এক_প্রহরের_খেলা
৬||
-” বাহ্, তার মানে রুমকি তোমাকে জিতে নিয়েছে?” নায়লার চেহারায় হতাশা না রাগ ঠিক বুৃঝতে পারলাম না।
-” জিতে নিয়েছে বলতে ? ” আমি এবার সত্যিই বিভ্রান্ত বোধ করলাম। বিশেষ করে নায়লার হাবভাবে তো মনে হচ্ছে আমি যেন কত বড় অপরাধ করে ফেলেছি।
-” জিতে নিয়েছে বলতে কী বুঝিয়েছি তা তুমি বোঝোনি, তাই না ? কচি খোকা তুমি ?” নায়লা আগের মত করেই বলে গেল। এবার আমি একটু অসহিষ্ণু স্বরে বলে উঠলাম,
-” আরে বাবা, কথাটা সরাসরি বললেই তো হয় । এত ভণিতার তো কোন কারণ দেখছিনা।” একটু রেগে গিয়েই বললাম কথাটা। এমনিতেই মাথা হ্যাং তার উপর নায়লার এসব দুর্বোধ্য কথাবার্তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। একটা ঔষধ কিনতে এলেই কী কেউ কাউকে জিতে যায় নাকি ! এটা কী লটারি যে দুই টাকায় দুই লাখ টাকা ! আশ্চর্য, নায়লার জেলাসিটা আসলেই মেয়েলি আর মজ্জাগত। বিরক্ত লাগছে আমার।
আমার বিরক্তি বুঝতে পেরে নায়লা তার গলার স্বর খাদে নামিয়ে নিল। বিড়বিড় করে বলল, ” ঔষধ নিয়ে চল, তারপর তোমার খবর করতেসি আমি।”
নায়লার দিকে একবার তাকিয়ে এবার সরাসরি দোকানীকেই জিজ্ঞেস করলাম,
” ভাই এটা কিসের ঔষধ? ”
-” এটা হলো বার্থ কন্ট্রোল পিল। ” যান্ত্রিক গলায় বলেই দোকানী ভেতর দিকে সরে গেল। আর আমার অবস্থা দাঁড়াল বাজ পড়া গাছের মত। চুলগুলো সব আইনস্টাইন স্টাইলে দাঁড়িয়ে যাবার মত হলো। নায়লার আচরণের যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম এবার। কিন্তু রুমকি এই পিল কেন কিনতে বলেছে সেটা আমার মাথায় ঢুকল না। নরমালি ওর তো এটা খাবার কথা নয়। তাহলে হঠাৎ এই ঔষধ কিনতে বলল কেন সে । মাথা ঘুরছে আমার। হায় সর্বনাশ, আমার অজান্তে কোন ভজঘট হয়ে গেল না তো ? মুহূর্তেই মনটা বিষিয়ে উঠল আমার। চরম অস্বস্তিবোধ হতে লাগল।
না তাকিয়েও বুঝতে পারছি নায়লা কটমট চোখে আমাকেই দেখছে। ওর ভঙ্গিটা অনেকটা এরকম যেন সে বলছে, ” কী হলো, এখন কথা বলো না কেন।”
অসহায় ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসার চেষ্টা করে বললাম, ” আমি সত্যিই জানি না নায়লা, যে রুমকি এটা কেন আনতে বলল ।”
নায়লা এখন আগের তুলনায় শান্ত। যেন সে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে। বিজ্ঞ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল,
-” তুমি জান না, কিন্তু আমি জানি। ” নায়লার চোখগুলো তীক্ষতর হয়ে উঠছে দেখলাম। অস্বস্তি কাটিয়ে কোনমতে বললাম, ” যার কসম খেতে বলবা তার কসম খাব। তবু আমার উপর কোন অপবাদ দিলে মেনে নেব না । বিলিভ মি, আমি ওকে ছুঁইনি পর্যন্ত।”
-” তাইলে এইটা কেন আনতে বলল সে এটা আমাকে বোঝাও। ”
