#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:২১
নিবিড়ের একহাত জরিয়ে ধরে এক প্রকার লেপ্টে আছে মেহের। খাচ্ছে কম চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছে বেশী। আজ সাপ্তাহিক ছুটি। যার ফলস্বরূপ মানুষের আনাগোনা থাকার কথা বেশী। কিন্তু সে তুলনায় একদম ফাঁকা। শুধু নিবিড়, মেহের, তীব্র, তার ওয়াইফ আর তুব্রা ছাড়া কেউ নেই। আরো একজন আছে , নিবিড়ের ডলু সোনা। খাওয়া শেষ করে তৃপ্তিকর ঢেকুর তুললো সবাই। হাত মুছার জন্য টিস্যু পেপার দিলে নিল না নিবিড়। দাঁত কেলিয়ে মেহেরের শাড়ি টেনে হাত মুখ মুছে নিল। শাড়িতে টান পড়াতে সামান্য তম কাছে এলো। নিবিড়ের কানের কাছে ঝুঁকে মৃদু কন্ঠে বলল..
— “এখন ডলু সোনা মুখ মুছিয়ে দেয় না “!
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকালো নিবিড় । তবুও হাতের বাজে বন্দী শাড়িটুকু ছাড়লো না। বরং শক্তকরে করে ঘড়ির সাথে পেঁচিয়ে নিল। দূর থেকে ওয়েটার কে গাড়ির চাবী দিয়ে কিছু একটা নিয়ে আসতে বলল। যার বোধগম্য মেহেরের হলো না। সে সকলের অগোচরে নিবিড়ের থেকে শাড়ি ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। মিনিট পাঁচেক পর ওয়েটার গাড়ির ভেতরে থেকে মাঝারী সাইজের রেপিংপ্রাপ্ত প্যাকেট নিয়ে হাজির হলো।
হাতের ইশারায় তুব্রাকে কাছে ডাকলো নিবিড়। এক লাফে তুব্রা নিবিড়ের কোলে এসে বসে পড়লো।প্যাকেটটা হাতে নিয়ে তুব্রার হাতে ধরিয়ে দিল। অতঃপর বলল..
— “এক সপ্তাহের জন্য তোমার টেডিটাকে আমায় দিয়েছিলে।
তাই এইপুরো প্যাকেটটা তোমার। আর তোমার ডলুটাও তোমার “।
খিলখিল করে হেসে উঠলো তুব্রা নামক মেয়েটা। বয়স আনুমানিক ৭ ছাড়িয়েছে। এখনো পুতুল তার প্রান। স্কুল ছাড়া বাকি সময় পুতুল নিয়ে পড়ে থাকে। অনেক কষ্টে এই এক সপ্তাহ ডলুকে ছাড়া কাটিয়েছে। নিবিড়ের ললাটে শব্দ করে চুমু এঁকে দিয়ে খুশিতে জরিয়ে ধরে বলল..
— “এতো বল জিভতা (গিফ্টটা) আমাল” ।
সামনের দুটো দাঁত পড়ে যাওয়াতে কথা বলার আগেই তা ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। নিবিড় তুব্রার গাল জোড়া আলতো টেনে দিয়ে ভেঙিয়ে বলল..
— “হ্যা মামুনি। এতো বল জিভতা তোমাল “।
দুজনের কান্ড দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠল সবাই। মেহেরও হাসলো তবে বাধ্য করা যেই হাসি। যাতে নেই কোনো উপলক্ষ্য। শুধু অন্যকে আনন্দে দেওয়ার জন্য হাসা ।
— “আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি আসছি “।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো মেহের। এলোমেলো পা ফেলে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এলো। আসার সময় চোখ জোড়া অশ্রুতে ভরে আসছিল। যতবার অশ্রু গড়িয়ে পড়তে চেয়েছিল ততবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
___________________________
বাড়িতে ফেরার পর থেকে রুমের এক কোণ থেকে অন্যকোণে পায়চারী করে চলেছে নিবিড়। যতক্ষন চায়চারী করছে ততক্ষনই মেহেরের পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের দেখার কোনো উপায় নেই।মেহের বালিশে মুখ গুঁজে কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে ।যাতে পিঠ ছাড়া অন্য কিছু তা গোচরে এলো না। নিবিড় একটানে মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে মেহের কে টেনে বসিয়ে দিল। মেহের নিবিড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় কাঁথা মুড়ে শুয়ে পড়লো। সহ্য হলো না নিবিড়ের। সম্পূর্ন কাঁথাটা টেনে মেহেরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিচে ছুড়ে ফেললো। বাহুতে হাত রেখে স্লো কন্ঠে বলল..
