এক_প্রহরের_খেলা মোর্শেদা হোসেন রুবি ২১

#এক_প্রহরের_খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি

২১||
বিবেক জিনিসটা মাঝেমধ্যে বড় যন্ত্রনাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। কখনো এমন হয় এর অস্তিত্বই টের পাওয়া যায়না আবার কখনও একেবারে সরব হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে বিবেকের দংশন একটু বেশীমাত্রায়ই অনুভব করছেন জাহানারা। এটা সত্যি যে তিনি রুমকির উপর রাগ। ভীষণ রাগ। কারণটাও কারো অজানা নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই এই মেয়েটাকে আজাদের বউ বানাবার ইচ্ছেটা মনে পুষে রেখেছিলেন। ফলে মেয়েটাকে ছেলের বউ করে ঘরে আনার জন্য চেষ্টার ত্রুটি ছিলোনা তার। সুযোগ পেলেই নানান ছুতোনাতায় ডেকে আজাদের সামনে ভিড়িয়ে দিয়েছেন। ইচ্ছে করেই আজাদকে ঘুম থেকে ডেকে তোলার নাম করে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন রুমকিকে। কখনও এক কাপ চা হাতে ধরিয়ে পাঠিয়েছেন। ঘরে ক্ষীর রেঁধে ওকে খাওয়ানোর সময় তাতে চিনিপড়া গুলে দিয়েছেন। আদর দেখিয়ে আজাদের আধাখাওয়া কলা বা ডিমটা টুপ করে রুমকির মুখে গুঁজে দিয়েছেন। কার কাছে যেন শুনেছিলেন এঁটো খেলে নাকি জুড়ি বাঁধে। কিন্তু কোনো টেকনিকই কাজে দেয়নি। সেই মেয়ে নিমকহারামের মতো গিয়ে বিয়ে করেছে এক শহুরে ছেলেকে। সেও কিনা লুকিয়ে লুকিয়ে। কত্ত বড় পাজি মেয়ে। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি যে তার বিয়ের কথা চলছে। তিনি টের পেলে অবশ্যই লুকিয়ে ওদের দুটোকে কলেমা পড়িয়ে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। চেয়েছিলেন ভাই নিজেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে রাজী হোক। তা তো হয়ই নি বরং উল্টো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে। জাহানারার এতোদিনের সব পরিশ্রম পন্ড করেছে আব্দুল্লাহ। রাগ হবেনা কেন ? তবে এটা সত্যি, যত রাগই হোক তিনি কোনোও দিনও চাননি যে রুমকি বাস একসিডেন্ট করে মরে যাক। এটা তার চাওয়ায় কখনোই ছিলো না। বরং আজ সকালে আজাদের মুখে খবরটা শোনার পর থেকে বিবেক নামক অনুভূতিটা গ্যাসট্রিকের মতো জ্বালাপোড়া তৈরী করেছে। চাইলেও একে এড়ানো যাচ্ছেনা। কিন্তু সংবাদটা সরাসরি গিয়ে ভাইকে দেবার মতো সাহসও পাচ্ছেন না জাহানারা। ছেলের মাথায় ভুত চাপলেও তার মাথায় তো চাপেনি। তিনি ভালো করেই জানেন, গত পরশু দিনের ঘটনাকে নিয়ে তার ভাই আজাদকেই সন্দেহ করে বসে আছেন। সেখানে তিনি যদি গিয়ে রুমকির বাস একসিডেন্টের খবর দেন তাহলে সহজেই তিনি সন্দেহ করবেন যে এটা মিথ্যা বা তার কোনো সাজানো ঘটনা। বিশ্বাস তো করবেই না উল্টো বলবে, তুই জানলি কী