-” আই ডোন্ট নো। বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করব ওকে।”
-” জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমার কাছে শোন। সে আসলে তোমাকে ট্রাপে ফেলে আটকাতে চাচ্ছে। যেন তুমি তাকে কোনভাবেই ডিভোর্স করতে না পার। মেয়েদের চালাকি তো জানো না। এই মেয়ে হলো গভীর জলের মাছ। আচ্ছা, সে চলে যাবার ব্যপারে কী বলেছিল একটু বলতো শুনি ? ”
-” সে বলেছে যে এভাবে চলে গেলে আমি সবার কাছে খারাপ হয়ে যাব। তাই সে তার এইচ এস সি পরীক্ষার পনের বিশ দিন আগে বাড়ী চলে যাবে। আর এমনিতেও নাকি আমাদের এক তালাক হয়ে আছে। কারণ আমি তাকে বিয়ের রাতে যেসব কথা বলেছি ঐসব কথায় নাকি তালাকের মত হয়ে যায়। সে এখন আগামী তিনমাস আমার রুমে থাকবেনা। অবশ্য তিনমাস হবার আগেই মানে বিয়ের দ্বিতীয় মাসেই তো ওকে বোনের বাড়ী চলে যেতে হচ্ছে। কারণ ওখানে থেকেই পরীক্ষা দেবে সে। তারপর দেশের বাড়ী যাবে। সেখানে গিয়ে ওদের বাড়ীর সবাইকে জানিয়ে দেবে যে, আমাকে সে পছন্দ করেনা। এভাবেই সে আমাকে মুক্ত করে দেবে। এটাই তো বলল।” আমি সত্যটাই বললাম। আর নায়লা নিরবে সবটা শুনে মাথা নাড়ল।
-” বুঝলাম।”
-” কী বুঝেছ ? ”
-” বুঝলাম যে, মেয়েটা সেয়ানা ঘুঘু। মুখে বলছে এই করব সেই করব কিন্তু কাজ করছে উল্টোটা। যেন তোমার পক্ষেই চাইলেও কিছু করা সম্ভব না হয়। কারণ সে ভাল করেই জানে, সে প্রেগনেন্ট হয়ে গেলে আগামী এক বছরে আর ডিভোর্স দিতে পারবানা তুমি।”
অবাক হয়ে নায়লার কথাগুলো শুনছিলাম। রুমকির চরিত্রের এই দিকটা আসার সম্পূর্ণ অজানা। নায়লাকে দেখলাম রেগে রেগে বিড়বিড় করতে। আমি পরিবেশ হালকা করার জন্য বললাম,
-” সমস্যা কী। ডিভোর্স না দিতে পারলে নাই। আরেকবার বিয়ে করে নেব। দুই বউ রাখে না মানুষ। দস্যু বনহুর…!”
-” আবারও ফাজলামি ? তোমার কাছে খুব ফান মনে হচ্ছে ব্যপারটা তাই না? তাহলে কান খুলে শুনে রাখ। তোমার ঐ গাইয়া বউ বিদায় না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে বিয়ে করব না। কথাটা মনে রেখো। যতদিন ঐ মেয়ের সাথে তোমার লিঙ্ক সম্পূর্ণ রুপে ক্লিয়ার না করবা ততদিন আমার আশা করবা না। আর যদি এরকমই চলতে থাকে তো আমার আশা ছেড়ে দিতে হবে তোমাকে।” বলে গটগট করে হেঁটে চলে গেল নায়লা। আমি কিছুক্ষণ হতাশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে ফেরার পথ ধরলাম। নায়লার ঐ কথাটা আমাকেও চিন্তায় ফেলেছে। আসলেই কী রুমকি কোন ফাঁদ রচনা করছে আমার জন্য ? অথচ মেয়েটা কথাবার্তায় তো সেই লেভেলের ইনোসেন্ট। তার পক্ষে কী আদৌ কোন ছলনা সম্ভব ! যদি তা না’ই হয় তাহলে পিল দিয়ে সে করবেটা কী !
