#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৬
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়। নিবিড়ের হাত জরিয়ে ধরে পেছনে লুকিয়ে আছে মেহের। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেছে তার। নিবিড় আস্তে আস্তে হাত রাখল মেহেরের মাথায়। আশ্বাসের কন্ঠে বললো…
— “মেহের ডোন্ট ক্রাই। এখানে কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে”।
তবুও শব্দহীন কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে মেহের। অন্য সময় হলে হয়তো নিবিড়ের কথায় আশ্বাস পেত কিন্তু এবার ভয় ছাড়া কিছু পেল না।
— “এই গ্ৰামে আজ পর্যন্ত এমন কোনো কিছু ঘটে নি। শুধু মাত্র তোদের জন্য ঘটল ।তা আবার আমার বাড়িতে। পুরো গ্ৰামের লোক আমারে ছিঃ ছিঃ করতাছে। যদি জানতাম তোমাদের চরিত্রে এমন সমস্যা আছে তাহলে জীবনে এখানে থাকার পার্মিশন তো দূরে থাক নিশির লগে তৌফিক দাদু ভাইয়ের বিয়ের দিতাম না”।
তনুর দাদির কথায় উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে নিল। নিবিড় শান্ত হলো না। মেহেরের হাতটা নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো…
— “যদি জানতাম আপনাদের গ্ৰামের মানুষদের শিক্ষায় অভাব আছে। তাহলে আমি নিবিড় এই গ্ৰামের চৌ-সিমানায় পা রাখতাম না”।
— “গ্ৰামের দোষ না, দোষ তোমাগো মতো শহরের চাল চলন হীন মাইয়া পোলা গো। ঝোপ ঝাপে বসে ফস্টি নষ্টি করবা আর আমরা কিছু কইলেই দোষ।
আইজকা তোমাগো বিয়া দিয়া আমরা থামমু “। (গ্ৰামের এক সম্মানিত ব্যাক্তি)
আকাশ থেকে পড়লো তনু। নিবিড় কে পাওয়ার জন্য এতো কিছু করলো কিন্তু সব বিফলে গেল। ঢোক গিলে মুখ ফসকে বললো..
–” এটা কিছুতেই হতে পারে না। সব দোষ মেহেরের।বড় লোকের ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারে নি। তার শাস্তি নিবিড় কেন পারে।
আমি এতো কষ্ট করে দুজনকে ওখানে পাঠা..
জিভে কামড় দিয়ে থেমে গেল তনু। কি বলতে কি বলে ফেলেছে ।
তারপর আর কেউ কোনো কথা বললেন না। বেশ কিছুক্ষণ পর একজন পাঞ্জাবি আর টুপি পড়া লোক উপস্থিত হলো। লোকটাকে চিনতে পাক্কা দশ মিনিট সময় লাগলো নিবিড়ের । তিনি আর কেউ নয় ,,বিয়ের কাজি। একপ্রকার জোর করে মেহের-নিবিড়ের বিয়ে টা হয়ে গেল। মেহের কেঁদে কেটে দশ মিনিট লাগিয়েছে কবুল বলতে। দশ মিনিটেও হতো না, নিবিড়ের ধমকের দশ মিনিট লেগেছে।বিয়ের পাট চুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিবিড়। নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো..
— “মেহের নিজের জিনিস পত্র নিয়ে এসো। আমরা এখন শহরে উদ্দেশ্য বেরুবো”।
–” ভাইয়া তুই এখন চলে যাবি মানে। এই রাস্তার মেয়েটার জন্য এতোকিছু হলো আর তুই এখন এই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়িতে উঠবি। (মেহেরের হাত ধরে নিশি) এই মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও”।
মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, অন্য হাত ধরে আটকে দিল নিবিড়। নিশির থেকে মেহেরের হাত ছাড়িয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললো…..
— “ভালো ভাবে এবং সম্মান দিয়ে কথা বল নিশি। ও রাস্তার মেয়ে না আমার বিয়ে করা বউ। তাই কারো সম্পর্কে কিছু বলার আগে তার পরিচয় টা জেনে নিবি।
(একটু থেমে আবার) সরি নিশি, ভাই হিসেবে এই বিয়েতে আমি থাকতে পারছি না”।
সময় নষ্ট না করে মেহেরকে নিয়ে গ্ৰাম থেকে বেরিয়ে এলো নিবিড়।
ফ্ল্যাস ব্যাক….
