এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ০৪ #Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

0
633

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

প্রান্তিক অর্ষা আর প্রিয়ন্তি গাড়ি থেকে নামতেই..প্রান্তিক কে দেখে..শৈবাল ইরফান অনিক আর ছারিন প্রান্তিকের কাছে যায়। প্রান্তিকের পাশে অর্ষাকে দেখে ভ্রু কুচকে প্রান্তিক কে ছারিন বললো, “প্রান্তিক তোমার সাথে এই মেয়েটা কেনো? প্রান্তিক অর্ষার দিকে এক পলক তাকিয়ে কিছু না বলে ছারিনকে বললো, ” আচ্ছা সবাই চল ক্যাম্প এ বসি। এর মধ্যে প্রিয়ন্তি আলতো হেসে বললো, “ছারিন আপু..ও আমার কাজিন অর্ষা। এইতো গতকালই আমাদের বাসায় উঠেছে। অর্ষা চুপসে আছে। ছারিন মেয়েটাকে দেখলেই অর্ষার কেমন একটা ভয় ভয় লাগে।

অর্ষা তুই ওইযে দেখলিনা একটা মেয়েকে? ওইটার নাম ছারিন মাহাদীয়া। আদারস নেইম লেডি ডন বলতে পারিস। অর্ষা প্রিয়ন্তির কথা শুনছে আর প্রিয়ন্তির খাতা থেকে নোটগুলো নিজের খাতায় তুলছে। আর এইদিকে প্রিয়ন্তি বকবক করেই যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি বিরক্ত নিয়ে অর্ষার হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিয়ে বলল,” ওফ অর্ষা আমি বকবক করেই যাচ্ছি আর তুই আমার কথা না শুনে লিখছিস? নোট তো আর উড়ে যাচ্ছেনা তাইনা? বাসায় গিয়ে লিখিস।
“আমিতো শুনছি৷ তুই বল আমি শুনি আর লিখি।

প্রান্তিক ওই মেয়েটা তোর কাজিন আর তুই ওকে যার্গ করলি? শৈবালের কথায় প্রান্তিক চুলগুলো পিছনে নিতে নিতে বাঁকা হাসলো। শৈবালের পাশ থেকে ইরফান বললো, ” হুম হুম ঠিক। তুই কিভাবে করলি এইটা? তুই যার্গ করেছিস এইটাতো আমি ভাবতেই পারিনা।
“দেখো প্রান্তিক তুমি ওই মেয়েটার সাথে একদম মিশবেনা বুঝলে?
” দেখ ছারিন তোকে আগেও বলেছি আবারো বলছি ভুলেও একদম গার্লফ্রন্ড হওয়ার ট্রাই করবিনা ( কথাটা বলে প্রান্তিক হাতের গিটারটা নিয়ে বাজাতে লাগলো। ইরফান সবসময় গিটার আনে শুধুমাত্র প্রান্তিকের জন্য)

ক্লাস শেষে অর্ষা আর প্রিয়ন্তি একসাথে বের হতেই.. ব্লু শার্ট আর অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট পরা একটা ছেলে অর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে একটু হেসে বললো, “হাই আমি নেওয়াজ। তোমাদের সাথেই পড়ি। অর্ষা হাত বাড়াতে যাবে এমন সময়..” এই তোরা এইখানে কি করছিস হুম? এই কথাটা শুনতেই সামনে অর্ষা আর প্রিয়ন্তি প্রান্তিক কে দেখতে পায়৷ অর্ষাতো প্রান্তিক কে দেখেই ভয় পেয়ে গেছে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে এমনভাবে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে,এই বুঝি অর্ষাকে চোখ দিয়েই ভশ্ম করে দিবে।

“না মানে ভাইয়া। নেওয়াজ আমাদের ক্লাসে পরে। তাই পরিচিত হচ্ছে।
” প্রিয়ন্তি তুই গাড়িতে গিয়ে বস। প্রিয়ন্তি প্রান্তিকের গম্ভীর কন্ঠ শুনে অর্ষাকে না নিয়েই দৌঁড়ে চলে গেলো। অর্ষা যেই যেতে যাবে তখনি প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে ফেলে। অর্ষার হাত ধরে অর্ষাকে প্রান্তিকের পাশে এনে দাড় করিয়ে নেওয়াজকে বললো, পরিচিত হতে চাচ্ছিলেনা? নেওয়াজ আমতা আমতা করে বললো,হুম ভাই। প্রান্তিক অর্ষার হাত মচকাতে মচকাতে বললো, “She is My Future.. So Don’t Look at him..Mind it? অর্ষা প্রান্তিকের মচকানোতে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছিলো কিন্তু তাও দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু প্রান্তিকের এই কথাতে অর্ষা অবাক হয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকালো৷ সে কি শুনলো? এই লোকটা কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? নেওয়াজ অবাক হয়ে একবার অর্ষার দিকে আরেকবার প্রান্তিকের দিকে তাকাচ্ছে। প্রান্তিক একটু হেসে চোখে সানগ্লাসটা পড়ে অর্ষার হাত টানতে টানতে গাড়ির সামনে নিয়ে এসে রাগী কন্ঠে বললো,” সামনে বসো। অর্ষা ভয়ে আর কথা না বাড়িয়ে সামনে বসলো। পিছনে প্রিয়ন্তির দিকে তাকাতেই প্রিয়ন্তি চোখ টিপ মারলো। অর্ষার এখন ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তিকে কচু গাছে ফাঁসি লাগিয়ে মারতে। কিন্তু কি আর করা? মনের ইচ্ছে মনেই মেরে ফেললো।