এক বিব্রতকর অনুভূতি নিয়ে বাড়ী ফিরলাম। বেল বাজালে গেট রুমকিই খুলল। আমাকে দেখেই ফিসফিসিয়ে বলল, ” এনেছেন ? ”
দাঁতে দাঁত চেপে কটমটিয়ে তাকালাম ওর দিকে। অদুরেই আমার শ্রদ্ধেয় পিতা পত্রিকায় নিমগ্ন। রুমকি আমার উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। ওর চোখে চোখ রেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা কোন ছলনাময়ীর চোখ। তাকিয়ে থেকেই পকেট থেকে প্যাকেটটা বের করে ওর হাতে দিলাম। সে রীতিমত ছোঁ মেরে সেটা নিয়ে চাপা স্বরে বলল, ” উফ্, যাজাকাল্লাহ।” বলেই দ্রুত চলে গেল। আমিও নিজের ঘরে চলে এলাম।
বাড়ীতে অতিথি পরিপূর্ণ। রুমকিকে কথাটা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাচ্ছিনা। মেয়েটা সারাক্ষণই ব্যস্ত। দোতলায় সে একবারও আসেনি। নিচে ডাইনিং রুমের চেয়ার টেবিল একপাশে সরিয়ে কার্পেট বিছানো হয়েছে। তার উপর চাদর। মেয়েরা সবাই সমবেত হয়েছে সেখানে। আমি দোতলা থেকে উঁকি মেরে রুমকিকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় চিৎপটাং হলাম। নায়লার কথাগুলো মাথায় ঘুরছে। যদি ওর কথা সত্যি হয় তাহলে রুমকি আমার সাথে ছলনা করছে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করার জন্য। আর এর মানে খুব সহজ। সে বাড়ী গিয়ে পরীক্ষা দেবার পর ফোন করে জানিয়ে দেবে যে সে এই বাড়ীর বংশধর বহন করছে। আর এই ক’দিন আমাকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চলবে। বাহ্, বুদ্ধি তো দেখি ভালই। ভাবতে ভাবতেই পাশ ফিরলাম। অমনিই রুমকিকে দেখা গেল ঘরের দরজায়। তার দুহাতে বিরাট একটা কুলোর ডালা। তার উপর বেশ কিছু ছোট বড় বক্স। ওকে দেখে আমি আস্তে করে উঠে বসলাম। ভাবছি, এই সুযোগে ওকে কিছু বলব। কিন্তু রুমকি নিজেই বলে উঠল, ” এই যে শোনেন, এগুলো আপাতত এখানে রেখে যাচ্ছি কেমন ? পরে লাগলে কাউকে পাঠিয়ে দেব। ওর হাতে দিয়ে দেবেন, ঠিক আছে ?”
আমি জবাব না দিয়ে উঠে গিয়ে দরজা লক করে দিলাম। তারপর দুহাত কোমড়ে দিয়ে রুমকির দিকে ফিরলে কিছুটা কুঁকড়ে গেল সে। নাকি ভয় পাবার ভান করল কে জানে।
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, ” তুমি আমাকে দিয়ে যে ঔষধটা আনিয়েছে সেটা কিসের তা কিন্তু আমি জেনে গেছি ।”
রুমকি শূণ্য চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, ” তো…?”
-” তো মানে ? তুমি আমার সাথে কী ট্রিক্স করছ সেটা কী এখনও বুঝিয়ে বলার দরকার আছে? ”
-” মানে ? আমি কিন্তু আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।” রুমকিকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। নাকি এটাও অভিনয় কে জানে। রাগ চেপে বললাম,
-” বুঝতে পারছ না, তাই না ? এটা বলছ না কেন, যে এটাও তোমার অভিনয়ের অংশ?”
-” অভিনয় ? কিসের অভিনয় ?”
-” কিসের অভিনয় সেটা তো তুমি আমার চেয়ে ভাল জানো।”
-” বিশ্বাস করুন, সত্যিই জানিনা। তাছাড়া আপনার কেন মনে হলো যে আমি অভিনয় করছি ?”
