এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ১১ #Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

0
523

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ১১
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

অর্ষা যখনি বুঝতে পারে যে সে প্রান্তিকের বলিষ্ঠ বাহুতে আবদ্ধ তখনি তড়িঘড়ি করে নিজেকে সামলে নেয়। অস্ফুট স্বরে মাথা নিচু করে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,”সরি” আসলে…প্রান্তিক অর্ষাকে থামিয়ে বললো,”বুঝেছি অর্ষা সরি বলার কিছু নেই। প্রান্তিক মনে মনে ভাবলো,”না এখন সঠিক সময় নয় সাহিলের বিষয়ে কিছু বলার। কথা অন্যদিকে ঘুরাতে হবে। প্রান্তিক নিজের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বললো, ” অর্ষা চলো ঘুমাবে তুমি ক্লান্ত So ঘুমানো উচিৎ।
“না আমার একদম ঘুম পাচ্ছেনা আর তাছাড়া ভালো ও লাগছেনা। আফ্রা ( অর্ষার ছোট বোন) স্কুল থেকে আসুক তারপর না হয়…প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই অর্ষা ঘাবরে যায়। অর্ষা তড়িঘড়ি করে বললো,” না না ঘুমাতে যাচ্ছি। আপনিও যান [ মাথা নিচু করে ]
“এইতো গুড গার্ল। চলো নিচে যায়..এরপর প্রান্তিক আর অর্ষা ছাঁদ থেকে নিচের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

৭৮.

ইশ অর্ষা তোদের গ্রামটা কতো সুন্দর। ইশ এইখানেই যদি সারাজীবন থেকে যেতে পারতাম”। কাথা টানতে টানতে কথাটা আফসোসের সাথে বললো, প্রিয়ন্তি। অর্ষা ভেবেছিলো প্রিয়ন্তি ক্লান্তি শরীরে ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু এসে দেখে জানালা দিয়ে পুকুর দেখছে। অর্ষাকে দেখে বিছানায় উঠে এইসব বলছে প্রিয়ন্তি। অর্ষা মুচকি হেসে বললো,” প্রিয়ন্তি দেখ,জানালায়। অর্ষা জানালায় ইশারা করতেই প্রিয়ন্তি অর্ষার কথা অনুসারে জানালায় তাকালো। দেখলো ভাইঙ্গা পড়া একটা জেলে মাছ ধরছে। প্রিয়ন্তি প্রশ্নান্তক চোখে তাকাতেই অর্ষা ফিক করে হেসে বলে, “তোর জামাই” ব্যাস! হয়ে গেলো। প্রিয়ন্তি সোফার কৌশান ছুড়ে মারতে মারতে অর্ষাকে সাড়া ঘরে দৌঁড় করাচ্ছে।

৭৯.

মনিশা..তোমার কি মনে হয়? ছোটবেলার সব কিছু শুনে অর্ষা মেনে নিবে প্রান্তিককে? ফরহাদ চৌধুরী জবাবের আশায় তাকিয়ে আছে মনিশা চৌধুরীর দিকে। মনিশা চৌধুরী তেলে পিয়াজ ছেড়ে নাড়াচাড়া করছিলেন। স্বামীর এমন কথা শুনে মনিশা চৌধুরী চুলার তাপ ডিম করে দিয়ে বললো,”দেখো..আমি জানি অর্ষা কখনো তা মেনে নিতে চাইবেনা কিন্তু প্রান্তিক থাকতে…অর্ষাকেতো মানতেই হবে। চিনোইতো তোমার ছেলেকে। কতোটা জেদি আর রাগী। সে একবার যা করবে বলে তা করেই ছাড়ে। হোক সেটা ন্যায়ভাবে কিংবা জোর করে। ফরহাদ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,”হুম তুমি ঠিকি বলেছো।

৮০.

“তাইফা তোর মন খারাপ? কলেজের বড় গাছটার নিচে বসেছিলো তাইফা। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ পেয়ে পেছন তাকায় সে। আস্তে করে বললো,” ওহ সাইফ ভাই।
“হুম মন খারাপ তোর?
” না। আসলে এই কলেজ ছেড়ে কিছুদিন পর চলে যাবোতো তাই একটু ভীষন্নতা কাজ করছে মনে। তাইফার কথা শুনে সাইফের ভেতরে ধুক করে উঠলো। সব কষ্ট চাপা দিয়ে বললো,”মানে? তাইফা মাথা নিচু করে পাতা ছিড়তে ছিড়তে আনমনে বললো,”আমি ঢাকায় এডমিট নিবো ভাই। এবার সাইফ যেনো আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা। তাইফার দুই কাঁধে হাত দিয়ে একরকম ঝাকাতে ঝাকাতেই বললো,”তোর মাথা ঠিক আছে? কি বলছিস এইসব। এতো ভালো কলেজ ছেড়ে তোর ঢাকাতেই কেনো যেতে হবে? তাইফা বসা থেকে দাঁড়িয়ে জামাতে লেগে থাকা বালি ঝাঁড়তে ঝাঁড়তে বললো,”ধরে নাও কোনো এক নতুন অধ্যায়ের জন্য। এইটা বলেই চলে যায় তাইফা মাঠের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে। সাইফের চোখে পানি এসে পড়েছে। সাইফ ছোটখাটো একটা জব করে। কলেজে আসার উদ্দেশ্যই হলো তাইফা। একনজর তাইফাকে দেখার জন্য ছোটে আসে এই কলেজে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে। সাইফ মনে মনে বার বার জরিপ করছে”তাইফা কি বুঝেনা? যে আমি ওকে ঠিক কতোটা চাই।

৮১.

