেওয়া সেই ভয়াবহ শর্তে! এই মুহূর্তে ঐশী দাঁড়িয়ে আছে দ্য রকস্টার ইজহার জুভান মির্জার বিশাল বাসবভবনের সামনে। সবসময় টেলিভিশনে দেখাতো জুভানের এই বিলাসবহুল বাসভবন। তবে আজ সচক্ষে তা দেখতে পেরে ঐশী খানিকটা অবাক হয়েছে বটে। তবে সে সেদিকে বেপরোয়া হয়ে সামনে পা বাড়ালো।
-” জুভান স্যার বাসায় আছেন?”
বাড়ীর দারোয়ানকে কথাটা বলতেই দারোয়ান বিরক্তিতে মুখ চোখ কুঁচকে ফেললো। আজকাল এ বাড়িতে দিনে জুভান স্যারের প্রায় শ খানেক ফ্যান আসে। স্যারের কথামত তাদের সবাইকে একটাই কথা বলে সে,স্যার ব্যস্ত আছেন। এখন দেখা করতে পারবেন না।
তাই এখনো সে নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে যায়নি। জুভান স্যারের বিশ্বস্ত লোক বলে কথা। সে পানের লাল রঙা পিক রাস্তায় ফেলে দিয়ে দাঁত চুলকে বললো,
-” না, নেই। তিনি ব্যস্ত আছেন গানের শুটিংয়ে। এখন দেখা করতে পারবেন না। যান, যান। ”
ঐশী বুঝে ফেললো, দারোয়ান সহজে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেবে না। তাই সে দারোয়ান থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে শাহাদাতের দেওয়া কার্ড থেকে ফোন নাম্বার টুকে কল দিল তাকে। দুবার রিং বেজে উঠতেই ওপাশ থেকে শাহাদাত খ্যাচখ্যাচ কণ্ঠে বলে উঠলো,
-” হ্যালো, কে? ”
-” আমি ঐশী বলছিলাম। আপনি আমাকে যে বলেছিলেন আসতে, তাই আমি….”
-” হ্যাঁ, হ্যাঁ। আর বলতে হবে না আপনাকে। আমি জানি। আসলে, আমরা এখন বাইরে আছি। আপনি বাড়ীর ভেতরে গিয়ে বসুন। আমরা এক্ষুনি চলে আসছি। জাস্ট ওয়েট ফর টেন মিনিটস। ”
-” আসলে, আমাকে বাড়ীর ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি কি তবে বাসায় চলে যাবো? পরে আপনারা বাড়িতে এলে আমায় ফোন দিবেন। আমি চলে আসবো। ”
-” না, না। আচ্ছা, আপনি দারোয়ানকে ফোন দিন। আমি ওর সাথে কথা বলছি। ”
ঐশী ফোন এগিয়ে দিলো দারোয়ানকে। দারোয়ান কয়েকটা কথা বলেই ঐশীকে ফোন দিয়ে দিল। কপালে ভাজ ফেলে গেইট খুলে দিয়ে বললো,
-” আপনি ভেতরে যেতে পারেন। ”
ঐশী ভদ্রতাস্বরূপ ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে এলো। গেইট পেরুতেই পেছন থেকে দারোয়ানের বিড়বিড় করে বলা কথা কানে এলো, এই জুভান মিয়া জীবনেও শুধরাবে না। কি নিষ্পাপ মেয়ে! একেও এখন নিজের জালে ফাঁসিয়ে নিয়েছে। রক্ষা করো খোদা, রক্ষা করো!