-” তা নয়তো কী ? তুমি কী মনে করো আমি তোমার চালাকি ধরতে পারব না ? তুমি আমাকে ফাঁদে ফেলে এই সংসারে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিতে চাইবে আর আমি কিছুই টের পাব না? তুমি তো ভাল করেই জানো যে, তুমি কনসিভ করলে আমার বাবা -মা কোনদিনও তোমাকে ত্যাগ করতে দেবেন না। আর সেটা তখন এমনিতেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই তুমি খুব চালাকি করে এমন কুরুচিপূর্ণ একটা চাল খাটিয়েছ যেন আমি আটকে যাই। সত্যি, খুব অবাক হলাম। কত নোংরা মন তোমাদের।” বলতে গিয়ে টের পেলাম আমি বেশ রেগে যাচ্ছি। ঐদিকে রুমকির চোখ এখন ভরা বর্ষার পদ্মা নদী।
দু কূল ছাপিয়ে পড়ার অপেক্ষা। সে রীতিমত বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আমার কথাটা অনুধাবন করার চেষ্টা করছে । কী মনে হতে এবার মাথায় হাত রাখল আলগোছে। তারপর কিছু বুঝতে পেরেছে এমন ভঙ্গিতে লম্বা দম ফেলে মাথা ঝাঁকাল সামান্য। একই সাথে ওর কাজলের ঘের টপকে দু ফোটা চোখের পানিও গড়িয়ে পড়ল গাল উপচে। তবে তাতে কাজলের কোন হেরফের হলো না। সম্ভবত ওয়াটার প্রুফ কাজলটা। রুমকি রুদ্ধশ্বাসে বলতে লাগল,
-” আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন। আমার গাইনোকলজিস্ট আমাকে ঐ ঔষধটা সাজেষ্ট করেছিলেন। এটা আমি গত দুবছর ধরে খাই। তাছাড়া আপনি যেটা ভাবছেন সেটা ছাড়াও এই ঔষধের আরো ফাংশান আছে। বিশ্বাস না হয় ফার্মেসীতে জিজ্ঞেস করে দেখুন। তাছাড়া আপনাকে ফাঁসিয়ে আমার লাভ কী। সেরকম কোন ইচ্ছেই আমার নেই। কোনদিন ছিলও না। যার আত্মা ছুঁতে পারব না, তার শরীর ছুঁয়ে বংশ বৃদ্ধি করার মত রুচি আমার নেই । কাজেই এটুকু নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন , আপনার কোন দুর্বলতার সুযোগ আমি কখনোই নেব না। আর না আমার নিজের কোন দুর্বলতা থেকেও নিজেকে আপনার সংসারে বেঁধে রাখব। আপনি দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। আমি আপনাকে কোনদিন কোনভাবেই আটকাব না।” এতটুকু বলেই থেমে গেল রুমকি।
অপরদিকে বোকার মত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। কী উত্তর দেব রুমকির কথার ভেবে পেলাম না। না জেনে কতগুলো বাজে কথা বলে ফেললাম মেয়েটাকে। আফসোসও হল একবার। একবার মনে হলো, তাকে আমার স্যরি বলা উচিত আসলে। এটা তো সত্যি যে, মেয়েটা অযাচিত খাতিরের চেষ্টা কখনো করেনি। অনেক সুযোগ ছিল তার। কিন্তু সে সতর্ক থেকেছে অনাকাঙ্খিত সকল পরিস্থিতি থেকে। হঠাৎ সমস্ত বিরক্তি গিয়ে পড়ল নায়লার ওপর। এই মেয়েটা সবসময় ঝামেলা করে। ও নিশ্চয়ই জানত ঔষধটার ব্যপারে কিন্তু আমাকে বলেনি। উল্টো আমাকে বিব্রত করার জন্যই সে এভাবে কথাগুলো বলে আমাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
রুমকিকে কিছু বলার জন্য তাকিয়ে দেখলাম রুম খালি। রুমকি নেই। তারমানে সে আমাকে অন্যমনস্ক দেখেই নিচে চলে গেছে। স্যরিটা বলা হলো না।
অনুতাপে জর্জরিত না হলেও অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি পিছু ছাড়ল না। অন্তত একটা ছোট্ট স্যরি হলেও বলা উচিত ওকে। কিন্তু সেই সুযোগটা পাওয়া গেল না।
