#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৩
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
এক_তুমিতে_আসক্ত
রাতে প্রিয়ন্তির পাশে শুয়ে আছে অর্ষা। অর্ষা মনে মনে ভাবছে, “আচ্ছা বাবা কি আমাকে ছাড়া থাকতে পারছে? অর্ষার বাবাকে আজ তার ভীষন মনে পড়ছে। হঠাৎ বেলকনির আড়ালে অর্ষা কারো ছায়া দেখে ভরকে যায়। অর্ষা একবার ভাবলো প্রিয়ন্তিকে ডাকবে পরমুহূর্তেই ভাবলো হয়তো তার দেখার ভুল। অর্ষা ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো৷ আর এইদিকে কেউ একজন তার ঘুমন্ত চেহারার মায়া মুগ্ধ নয়নে দেখছে। যা হয়তো এই রাতের চাঁদ ছাড়া কারো চোখেই পড়লোনা।
১৪.
প্রভাতের আলো ফুটেছে মাত্র। অর্ষার কানে আযানের প্রতিধ্বনি আসতেই অর্ষা ঘুম ঘুম চোখ ঝেড়ে উঠে পরে। অযু করে নামাজ আদায় করে বেলকনিতে গেলো। কেউ নেই। রাস্তা একদম নীরব। শুধু কয়েকটা গাড়ি গোড়া চলছে। অর্ষার এই শহর কেমন যেনো অস্বস্তি লাগে। অর্ষার পছন্দ গ্রামের মেঠোপথ।
১৫.
নামাজ পড়ে প্রান্তিক বারান্দায় এসে পাশের বারান্দায় অর্ষাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। পরক্ষণেই ভাবে হয়তো আমার মতো ও নিজেও নামাজ পড়তে উঠেছিলো। প্রান্তিক গলার হাক ছেড়ে কাশি দিয়ে বললো,” এই যে মিস ভীতুর রাণী এইখানে এইভাবে কি করছো হুম?
অর্ষা কারো গম্ভীর কন্ঠে এই কথা শুনে পাশে তাকালো। দেখলো প্রান্তিক। অর্ষা ভয়ে পিছিয়ে গেলো। বললো, আপনি!
“আমার বারান্দায় আমি না থেকে কি তুমি থাকবে?
” না তাতো বলিনি। অর্ষা আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে বারান্দায় দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রান্তিক হা করে তাকিয়ে বললো, এইটা কি হলো!
১৬.
অর্ষা বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। এই লোকটাকে দেখলে অর্ষার যেনো প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অর্ষা এরপর…নিচে গেলো। সবাই এখন ঘুমে। অর্ষা পা টিপে টিপে রান্নাঘরে ঢুকে। এক কাপ কফি করলে মন্দ হয়না৷ “এই মেয়ে আমার রুমে এক কাপ কফি নিয়ে এসো” প্রান্তিকের কন্ঠ শুনে অর্ষা পিছু তাকায়। প্রান্তিক গম্ভীর মুখে খবরের কাগজ নিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। অর্ষা মনে মনে বলছে, যেইখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধ্যো হয়।
১৭.
অর্ষা প্রান্তিকের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো প্রান্তিক খবরের কাগজে মুখ গুজে আছে। অর্ষা চুপচাপ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তিক খবরের কাগজের দিকে মুখ দিয়েই বলছে,,”ভেতরে আসো। অর্ষা ছোট ছোট পা করে ভেতরে যায়। কফির মগটা কেবিনেটে রেখে চলে আসবে এমন সময় প্রান্তিক গম্ভীর কন্ঠে বললো,”আমি তোমাকে যেতে বলেছি?
” না মানে..