করে। তারপর আজাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। পরে দেখা যাবে খামোকাই ছেলেটাকে নিয়ে টানাটানি পড়েছে। মাঝখান থেকে কাজের কাজ কিচ্ছু হবেনা। ঐ দিকে রুমকিদের কী অবস্থা কে জানে। তিনি ভালোই বুঝতে পারছেন যে দ্রুত কারো সেখানে যাওয়া দরকার। সংবাদটা চেপে যাওয়াও মোটেই ঠিক হবে না। বিবেক বলছে যত দ্রুত সম্ভব ঋভূর আত্মীয়দের কাছে খবরটা পৌঁছানো দরকার কিন্তু কী উপায়ে তা মাথায় আসছেনা।
বারকয়েক পায়চারীর পর সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে হঠাৎ ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিজেই বেরিয়ে পড়লেন জাহানারা। তবে আব্দুল্লা ভাইয়ের বাসায় নয়। সরাসরি রুমকির দাদী শ্বাশুড়ীর কাছে গেলেন তিনি। বুড়ি বয়স্ক হলেও যথেষ্ট বিচক্ষণ। তাকে গিয়ে কৌশলে কথাটা বলা যেতে পারে। তাতে যদি বোঝে ভালো নয়তো তার পক্ষে আগ বাড়িয়ে আজাদের কথা বলা সম্ভব হবেনা। তার দায়িত্ব খবর পৌঁছানো তিনি সেটুকুই শুধু করবেন। বাকিটা ওদের ব্যপার।

জাহানারা সরাসরি গোলবানু চাচীর ঘরেই দরজা নক করলেন। গোলবানু চাচীকে তিনি ছোটবেলা থেকেই চেনেন। তবে আব্দুল্লা ভাইয়ের সাথে খাতির থাকায় জাহানারা সবসময় সরে সরেই থেকেছেন। দুর থেকেই বেশীরভাগ কথা হতো, কুশলাদি বিনিময় হতো, এর বেশী তারা কেউই এগোয়নি। না জাহানারা না গোলবানু চাচী। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিটা ভিন্ন। কারো জীবন মরণের প্রশ্ন এটা। না বলে পারা যাচ্ছেনা।

সাতসকালে জাহানারাকে দেখে বেশ অবাকই হলেন গোলবানু বিবি। অভ্যাস মত ফজরের নামাজের পর হালকা নাস্তা সেরে দ্বিতীয় দফার ঘুমটা দিতেই যাচ্ছিলেন তিনি। অসময়ে অনাকাঙ্খিত জনকে দেখে তিনি যথেষ্টই অবাক হলেন তবে স্বভাব সূলভ ভাবেই চট করে কোন মন্তব্য করলেন না। জাহানারা নিশ্চয়ই এমনি এমনি আসেনি। নিশ্চয়ই বড় কোনো কারণেই এসেছে। কারণ আব্দুল্লাহর সাথে তার পরিবারের যতটা ঘনিষ্টতা, জাহানারার সাথেও ততটাই দুরত্ব। তাছাড়া রুমকির ব্যপারে এদের মা ছেলেকে নিয়ে কম ঝামেলা হয়নি। এতোকিছুর পর আজ আবার কী চায় সে ! গোলবানু নিরবে তাকিয়ে রইলেন। জাহানারা ঘরে ঢুকে সালামের ভঙ্গি করলে গোলাবানু মাথা নাড়লেন তবে বসতে বললেন না। জাহানারা খানিক ইতস্তত করে বলে উঠল, ” চাচী কেমন আছেন ?”
-” ভালো। তুমি ? ”
-” এই তো আপনাগের দোয়া। চাচী, একটা কথা শুনলাম। সেটা বলতেই আসছি। আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বলার মতো পেলাম না। খবরটা আমি নিজেই জানলাম সকালে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। এখন মনে হচ্ছে ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তো মহাবিপদ। ”
-” কী খবর ?”