নিবিড় মেহের কে ডাকে নি। আর মেহের নিবিড়কে ডাকেনি।তাহলে দুজনকে ডাকলো কে? মেহেরের দিকে চোখ যেতেই দেখল ,,মেহের দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে চলেছে। আলতো হাতে মেহেরকে নিজের বুকে জরিয়ে নিল সে। এমন সময় কেউ একজন টর্চের আলো দুজনের উপর ফেললো। সাথে সাথে ঝাঁঝালো আলোয় কুঁচকে এলো দুজনের চোখ। হাত দিয়ে তীর্যক আলো আড়াল করলেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি। গ্ৰামের মানুষ জন অন্যকিছু ভেবে বসলো।
__________________
স্পীডে ড্রাইভ করছে নিবিড়। যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি
পৌঁছাতে পারলে শান্ত হবে সে। তার পাশে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে মেহের। তার কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে ডাহুক পাখি ডাকছে। গাড়ি যতই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, পাখির আওয়াজ ততই অস্পষ্ট হয়ে চলেছে। নিবিড় হাত বাড়িয়ে বোতলটা মেহেরের এগিয়ে দিয়ে পূর্ণরায় ড্রাইভে মন দিল।মেহের কাঁচ খুলে বোতলের পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটে দিয়ে নিল। এক ঢোক খেয়ে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিল। নিবিড় বোতলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পূর্বের স্থানে রেখে দিল।
কান্না থামানোর জন্য পানি দিলো, পানি খেয়ে শক্তি বাড়িয়ে আবার কাঁদছে। চরম বিরক্ত হলো নিবিড়।দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে থামিয়ে দিল সে। মেহেরের দুই বাহু চেপে নিজেকে দিকে ফিরিয়ে নিল। একটু ঝুঁকে গাড়ির কাঁচ আঁটকে দিয়ে, গালে হাত রেখে কৌতূহলী চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো…
— “এবার কাঁদো,, যত ইচ্ছে কাঁদো। আমার মত একটা বাজে ছেলে তোমার মতো সরল একটা মেয়েকে ডিজার্ভ করে না। কি করবো বলো, আমি যদি একবার বিয়েতে নাকোচ করতাম তাহলে তার ইফেক্ট তোমার উপরে এসে পড়তো। সবাই তোমাকে চরিত্রহীন মেয়ের উপাধি দিত”।
কান্নার বেগ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেল মেহেরের। নিবিড়ের হাতের বাজে নিজের হাত জোড়া বন্দী করে নাক টেনে বললো..
— ”কে বলছে আপনি আমার যোগ্য নয়। বরং আমি আপনার যোগ্য নয়। আমি আপনার জীবনে আসতে না আসতেই এতোবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেল”।
নিবিড়ের বুঝতে অসুবিধা হলো না মেহের কেন কাঁদছে।সে নিজের জন্য নয় নিবিড়ের জন্য কাঁদছে। নিবিড় মেহেরের চুলের বাজে হাত দিয়ে মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল মেহেরের দিয়ে। গভীরভাবে নিজের ঠোঁট দুটো স্পর্শ করলো মেহেরের ঠোঁট। অতঃপর আবার সরে আয়নার চুল ঠিক করলো ।।
আকস্মিক ঘটা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলো না মেহের। ঠোঁট যুগল হাফ ইন্ধি ফাঁক হয়ে গেল। ঘটনাটা বোধগম্য হতেই ঠোঁটে হাত রেখে লজ্জায় নুইয়ে গেল সে।
— “বিয়েটা যেহুতু হয়ে গেছে, তাই তুমি আমার বউ।যদি আরেকবার চোখের অশ্রু ঝরেছে তাহলে বাসরটা এখানে সেরে ফেলবো কী বলো…
এক মুহুর্তের জন্য হলেও কান্নার কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে। খড়ে পড়া ওরনাটা টেনে লজ্জার্থ মুখটা ঢেকে নিল সে।
___________________
সূর্যের আলো পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। দমকা হাওয়ায় পর্দাগুলো উড়ছে। সেই ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আভাগুলো চিকচিক করে মেহেরের মুখে পড়ছে ।বারবার কপাল কুঁচকে আসছে তার। ঘুমের ঘোরে মাথার নিচ থেকে বালিশটা বের করে মুখের উপর ধরলো। বালিশের ভারে নাকের ডগায় খানিকটা ব্যাথা পেল বটে। উপায়হীন হয়ে বালিশ টা ছুঁয়ে ফেললো নীচে। কিন্তু নীচে না পড়ে হালকা উপরে উঠে ঠাস করে মেহেরের মুখের উপর পড়লো।নাকে হাত বুলিয়ে উঠে বসলো সে।তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে এক লাথিতে নিচে ফেলে দিল। আরমোরা ভেঙ্গে সামনে চোখ পড়তেই নিবিড় ভেংচি কাটা ছবিটার দিকে চোখ আটকে গেল তার। চারপাশে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে সিউর হলো এটা নিবিড়ের রুম। কিন্তু আসে পাশে নিবিড়ের উপস্থিতি অনুভব করল না সে। টেবিলের উপর একটা প্লেটের উপর আরেকটা প্লেট উল্টো করে রাখা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে। উপরের প্লেটটা সরাতে চোখ বড় বড় হয়ে এলো তার। মানচিত্রের মতো দুটো রুটি আর ডিম ফ্রাই। পাশে নিবিড়ের ফোন রাখা। ফোনটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখে নিল। আননোন নাম্বার থেকে দুটো মেসেজ এসেছে। প্রথমটা-কে লেখা..
“দুটো রুটি বানিয়ে রেখে এসেছি। খেয়ে নিও ,, যথা সম্ভব আমি চলে আসবো”
দ্বিতীয় টা পৌঁছানোর পরে..
” তুমি কি উঠেছ?? ব্রেকফাস্ট করেছ?? আচ্ছা রুটিগুলো খেতে কেমন হয়েছে?
ব্রেকফাস্ট লেখা দেখে বাইরে তাকালো মেহের ।এখন বিকেল। ঘড়িতে ৫.১৪ বাজে ।হঠাৎ কি মনে করেই চাচীর কথা মনে হলো তার। ফোনটা নিয়ে বেলকেনিতে দাঁড়িয়ে চাচীর নাম্বারে ফোন করলো।পরপর দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ক্রমাগত “হ্যালো ,, কে”? বলেই চলেছে। মেহের নিরবতায় চাচীর কন্ঠস্বর শুনছে। সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠলো..
— “চাচী, আমি মেহের। কেমন আছো তোমরা “?
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)