#এক_মুঠো_ভালোবাসা💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৯
বেড থেকে উঠে এক লাথি দিয়ে টেডিটাকে ফেলে দিল সে। টেডিটা পড়তে গিয়েও পড়লো না, তার আগেই নিবিড় বাহুবলে টেডিটার হাত ধরে নিল। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে সামনে মেহেরের বিরক্তিকর মুখটা দর্শন করল। পূর্ণরায় আবার আঁখি জোড়া বেষ্টিত করে বলল..
— “প্লীজ মেহের একটু ডলু সোনাকে তুলে দিবে। ওকে ছাড়া আবার সামান্য পরিমাণ ঘুম আসে না। প্লীজ ….
ইচ্ছে করতে নিবিড়ের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হাতে টেডির গলা চেপে ধরলো। যদি এটা জীবন্ত মানুষ হতো এতোক্ষণে নির্ঘাত পরপারে চলে যেত। ঘুমন্ত নিবিড়ের হাতের ভাজে থেকে ধীরে ধীরে টেডিটাকে ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর টেডিটার কানের কাছে গিয়ে রুদ্র কন্ঠে বললো..
— “কিছু বলি না বলে তোর তো খুব সাহস বেড়েছিল তাই না। অন্য স্বামী, অন্যর বিছানা, অন্যর বরের সাথে লুটুরপুটুর করতে লজ্জা করে না। যদি আবার নিবিড়ের কাছে তোকে দেখি তাহলে, তুই আর আস্ত থাকবি না।তোর চুল, না না তুই তো টাক”।
এইটুকু বলে হাসিতে ফেটে পড়লো মেহের । ভেসে এলো নিবিড়ের ঘুমন্ত কন্ঠস্বর..
–” মেহের কি হয়েছে। ডলুটাকে দিচ্ছ না কেন ?? ওকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি না”।
সময় নষ্ট করলো না মেহের। ধীরে ধীরে নিবিড়ের পাশে শুয়ে পড়লো। নিবিড় কে নিজের দিকে ফিরিয়ে ধীরে ধীরে তার মাথাটা নিজের বুকে রাখলো হাত জোড়া পিঠের মাঝে রাখলো। নিজের হাত জোড়া নিবিড়ের গালে রেখে কিছুক্ষণ খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো স্বযত্নে হাত বুলিয়ে দিল। নিবিড়ের মাথাটা তুলে নিজের কপালে ছুঁয়ে দিল। নিজের কাজে নিজেই লজ্জার্থ হাসলো সে। নিবিড়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তন্দ্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো ।
প্রায় মিনিট দশেক পর মেহেরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল নিবিড়। মেহের কে পিঠ দেখিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো । কই যখন টেডিটা নিবিড়ের কাছে থাকে তখনতো নিবিড় পাশ ফিরে ঘুমায় না। বরং ডলু সোনা, ডলু সোনা বলে বুকে টেনে নেয়। ধক করে উঠে বসলো মেহের। নিবিড়ের দিকে তৃক্ষ্ম দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যপাশে গিয়ে নিবিড়কে নিজের বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
নিজের গলায় ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকালো মেহের। নিবিড় ঘুমের ঘোরে ঠোট দিয়ে স্লাইড করছে । নিজের করা কাজে নিজেই ফেঁসে গেছে মেহের। হাত দিয়ে শাড়ির আঁচলটা ভালোভাবে চেপে সহ্য করে রইল। যতই সময় যাচ্ছে স্পর্শ গুলো আগের তুলনায় গভীর হচ্ছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিবিড়ের মাথাটা সরানোর চেষ্টা করতে লাগল। হলো তার বিপরীত। মেহেরের উন্মুক্ত পেটের হাত রেখে গলার জোরে কামড় বসিয়ে দিল। সাথে সাথে নিবিড়ের চুলগুলো খামচে ধরলো মেহের। তবুও নিজেকে নিবিড়ের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। সে ভেবেই নিয়েছে নিবিড়ের দেওয়া সব টর্চার সহ্য করে নিবে । একটা সামান্য টেডি যদি পারে তাহলে সে কেন পারবে না। মেহের তো নিবিড়ের লিগ্যাল ওয়াইফ। মনে মনে নিবিড় কে উদ্দেশ্য করে বলল..
— “ব্যাটা লুচু কোথাকার । বউয়ের সাথে এমন করতে পারে না। তাই টেডি ভাড়া করে এনেছে”।
মনে মনে মেহেরের কান্ড দেখে হাসল নিবিড়। সে তো এটাই চেয়েছিল যাতে মেহের তার সবকিছু সহ্য করে নেয়। দুহাতে মেহেরের পিঠে হাত রেখে মেহের কে নিজের বুকে টেনে নিল নিবিড়। বেডের কোণে গুটিয়ে রাখা ব্যাঙ্কেট খানা পা দিয়ে টেনে হাতের কাছে নিয়ে এলো। অতঃপর মেলে মেহের কে ব্যাঙ্কেটের ভেতর পেঁচিয়ে নিল। চুলের বাজে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল..
–” সারারাত অনেক দুষ্টুমি হয়েছে ডলু সোনা। এবার ঘুমিয়ে পড়। রাতে আবার হবে” ।
ঘুমের মাঝে নিজের শার্টে ভেজা অনুভব করে মেহেরের দিকে তাকালো নিবিড়। মেয়েটা কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে। মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিজের কাছ থেকে মেহেরকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো । মলিন কন্ঠে বলল..
–” কি হয়েছে মেহের । কাঁদছ কেন”?
মেহের কোনো রকম বাক্য উচ্চারণ করলো না। বালিশে মাথা রেখে পূর্বের মতো কেঁদে চলেছে । বিষয়টা বোধগম্য হতে বেশ বেগ পেতে হলো নিবিড় কে । মাথা নিচু করে অপরাধী কন্ঠে বলল..