-” কথাটা আমি আমাদের বুয়ার মুখে শুনলাম। ওর ছেলেটা হলো গিয়ে আপনার বাসের হেলপার। তো খবরটা সেই দিলো। ” বলতে গিয়ে জাহানারার মনে হলো তিনি খেই হারিয়ে ফেলছেন। গোলবানু তীক্ষ চোখে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। অবশেষে সেই চাহনী উপেক্ষা করে জাহানারা বলেই ফেললেন একসিডেন্টের কথাটা। তবে আজাদের বদলে নাম দিলেন বুয়ার ছেলে কামালের। গোলবানু কিছুক্ষণ নিরব থেকে বিস্ময়াহত স্বরে বললেন, -“এইসব কী কইতিছো জাহানারা ? ”
-” হ্যাঁ, চাচী। বুয়ার ছেলে বললো, একটা বাস ঢাকা যাবার কালে একসিডেন্টে পইড়েসে। সে নাকি আপনার নাতিরে দেখছে। আপনাগের রূপম তো মাঝেসাঝে আসতো এদিকে। কামাল তারে চেনে। কামাল বললো, সে রূপমকে দেখছে ঐখানে। শুনে আমার মনটা খচ করে উঠলো। সেকারণেই আমি আপনারে বলতি আসলাম। সত্যিই কী , রুমকি ঢাকায় রওনা দিয়েছে চাচী ? ”

গোলবাণু জবাব দিলেন না। টাল খেয়ে পড়ে যাবার আগ মুহূর্তে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন তিনি। জাহানারা বলে চললো, ” চাচী, আপনি আবার এটা ভাইবেন না যেন আমি কৌশলে রুমকির খবর নিতে আসছি। একসিডেন্ট তো একটা হইসে বড় সড়কে। এখান থেকে যাবার পথে। আপনি একটু বড় ভাইরে খোঁজ নিতি কন চাচী। তাহলেই জানা যাবে ! কথাটা জেনেছি বলেই বলতে আসলাম নাইলে তো আপনারা জানবেনও না। এতোটা পাষাণ তো আর আমি না।” বেশ সতর্কতার সাথে কথা শেষ করলো জাহানারা। গোলবানু চাচীর দিকে তাকালো। কিন্তু তাঁকে দেখে মনে হলো তিনি এ জগতে নেই। হাত পা সমানে কাঁপছে তার। টের পেয়ে জাহানারা দ্রুত তাকে ধরতে গেলে তিনি কোনমতে বড় ছেলের নাম উচ্চারণ করতে করতেই বিছানায় শুয়ে পড়লেন। তার ঐরকম স্বরের ডাকে ঋভুর বড়চাচী দ্রুত ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকে সব শুনে তিনি নিজেও দিশেহারা হয়ে পড়লেন। ছুটে গেলেন সংবাদটা স্বামীকে দিতে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সংবাদটা পুরো এলাকায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো । আব্দুল্লাহ খবর শুনে তৎক্ষণাৎ ছুটে গেলেন থানায়। সংবাদের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে পুরো ঘটনাই শুনলেন। আহত নিহতের লিষ্ট চেক করলেন। তারপর ঐ পায়েই ছুটলেন উপজেলা সদর হাসপাতালে। সেখানে মেয়ের জামাইকে পেলেও পুরো হাসপাতালে রুমকির নাম নিশানা খুঁজে পেলেন না। তাঁর কান্না আর আহাজারিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গন কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো।

======

পনের বিশ মিনিটের কথা বলে প্রায় এক ঘন্টা পর ফিরলো আজাদ। অদিতি ততক্ষণে রেগে কাঁই। ওর রাগের কারণটা ছিলো মুলতঃ ভীতি থেকে। ভয় কেটে যাবার পর সাধারণত রাগ চড়ে যায়। অদিতির দশাও তেমনই। সে আজাদকে ফিরতে দেখেই রীতিমত চেঁচিয়ে উঠলো।
-” আমি কী জানতে পারি আমাকে এতো সকাল সকাল ঘুম ভাঙিয়ে তৈরী হতে বলার মানে কী ? আপনি পনের/বিশ মিনিটের কথা বলে গিয়েছিলেন। এখন ক’টা বাজে ?”
