এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:০২

0
2444

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০২

চড় দেওয়া গালটার উপর বেশ কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিল নিবিড়। গালটা লাল হয়ে গেছে‌। চার আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তখন মেহের কে থামাতে চড় মারার দরকার ছিলো । কিন্তু চড়টা এতোটা প্রগাঢ়ে আঘাত করবে ,, বুঝতে পারে নি।। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পূর্ণরায় গালে হাত রেখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রইল।বৃষ্টিতে বেশীক্ষণ ভেজার কারণে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শরীরে বিয়ের শাড়িটা এলোমেলো হয়ে আছে।আর এই সাজগোজ হীন ফ্যাকাসে মুখটা নিবিড়ের কাছে একদম মায়াবী লাগছে। নিবিড় একটু ঝুঁকে কপালের উপর পড়ে থাকা অগোছালো চুল গুলো সরিয়ে দিল। বেডে ভড় রেখে সরে আসতে নিলে ,, হলো তার বিপরীত।ঘুমের মাঝে মেহের হাই তুলে নিবিড়ের গলা জরিয়ে ধরলো। ঘটনাটা এতোটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল বুঝে উঠার আগেই দুজনের ঠোট দুটো একত্রে স্পর্শ করলো। নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করতে পারছে। স্তব্দ হয়ে গেল নিবিড়।শরীরের শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। মৃদু মৃদু কাঁপছে শরীরটা। প্রথমবার কোনো রমনীর স্পর্শে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।।বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে নির্ঘাত কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।।মেহেরের হাতটা সরাতে গিয়েও সরালো না । আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে ছুঁতে গিয়ে তার অস্বস্তি হয়নি। অপেক্ষা করলো মেহেরের ঘুম ভাঙ্গার জন্য। নিবিড়ের কাছে বেশ সুবিধাই হলো। ঘুম ভাঙ্গার পর মেয়েটা তার নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে। দু’জনের আর দেখা হবে না। অন্তত কিছুক্ষন সময় খুব কাছ থেকে মেহেরকে দেখে মন ভরবে।

কেউ একজন বাইরে থেকে নক করছে। শব্দটা কান পর্যন্ত পৌঁছালে না চাইতেও মেহেরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। পড়নের নেভি ব্লু শার্ট টা হালকা ঝেড়ে দরজা খুলে বাইরে এলো ।মহিলা কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে। কনস্টেবল কে কিছু বলতে না দিয়ে নিবিড় হালকা কেঁপে বললো..

— “তোমার এতোক্ষণে আসার সময় হলো। আসতে বলেছি রাত দশটায় আর এসেছো সকাল আটটায়। ধারণা আছে তোমার, একজন মানুষ সারাদিন ভেজা কাপড়ে থাকলে কি হতে পারে”।(চোখ রাঙিয়ে)

–” সরি স্যার আসলে…!

— “জাস্ট শাট আপ। এসেছ দেরী করে ,, আবার কথা বলছো । তাড়াতাড়ি গিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করে ধুয়ে দাও।(কনস্টেবল কে থামিয়ে দিয়ে)

— স্যার ড্রেস আনতে ভুলে গেছি”!( মাথা নিচু করে কনস্টেবল)

— “তাহলে এসেছ কেন? আমাকে চেহারা দেখাতে।আগে তো এমন ছিলে না, ছয় মাস হলো আমি এই থানা থেকে ট্রান্সফার করেছি ।।আর তাতেই এতো অবহেলা শুরু হয়ে গেছে।
গিয়ে দেখ,, ড্রয়ারে আমার কয়েকটা পুরোনো জামাকাপড় আছে। সেগুলোর মধ্যে ভালোটা ওকে পড়িয়ে দাও”।

আচ্ছা স্যার বলেই ভেতরে প্রবেশ করল কনস্টেবল। নিবিড়কে সে ভালোভাবে চেনে। একটু এদিকে থেকে ওদিক হলে ,, সবকিছু মাথায় তুলবে। যতদিন দিন এই থানায় ছিল ততদিন চুরি পর্যন্ত হয়নি।
নিবিড় গত তিন বছর এই এলাকায় ”এস.এ.পি ”র দায়িত্ব পালন করছে। তখন পুলিশ কোয়ার্টারে থাকতো। প্রায় ছয় মাস আগে ট্রান্সফার করে নিজের এলাকায় চলে গেছে। মাঝে মাঝে খুব মিস করত গ্ৰামটাকে। তাই দুই দিনের সফরে এসেছিল ,, কাল রাতে ফিরে যাওয়ার সময় অচেনা একটা শাড়ি পরিধিত মেয়েকে দৌড়ে যেতে দেখে তার মনে সংশয় জন্মে। মেয়েটার পিছু পিছু গিয়ে তা দেখলো , তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
__________________
চোখ খুলে তাকালো মেহের। মাথাটা প্রচন্ড ভারী হয়ে আছে তার। দুহাতে মাথা চেপে আস্তে আস্তে উঠে বসলো সে। একটু স্বাভাবিক হতেই চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল।ঘরটা বেশ পুরোনো এবং ছোট। সামান্য একটা চৌকি, কাঠের টেবিল,চেয়ার আর ছোট একটা ভাঙ্গা ওয়াড্রোব ছাড়া কিছু নেই। টেবিলের উপর একটা ফোন। ওয়াড্রোবের ভাঙা দরজা দিয়ে বোঝা যাচ্ছে,, ভেতরে কিছু নেই।রুমটা থেকে কেমন একটা ভাবসা স্মেল আসছে।। অনেকদিন বোধ হয় বন্ধ দিল। এছাড়া কিছু নজরে এলো না মেহেরের। কিছু নেই বললে ভুল হবে ।।আর কিছু রাখার মতো জায়গা নেই। কোথায় আছে ঠিক বুঝতে পারছে না।

