এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ১৪ #Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

0
443

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ১৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

অর্ষা প্রান্তিক পাশাপাশি হাঁটছে আর আভেশের পাশে হাঁটছে প্রিয়ন্তি। আভেশ আড়চোখে প্রিয়ন্তিকে দেখছে। দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটার মুখটা মন খারাপে শুকনো হয়ে আছে। আভেশ হোট করে প্রিয়ন্তির হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। আচমকা আভেশ এমনভাবে হাত ধরাতে কিছুটা অবাক হলো প্রিয়ন্তি কিন্তু তাও কিছু বললোনা কারণ তার ভালো লাগছে আভেশের এই স্পর্শ। আর অন্যদিকে প্রান্তিক অর্ষার হাসি হাসি মুখ দেখছে। হঠাৎ অর্ষা প্রান্তিকের হাত ধরে লাফিয়ে বললো,”ফুচকাআআআআ…অর্ষার এমন বাচ্চামো কান্ডে উপস্থিত আভেশ আর প্রিয়ন্তিও প্রথমে চমকে উঠলো পড়ে ফিক করে প্রান্তিক সহ সবাই হেসে ফেললো। অর্ষা এতোক্ষণে খেয়াল করলো যে সে অতিরিক্ত আনন্দে প্রান্তিক কে ঝাপটে ধরেছিলো তাই ঠোঁট উল্টিয়ে বললো, “সবাই হাসছেন কেনো এইভাবে? প্রিয়ন্তি পাশ থেকে বললো,” এইসব পরে হবে আগে চল গিয়ে ফুচকা খায়। প্রান্তিক আড়চোখে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”বুঝিনা মেয়েরা এতো ফুচকা ফুচকা করে কেনো? কি আছে এই ফুচকাতে? এর জন্যই মানুষ অসুস্থ হয়ে পরে। প্রান্তিকের কথায় আভেশ ফোঁড়ন কেটে বললো,”আরে ভাই প্রান্তিক আমরা এইসব বুঝবোনা। সব ওই ফুচকা ওয়ালা মামাস ম্যাজিক। আভেশ এমনভাবে কথাটা বললো, যে অর্ষা আর প্রিয়ন্তি না হেসে পারলোনা।

১০০.

“ইশশ মেয়েরা কিভাবে যে এইসব কুখাদ্য খায় সৃষ্টিকর্তায় জানে। প্রান্তিকের এই কথায় অর্ষা মুখ চোখ কালো করে বললো,” প্রান্তিক ভাইয়া এইসব ফুচকা সবাই খেতে পারেনা বুঝলেন? ঝাল কিনা!
প্রান্তিক দেখছে অর্ষা ফুচকা খেতে খেতে চোখ বুঝে দুই হাত দিয়ে ওয়াও দেখিয়ে আঁড়চোখে তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলছে। কারণ প্রান্তিক ফুচকা একটাও খায়নি প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ প্রান্তিক বললো,”Challenge ধরবে? আমি তোমার আগে এই এক প্লেট ফুচকা খাবো কিন্তু এরপর আমি যা চাইবো তোমাকে তাই দিতে হবে। রাজি? অর্ষা মনে মনে ভাবলো,”ওনিতো খেতেই পারবেনা। যে ঝাল…। তারপর বললো, হুম রাজি।

১০০.

আভেশ আর প্রিয়ন্তি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরেই প্রান্তিক আর অর্ষা ফুচকা ওয়ালার কাছে। অর্ষা ফুচকা খেয়েই যাচ্ছে তা এইখান থেকে বেশ ভালোই দেখতে পাচ্ছে আভেশ। আভেশ সামনে দৃষ্টি দিয়ে দুই পকেটে হাত গুঁজে প্রিয়ন্তির দিকে না তাকিয়ে প্রিয়ন্তিকে বললো,”কি হয়েছে তোর? প্রিয়ন্তি আনমনে বললো আমার আবার কি হবে? কিছুই হয়নি।
“তোর যদি কিছু নাই হয় তাহলে মুখটা এমন পেঁচার মতো করে রাখলি কেনো? প্রিয়ন্তি এইবার আভেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আভেশকে বললো,” আভেশ ভাই আদৌ কি আমার ভালো মুড থাকার কথা?
“মানে?
” মানে কিছুনা। জানিনা তুমি বুঝেছো নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছো।
“দেখ প্রিয় আমি তোর কথার মানে কিছুই বুঝেনি আর বুঝতে চায় ওনা। সো পাগলামো কম কর। যা করছিস ঠিক নয়। প্রিয়ন্তি তাচ্ছিল্যের একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,” মন কি বেঁধে রাখার জিনিস আভেশ ভাই? আভেশ কিছুটা গম্ভীর মুখে বললো,”প্রিয় তুউ ভুলে যাসনা আমি তোর বড় হয় সো একটু হলেও রেসপেক্ট কর।
“ভালোবাসা কি বড় ছোট বুঝে আভেশ ভাই? সবার একটা ছোট মন আছে। আর সবারই ভালোবাসার অধিকার আছে তুমি আমার থেকে সেই অধিকার বঞ্চিত করতে পারোনা। হঠাৎ দূর থেকে অর্ষার চিৎকার কানে আসলো এদিকে। অর্ষা চিৎকার করে ডাকছে,” আভেশ ভাই আপনারা তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন।

১০১.