রাত এগারোটা পর্যন্ত রুমকি একবারও উপরে এলো না। মাঝে একবার আমার খালাত বোন রিয়া এসেছিল বক্স আর কুলোর ডালাটা নিতে। তখন সে’ই জানতে চাইল, আমি কিছু খাব কিনা। আমি ওকে মানা করে দিয়ে বললাম, ” রিয়া শোন্, তোর ভাবিকে একটু উপরে পাঠিয়ে দে তো। বল্, ঋভু ভাইয়া উপরে ডাকছে।”
-” বলব, কিন্তু আমাকে রিয়া ডাকতে পারবে না আজ থেকে।”
-” কেন ? ” ভীষণ অবাক হয়ে বললাম।
-” কারণ রিয়া শব্দের অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। আর এটা গোপন শিরক। তাই আমি আমার নাম এখন থেকে নাসরিন। এমনিতেও আমার আসল নাম নাসরিন জাহান। আর নাসরিন মানে সাহায্যকারী। কাজেই গোপন শিরক বাদ, আমি এখন থেকে সাহায্যকারী।”
-” এসব নিশ্চয়ই তোর ঐ পন্ডিত রুমকি ভাবি শিখিয়েছে।” হালকা গলায় বলে হাসার চেষ্টা করলাম। কেন যেন মনটা খারাপ লাগছে।
-” অফকোর্স। আমি তো সারাদিনই ভাবি যে, তোমার মত বদমাশ ছেলের কপালে আল্লাহ এত ভাল মেয়ে কেন দিল।” বলেই রিয়া ভোঁ দৌড় দিল । আমার প্রতিক্রিয়া দেখানোর অপেক্ষা করল না সে।
সারা সন্ধ্যা ছটফট করে অবশেষে রাত বারোটার দিকে আমি কপট রাগের ভঙ্গি করে নিচে নামলাম । নিচে নেমে দেখলাম গায়ে হলুদ পর্ব মোটামুটি শেষ। রুমকিকে দেখলাম সে চাদর গুটাচ্ছে। ওকে সাহায্য করছে রিয়া আর আরেক কাজিন। আমি সেদিকে তাকিয়েই গম্ভীর মুখে আম্মুকে ডাক দিলাম। কারণ ভাল করেই জানি, রুমকি নিজেই এগিয়ে এসে এবার খাবার সাধবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে এই প্রথম রুমকি আমার কাছে এলো না। সে চাদর গুটিয়ে সোজা আম্মুর রুমে চলে গেল। যেন সে আমাকে চেনেই না। একটু পরেই দেখলাম গটগট করে সোজা ওপরে চলে গেল সে।
আমি নিরব বিস্ময়ে তাকিয়ে ওর অভিমানটুকু দেখলাম কেবল। বুঝতে পারছি মেয়েটা যথেষ্ট রাগ করেছে । এরই মাঝে এক মন স্বভাবসুলভ ভাবে বলে উঠল, ” করুক গে। আমার বাপের কী। এখন বিরিয়ানী খাব আর খেয়ে দেয়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা সেঁটে নাক ডাকিয়ে ঘুমাব। তবে তার আগে নায়লাকে ফোন দিয়ে ওকে নিশ্চিন্ত করতে হবে। সে তো আমাকে রীতিমত ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।
===
খেয়েদেয়ে ওপরে চলে এসেছি। ইচ্ছে আছে রুমকিকে ডেকে হালকা চালে বলব, শোন, এত ফাঁপড় নেবার মত কিছু হয় নি। এসব রোমান্টিক মার্কা অভিমান দেখিয়ে আমাকে কাত করতে পারবে না। আমি যেটা বুঝেছি সেটার সেন্স থেকেই একটা সংশয় প্রকাশ করেছি। এখন বুঝতে পারছি আসলে তোমার অসৎ কোন উদ্দেশ্য নেই। কাজেই ইটস ওভার। এরকম ভাব ধরে থেকে আমার বাপ মায়ের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবার কোন মানে হয় না। ভাবতে ভাবতে উপরে এসে নিজেই একটা ছোট্ট ধাক্কা খেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, প্রীতির রুম ভেতর থেকে বন্ধ। হঠাৎ মনে পড়ল প্রীতি আজ আমার রুমের পাশের গেষ্ট রুমে ঘুমাবে। কারণ ঐ রুমটা বেশ বড়। আম্মা তখনই বলছিল যে গায়ে হলুদ মেখে ওকে একা থাকতে দেয়া ঠিক হবে না। তার মানে আজ ওর সাথে রিয়া ওরফে নাসরিনও আছে। একজন বান্ধবীকেও দেখেছি আমি। হয়ত আজ ওরা অনেক রাত অবধি আড্ডা দেবে। আর রুমকি সেই সুযোগে প্রীতির রুমে ঢুকে ডোর লক করে দিয়েছে।
