#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৮
— “সরি, আমি জানতাম না। আমার ছোঁয়া এতোটা খারাপ। আমার ছোঁয়ায় তোমার অস্বস্তি বোধ হয়। নাহলে কখনো তোমার এতোটা কাছে যেতাম না। বলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ”।
নিবিড়ের কথায় মন খারাপ হয়ে গেল মেহেরের। নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে, কেন নিবিড়কে ওভাবে বললাম। প্রায় সময়ই তো নিবিড় মেহেরকে ছুঁয়ে দেয়, ইভেন্ট কোলে তুলে নেয় তখন তো খারাপ লাগে না। নয়ন জোড়া বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে নিবিড়ের কাঁধ স্পর্শ করলো । নিবিড় খুব যত্নসহকারে মেহেরের হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর বালিশে মুখ গুজে দিল। মেহেরের বোধগম্য হতে সময় লাগলো না, নিবিড় তার উপর অভিমান করে আছে । পূর্ণরায় আবার নিজের কাঁধে স্পর্শ করলে শব্দ করে উঠে বসলো সে। শান্ত কন্ঠে বললো …
— “প্লীজ মেহের, দেখ ডিস্টার্ব করো না। ঘুমাতে দাও ।আরেকবার যদি ডিস্টার্ব করো, তাহলে আমি অন্যরুমে চলে যাব”।
মেহের শোয়া থেকে উঠে বসলো। নিবিড়ের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে করুন সুরে বলল..
— “আই এম সরি । আমি ওভাবে বলতে চাইনি নিবিড়” ।
প্রথমবার মেহেরের মুখ থেকে নিবিড় ডাক শুনে এক আড় চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো । বন্ধ দরজাটা খুলে প্রস্থান করলো সে। যাওয়ার আগে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে গেছে — “বুঝে গেছি আজ তুমি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। তাই অফিসে যাওয়াই ভালো”।
যতক্ষন নিবিড় বাড়িতে ছিল মেহেরের সাথে কোনো প্রকার শব্দ উচ্চারণ করে নি। তবে মেহের নিবিড়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে । সারাদিনটা নিবিড়ের কথা ভাবতে ভাবতে চলে গেছে।মেহেরের ইচ্ছে করছে নিবিড়ের কাছে চলে যেতে । কিন্তু সে এখনো জানে না নিবিড় কি কাজ করে ।
__________________
কোমরে আঁচল গুঁজে রান্না করছে মেহের। সবজি তরকারি আর পোনা মাছের ঝোল। নিবিড় এসেছে মিনিট বিশেক হয়েছে। আজ নিবিড়ের জন্য লাল শাড়ি পড়ে সেজেছে সে। রান্নার কাজ শেষ করে চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে উপরে চলে এলো মেহের। রুমের ভেতরে ঢুকতেই তাজ্জব বনে গেল। তার চেয়েও সাইজে বড় একটা গিফ্ট প্যাক রেপিং করা। চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিবিড় কে খোঁজার চেষ্টা করল। কিন্তু তার দেখা মিললো না। ওয়াশরুমের ভেতর থেকে পানির আওয়াজ আসছে। এখনও নিশ্চিয়ই শাওয়ার শেষ হয়নি। ততক্ষণ নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় মেহেরের কাছে। কাবার্ড থেকে একটা কাঁচি বের করে রেপিং করা প্যাকেটটা খুলতে লাগলো। আস্তে ধীরে প্যাকেট খোলার পর তার নজরে এলো কার্টন বক্স। সেটা খুলার চেষ্টা করতে নিলে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো নিবিড । সামনের দিকে চোখ যেতেই আটকে গেল কোনো মায়াবী রমনীর প্রতি। কপালের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পরিমাণ ঘাম। তার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট আবদ্ধ চুলগুলো ।কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজার ফলে পেটের বেশ খানিকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। চোখের মাঝে হাজারো কৌতূহল। হাতের ভাঁজে কাঁচি বন্ধ। প্যাকেটটা খোলার অদম্য ইচ্ছা। নিজের ভেতরে অন্য কিছু একটা করে ফেলার তীব্র হাহাকার বিরাজ করছে ।সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। সে চাইছে এমন না, কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে। এগিয়ে গিয়ে মেহেরের হাত থেকে কাঁচি টা নিজের হাতে নিয়ে নিলো নিবিড়। প্যাকেটের দিয়ে তাকিয়ে বলল..– “যাও গিয়ে খাবার নিয়ে আসো, সারাদিন কিছু খায়নি। পেটের ভেতরে ছুঁচো গুলো দৌড়াদৌড়ি করছে”।
মেহের সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এলো । আঁচ বন্ধ করে সুন্দর করে দুই প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিল। যেমন চপল পায়ে হেঁটে নিচে এসেছিল,,তেমনি চপল পায়ে রুমে পৌছে গেল। দরজা কাছে কিছুক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। নিবিড়ের কোলে একজন সুন্দরী মেয়ে বসে আছে । নিবিড় ল্যাপটপে কিছু একটা দেখাচ্ছে আর হাসছে। এই হাসির কারণ মেহেরের অজানা। কপালের মাঝে সরু রুদ্র ভাজ পড়লো তার। খাবারের প্লেটটা টেবিলের উপর রাখল। অতঃপর বিকট শব্দে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে গেল সে। মেহেরের পায়ের শব্দ নিবিড়ের কান অবধি ঠিকই পৌঁছালো কিন্তু তার দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হলো না। মেহের মেয়েটার পড়নের শাড়িটা দেখে ক্রোভে ফেটে পড়লো। দেখতে এক ডিজাইনের । ফোঁস করে দম ছাড়লো সে। নিবিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো..
— “মেয়েটা কে”??
মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার চুলের ভাঁজে অধর ছুয়ে দিয়ে বলল.. — “আমার বউ”।।
চোখের পলক থেমে গেল মেহেরের । অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু জমে গেল। গড়িয়ে পড়ার আগেই হাতের পিঠ দিয়ে অশ্রু টুকু ফেলে বলল..
— “তাহলে আমি কে”??
হাতটা ল্যাপটপ থেকে তুলে কপালের কোণে কিছুক্ষণ স্লাইড করলো নিবিড়। ভাবার অভিনয় করে বললো..
— ”আমার ডলুর সতীন”।
সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মেহের। নিবিড়ের কোলে ল্যাপটপ টা কেড়ে নিয়ে এক প্রকার ছুঁয়ে ফেললো মেয়েটাকে। মেয়েটার দিকে আর না তাকিয়ে বিনা দ্বিধায় নিবিড়ের কোলে নিজের জায়গা করে নিল সে। দুহাতে গলা জড়িয়ে বুকে মাথা রাখলো।মনে মনে তৃপ্তিকর হাসি দিল নিবিড়। নিজেকে সংযত করে মেহের কে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলো । বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টার পর মেহের কে ছেড়ে ডলুর কাছে এগিয়ে গেল। মেঝে থেকে তুলে পূর্ণরায় কোলে নিয়ে ল্যাপটপে মন দিল নিবিড় ।
নিবিড়ের কান্ড দেখে শব্দ করে হাসলো মেহের। কারন এতোক্ষণ যেটাকে সতীন বলে নিবিড় পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। যে আসলে একটা টেডি বিয়ার। মেহের ভেংচি কেটে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল..
— “নিন আপনি আর আপনার পেয়ারের ডলু মনের সুখে খেয়ে নিল”।
___________________
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নিবিড়। কিন্তু মেহেরের চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুম নেই। ঘুম নেই বললে ভুল হবে, ঘুমাতে পারছে না সে। সতীন কথাটা বারবার মেহেরের মস্তিষ্কের মাঝে ঘোড়াফেরা করছে। যদি সত্যিই কখনো নিবিড় দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয় তখন। এটা অস্বাভাবিক ব্যপার নয়। মেহেরের মতো একজন মেয়ের সাথে আদোও থাকা যায় কিনা, সেটাই ভাবছে সে। আড় চোখে ঘুমন্ত নিবিড়ের মুখশ্রীর দিকে তাকালো মেহের। একরাশ ভালোলাগা লুকিয়ে আছে এই মুখটার মাঝে। নিবিড়ের নিচে চোখ যেতেই মুখ ঘুড়িয়ে নিল সে। টেডি বিয়ারের চিবুকে মাথা রেখে গভীর নিদ্রায় তলিয়েছে নিবিড়। যেন মেহের তার কেউ না, আর ডিয়ার টা নিবিড়ের বউ। ঘুমের মাঝে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, মিনিটে মিনিটে ঠোঁট দুটি ছুঁইয়ে দিচ্ছে। কখনো নিজের বুকের উপর নিয়ে স্বযত্নে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে, কখনো নিজের পুরো ভর টেডি টার উপর দিচ্ছে। যেদিকে পাশ ফিরছে,, সেদিকে টেডিটাকে নিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু আজ বড্ড অসহ্য লাগছে । ইচ্ছে করছে লাথি মেরে টেডিটাকে ফেলে দিতে। কিন্তু সংযত করছে। নিবিড় কে পিঠ দেখিয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো মেহের। পাক্কা এক ঘন্টার চেষ্টায় ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল সে।
মাঝখানে কেটে গেছে চার দিন। এর মাঝে নওয়াজ সাহেব আর নাজমা দুজনে গ্ৰামে থেকে ফিরে এসেছেন। ভয়ে ভয়ে ছিল, আদোও তারা মেহের কে মেনে নিবে কিনা। কিন্তু আশ্চর্য করে তারা মেহেরকে বাড়ির বউয়ের পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। এখন বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে টেডি বেয়ার টা। চারদিনে টেডির সাথে নিবিড়ের সম্পর্ক আরো গভীরতম হয়ে উঠেছে । সবকিছু সহ্য সিমা পেরিয়ে গেছে মেহেরের কাছে। এই তো কালকে রাতে ফেরার সময় টেডির জন্য একটা সেল ফোন কিনে এনেছে। যাওয়ার আগে মেহেরকে বারবার বলে গেছে, যখন নিবিড় ফোন দিবে ।সাথে সাথে রিসিভ করে টেডির কানের সামনে ধরে দাড়িয়ে থাকবে। মেহের মনে করেছিল, নিবিড় শুধু মেহের কে জ্বালাতে এমন করবে। কিন্তু না,
আজ দুপুর আড়াই টা নাগাদ তুমুল শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে তুলতেই শুনতে পেল নিবিড়ের এক গাদা বচন। রাগে দুঃখে টেডির কানে কাছে ফোন ধরে পুরোটা সময় মন খারাপ করে বসে ছিল। কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে মেহের । কান্নার শব্দ ফোন ভেদ করে নিবিড়ের কান অবধি ঠিকই পৌঁছাছে। এখন মেহেরের জীবনের একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা হচ্ছে যেভাবেই হোক টেডির থেকে নিবিড় কে সরিয়ে আনা ।
বেড থেকে উঠে এক লাথি দিয়ে টেডিটাকে ফেলে দিল সে।
(চলবে… ইনশাআল্লাহ)
অনেকের কাছে গল্প পৌঁছাচ্ছে না । অনুগ্রহ করে ,, যার কাছে যাবে রেসপন্স করবেন! এবং অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিবেন,, ধন্যবাদ 💓