অদিতির আক্রমনাত্মক ভঙ্গি দেখে আজাদ হেসে ফেললো। তার হাসির কারণ হলো অদিতির ফের তুমি থেকে আপনিতে চলে যাওয়া। তার মানে মেয়েটা সত্যিই রেগে আছে।
আজাদ কপট আত্মসমর্পনের ভঙ্গিতে দু’ হাত তুলে বললো, ” আমি জানি, তুমি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলে। কিন্তু আমি সত্যিই একদম স্যরি। তবে কেন দেরী করেছি তার সবটা শুনলে রাগ হাওয়া হয়ে যাবে। আমাকে থ্যাঙ্কস দেবে। ছুটে এসে জড়িয়েও ধরতে পারো। চাইলে আরেকবার…..!”
-” মোটেও না। আপনি যত বড় নিউজই দেননা কেন, আমার রাগ তাতে কমবে না। আপনি ভয় পাইয়ে দিয়েছেন আমাকে। আপনি জানেন, আপনার কিছু হলে আমি কত বড় বিপদে পড়বো আমি ? ” অদিতির ভেজাকণ্ঠ শুনে আজাদ চট করে ওর দিকে তাকালো। মেয়েটা নিঃশব্দে কাঁদছে। ওকে ওভাবে কাঁদতে দেখে অপরাধবোধে মনটা ভারী হলো আজাদের। এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে বললো, ” এক্সট্রিমলি স্যরি। তুমি এতোটা ভয় পাবে বুঝিনি। বিশ্বাস করো, বাইরে একদম ফালতু সময় কাটাইনি। একটা ট্রলারের ব্যবস্থা করেছি। আজ বেলা বারোটায় ট্রলারটা কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টের দিকে যাবে। সেটাতে করে যাবো আমরা। নৌবিহার বলতে পারো।”
-” আর গাড়ী…?” ভেজা চোখেই তাকালো অদিতি। আজাদকে মনে হলো সে এ জগতে নেই। অদিতি বাধা দিয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। সবল পুরুষের ভালোবাসার মেঘঘন আহ্বান কোন নারী কবেই বা অগ্রাহ্য করতে পেরেছে। অদিতি কেবল বিড়বিড় করলো, ” গোঁয়ার একটা।” আজাদ তার জবাব দেবার দরকার মনে করলো না।

নাস্তা সেরেই আজাদ ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রুপমের নম্বরে ফোন দিলে সেটা রিসিভ করলেন বড়মামা। আজাদ সামান্য হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ” মামা, রুমকিদের এখন কী অবস্থা ? ”
-” রুমকিদের খবরে তোর দরকার কী। তোর তো খুশি হবার কথা, তাই না ? আমার মেয়েটাকে শান্তি মতো স্বামীর ঘরও করতে দিলি না তুই ! ”
-” মামা, আমি….!”
-” আর কথা বলিস না। তোর কথা শুনে আমার কোনোদিন কোনো উপকার হয়নি। আজও হবেনা। আমি তো আবার আমার মেয়েকে হারিয়েছি।”
-” হারিয়েছেন…?” অস্ফুটে উচ্চারণ করলো আজাদ। ঐ পাশে আব্দুল্লাহ সমানে কাঁদছেন। আজাদ মরিয়া হয়ে জানতে চাইলো, ” মামা, প্লিজ। আমাকে বলুন রুমকির কী হয়েছে ? ওকে হারিয়েছেন কথাটার মানে কী ? ”
-” রুমকিরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে কেউ বলতি পারেনা ওর কথা।”
-” সে কি ? থানায় বা হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলেন ? ”
-” রূপমের বড়চাচা সেখানে আছে। এখনও কোনো খবর পাইনি আমি।”
-” মামা, আপনি কাঁদবেন না। আমি থানায় ফোন দিচ্ছি। ওসি সাহেব আমার পরিচিত মানুষ। আমি তার সাথে কথা বলছি। আমার বিশ্বাস রুমকির কিছু হয়নি।” বলে ফোনটা কেটে দিয়েই দ্রুত ওসি সাহেবের নম্বর চাপলো আজাদ। কাঁধে হাত পড়তেই মাথা তুলে দেখলো অদিতির অনিন্দ্যসুন্দর মুখখানা। আজাদ কেবল ওর হাতটা হালকা চেপে ধরে ছেড়ে দিয়ে ফোনে মনোযোগী হলো।
-” হ্যালো, আজিম ভাই ? ”
-” আজিম ভাই ডিউটিতে । আমি মামুন । ”
-” ওহ্ আচ্ছা। ইয়ে, মামুন ভাই। সকালে কি আপনিই আমাকে ফোন করেছিলেন? ”
-” তা তো বলতি পারবো না। আমি তো অনেককেই ফোন দিয়েছি। এখন কী হইসে, সেটা কন।”
-” কী হয়েছে সেটা আপনি জানেন। গতরাতের বাস দুর্ঘটনার সময় আমার ঘনিষ্ট দুজন আত্মীয় ঐ বাসে ছিলো। যাদের একজনের ফোন থেকে আপনি আমাকে কল করেছিলেন। মনে পড়েছে ? মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই ফোনটা করেছিলেন আপনি। ভোলার কথা নয়।”
-” আচ্ছা, যদি কইরেছি তো হইসে তো। এহন সমস্যা কী ? ”
-” সেই লোক এখন কেমন আছে, যার ফোন থেকে আপনি আমাকে কল দিয়েছিলেন ? তার সাথে একটা মেয়ে ছিলো। তার কী অবস্থা ?
