#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৮
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
অর্ষার পায়ে পায়েসটা পড়ে যাওয়াতে পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে অনেকটা। বিছানায় বসে পা টা নিচের দিকে রেখে এক পায়ের উপর আরেকটা পা রেখে জ্বলে যাওয়া জায়গাটায় হাত বুলাচ্ছে অর্ষা। প্রান্তিক ওয়াশরুম থেকে আসতেই দেখে অর্ষার চোখ বেয়ে শব্দহীন পানি পরছে। প্রান্তিক হাতের মুষ্টি আবদ্ধ করে কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখে। ক্ষনিক পর চোখ খুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াড্রপের কাছে যায়। ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে। ধীরে ধীরে অর্ষার পায়ের কাছে বসে যেই লাগাতে যাবে অর্ষা জেদ ধরে বলে,
‘আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না৷ আমারটা আমি নিজেই লাগাতে পারবো।
অর্ষা প্রান্তিকের হাত থেকে নিজে মলমটা নিয়ে আস্তে আস্তে লাগাতে শুরু করলো।
‘কান্নায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে তবুও তেজ যায়না?
‘আমার তেজ আমার সব আপনার কি যান এইখান থেকে।
‘কি দরকার ছিলো বউ? ইচ্ছে করে পায়েসটা ফেলে পা টা নষ্ট করতে?
অর্ষা কান্না থামিয়ে থতমত খেয়ে যায় প্রান্তিকের কথায়। অর্ষা তবুও রাগী লুক নিয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে ইচ্ছে করে নিজের ক্ষতি করবো?
‘প্রান্তিক ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসা থেকে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে বললো,
‘সবিই জেলাস বউ সবই জেলাস’
‘আপনাকে দেখে জেলাস হওয়ার কি আছে? আজব।
‘ওমা আমাকে না বলো..রাই কে দেখে জেলাস হয়েছো।
‘এই….অর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্তিকের একটা ফোন আসে। প্রান্তিক ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। অর্ষা এইদিকে ফোঁ দিয়ে দিয়ে ব্যথা কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে। হঠাৎ অর্ষা দেখলো, প্রান্তিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। অর্ষা পা টা নামিয়ে আস্তে আস্তে প্রান্তিকের পিছনে গেলো। গিয়ে দেখে প্রান্তিকের দিকে রাই তাকিয়ে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে নিচে বাগানে দাঁড়িয়ে। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে ভাবলো, ‘তাইতো বলি নিচে তাকিয়ে হাসছে কেনো আর ফোন নিয়ে বারান্দায় গেলো কেনো। এতো যেহেতু রাই রাই করে তাহলে আমাকে বিয়ে করলো কেনো? যত্তসব।
হঠাৎ প্রান্তিক ফোন কেটে পিছনে ফিরে অর্ষাকে দেখে চমকে যায়। বলে,
‘এই এই তুমি? এইখানে?
‘ওমা আমি এসেছি বলে কি শুভ কাজে বাঁধা পড়ে গেলো নাকি? এইটা বলেই অর্ষা চলে গেলো রুমে। আর প্রান্তিক হোহো করে হেসে লুটিয়ে পরে মনে মনে।
১৮৯.
তাইফা অনেক দিনতো হলো। আমি আজ বরং যায়রে।
‘রিমি আজকেই চলে যাবি? আজকে থেকে যা।
‘নারে তাফু। আজকে যেতেই হবে।
‘ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস কেমন?
‘ঠিক আছে।
রিমি যেতেই তাইফা দেখতে পেলো প্রিয়ন্তি একা আনমনে ফ্লাটের শেষ কোনায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
‘প্রিয়ন্তি মন খারাপ?
‘আরে তাফু আপি৷ রিমি আপু কোথায়?
‘এইতো একটু আগেই চলে গেছে গো।
‘ওমা সেকি আমার সাথে দেখা করে গেলোনা?
‘মন খারাপ করোনা ভার্সিটি গেলে দেখা হবে। এখন বলো একা একা এইখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?
‘নাগো আপু কিছুনা।
‘তোমাদের বাসায় কি মেহমান এসেছে?
‘ওহ হুম এসেছেতো। আমার একটা ফুপ্পি।
‘একটা মেয়েকে দেখলাম।
‘হুম ওইটা রাই আপিলা। ফুপ্পির মেয়ে।
‘ওহ। আচ্ছা পরে কথা হবে কেমন? আমি এখন যায় গো অনেক কাজ পড়ে আছে।
‘ঠিক আছে আপু।
তাইফা যেতেই প্রিয়ন্তির চোখে গড়গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো। তাইফা মৃদু চিৎকার করে বলে,
‘কেনো আভেশ ভাই কেনো তুমি ওইদিন আমার মনের কথা জেনেও এইভাবে আমাকে ফেলে গেলে। কেনো?
১৯০.
খাবার টেবিলে বসে একসাথে সবাই খাবার খাচ্ছে। ফরহাদ চৌধুরী গলাটা একটু ঝেড়ে বললো,
‘সবাই শুনো..আমি এখন কিছু কথা বলবো তাই সবার মনোযোগ প্রয়োজন।
‘কি কথা আব্বু?
‘প্রান্তিক তোমার আর অর্ষার বিয়েটাতো হঠাৎ করে হয়ে গেছে। অর্ষাও এই বিয়েতে রাজী ছিলোনা। তাই আমরা সবাই ডিসাইড করেছি তোমার সাথে রাইয়ের বিয়ে দিবো। কি অর্ষা তুমি এইবার হ্যাপিতো?