তাইফা বাসায় ফিরেই নিজের রুমে গিয়ে চুপসে চোখের পানি ফেলতে থাকে। সাহেরা বেগম কলেজে এখনো। কারণ তিনি কলেজের হ্যাড। তাইফার সাথে সাইফের পরিচয়টা এইতো ৫/৭ মাস হলো। সাইফের সাথে যখন পরিচয় হয় তখন সাইফ কলেজের শেষ স্টেপের স্টুডেন্ট ছিলো। হাসি তামাশা করতে করতে কখন যে মনটাই দিয়ে দিলো তা টেরই পাইনি তাইফা। তাইফা জানে সাইফও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন তার এইসব ভাবলে চলবেনা। এখন প্রয়োজন তার মায়ের ভীষন্ন মুখে হাসি ফোটানো। এইসব ভাবতেই তাইফা চোখের পানি মুছে নেই। কাভার্ড থেকে গোলাপি কালারের একটা টপ নিয়ে..চলে যায় শাওয়ার দিনে।

৮২.

“আরে অর্ষা প্রিয়ন্তি তোরা এইখানে? অর্ষা আর প্রিয়ন্তি পুকুর পাড়ে বসেছিলো। হঠাৎ আভেশ এসে উপরোক্ত কথাটি বলাতে..” প্রিয়ন্তি নাক বেংচি কেটে বললো,”ওমা এইখানে কি তুমি লিখে রেখেছো নাকি আভেশ ভাই যে “কারো আসা নিষিদ্ধ “। আভেশ আলতো হেসে তাদের পাশে বসে বললো,” আরে তা কেনো হবে। তোরূ একা তাইতো বললাম। বুঝিসইতো আজকালকের ছেলেরা কেমন। অর্ষা বললো,”হুম ভাইয়া ঠিকি বলেছেন তবে শহর থেকে গ্রামে বখাটে মানুষ খুবই কম। প্রিয়ন্তি আবার ফোঁড়ন কেটে বললো, “ভালোই হতো কোনো ছেলে প্রপোস করলে এক্সসেপ্ট করে নিতাম। আভেশ আর অর্ষা ফিক করে হেসে দেয়। প্রিয়ন্তি নাকটা বেকিয়ে বললো,” আজব হাসছিস কেনো তোরা? আমি কি হাসির কোনো কথা বলেছি নাকি!
“না মানে অবশেষে আমি যেইটাকে দেখালাম তুই ওইটার প্রেমের পড়লি নাকি প্রিয়ন্তি? অর্ষার কথায় প্রিয়ন্তি চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়। অর্ষা ঠোঁটে এক আঙুল চেপে ধরে চুপসে যায়। আভেশ উৎসুক চোখে বললো,” ওমা অর্ষা তুমি কাকে দেখিয়েছো এই পেত্নীটাকে? অর্ষা ওইরকম ভাবেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে পিছে ইশারা করে তাকায় আভেশের দিকে। পিছে আভেশ তাকাতেই হোহো করে হেসে দেয় আভেশ আর অর্ষা। কারণ পেছনে ভাইঙ্গা পড়া ছেলেটা ছিলো। প্রিয়ন্তি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই অর্ষা চুপসে গেলেও আভেশ বুকে হাত দিয়ে হোহো করে হেসেই যাচ্ছে। “কিগো সুন্দরী কখন গেরামে আইলা? হঠাৎ এমন কথায় আভেশ প্রিয়ন্তি আর অর্ষা পেছনে তাকায়। অর্ষা পিছনে তাকিয়ে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটিকে দেখেই প্রিয়ন্তির হাত খামচে ধরে।
” প্রিয়ন্তি চল এইখান থেকে… অর্ষা প্রিয়ন্তি আভেশ চলে যেতেই ছেলেটা অর্ষার হাত ধরে ফেলে। আভেশ গিয়ে কিছু বলার আগেই অর্ষা হাত ঝাঁকি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে তড়িঘড়ি করে ওইখানে থেকে আভেশ আর প্রিয়ন্তিকে নিয়ে চলে আসে।

৮৩.

চোখ লাল করে হাতের মুঠোয় শক্ত করে অর্ষার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক। পাশো আভেশ আর প্রিয়ন্তি মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তিক ঘুম থেকে উঠতেই প্রিয়ন্তি তার ভাইয়াকে সব ঘটনা উৎসোক স্বরে বলে ফেলে। এতেই বেড়ে যায় বিপত্তি।

“বললাম না বলতে ছেলেটা কে?..চিৎকার করে কথাটা বলতেই ভয়ে কেঁদে দেয় অর্ষা। নাফিস সরদার আর রাহেলা বানু অন্যরুমে থাকায় তারা এইসবের কিছুই জানেনা। প্রান্তিকের চিৎকারে ভয়ে কেঁদেই যাচ্ছে অর্ষা।
” ওফ প্রান্তিক এইভাবে কেউ মাথা গরম করে? ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন কর।
“আভেশ ওকে বল নামটা বলতে নয়তো আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।

কি হলো শুনছোনা আমি কি বলছি? বলো কে ছিলো ছেলেটা.. এইবারের চিৎকারে অর্ষা কেঁদে ভয়ে বলেই ফেললো। বললো,” ও ও ওই ছেলে্ ছেলেটা সাহিল..এইটা বলেই কান্নায় মেতে উঠে অর্ষা। প্রান্তিক হাতের মুঠো শক্ত করে বলে,” Her Time is Coming. Kill You Sahil. I just Kill You”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here