-” সেটা দেখতি হবে। স্ট্যান্ডবাই তো বলতে পারবো না। আপনি এখানে আইসে দেইখে যান। ফোনে ফোনে এতো কথা কওয়া সম্ভব না। ” মামুন নামের এস আই ফোন রাখতে যাবার আগেই শুনতে পেলো আজাদের চড়া কণ্ঠ।
-” এ্যাই শালা মামদার পো। চিনোস আমারে ? শালা দুই টাকার এস আই আর ভাব নেস ওসির। শালা, আমি আজাদ। আজাদ মুনতাসীর। নাম শুনছোস না শোনানোর ব্যবস্থা করুম। আজিম ভাই আসলে আমার এই নম্বরে ফোন দিতে বলবি। আর একসিডেন্টের বাসে আমার দুইজন যাত্রী ছিলো। রূপম আর রুমকি। তাদের ফুল আপডেট জানতে চাই। আমি ঠিক দশ মিনিট পরে ফোন দেবো। পাকা খবর চাই আমার।” বলেই কট করে ফোন কেটে বিছানায় ছুঁড়ে মারলো ফোনটা।
রাগে গা গরগর করছে ওর। দুহাতের ভরে বিছানায় ঝুঁকে বসে রইলো কয়েক সেকেন্ড। হঠাৎ কী মনে হতে অদিতির খোঁজে ঘাড় ফিরালো। অদিতিকে পরম বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচালো যার অর্থ দাঁড়ায় কী হয়েছে ? তাকিয়ে আছো কেন ? ”
-” আপনি এভাবে গুন্ডাদের মতো করে কথা বলছেন কেন ? কার একসিডেন্ট হয়েছে ? এতো রেগে রেগে কথা বললেন কার সাথে ? ”
-” তার আগে তুমি তোমার সম্বোধন ঠিক করো। একবার আপনি একবার তুমি। যে কোনো একটা স্থির করো। ” আজাদ গম্ভীর ভঙ্গিতে বললো।
-” তুমিই তো বলতে চাই কিন্তু যেভাবে গর্জে উঠলেন তাতে তুমি বলার সাহস পাচ্ছি না। আপনাকে অনেক দুরের মানুষ মনে হচ্ছে।”
আজাদ হাসতে গিয়েও অন্যমনস্ক হয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বললো, ” রুমকির কথা তো জানো। ও ওর হাজবেন্ডকে নিয়ে ঢাকা রওনা দিয়েছিলো। পথে ওদের বাস খাদে পড়ে গেছে। রুমকির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশ আমাকে রুমকির বরের ব্যপারে বলেছে। কিন্তু রুমকির ব্যপারে কেউ কিছু বলছেনা। এটাই আশ্চর্য লাগছে।”
-” সেকি। কী হতে পারে মেয়েটার? ”
-” জানিনা অদিতি। রুমকির কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি। কখনো না।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here