আচমকা এমন কঠোর সিদ্ধান্তে সবাই খুব স্বাভাবিক থাকলেও অর্ষা চমকে উঠেছে। সে এক পলক ভাবে তাকিয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে। প্রান্তিক খাবারের প্লেটে হাত নাড়াচ্ছো খাচ্ছেনা।
‘কি হলো অর্ষা বল তুই হ্যাপিতো?
অর্ষা সবার গোচরে চোখের একটু পানি মুছে বলল, হুম আমি হ্যাপি।
‘প্রান্তিক তোমার কোনো আপত্তি নেইতো এই বিয়েতে?
‘প্রান্তিক দৃঢ় কন্ঠে বলল, না রাই আমার কোনো আপত্তি নেই।
‘আর আপা আপনার?
‘আরে মনিশা আমার কি আপত্তি থাকবে? আমি খুবই খুশি।
‘আচ্ছা আমি রান্নাঘরে যায় অনেক কাজ আছে..এইটা বলে অর্ষা তাড়াতাড়ি এইখান থেকে চলে যায়।
‘আব্বু আমি আজকেই এনগেজমেন্ট করতে চায় রাইয়ের সাথে।
রান্নাঘর থেকে প্রান্তিকের এমন কথা শুনে অর্ষার বুকটা কেমন ধুক করে উঠে। অর্ষা মনে মনে বলছে,
‘আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? কেনো হচ্ছে? ওনিতো নিজেই রাই আপিকে ভালোবাসে। আমার প্রতি হয়তো মোহ তাই এইরকম আবেগের বশে বিয়ে করেছে। আমিতো ওনাকে ভালোবাসি না আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? অর্ষা…অর্ষা…রাইয়ের ডাকে অর্ষা চোখের পানি মুছে আবার বসার রুমে যায়। গিয়ে বলে,
‘হুম আপি বলুন।
‘অর্ষা তুই টেডিবিয়ার আপিলাকে সাজিয়ে দিবি আজকে। কারণ আজ ভাইয়ার সাথে আপিলার এনগেজমেন্ট।
‘তুই সাজিয়ে দিস প্রিয় আমি সাজাতে পারিনা।
‘কেনো অর্ষা? তুমি সাজাবেনা কেনো? তোমারইতো সাজানো উচিৎ আমার রাইকে।
প্রান্তিকের মুখে এমন কথা শুনে জানেনা অর্ষার ঠিক কি হলো তবে সে শুধু ভাবছে এইটাই বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্মমতা যেইখানে বর্তমান স্ত্রীকে বলা হয় তার হবু বউকে সাজাতে। অর্ষা আবার ভাবলো, আমি উনাকে ভালোবাসিনা তাই ওনার যা ইচ্ছে করুক।
‘ঠিক আছে প্রিয় আমিই সাজাবো রাই আপিকে।
১৯১ .
রাই আয়নায় নিজেকে বার বার দেখছে। তার পিছনে কানের দোল লাগিয়ে দিচ্ছে অর্ষা। হুম সেইতো সাজিয়েছে রাইকে। রায় নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে বললো,
‘অর্ষা তুমি অনেক সুন্দরভাবে সাজাতে পারোতো। আমার বিয়েতোও তুমি আমাকে সাজিয়ে দিও।
‘আচ্ছা আপি।
‘অর্ষা এই প্রথম কেউ কোনো ভালোবাসাকে অন্য কাউকে দিচ্ছে।
‘আমি ভাইয়াকে ভালোবাসিনা আপি।
রাই আয়না থেকে মুখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে অর্ষাকে বললো,
“সত্যিই?
‘হুম আপু সত্যি।
‘অর্ষা জানিনা সত্যি কিনা। তবে আমি বলবো তুমি নিজের মনকে বার বার প্রশ্ন করো হয়তো উত্তর পেয়ে যাবে। আর যদি কখনো মনে হয় যে তুমি প্রান্তিক কে ভালোবাসো একবার শুধু আমাকে বলিও আমি বিয়েটা ভেঙে দিবো। তবে হুম যা বলার বিয়ের আগে বলতে হবে আমাকে। কারণ বিয়ের পর আমার কিছু করার থাকবেনা।
‘অর্ষা ওইখান থেকে কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে এলো।
অর্ষা রুমে যেতেই দেখলো প্রান্তিক কফি খাচ্ছে আর ল্যাপ্টপ টিপছে। অর্ষা গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় গিয়ে বারান্দার বেতের সোফাটায় শুয়ে পড়ে। প্রান্তিক তা লক্ষ করে ল্যাপ্টপ রেখে রাগী ভঙ্গিতে অর্ষার কাছে গিয়ে শোয়া থেকে এক টান দিয়ে উঠিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘জাস্ট রাতঃ১০ টা…জাস্ট রাত ১০টার মধ্যে এনগেজমেন্টের রিং রাইয়ের হাতে পরিয়ে দেওয়ার আগে যদি তুমি আমাকে ভালোবাসি না বলো..আই প্রমিস অর্ষা আমি বিয়েটা করে নিবো। কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা। প্রান্তিকের কথাগুলো এতোই রাগ আর গম্ভীর মিশ্রিত ছিলো যে অর্ষার দেহ কেঁপে উঠলো।
চলবে…