#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২০
নিবিড় সাউন্ড সিস্টেম অন করে, একটা শাড়ি পরিধিতা টেডির সাথে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে কাঁপল ডান্স করছে। ছেলেকে এমন অবস্থা দেখে পড়ে যেতে নিলে হাত বাড়িয়ে সামলে মেহের। নিবিড়ের বয়স আনুমানিক ছাব্বিশ ছাড়িয়েছে। নিশি নিবিড়ের দুবছরের ছোট । পাঁচ বছরের পর তাকে আর পুতুল খেলতে দেখেনি। তখন বন্দুক নিয়ে ঘুড়তে দেখা যেত। ইভেন্ট নিশি কে পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করতো। আর এখন প্রাপ্ত বয়সে এসে নিজে পুতুল নিয়ে খেলছে।
নিবিড়ের নাচার মাঝে চোখ আটকে গেল দরজার পাশে দাঁড়ানো দু’জন ভালোবাসার মানুষের মাঝে। দু’জনকে এমন অবস্থায় দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে তার ।যদি টেডি নিয়ে মেহের কে জেলাস ফিল না করতো। তাহলে এতোক্ষণ নিবিড় শান্ত মনে টেডি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো না। হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। প্রিয় মানুষদের চমকে দেওয়ার জন্য হোক কিংবা মেহেরের সাথে ঝগড়া পর মাঝে মাঝে টেডি আনতেই হবে তাকে। কারন প্রিয় মানুষটিদের চমকে যাওয়া মুখ গুলো দেখতে অদ্ভুত টাইপের হয়।
নিজের ভাবনাকে সাইডে রেখে নাজমার দিকে এগিয়ে গেল নিবিড়। অতঃপর একহাতে টেডির ,,অন্যহাতে মায়ের হাত ধরে শুরু হয়ে গেল তিনজনের উরুম ধুরুম নাচ। মেহের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।নাজমাকে আনলো নিবিড়ের বিচার করতে আর সে এখানে এসে ছেলে আর তার নাতির মায়ের সাথে নাচ শুরু করে দিয়েছে। সময় না নিয়ে সাউন্ড সিস্টেম অফ করে বুকে হাত গুজে রক্তচক্ষু দিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে মেহের।
নিবিড় যেন জানত এমন কিছু একটা তার জন্য অপেক্ষা করছে। সে তার ডলু সোনাকে নিয়ে বেডে বসে বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করে বলল…
–” মা আজকে আমি আর তোমার বউমা রাতের দিকে বেরুবো। তীব্র আর ওর বউ রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে যাবে। তাই আমি আর আমার বউও সেখানে যাবো”।
_____________________
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। সূর্য ডুবেছে তাও ঘন্টা খানের পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তার সামান্যতম প্রভাব পরে নি শহরে বসবাস রত মানুষের মাঝে। তারা কৃত্রিম যান্ত্রিক উপায়ে সবকিছু দিনের মতো আলোকিত করে নিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যে বিষয় কৃত্রিম আর প্রাকৃতিক দুটো কখনো একই হতে পারে না। তবে কোনোরকম সামলে নিচ্ছে সবাই। তবে আজকে রাস্তাঘাট সামান্যতম ফাঁকা। হয়তো আজকে সাপ্তাহিক ছুটি। তাতে কি? আজ তো প্রিয় মানুষটির সাথে কাটানোর দিন। তাই মোটামুটি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আজ নিবিড়ও বের হবে তার প্রিয় মানুষটির সাথে ।তবে সেই প্রিয় মানুষটি মেহের নয়। নিবিড়ের ডলু সোনা। বেলকেনিতে বসে এইসব ভাবছে মেহের। তার ভাবনার মাঝেই নিবিড়ের ডাক ভেসে এলো ।
— “মেহুসোনা। কোথায় তুমি একবার আসবে” ।
চোখজোড়া ছলছল উঠল তার। নিবিড় তাকে মেহুসোনা বলে ডাকছে। দ্রুত পায়ে বেলকেনি থেকে রুমে প্রবেশ করলো। নিবিড় তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেহের কে দেখে এগিয়ে গেল সে। মেহেরের হাত দুটি বুকে রেখে বলল…
— “কষ্ট করে বোতামগুলো একটু লাগিয়ে দাও তো”।
এতোক্ষণে খেয়াল করলো নিবিড়ের শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা। যার ফলশ্রুতিতে লোমহীন বুকের খানিকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। লজ্জার্থ মুখটা নিবিড়ের থেকে আড়াল করে ধীরে ধীরে খোলা বোতামগুলো স্বযত্নে লাগিয়ে দিলো। নিবিড় কলার টেনে পুরো শার্টটার অবস্থান চেন্জ করে নিল। আয়নার দিকে ফিরে বলল…
— “ধন্যবাদ মেহুসোনা। এবার ডলু সোনাকে একটু সাজিয়ে দাও। ডলু সোনা তো তোমার চেয়ে অনেকটা ছোট। আস্তে আস্তে ওকে সব শিখিয়ে দিও কেমন। দেখবে তখন তোমাকে কষ্ট করে আমার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিতে হবে না, ও এটাই পাড়ব..