— “কেমন লাগছে এখন ? আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন”।

তার ভাবনার মাঝে শোনা গেল এক পুরুষালী কন্ঠস্বর। চোখ সরিয়ে তাকালো তার দিকে।” আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন” কথাটা ক্রমাগত বাজছে তার কানে ।পরক্ষণেই কালকের দিনটা মনে পড়তেই চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দে হাঁটুতে মাথা রেখে কুপিয়ে কুপিয়ে কাঁদতে লাগলো মেহের।।মনের মাঝে শুধু একটা কথাই বাজছে,, কেন বাঁচালো আমায়। মরে গেলে সবাই খুশি হত , এখন কোথায় যাবো আমি।

মেহেরর কান্না সহ্য হচ্ছে না নিবিড়ের। সকলের কান্না নিবিড়ের কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর লাগে। এই প্রথমবার অপরিচিত মেয়ের কান্নায় বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে সে। নিজের হাতটা মেহেরের কাঁধে রাখলো। অন্যকারো স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো মেহের। নিবিড়ের শার্টের কলার চেপে চেঁচিয়ে উঠলো সে…– “কেন বাঁচালেন আমায় ।কেন আবার আমাকে অন্যর ধ্বংসের কারণ তৈরি করবেন।আমাকে প্লীজ মরে যেতে দিন”।
বলতে বলতে নিবিড়ের চিবুকে মাথা রাখল সে।

শার্টের খানিকটা অংশ ইতিমধ্যে ভিজিয়ে ফেলেছে মেহের। নিবিড় দিধা না করে মেহেরের শীর্ষে হাত রাখলো। সে জানে না ,,মেহেরের কষ্টের কারণ কি?? কিন্তু এইটুকু সে অনুমান করতে পেরেছে , অমানবিক আঘাত তাকে সহ্য করতে হয়েছে। মেহেরকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলো…

–” হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। দেখুন কাঁদতে কাঁদতে আমার পুরো শার্ট সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছেন।একটা কাজ করুন,, আমার শার্টের মাঝে ঝাঁপ দিন।আ’ম 100% সিউর। আপনি মরবেন ই মরবেন”।

সাথে সাথে ছিটকে দূরে সরে গেল মেহের। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। সেন্টি মেন্টাল হয়ে অচেনা একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো।তবে এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছে,, এটাই তার একমাত্র ভরসার স্থান। নিবিড় রুমে মেলে রাখা শাড়িটা মেহেরের দিকে এগিয়ে দিয়ে, “পড়ে নিতে বললো”। শাড়িটা দেখে নিজের দিকে তাকালো মেহের। পড়নে ছাই রাঙা টাওজার আর ডিলেডালা টি শার্ট। এতোক্ষণ নিবিড়ের প্রতি মনে যে,, অপ্রকাশিত বিশ্বাস জন্মে ছিল। তা এক নিমেষেই দূর হয়ে গেল। শাড়িটা বুকে জড়িয়ে নিল সে।

— “মেয়েদের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তুমি ভেজা ছিলে তাই মহিলা কনস্টেবল এসে তোমার শাড়ি পাল্টে দিয়েছে। যেটা ভেবেছ, সেটা এখানেই মুছে ফেলতে পারো। শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নাও ,, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমাকে ফিরতে হবে”।

পূর্ণরায় লজ্জায় নুইয়ে পড়লো মেহের।
শুধু শুধু ছেলেটার সম্পর্কে খারাপ ভাবছিল,, কিন্তু পরের কথাটা কানে আসতেই ভেঙ্গে পড়লো সে। বাড়ি পৌঁছে দিবে। কোথায় যাবে। মিনমিন করে বললো…

— “আপনি যেখানে যাচ্ছেন চলে যান । আমি ঠিক আমার গন্তব্যে পৌঁছে যাবো”।

— “সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার এড্রেসটা বলো’?

মেহের নিবিড়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে রইল। কিছুক্ষণ নিরবতার পর একই প্রশ্ন ছুঁড়ল সে। অবশেষে না পেরে নিম্নস্বরে বললো মেহের..

— “আমার কেউ নেই। থাকার জায়গা নেই। বাবা মা নেই।তাই কোনো ঠিকানাও নেই”।

গিল্টি ফিল করলো নিবিড়। অজান্তেই আবার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো ।। আর কথা বাড়ালো না। উঠে যেতে নিলে হাত ধরে থামিয়ে দিল মেহের। অশ্রুসিক্ত নয়নে নিবিড়ের দিয়ে তাকিয়ে বললো..

— “কাল দুপুর থেকে কিচ্ছু খাই নি।।কিছু খাবার হবে । আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।মনে হচ্ছে পেটে ব্যাথায় মরে যাচ্ছি।”

নিবিড় অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মেহেরের দিকে।জ্ঞান ফিরেছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়েটাকে খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়নি।মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিচে বেরিয়ে এলো নিবিড়। কল লিস্ট থেকে একজনকে নাম্বার সিলেক্ট করে খাবার নিয়ে আসতে বললো।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here