চুপচাপ নিজের রুমে চলে এলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম রুমকির কোন কিছুই এ ঘরে নেই। ড্রেসিং টেবিলের ওপরটা একেবারে ধোঁয়ামোছা। তারমানে মেয়েটা আসলেই কষ্ট পেয়েছে। আচ্ছা, ওকে কী ফোন করে ডাকব ? নাহ্, বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যায় এটা। থাকুক নিজের রাগ নিয়ে। আমি এমন কিছু বলে ফেলিনি যে পা ধরে মাফ চাইতে হবে। বিছানায় বসে ঢেকুর তুললাম একটা। এখন সব চিন্তা বাদ। কিছুক্ষণ নেট ঘাঁটব তারপর ঘুমাব।
ভাবনাটা স্বস্তি দেবার কথা ছিল কিন্তু অস্বস্তির মাত্রাই বাড়াল সেটা। বিছানার অপর পাশে তাকালাম। গত কয়েকটা দিন মেয়েটা ঐখানে শুয়েছে। যদিও আমি ডাঁট দেখিয়ে প্রথম দুদিন সোফায় শুয়েছিলাম কিন্তু দ্বিতীয়দিন পাশ ফিরতে গিয়ে ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিলাম। আর আমার পড়ে যাবার ‘ধুপ’ শব্দে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল সেদিন। এখনও মনে আছে আমার। মেয়েটা প্রবল চেষ্টায় মুখ বন্ধ রেখে হাসি সামলাবার চেষ্টা করছিল কিন্তু ওর শরীর ভয়াবহ রকমের কাঁপছিল। সেদিনই আমি বিছানায় চলে আসি আর মাঝখানে কুশনের পাহাড় খাড়া করি। মনে পড়ল ধমক দিয়ে ওর হাসি যখন বন্ধ করতে পারছিলাম না তখন বলেছিলাম, ‘মুখ বন্ধ করে হাসলে কিন্তু বিপদ আছে। হাসির দমক মুখ দিয়ে বেরোতে না পারলে অন্য পথে বের হয়ে শব্দ বিভ্রাট ঘটায়। যেটাকে ইংরেজীতে ফার্ট বলে আর বাংলায়…!” এ পর্যন্ত বলার পরই মেয়েটার হাসি পুরোপুরি থেমে গিয়েছিল। কুশন ডিঙ্গিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম মেয়েটা বালিশে মুখ গুঁজে স্থির হয়ে আছে। তার মানে লজ্জা পেয়েছে। একেবারে উপযুক্ত দাওয়াই পড়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিৎ হলাম। এমন সময় মোবাইল বাজল। এত রাতে আবার কে। ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল, আমার নায়লাকে ফোন দেবার কথা ছিল। কিন্তু রুমকির চিন্তায় বেমালুম ভুলে গিয়েছি। রিসিভ করে শান্ত সুরে বললাম, ” হম, বল।”
-” বাব্বাহ। এত গম্ভীর ? কী ব্যপার ? বাপের বাঁশ খেয়েছ না মায়ের ধমক । নাকি তোমার বিচ্ছু বউয়ের প্যাঁদানী।”
-” তুমি কী খোঁচা না মেরে কথা বলতে পারনা? “রাগ হয়ে গেল আমার। এমনিতেই নিজের জ্বালায় বাঁচিনা।
-” খোঁচা মারি নাই। তুমি এখনও খোকাবাবু জেনেই কথাটা ওভাবে বলেছি। আজ আমি হলুদে আসতে চাইলাম, মানা করলে। এজন্য সামান্য রেগেও আছি।”
-” হলুদটা একেবারেই ঘরোয়া ছিল। বাইরের লোকজন তেমন আসেনি বললেই চলে। আমার কাজিনরা আর প্রীতির দু একটা বান্ধবী ব্যাস। তুমি এলে সবাই সন্দেহ করত।”
-” সন্দেহ করবে কেন। আর করলোই বা। আমার কথা তো তোমাকে জানাতেই হবে তাই না? ”
-” এখুনি তো আর জানাচ্ছি না। আমাকে তো আগে এ দিকটা গুছাতে হবে ? বাই দা ওয়ে, ঔষধটা সম্পর্কে তুমি আগেই জানতে ঠিক না? জেনেও অযথা আমার উপর ব্লেম দেবার জন্য ওভাবে বলেছ কথাটা ? ” আন্দাজেই বললাম। আর সাথে সাথেই হেসে উঠল নায়লা।