বিশাল লিভিং রুম! প্রায় তিন জোড়া লেদারের সোফা ঘরটাতে। দেয়ালের প্রতিটা অঞ্চল জুড়ে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। একটা পেইন্টিং দেখে ঐশীর বেশ ভালো লাগলো। পেইন্টিংটা মূলত জল রঙে আঁকা। সাদা কালো রঙের মিশ্রণের উপর একটা কালো মুখোশ! ঐশী পেইন্টিংটার অর্থ উদ্ধার করলো। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিটা ভালো-খারাপ মানুষের ভেতরে আছে লুকানো দ্বিতীয় এক সত্তা। পেইন্টিংটা বেশ ইন্টারেস্টিং। ঐশী সিঙ্গেল সোফায় এসে বসলো। বেশ আরামদায়ক সোফাটা। মনে হচ্ছে তুলোর মধ্যে বসেছে। এ বাড়িতে আসার পর একটা জিনিস লক্ষ করছে ঐশী। বাড়ীর প্রতিটা কাজের লোক ঐশীকে ত্যাড়া নজরে দেখছে। হয়তো তাদেরও মনে হচ্ছে, ঐশী জুভানের বেড পার্টনার। মনে হওয়াটা অবশ্য দোষের না। অন্য মানুষকে নিয়ে মনে মনে খারাপ কিছু ভাবতে আমাদের পয়সা দিতে হয়না। ফ্রিতেই পাওয়া যায়। এ বিষয়টাও তাই।

হঠাৎ কলিং বেল বাজার শব্দ হলো। শব্দের সাথে সাথে সব সার্ভেন্ট তটস্থ হয়ে উঠলো। সবাই এমন ভাব ধরতে লাগলো যেনো তারা কত কাজ করছে। দুজন সার্ভেন্ট এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিলো। ঐশী পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো টেলিভিশনে দেখানো সেই রকস্টার জুভান তার সামনে হেঁটে আসছে। হাঁটার মধ্যেও কেমন যেনো বাবু বাবু ভাব। মনে হচ্ছে লাল কার্পেটে হাঁটছে। জুভান ঐশীর ঠিক সামনের সোফাটায় এসে বসলো। হাতে সদ্য বের হওয়া আই ফোন টুয়েলভ প্রো ম্যাক্স। শাহাদাত হাতে এক ব্যাগ নিয়ে জুভানের পাশে দাঁড়ালো। ঐশীর দিকে আঙুল তুলে পরিচয় করিয়ে দিল,
-” স্যার, ইনি হচ্ছেন ঐশী। ঐশী খন্দকার। আপনি যার কথা বলেছিলেন ইনিই সেই। ”
জুভান কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শাহাদাতের দিকে। চোখ গরম করে বললো,
-” বেশি কথা বলা কি তোমার জন্মগত অভ্যাস, শাহাদাত?”
স্যার ভয়ংকর রেগে যাচ্ছেন দেখে শাহাদাত মাথা নত করল। নম্র কণ্ঠে বলল,
-” সরি স্যার। ”
জুভান ফুস করে এক নিঃশ্বাস ফেললো। পায়ের উপর পা তুলে বাবু হয়ে বসলো। ঐশীর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
-” কি নাম? ”
আশ্চর্য! একটু আগে শাহাদাত নাম বলা সত্ত্বেও পুনরায় নাম জিজ্ঞেস করছে? মূর্খ নাকি?
-” কি হলো? চুপ কেনো? নাম নেই নাকি? ”
ঐশী সজাগ হলো। স্পষ্টভাষায় বললো,
-” ঐশী, ঐশী খন্দকার। ”
-” কমন নেইম। বাট ইটস ওকে। তোমার কাজ কি সেটা বুঝেছ তো? সব বুঝেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছ তুমি? ”
-” হ্যাঁ! সজ্ঞানে, স্ব বুদ্ধিতে এ বিয়েতে রাজি হয়েছি আমি। ”
-” বাহ, ভালো। এই বিয়ে করার কারণ হলো, বাচ্চা। আসলে বিয়ে টিয়ে করে স্বাধীন লাইফে হস্তক্ষেপ করার মত মানুষ আমি না। কিন্তু কি করা যাবে। মামা আমার জান খেয়ে ফেলেছেন একটা বিয়ের জন্যে। বিয়ে না করলে বংশের প্রদীপ কে জ্বালাবে! আমি চাইলে, আমার যেকোনো বেড পার্টনারকে দিয়ে বাচ্চা জন্মাতে পারতাম। তবে আমি সেটা করবো না। আমার বাচ্চা হবে পবিত্র, নিষ্পাপ। ওদের মত নোংরা গর্ভে আমার সন্তান বেড়ে উঠবে, আই ও’ন্ট অ্যালাও দিস। তাই তোমাকে বাছাই করা হচ্ছে। তুমি যেমন পবিত্র, আমার বাচ্চাও হবে তোমার মত পবিত্র! বুঝেছ? ”
