#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২০
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
তাইফা’ও’ ওদের দুজনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কাকতালীয় ভাবে সকালে প্রান্তিকের সাথে দেখা আর এখন! অর্ষা অবাক হয়ে পুনরায় বললো,
‘আপু আপনি এইখানে? অর্ষার সাথে প্রিয়ন্তিও তালে তাল মিলিয়ে বললো,
‘হুম হুম তাইতো তার মানে!
‘হুম আমিই এই রুম নিয়েছি।
অর্ষা আর প্রিয়ন্তি কিছুটা খুশি হলো। যে তাদের মতো আরেকটা মেয়ে এই বাড়িতে থাকবে। অর্ষা তড়িঘড়ি করে বলে,
‘আপু বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরেও আসতে বলবে?
‘দেখেছো আমি ভুলেই গিয়েছি। প্লিজ ভেতরে আসো।
অর্ষা আর প্রিয়ন্তি রুমে ঢুকতেই তাইফা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
‘তোমাদেরকে যে কোথায় বসতে দেয়’।
‘আরে আপু বসবোনা আমরা। এই নাও খালামনি তোমার জন্য খাবার পাঠিয়েছে।
‘ওমা এইসব কি দরকার ছিলো?
‘আপু নাওতো। এতো তাড়াতাড়ি কিইবা রান্না করবে বলোতো? তাই আম্মু পাঠালো। আপু আমরা যাই তুমি খেয়ে নিও৷ আমরা আবার আসবো [ একটা হাসি দিয়ে প্রিয়ন্তি বললো ]
‘অবশ্যই এসো। আমারো ভালো লাগবে।
অর্ষা প্রিয়ন্তি যেতেই তাইফা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলো, ‘ভাগ্য চাইলে সবি সম্ভব। নয়তো কি কাকতালীয়ভাবে ওদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়ে আবার ওদের বাড়িতেই থাকছি। তাইফা খাবারের প্লেটটার ঢাকনাটা খুলে দেখলো একপাশে গরুর মাংস বুনা করা নেশ কষা কষা করে। আরেক পাশে এক ধরনের বাজি ও সালাত। সাথেতো পোলাও আছেই। তাইফা বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাবারগুলো নিয়ে খেতে বসলো।
১৩৮.
আব্বু আমি যা ডিসাইড করেছি তাই হবে। এনাফ ইজ এনাফ।
‘দেখো প্রান্তিক তোমার যা ইচ্ছে তুমি তা করতে পারোনা৷ অর্ষারও একটা মত অমত আছে। লাইফটা এইখানে শুধু তোমার নয়। অর্ষারও।
‘অর্ষার লাইফ ‘ওই আমার লাইফ। আর ভুলে যেওনা আব্বু অর্ষা আমার ওয়াইফ। আগেও ছিলো এখনো আছে আর ফিউচারেও থাকবে। আর তাছাড়া আব্বু এখন বিয়েটা করলেই যে অর্ষা আমার ওয়াইফ টাইটেল পাবে তা কিন্তু নয়। কারণ সে অলরেডি মিসসে চৌধুরীর টাইটেল নিয়ে বসে আছে।
‘তাহলে থাকুক না এইভাবে অর্ষাকে স্টাডি স্বাধীনভাবে শেষ করতে দাও প্রান্তিক’
‘এখন কি স্বাধীনতা ছাড়া পড়াশোনা করছে? আমি অর্ষাকে জানিয়ে এখন বিয়েটা করছি যেনো সেও জানে যে, আমি ওর হাসবেন্ড। এখনতো জানেইনা যে আমি ওর হাসবেন্ড। আর তোমরা কেনো এইটা ভাবছো যে অর্ষা আমার মতো ছোটবেলার বিয়েটা মেনে নিবে। আর হোকনা আরেকবার বিয়ে তাতে সমস্যা কোথায়? ধরে নাওনা যে এইটা আমার আর অর্ষার বিবাহ বার্ষিকী। এইটা বলেই প্রান্তিক গম্ভীরমুখে প্রস্থান করে তার বাবার রুম।
‘মনিশা শুনেছো? তোমার ছেলের কথা।
‘সবইতো শুনলাম আর দেখলাম। দেখো প্রান্তিক ঠিকিতো বলেছে অর্ষা আগের ঘটনা যেহেতু জানেনা তাহলে বিয়েটা আবার দিলে অর্ষা না চাইলেও বাধ্য হবে প্রান্তিক কে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে’।
‘ইশ মনিশা তোমরা একবারো মেয়েটার কথা ভাবছো? আচ্ছা ধরো যে ওদের আবার বিয়ে হলো তাহলে বিয়ের পরে কি অর্ষা ছোটবেলার সব ঘটনা কখনো জানবেনা বলে মনে হয় তোমার কাছে?
‘আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা ফরহাদ’। জানিনা কি হচ্ছে। তবে প্রান্তিক যা করছে হয়তো ভালোর জন্যই।
১৩৯.