— “কি হয়েছে মেহের। এভাবে কাঁদছ কেন”?
নাক টানতে শুরু করলো মেহের! নিবিড়ের হাত দুটো নিজের থেকে ছাড়িয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল….
— “তুই বুঝতে পারছিস না ,,কেন কাঁদছি আমি? না-কি ভেজা বিড়াল সাজছিস ।সবার সামনে তো এমন ভাব ধরিস মনে হয় ,, ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না।সবাই তো আর জানে না, তুই ভাজা মাছটা উল্টে খাস না। একদম গিলে খাস”।
— “আচ্ছা ভাজা মাছ গিলে খেলে গলায় কাঁটা বিঁধে না”? ( ইনোসেন্স ফেস করে নিবিড়)
— “শয়তান 😈 ছেলে আমি কি বুঝাতে চাইছি বুঝতে পারছিস না। এতোদিন ডলু সোনা ডলু সোনা করতিস। আসলে চকলেটের লোভ দেখিয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে কুত্তার বাচ্চা চুরি করে এনেছিস।
কি মনে করেছিস, একটা কুত্তার বাচ্চার জন্য আমি ,, এই মেহের জেলাস হবে “।
দুহাতে মুখ চেপে বিকট আওয়াজে হেসে উঠলো নিবিড়। হাসির প্রতিটা শব্দ রুমে কোণায় কোণায় ভারী খেয়ে প্রতিশব্দ সৃষ্টি করছে। যেই মাতাল করে হাসির প্রতিটা শব্দ মেহের চিবুকের ঠিক মাঝে ধাক্কা দিচ্ছে। হাসতে হাসতে বলল..
— “লাইক সিরিয়াসলি ,,কুত্তার বাচ্চা। মেহের ওটা কুত্তার বাচ্চা না বেয়ার। আই মিন টেডি বেয়ার।
তাছাড়া তুমি সামান্য বেয়ারের জন্য জেলাস হওনি”।
— “একদম না। আমি টেডির জন্য জেলাস হইনি।আমার মনে হয়েছিল, যদি সত্যি আপনি আমাকে রেখে..
থেমে গেল মেহের। বাকিটা মুখ থেকে বের করতে পারছে না। চোখে মুখে নিবিড়কে হারানোর আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিবিড় মেহেরের মাথাটা নিজের বুকে রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল..
— “সত্যি বলছি মেহের। নিজের অজান্তেই তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। যতটা কাউকে বাসা সম্ভব নয়। আমার বর্তমান অবর্তমানে সবটা ঘীরে তুমি এবং শুধু তুমি থাকবে!”
ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেহের। কৌতূহল নিয়ে বলল..
— “আপনি যে সত্যি বলছেন তার প্রুভ দেন”।
— “কিভাবে প্রুভ দিবো”?
— “কেন? ভালোবেসে। টেডি আপনার বউ না হয়েও আপনি থাকে মাথায় তুলে রেখেছেন আর আমি তো আমার এক এবং একমাত্র বউ। তাহলে টেডির চেয়ে আমার স্থান অনেকটা উপরে সো..
আমাকে ছোট একটা নিবিড় উপহার দিয়ে “।
লজ্জার্থ মুখটা নিবিড়ের চিবুকে লুকিয়ে নিল মেহের । মেহেরের হুটহাট কথাগুলো নিবিড়ের প্রতি দায়িত্ববোধ , ভালোবাসার প্রকাশ করে।
চিবুক থেকে মাথা তুলে গভীর ভাবে অধরে অধর ছুয়ে দিল। ধীরে ধীরে স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর হলে লাগলো। রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু মোহনীয় মুহুর্ত।
_______________________
আকাশে উজ্জ্বল সূর্যের দেখা নেই। আজ সূর্য নিজেকে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছে। মেঘও সূর্যকে আধো আধো রুপে ঢেকে রেখেছে। এই ঢেখে রাখার মাঝেও পৃথিবীতে আলোর কোনো কমতি নেই। হয়তো রশ্মিটা পড়ছে না। তবে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই।
বাইরে লুকিয়ে থাকা সূর্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে মেহের। নিবিড়ের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে থাকলেও, কাঁথার মাঝ থেকে ক্রমাগত আঁখি যুগল বের করে নিবিড়ের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে ।
নিষুপ্তি উগ্ৰে এক ধ্যানে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকায় কুঁচকে এলো নিবিড়ের ললাট। ঘুম ঘুম আঁখি জোড়া মেলে মেহেরের দিকে তাকিয়ে হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হাই তুলে বললো..