— “সরি মেহের! হয়তো ঘুমের ঘোরে তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেবিয়ার করে ফেলেছি । আসলে আমি তোমাকে ডলু সোনা মনে করেছিলাম ।
তোমারও ভুল হয়েছে। প্রথমবার আমি যখন তোমাকে স্পর্শ করেছিলাম। তখন আমাকে হুসে ফেরানো উচিত ছিল। সমস্যা নেই , আজ থেকে তুমি বেডে আর আমি ,ডলু সোনা নিচু ঘুমাবো” ।
চোখ দুটো সরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে দিল। ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছুঁই ছুঁই। আজ বন্ধের দিন। তাই একটু বেশি ঘুমিয়েছে। তার সাথে মেহেরও যোগ দিয়েছে।
বেডের উপর ভর দিয়ে নেমে যেতে নিলে নিবিড়ের বাহু চেপে থামিয়ে দিল মেহের। কিছু বোঝার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো নিবিড়ের বুক মাঝারে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে ..
— “আপনি অনেক পঁচা নিবিড়। শুধু আমাকে কাঁদান।আমি কখন বললাম, আপনি আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছেন বলে আমি কাঁদছি। আপনি ঘুমের ঘোরে ডলু সোনা,ডলু সোনা করেন। কই একবারও তো বলেন না, মেহুসোনা । তাই কাঁদছি”।
এবার মেহের কান্নার কারণ বুঝতে পারল নিবিড়। সব ক্রেডিট তীব্রের। মেহেরের কান্না থামিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকেনিতে চলে গেল নিবিড়। তীব্রকে একটা ধন্যবাদ না জানানো পর্যন্ত শান্তি পাবে না সে ।
_________________________
— “আন্টি আপনার চা” ।
অতি সাবধানে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিল মেহের। নাজমা চায়ের কাপটা না নিয়ে মেহের কে তার পাশে বসার উপযুক্ত জায়গা করে দিলেন। মেহেরের মুখটা তুলে হেসে বললেন..
–” আন্টি কিসের হে। আমি নিবিড় আর নিশির মা হই ।নিবিড়ের মা আর তোর মা কি আলাদা নাকি। এখন থেকে সবসময় মা বলে ডাকবি।
এখন মা ডাক নাহলে চা খাবো না” ।
চোখ ছলছল করে উঠলো মেহেরের। জন্মের পর মা মারা যায় বিধায় কাউকে মা বলে ডাকা হয়না। নাজমার মুখে এমন কথা শুনে বুকটা মুচড় দিয়ে উঠল। ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দময় তিনবার উচ্চারণ করল মা ,মা মা । সময় না নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল নাজমার বুকে। তিনি যত্ন মেহেরের মাথায় চুমু এঁকে দিলেন।
মেহেরের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চোখ বন্ধ করে এক চুমুক দিলেন। অতি স্বাদে চোখ খুলে বললেন .
— “তোর মুখে মা ডাকটা যতটা মিষ্টি, ঠিক ততটা মিষ্টি তোর চায়ের হাত ।
দুই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন শান্তিতে আছি। বাকি রইল নাতি নাতনি । ইনশাআল্লাহ ওটার মুখও খুব তাড়াতাড়ি দেখবো”।
অজান্তেই নাজমার কোলে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো মেহের। কাঁদতে কাঁদতে বলল..
–” মা। আমি বোধ হয় তোমার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো না। ডলুকে তোমার ছেলে বিয়ে করে এনেছে”।
তাজ্জব বনে গেল নাজমা। ডলু নামের মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছে? অথচ সেই জানে না। কৌতূহল নিয়ে বললেন..
–” কে এই ডলু আর কবে বিয়ে করে আনলো”?
— “তোমরা আসার অনেক আগে! আমি যে তার বউ সে মনেই করে না। জানো যতক্ষন বাড়িতে থাকে ডলু সোনা, ডলু সোনা করে ।খাইয়ে দেয় ,কোলে নিয়ে ঘুরে । রাতে ডলু ছাড়া ঘুমাতে পারে না” ।
বলেই কেঁদে উঠলো মেহের। মেহেরের মাঝে নিশির মুখটা ভেসে উঠলো নাজমা কাছে। মেহেরের চোখ মুছিয়ে দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিবিড়ের রুমের দিকে নিয়ে গেলেন। সেখানে যা দেখলেন, তিনি মাথা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। কারন তার চোখের সামনে নিবিড় সাউন্ড সিস্টেম অন করে,একটা শাড়ি পরিধিতা টেডির সাথে কোমড় দুলিয়ে কাঁপল ডান্স করে যাচ্ছে। ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে পড়ে যেতে নিলে হাত বাড়িয়ে সামলে নিল মেহের । নিবিড়ের বয়স আনুমানিক ছাব্বিশ ছাড়িয়েছে। নিশি নিবিড়ের দু বছরে ছোট। পাঁচ বছরের পর তাকে আর পুতুল খেলতে দেখেনি। তখন বন্দুক নিয়ে ঘুড়তে দেখা যেত। ইভেন্ট নিশিকে পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করতো। আর এখন প্রাপ্ত বয়সে এসে নিজে পুতুল নিয়ে খেলছে।
মায়ের উপস্থিতি অনুভব করে নাজমাকে নিয়ে নাচতে শুরু করলো নিবিড় ।হা করে তাকিয়ে রইল মেহের।
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)
অনেকের কাছে গল্প পৌঁছাচ্ছে না। অনুগ্রহ করে,, যার কাছে যাবে রেসপন্স করবেন। এবং অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিবেন,, ধন্যবাদ 💓