ঐশী মিহি হাসলো। যার নিজের পবিত্রতার ঠিক নেই, সে আবার বাচ্চা চাইছে ফুলের ন্যায় পবিত্র! বাহ্, দারুন বিষয়টা! ঐশী মাথা নেড়ে বললো,
-” আমি রাজি। ”
ঐশীর এত সহজে সব বিষয়ে রাজি হয়ে যাওয়া জুভানের খুব একটা পছন্দ হলো না। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-” বাই দ্য ওয়ে, তোমার মতলবটা কি? এত ভালো মেয়ে হওয়া সত্বেও আমার এই প্রস্তাবে এত সহজে রাজি হয়ে গেলে? তোমাকে আমার খুব সন্দেহ লাগছে। ”
ঐশী বক্র হাসলো। হাসিটা জুভানের কাছে বেশ রহস্যজনক লাগলো। এই মেয়ের হাসি সাধারণ কোনো হাসি নয়। কেমন যেনো, আলগা আলগা! সাধারনত মেয়েদের হাসলে মিষ্টি লাগে। কিন্তু এই মেয়ের এ হাসিতে কোনো মিষ্টতা নেই। অদ্ভুত ধরনের হাসি! ঐশী বললো,
-” আমার এই জঘন্য জীবন থেকে মুক্তি দরকার। প্রতিদিন মাদারের আঘাত, আশ্রমের মানুষদের জঘন্য কথাবার্তা, এসব থেকে আমি মুক্তি চাই আর আপনার দরকার একটা বাচ্চার। দুজনের চাহিদা পূরন হয়ে গেলেই আমরা দুজন আলাদা হয়ে যাবো। এটাই আমার মতলব। এবার বুঝেছেন?”
জুভান মিহি হাসলো। স্পষ্ট হলো তার গজদন্ত! বাম গালে সুন্দর এক গর্ত দেখা গেলো। একে হয়তো টোল বলে। ছেলেটা বেশ সুন্দর। কিন্তু তার চরিত্র ততটাই জঘন্য! দুটোই কাটাকাটি হয়ে গেছে। জুভান সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। শাহাদাতের দিকে চেয়ে বলল,
-” এনাকে আশ্রমে পৌঁছে দাও। নেক্সট কি করতে হবে তা তোমাকে ফোনের দ্বারা জানানো হবে। গুড বাই। ”
জুভান চলে যেতেই ঐশী উঠে দাঁড়ালো। হাতের ব্যাগটা কাঁধে তুলে শাহাদাতের দিকে চেয়ে বলল,
-” আমাকে দিয়ে আসতে হবে না। একবার যখন আসতে পেরেছি, তখন ফিরেও যেতে পারবো। বলে দিবেন আপনার স্যারকে। আসি। ”
শাহাদাতকে দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঐশী দরজা পেরিয়ে চলে গেলো। শাহাদাত হা করে দাঁড়িয়ে রইলো নিজ স্থানে। এবার স্যারকে কি বলবে সে? স্যার যখন শুনবে ঐশী একা একাই চলে গেছে, স্যার তো তাকে বকে বকে শেষ করে ফেলবেন। সবাই সবকিছু করতে পারে, মাঝখানে আঠার ন্যায় ফেঁসে যায় শাহাদাত। অগ্যতা, একগাদা বকা শোনার জন্যে স্যারের কক্ষের দিকে পা বাড়ালো শাহাদাত।

#চলবে
মনে আছে তো, আমার পেইজের কমেন্ট গেইমের কথা। যার কমেন্ট বেশি সুন্দর হবে সেই হবে সেই পর্বের কমেন্ট বিজয়ী। তার কমেন্ট নামসহ স্ক্রিনশট আমি আমার গ্রুপে শেয়ার করবো। পাশাপাশি গল্পের শেষ অব্দি যার কমেন্ট সবচেয়ে সুন্দর হবে সে হবে সেই গল্পের কমেন্ট বিজয়ী। তার কথা অনুসারে আমি একটা অনুগল্প লিখবো। আর তার বিজয় উল্লাস হবে আমার গ্রুপসহ পেইজে।

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here