–” প্লীজ মেহের ডিস্টার্ব করো না । ঘুমাতে দাও ।আর তুমিও চুপটি করে ঘুমাও”।
— “আটটা পঞ্চাশ বাজে। উঠবেন কখন আর অফিসে যাবেন কখন?
আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন। কখনো বললেন না তো” ।
— “মেহের আমার প্রোফেশন জেনে কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি মরি কিংবা বাঁচি তুমি কখনো নিজেকে দায়ী করবে না। সব সময় এখানে থাকবে” ।
নিবরতায় ঘীরে গেল চারপাশ।ৎশান্ত হয়ে গেল সবকিছু।মেহের যদি জানতো নিবিড়কে প্রোফেশন নিয়ে প্রশ্ন করলে এমন উত্তর দিবে। তাহলে কখনো প্রোফেশন নিয়ে প্রশ্ন করতো না।
___________________________
নিবিড় আর মেহেরের বিয়ের আট মাস পেরিয়ে গেছে।সময় দুজনেরই খুব ভালো কাটছিল। হঠাৎ কিছুদিন যাবত মেহেরের মতো একটা খিটখিটে ভাব লক্ষ্য করছে নিবিড়। যেমন হুটহাট রেগে যাওয়া, নিবিড়কে সহ্য করতে না পারা । সবটা সামলে নিয়েছে নিবিড়। কিন্তু গত দু’দিন মেহেরের পাগলামি গুলো ক্রমশ বেড়েই চলেছিল।
রুমের মধ্যে অধিকাংশ জিনিসই ভেঙ্গে পড়ে আছে।তাতে আক্ষেপ নেই মেহেরের। সে একে একে কাবার্ড থেকে সব জামাকাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছুদিন ধরে মেহেরের সন্দেহ ছিল পুলিশের সাথে নিবিড়ের কোনো যোগ সূত্র আছে। কাল রাতে মেহের সিউর হয়েছে। মেহেরের ধারণা নিবিড় তাকে ঠকিয়েছে। এই নিয়ে এক প্রকার সাইক্লোনের বয়ে গেছে। নিবিড় পুরোটা সময় মাথা নিচু করে ছিল। আর মেহের জিনিসপত্র ভেঙ্গে একাকার করে ফেলেছে।
মেহেরের উপর কোনো রাগ দেখাতে চায় না নিবিড়। তাই মাঝরাতে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেছে নিবিড়। লাকেজ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই তুমুল শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো। নিবিড় ফোন করেছে। রিসিভ করতে গিয়েও করলো না। বাজতে বাজতে কেটে গেলো। পূর্ণরায় আবার বাজতেই রিসিভ করে নিলো সে। ভেসে এলো এক মেইলি কন্ঠস্বর …
— “আপনি কি নিবিড় স্যারের ওয়াইফ “।
শ্রাবণপথ থেকে ফোনটা সরিয়ে নাম্বার চেক করলো মেহের। নিবিড়ের ফোন থেকে নিবিড়ের ওয়াইফকে চাইছে। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল..
–” নিবিড় স্যারের ওয়াইফ কে দিয়ে কি করবেন? অন্য কাউকে বলা যাবে না” !!
— “আসলে তা নয় ম্যাম। গতকাল রাতে স্যার এক্সিডেন্ট করে হসপিটালাইজ। এখনো জ্ঞান ফিরেনি তার। ডাক্তার বাড়ি লোক ছাড়া কাউকে বলবে…
পুরো কথা শেষ করার আগেই হাত থেকে ফোনটা পড়ে টুং টুং দুইবার আওয়াজ তৈরি করে থেমে গেল। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে মেহের। ধক করে ফ্লোরে বসে পড়লো।
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)