বাসায় আসতেই প্রান্তিকের রুম থেকে একটার পর একটা জিনিস ভাঙার আওয়াজ ভেসে আসছে নিচ তলায়। মিসেস মনিশা চৌধুরী বার বার প্রিয়ন্তিকে বলছে, কি হয়েছে? কিন্তু প্রিয়ন্তির একটাই কথা সে জানেনা। অর্ষা ভয়ে গুটিসুটি হয়ে প্রিয়ন্তির এক হাত খামচে ধরে আছে। প্রান্তিকের রুম থেকে আর কোনো আওয়াজ না আসাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অর্ষা। মনিশা চৌধুরী অর্ষা আর প্রিয়ন্তিকে…ফ্রেশ হতে যাওয়ার কথা বলে ধীর পায়ে প্রান্তিকের রুমে যান।

মনিশা বেগম রুমে উঁকি দিয়ে দেখলেন,প্রান্তিক চুলগুলো খামচে ধরে মাথা নিচু করে খাটে বসে আছেন। তিনি জানেন, প্রান্তিক অতিরিক্ত রেগে গেলে এমন করেন। এইটা নতুন নয় অনেক পুরনো অভ্যাস প্রান্তিকের।
“বাবা কি হয়েছে তোর?
” আম্মু আমার কিছু হয়নি”
“সত্যি করে বল”
“আম্মু আমার ভালো লাগছেনা” যাওতো রুম থেকে আমি ঘুমাবো” মনিশা চৌধুরী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন প্রান্তিকের রুম থেকে। তিনি জানেন প্রান্তিক এর মন একদম ভালো নেই তাই সে এমন করছে।

“প্রান্তিক আসেনি?
” না..তোমার ছেলে দুপুরেও খাইনি৷ কি জানি আমার ছেলেটার কি হয়েছে” চিন্তিত মুখে বললেন মনিশা চৌধুরী। অর্ষা টেবিলে বসতেই দেখলো আসলেই প্রান্তিক নেই। সেই দুপুরে যে রুমে ঢুকেছে তার পরতো একবারো নিচে নামেননি তিনি। এইটা ভাবতেই অর্ষা নরম কন্ঠে বললো,খালামনি আমি গিয়ে ডেকে আনি ভাইয়াকে?
“তুই পারবি আনতি? ও শুনবে তোর কথা?
” আমি গিয়ে দেখিইনা খালামনি। আমি যাই তোমরা খেতে বসো। এইটা বলেই অর্ষা পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। অর্ষা প্রান্তিকের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে প্রান্তিক কোথাও নেই৷ অর্ষা রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে দেখলো ওয়াশরুমেও নেই। হঠাৎ চোখ পড়লো বেলকনিতে। গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে প্রান্তিক।

ভাইয়া খালামনি ডাকছে আপনাকে খেতে” অর্ষার কথা শুনতেই প্রান্তিকের সকালের রাগটা জেগে উঠলো। প্রান্তিক অর্ষার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে..হোট করে অর্ষার দুই হাত একমুঠো করে ধরে দেয়ালে অর্ষাকে ঠেকিয়ে..দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “অনেক শখ না? ছেলেদের সাথে কথা বলতে? এতো শখ না? তোর শখ আমি মিটিয়ে দিচ্ছি..সকালটা হতে দে। অর্ষা হাতের ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠে বার বার বলছে, ভাইয়া ছাড়ুন আমার লাগছে…প্লিজ ছাড়ুন। অর্ষার চোখে পানি দেখতেই প্রান্তিক অর্ষার হাত দুটো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বললো,” নেক্সট টাইম..জাস্ট নেক্সট টাইম তোমাকে কোনো ছেলের সামনে যেতে দেখলে,, “Trust me I will Kill You..also With me. Remember this. এইটা বলেই গটগট করে বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো প্রান্তিক। অর্ষার চোখে পানি। অর্ষা বুজতে পারছেনা কেনো প্রান্তিক তার সাথে এতো রোড বিহেভিয়ার করছে। এমন কি তুই তুকারি করতে পর্যন্ত ছাড়েনি! অর্ষা হাতটা বুলচ্ছে। লাল হয়ে গেছে হাতটা প্রান্তিকের মুচরানোতে। রক্ত জমাট হয়ে গেছে। অর্ষা চোখের পানি মুছে খাবার খেতে নিচে চলে গেলো।

গভীর রাতে হাতে কারো স্পর্শ পেতেই লাফিয়ে উঠে অর্ষা। ঘুমের রেশে প্রান্তিক কে দেখে চিৎকার করেও করতে পারলোনা। প্রান্তিক অর্ষার দুই ঠোঁটে আঙুল চেপে উচ্চারণ করলো..শিশশশশ..চুপ হয়ে শুয়ে থাকো। এরপর অর্ষার আর কিছু মনে নেই। ঘুম দেশের রাণী আধো ঘুম থেকে ঘুমন্ত দেশে পাড়ি জমিয়েছে।

সকাল হতেই অর্ষা চমকে উঠলো নিজের হাত দেখে। হাতে মলম লাগানো। শুকিয়ে গেছে। কিন্তু সেতো মলম লাগায়নি লাগিয়ে দিয়েছে কে? হঠাৎ কাল রাতের কথা মনে পড়তেই বুক ধুক করে উঠে অর্ষার। প্রান্তিক তার হাতে মলম লাগিয়েছে! এইটা ভাবতেই এক হাত মুখে দিয়ে অবাক হয়ে থাকে অর্ষা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here