-” তোমার বউ বুঝি বসে বসে হাতে কলমে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে? ” নায়লা এখনও হাসছে। আর আমার মেজাজটা তখনই একটু চড়ে গেল।
রাগ সামলে বললাম, ” সে তোমার মত অত চালু এখনও হতে পারেনি। বরং ছলনাময়ী বলায় সে যথেষ্ট মাইন্ড করেছে। সন্ধ্যা থেকে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি, ইভেন সামনেও আসেনি। এমনকি সে এখন প্রীতির ঘরে ঢুকে ডোর লক করে দিয়েছে।
-” ওহ্, ওয়াও। আমি তো ভেবে মরছিলাম যে তুমি সাহস করে বলতে পারবে কিনা। এখন দেখছি মেয়েটা নিজেই মাইন্ড করে সরে গেছে। আহ্, কী শান্তি ! ”
-” দিস ইজ নট ফেয়ার নায়লা। মেয়েটাকে এভাবে না বললেই পারতাম। সে নিজেই যেখানে চলে যাবে বলেছে সেখানে ওকে অপবাদ দিয়ে খাটো করা উচিত হয়নি।”
-” হয়েছে। আর বেশি দরদ দেখাতে হবেনা। আর এটা নিয়ে ওকে কোন স্যরিও বলবে না তুমি, বলে দিলাম। রাগ করেছে ভাল হয়েছে। এ্যাই শোন, যেটার জন্য ফোন দিলাম।”
-” বলো…!” সন্তর্পনে দীর্ঘশ্বাস চাপলাম।
-” কাল কী পড়ব আমি ? শাড়ী না স্যালোয়ার কামিজ ? ” আদুরে কণ্ঠে বলল নায়লা।
-” যেটাতে তুমি কমফোর্ট ফিল করবে।”
-” শাড়ী পড়ি ? ”
-” পড়।” জবাব দিচ্ছি বটে কিন্তু মনের ভেতরটা অজানা খচমচানি জুড়ে দিয়েছে। এক অন্যরকম অশান্তি বিরাজ করছে মনে। এটা কি অপরাধবোধ থেকে কিনা বুঝতে পারছি না। ফোন করব নাকি মেয়েটাকে ?
-” কি কালার পছন্দ তোমার? ”
-” নীল।” সযত্নে দীর্ঘশ্বাস চেপে বললাম আমি।
নায়লা ফোন রেখেছে বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে। করব না ভেবেও আনমনে ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। হঠাৎ মনে পড়ল রুমকির নাম্বার জানা নেই আমার। এ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করারও দরকার পড়েনি। আচমকা কী মনে হতে উঠে বসলাম। কোন কিছু না ভেবেই বেরিয়ে এসে প্রীতির দরজা চাপড়ালাম। পরপর তিন চারটা চাপড়। যেন রুমকি দরজা খুলতে বাধ্য হয়। হলোও তাই। বিস্মিত মুখে দরজা খুলে আমাকে দেখে আরেক দফা বিস্মিত হল রুমকি। আর আমিও বিস্মিত হলাম। কারণ মেয়েটার চোখে এখনও পানি লেগে আছে। তারমানে সে বেশ কেঁদেছে। চোখগুলো লাল আর ফোলা। নাকের ডগাও লাল। মনে মনে নিজের পাছাতেই নিজে লাত্থি মারলাম। ‘দেখ, ছাগল। কত কষ্ট দিয়েছিস মেয়েটাকে। সে অপমানটা নিতে পারেনি। কাঁদছে বেচারী। হয়ত সারারাত কাঁদবে।’
রুমকি কিছু না বলে ভেতরে চলে গেল। আমি পিছু পিছু ঢুকে বললাম, ” আমার বালিশ এনেছ কেন। জানো না আমার বালিশ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারিনা? ”
-” রুমকি কোন কথা না বলে লাইট জ্বেলে প্রীতির বিছানা স্পষ্ট করে দিল তবু মুখে বলল না কিছু। আমি প্রীতির বেডের দিকে তাকালাম। এগুলো প্রীতিরই বালিশ। আমি ভাল করেই জানি, রুমকি বালিশ আনেনি। তারপরেও এটা ছিল ওর সাথে কথা বলার একটা বাহানা। কিন্তু মেয়েটা মুখে ছিঁপি এঁটে রেখেছে। বাধ্য হয়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে বালিশ দুটো দেখে বললাম, তাহলে আমারটা কই?”