কথা শেষ করতে পারলো না নিবিড়। আয়নাতে মেহেরের চন্ডীরুপটা দেখে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল নিবিড়। স্পষ্ট আয়নাতে দেখা যাচ্ছে মেহের ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। যাতে বোঝাই যাচ্ছে। আজ তার কপালে শনি , রবি বৃহস্পতি আছে।
সোফায় বসিয়ে রাখা টেডিটার তুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেললো। অতঃপর টেডিটার চিবুকে বসে ইচ্ছামতো কিল ঘুষি লাথি মেরেই যাচ্ছে। মারতে মারতে একসময় সেলাই ছিড়ে তুলো বেরিয়ে এলো। শব্দ করে হেঁসে দিলো মেহের ।
কোমর চেপে সরিয়ে আনল মেহেরকে। হলো তার উল্টো। মেহের টেডিকে রেখে নিবিড়ের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। কলার চেপে সামনে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
— “সাহস তো কম না তোর। আমার সাথে সামান্য একটা টেডির তুলনা করিস। আবার আমাকে সাজিয়ে দিতে বলিস। সাহস থাকলে আরেকবার বল ,,
এবার মেরে ওর জিও গ্ৰাফি পাল্টে দিয়েছি। নেক্সাস টাইম ওকে খুঁজে পাবি না ।
ঘুড়তে তোরা যাচ্ছিস। মাঝখানে আমাকে কেন টানছিস। সাহস থাকলে এই বাড়ির বাইরে পা রাখ। একদম খুন করে ফেলবো । হে হে হে 😭
কথাগুলো বলতে বলতে নিবিড়ের চিবুকে মাথা রাখল মেহের। নাকের জলে চোখের জলে এক করে ফেলেছে সে। নিবিড় হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না ।আলতো করে হাত রাখলো মেহেরের মাথায়। সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মেহের। একটানে শার্টের বোতাম গুলো ছিঁড়ে ফেললো। একপাশের শার্ট টেনে নাক মুছে হনহন করে বেরিয়ে গেল সে।
মেহেরের কাজকর্মে হতবাক নিবিড়। যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল নিবিড়। অজান্তেই বলে ফেলল..
— “কে এ । আমার বউ না-কি সাইক্লোন”।
— “তোর বউ নামক সাইক্লোন। তোর বিয়ের সাদ মিটিয়ে তবে ছাড়বো”।
বলে আবার চপল পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল। নিবিড় এগিয়ে টেডিটার কাছে গেল । তুলোগুলো গুছিয়ে পূর্নরায় টেডিটার ভেতরে ঢুকে নিল। কাবার্ড হাতিয়ে একটা সুচ আর সূতা নিয়ে বসলো। আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায় ছেঁড়া স্থানটুকু সেলাই করে নিল।
এটা তার সেই মেহের কি-না বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে নিবিড়ের।যে মেয়েটা চাচা , বাবা-মায়ের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ি করেছিল। মেয়েটাকে যে শান্ত করতে পেরেছে, এতেই খুশি সে ।
_______________________
— “এতো সাজাচ্ছো কেন? সাজাতে সাজাতে গিয়ে দেখবো তোমার ছেলে ডলুকে নিয়ে ভেগে গেছে” ।(করুন সুরে মেহের)
–” তুই এতো ছটছট করছিস কেন? আমি তো বলছি,, নিবিড় তোকে না নিয়ে কোথাও যাবে না” । (চুল আঁচড়ে দিতে দিতে নাজমা)
— ” এতো সাজ দিয়ে কি হবে।যদি আমাকে ফেলে চলে যায় । দেখো নি তখন বলল, বউকে নিয়ে ডিনারে যাচ্ছে”। (মন খারাপ করে মেহের)
— “আরে পাগলী নিবিড় বলেছে, বউকে নিয়ে যাবে। ডলু সোনাকে নিয়ে না “।
যদি চলেও যায় , আমি ফোন করে ওকে নিয়ে আসবো।
নাক টেনে কেঁদে দিল মেহের । নাজমাও ডলু সোনা ডলু সোনা বলে ডাকছে ।
নাজমা মেহের কে মনের মতো সাজিয়ে আয়নার সামনে ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে দিল। চোখের নিচে থেকে কাজল নিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল..
— “বাহহ আমার মেয়েটাকে একদম পরীর মতো লাগছে। কিন্তু চোখের অশ্রু টা মানাচ্ছে না ।
বললাম তো, নিবিড় যাননি” ।
— “আমি নিবিড়ের জন্য কাঁদছি না। সবাই প্রানহীন টেডিটাকে ডলু সোনা বলে ডাকছে, আমাকে ডাকছে না কেন”?
শব্দ করে হেঁসে দিলো নাজমা। মেহেরের ললাটে অধর ছুয়ে দিল বললেন ..–” তুই তো সোনা নয় ।পরী , মেহুপরী “।
||||
— “টেডিটাকে সরিয়ে নিন গাড়িতে উঠবো”! (কাঠ কাঠ গলায় মেহের)
মেহেরের বিরক্তিমাখা কন্ঠ শুনে ফিরে তাকালো নিবিড়।আজ মেহের কে নিবিড়ের কাছে সবচেয়ে সুন্দরী রমনী লাগছে। টানাটানা কাজল, রক্তিম অধর, চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে ।মায়ের শাড়িতে পাক্কা গৃহিনী লাগছে। এতোক্ষণ মেহেরের দেরী করে আসাতে ততটা বিরক্ত ছিল। এক নিমেষেই সব বিরক্তি ভাব দূর হয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিল নিবিড় । সামনে নিয়ে তাকিয়ে বলল..
— “পেছনে জায়গা আছে ,, বসে পড়” ?
শুনলো না মেহের। সামনের সিট থেকে টেডিটাকে পেছনে ছুঁড়ে বিনা দ্বিদায় জায়গাটা দখল করে নিল ।
নিবিড়ও কম যায় না। পেছন থেকে টেডিটাকে কোলে নিয়ে ড্রাইভ করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আড় চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল…
— ডলু সোনা তোমার জায়গা পেছনে নয় । আমার কোলে, আমার হৃদমাঝারে।
(চলবে .. ইনশাআল্লাহ)