“প্রান্তিক খবরের কাগজটা রেখে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো, ” ভার্সিটিতে গিয়ে এইরকম চুপচাপ থাকলে আমার থেকেও কঠোর যার্গ মানুষ করবে। এখনতো আমি আছি তাই কেউ তোমাকে না হয় কিছুই করবেনা। কিন্তু তারপর? শুনো একটা কথা বলি,, বুঝলাম তুমি শান্তসৃষ্ট কিন্তু মাঝে মাঝে শান্ত মানুষকেও রণমুর্তি ধারণ করতে হয় শুধুমাত্র তার দিকে যেনো কেউ আঙুল তুলে সেই জন্য। অর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে। কি সুন্দর তার একেকটা কথা। কথাগুলো যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে। কথাগুলো শেষে প্রান্তিক দেখলো,অর্ষা তার দিকে তাকিয়ে আছে একমনে। প্রান্তিক অর্ষার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, “প্রেমে টেমে পড়লে নাকি মিস ভীতু রাণী” অর্ষা লাফিয়ে উঠলো। সে খেয়ালই করেনি কখন প্রান্তিক তার একদম পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
১৮.
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছে। কালো শার্টের সাথে কালো প্যান্ট। ওয়ালেটিং একটা ঘড়ি. অনেক মানিয়েছে প্রান্তিক কে। এইসব এতোক্ষণ পর্যবেক্ষন করছিলো অর্ষা। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকাতেই অর্ষা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললো। আর প্রান্তিক মিনমিনিয়ে হাসে। প্রান্তিক খাবার টেবিল থেকে উঠে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো, “এই প্রিয়ন্তি তোরা তাড়াতাড়ি খেয়ে আয়। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।
১৯.
অর্ষার খাওয়া শেষ প্রিয়ন্তির আগে তাই সে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলো। গিয়ে দেখে..গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে প্রান্তিক। অর্ষা প্রান্তিক কে দেখে ফিরে চলে আসবে,এমন সময় প্রান্তিক বললো,” এই যে মিস ভীতু রাণী”কোথায় যাচ্ছো হুম? এইখানে আসো। প্রান্তিক পকেটে ফোনটা রেখে..অর্ষার একদম সামনে এসে দাঁড়ালো। অর্ষা ভীতভাবে চেয়ে আছে..প্রান্তিক এর দিকে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে একমনে তাকিয়ে বললো, ” এইভাবে তাকাচ্ছো কেনো হুম? এইভাবে তাকিয়ে কি তুমি আমায় হসপিটালের বেডে পাঠাতে চাও? নেশাভরা কন্ঠে প্রান্তিকের এই কথাটা অর্ষার হার্টবিট বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্ষা কথার মানেটা না বুঝতে পেরে বললো,মানে?
“মানে হলো, তোমার চোখগুলোতো টেরা টেরা..এই টেরা চোখের চাহনি দেখেতো যে কেউ হার্টএটেক করবে। প্রান্তিকের কথা শুনে সাথে সাথে অর্ষার মুখে কালো মেঘ ঘেরা দিলো। প্রান্তিক বুঝতে পেরে বাঁকা একটু হাসলো অর্ষার অগোচরে। প্রিয়ন্তি আসছে দেখে প্রান্তিক যথা সম্ভব পিছু হটলো। প্রিয়ন্তি গাড়ির পেছনের সিটে বসতেই অর্ষা…পিছনের সিটে বসতে যাবে তার আগেই..প্রান্তিক শক্ত কন্ঠে বললো, অর্ষা সামনের সিটে বসো৷ কে শুনে কার কথা! অর্ষা প্রান্তিকের কথা পাত্তা না দিয়ে প্রিয়ন্তির পাশেই বসলো। প্রান্তিক চোখ লাল করে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। আর ছোট আয়নায় বার বার অর্ষাকে রাগী চোখ নিয়ে দেখছে। অর্ষা একবার আয়নায় প্রান্তিকের রাগী চেহারা দেখেই ঘাবরে যায়। আর এইদিকে প্রান্তিক গম্ভীর হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মনে মনে বলছে, ” আমার কথা না শুনার শাস্তিতো তোমাকে পেতেই হবে প্রিয়শিনী”
চলবে..