আভেশ আর প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই বার বার পানির বোতল মুখে দিচ্ছে প্রান্তিক৷ অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার। অর্ষা পাশে চুপসে আছে। কারণ একটু আগে প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে এসে তাকে বলেছে যে “অর্ষা তুই এইটা কি করলি? অর্ষা হাসতে হাসতে তখন বলেছিলো,ওমা কি করলাম? ভাইয়া আমার সাথে ফুচকা খাওয়ার বাজি ধরেছে। এরপর প্রিয়ন্তি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে পানি এনে দেয় প্রান্তিকের হাতে। প্রান্তিক গটগট করে খেতে শুরু করে। এরপর অর্ষাকে বললো,” আরে ভাইয়া একদম ঝাল খেতে পারেনা। ভাইয়ার প্রবলেম আছে। ব্যাস হয়ে গেলো চুপ অর্ষা। সব শেষে অর্ষা আর প্রান্তিক বসে সামনে আর আভেশ প্রিয়ন্তি বসে পেছনে। আভেশ প্রিয়ন্তির দিকে না তাকিয়েও এতটুকু বুঝতে পারছে যে প্রিয়ন্তি তার দিকে তাকিয়ে আছে। আভেশ কিছুতেই তাকাবেনা প্রিয়ন্তির দিকে তা পণ করলো। তাকালেই যেনো সর্বনাশ। আর প্রান্তিকের ঝাল কিছুটা কমলেও তার মুখের লাল আভা চলে যায়নি। অর্ষা ঘাবড়ে আছে সে আসলেই না জেনে কি একটা অপরাধ নায় করে ফেললো। মনে মনে ভীষণ অনুতপ্ত প্রকাশ করছে।

১০২.

“তাইফা তুই আমার আলমারি ধরেছিলি? সাহেরা বেগমের কথায় চমকে যায় তাইফা। সে আমতা আমতা করে বললো, ” আমি কেনো আলমারি ধরতে যাবো মামনি? সাহেরা বেগম আর কিছু বললেন না। পা বাড়ালেন রান্নাঘরে। তাইফা সর্বদাই চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে। বই পড়া এক কথায় তার নেশা। গম্ভীরর্যের জন্য মাঝে মাঝে তাইফাকে এক প্রকার টিচারের মতো লাগে।

১০৩.

গাড়ি থেকে প্রিয়ন্তি আভেশ নেমে যাওয়ার পর অর্ষা নামতে যাবে এমন সময় প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে ফেলে। অর্ষা ঘাবরে তাকায় প্রান্তিকের দিকে। প্রান্তিক বাঁকা হেসে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অর্ষার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। ক্ষানিক পর প্রান্তিক অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে নেমে পরে গাড়ি থেকে৷ হোট করে কি থেকে কি হয়ে গেলো! অর্ষা এখনো একটা ঘোরে রয়েছে। হঠাৎ প্রান্তিক গাড়ির গ্লাসে কড়া নেড়ে অর্ষার দিকে একভাবে চেয়ে বললো,”তুমি বলেছিলে বাজিতে জিতে গেলো আমি যা বলবো তাই হবে। তাই আমি আমার জিনিস করে নিয়েছি। অর্ষা অবাক.. এর জন্য এতো ঝাল জিনিস খেয়েছে! এমন জানলে সে কখনোই বাজি ধরতেনা।

১০৪.

“অর্ষা তোর কি হয়েছে? শুয়ে শুয়ে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো প্রিয়ন্তি।
” কই কিছুনাতো।
“মন খারাপ? কাল চলে যাবি বলে?।
” হুমরে।
“আচ্ছা মন খারাপ করিসনা ঘুমিয়ে পর। এরপর প্রিয়ন্তি অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। অর্ষার চোখে ঘুম নেই। রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। প্রান্তিক এইটা কেনো করলো এইটা ভাবতেই অর্ষার মুখ মলিন হয়ে যায়।

১০৫.

রাহেলা বানু সকাল থেকে বিভিন্ন রকম পিঠা বানাচ্ছে। অর্ষাদের সাথে দিয়ে দিবে বলে। নাফিস সরদার বাজার থেকে বড় বড় দুইটা কাতলা মাছ আর ইলিশ মাছ এনেছে মেয়েকে ইলিশ মাছের মাথা আর কাতলা মাছের কালিয়া খাইয়ে দেওয়ার জন্য। অর্ষা এসে রাহেলা বানুকে জড়িয়ে ধরে। রাহেলা বানু উনুনে ভাত বসাতে বসাতে হেসে বললো,” কি মা আমার মন খারাপ তোর?

“হুম মা।
কেনো?
” তোমাদের ছাড়া ভালো লাগেনা আম্মা।
“এইসব কইলে হইবে মা? পড়াশোনা করতে হবেতো। অর্ষা তার মাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো, ” হুম মা সেইতো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here