তাইফা ফোনটা হাতে নিয়ে তার মামনিকে কল দেয়। ওপাশ থেকে তার মামনি কল ধরতেই হো হো করে কেঁদে উঠেছে।
‘মামনি তুমি কাঁদছো কেনো বলোতো? প্লিজ কেঁদোনা।
‘মা্ মারে তোকে ছাড়া আমার একা লাগে৷ ভালো লাগেনা কিছু। কলেজ থেকে এসে তোকে পায়না। তোর মুখটা দেখিনা। সাহেরা বেগমের গলা দিয়ে কথায় বের হচ্ছেনা। বার বার কথা গলায় আটকে যাচ্ছে।
‘আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো মামনি। এখন যদি তুমি কান্না করো আমি কিন্তু কান্না করে দিবো। জানো মামনি? তোমার মতো এইখানে একটা মামনি আছে। আমাকে অনেক আদর করেন। এইখানে দুইটা মেয়েও আছে আমাকে আপু আপু বলে পাগল করে ফেলে একদম।
সাহেরা বেগম তাইফার এইসব কথা শুনে মুহুর্তেই কান্না থামিয়ে দেয়। এইটা ভেবে সে খুশি হয় যে তার মেয়েকে দেখাশোনা আর স্নেহ করার জন্যও ওইখানে কেউ আছে। সাহেরা বেগম চোখের পানি মুছে বললো,
‘সত্যি বলছো?
‘হুম মামনি আমি সত্যি বলেছি। তোমাকে মিথ্যে কেনো বলবো বলোতো?
‘বুঝেছি’
‘এখনো মন খারাপ মামনি? আচ্ছা তুমি খেয়েছো? ঔষধ ঠিকমতো খাওতো?
‘হুম আমি খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?
‘হুম মামনি…আরো কিছু কথা বলে তাইফা কল রেখে দেয়৷ সে জানালার সামনে যায় ফোনটা বিছানায় রেখে। তাইফার খোলা চুলগুলো দক্ষিণা হাওয়ায় উড়ছে। জানালার গ্রিলে ধরে আনমনে বাইরে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলছে,
‘আল্লাহ আমাকে আমার লক্ষে তাড়াতাড়ি নিয়ে যান। যেনো আমি আমার মামনিকে একরাশ হাসি দিতে পারি’।
১৪০.
‘অর্ষা তোকে ভাইয়া ডেকে পাঠিয়েছে তাড়াতাড়ি যা।
অর্ষা শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো। প্রিয়ন্তি হঠাৎ এসে এই কথা বলাতে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘কেনোরে? তোর ভাইয়ের কি আর কোনো কাজ নাই? খালি আমাকপ ডাকে।
‘আমি গিয়ে ভাইয়াকে বলবো? যে তুই ভাইয়াকে এইসব বলেছিস। দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
প্রিয়ন্তি যেতে নিবে এমনিই অর্ষা দড়ফর করে বিছানা থেকে উঠে প্রিয়ন্তির সামনে গিয়ে বললো,
‘যাইতাছি বইন আমার। যেমন ভাই তেমনি তার ভাই। এইটা বলেই অর্ষা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর এইদিকে প্রিয়ন্তি ফিক করে হেসে ফেলে।
১৪১.
‘দরজা খোলা আছে ভেতরে আসো’ প্রান্তিকের কথা শুনে অর্ষা গুটি গুটি পায়ে প্রান্তিকের রুমে প্রবেশ করে।
‘আমাকে ডেকেছেন?
‘না ডাকলেতো আর এইখানে আসতেনা তাইনা? যাইহোক শুনো কাল খালুজান আর খালামনি আসছে।
‘কিইই!
‘হুম কাল ওনারা আসছে।
‘সত্যি😍?
‘হুম সত্যি।
‘ইয়াহুুু’।
‘এতো লাফানোর কিছু হয়নি এখন শুনো। তুমি একটু স্টের রুমে যাওতো। গিয়ে দেখোতো ওইখানে আমার ‘একটা নোট বই আছে কিনা।
‘আপনি গেলে সমস্যা কি?
প্রান্তিক রাগে দাঁত কটমট করে বলে,
‘তোমাকে যেতে বলেছি কারণ ওইখানে একটা মেয়ে ভাড়ায় উঠেছে।
‘ওমা ভাইয়া আপনি জানেন না? ওই মেয়েটা তাইফা আপু।
‘তাইফা কে?
অর্ষা কোমড়ে এক হাত দিয়ে মাথায় আরেক হাত রেখে বলে,
‘আল্লাহ মালুম৷ ওই যে আমাদের গাড়ি করে যে একটা মেয়ে ঢাকায় এসেছিলো! সেই মেয়েটা।
প্রান্তিকের হঠাৎ মনে পড়ে হুম মেয়েটার নামতো তাইফা। ইনফেক্ট সে আমাকে বলেছিলো৷ প্রান্তিক অবাক হয়ে বলে কি! ওই মেয়ে এইখানে? কিভাবে?
‘জানিনাতো। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছিলাম।
‘নোট বই?
‘খালামনিতো পরিষ্কার করেছে স্টোর রুম। খালামির কাছে নিশ্চয়ই।
‘এনে দাও।
‘ওফ আচ্ছা আনছি। অর্ষার হাত প্রান্তিক ধরে ফেলে। অর্ষা আমতা আমতা করে বলে, ‘কি হলো ছাড়ুন নোট এনে দেয়। প্রান্তিক অর্ষার কপালে এসে থাকা চুলগুলো সরিয়ে নিজের কাছে শক্ত করে মিশিয়ে বললো,
‘চোখে কি আছে তোমার সত্যি করে বলোতো?
‘আপনিই বললেন আমার চোখ টেরা টেরা এখন আমার এই চোখে আর কিইবা থাকবে? ওফ ছাড়ুনতো আমায়।
‘তোমার এই চোখে আমার পৃথিবী আছে।
চলবে…..