তবুও জবাব পেলাম না। সে হঠাৎ প্রীতির রুমের বারান্দায় চলে গেল। প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে ওর পিছু পিছু বারান্দায় যাই, স্যরি বলি। কিন্তু পা দুটো নড়ল না। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত পায়ে নিজের ঘরে এসে ডোর লক করে দিলাম। বাকী অর্ধেক রাতই ঘুম এলো না চোখে। এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। অপরাধবোধ এত তীব্র হয় ? এত অভিমান করার মত কী কিছু বলেছি আমি ? ‘অবশ্যই বলেছিস’। আরেক মন বলল। নোংরা একটা অপবাদ দিয়েছিস তুই মেয়েটাকে। এই মন প্রতিবাদ করল, তাহলে রুমকি আমাকে উল্টো অপবাদ দিয়ে কাবু করে দিতে পারত। আমি তো কোন প্রমাণ দেখাতে পারতাম না আর আমি নিরস্ত্র ছিলাম। অপর মন বলল, ও তোর মত ছোটলোক না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুদিন আগের একটি ভোরে ফিরে গেলাম। আমি জানি আমার শোয়া খারাপ। ঘুমানোর ভঙ্গি খুবই বাজে। ঘুমের সময় আমার কাপড় ঠিক থাকেনা বলে আম্মু আমাকে সবসময় ট্রাউজার পরে শুতে বলতেন। আলাদা রুম হবার পর আমি গরমের দিনগুলোতে শোবার সময় লুঙ্গি পরা ধরেছি। বিয়ের তিন কী চার দিন পর এক সকালে উঠতে গিয়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম। পরে দেখলাম আমার লুঙ্গির নিচে দুটো গিঁট দেয়া। আমাকে অবাক হতে দেখে রুমকি লাল হয়ে বলেছিল, গিঁটগুলো আমিই দিয়েছি।’ কথাটা শোনার পরও কারণ জানতে চাওয়ার সাহস হয়নি আমার। রুমকি চাইলে তো সেদিন আমাকে অপদস্থ করতে পারত কিন্তু সে নির্বিকার চিত্তে আমার লজ্জাকে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। আজ আমি তার লজ্জাকে নায়লার সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
ভাবনাটা মনে আসতেই অনুতাপে জর্জরিত হলাম। নাহ্, কাজটা একদমই ভাল করিনি। মেয়েটাকে সম্মান সহ যেতে দেয়া উচিত ছিল। তাকে অহেতুক অপমান করার কোন অধিকার আমার ছিলনা। কাল সকালে এক ফাঁকে অবশ্যই স্যরি বলে নেব।
====
রাত জাগার কারণেই কিনা কে জানে ঘুম ভাঙ্গল অনেক দেরীতে। যখন চোখ মেললাম তখন রোদ আমার ঘরে পর্দার নিচ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আর আমাকে মুচকি হেসে দেখছে।
আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলাম। ডাইনিং টেবিলেই পেয়ে গেলাম সবাইকে। কিন্তু আমার চোখজোড়া মনে মনে রুমকিকেই খুঁজছিল। একটু পরেই দেখলাম আম্মু চিন্তিত মুখে নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। তার চোখ ভেজা। আর তার পেছনে রুমকি। আমাকে দেখেই সে চট করে চোখ সরিয়ে নিল। অন্যান্য দিনের মত জানতে চাইল না আমি নাস্তা খাব কি না।
আমি নিঃশব্দে টেবিলে বসে হটপট খুলে দেখলাম ভেতরটা খালি। চমকে তাকালাম আম্মুর দিকে। এতক্ষণে পরিবেশের অস্বাভাবিকতা আমার নজরে এল। আম্মু কাঁদছে। রুমকির মুখ শুকনো আর রিয়ার মুখ পাংশু। প্রতিদিনের মত বাবাও পত্রিকা হাতে আশেপাশে নেই। তার মানে বাসায় কিছু একটা হয়েছে। যার কারণে নাস্তাটা পর্যন্ত বানানো হয়নি।
আচমকা আপানের চিৎকারে সবাই চমকে উঠলাম। সবার আগে ছুটল রুমকি। পিছু পিছু সবাই গেলাম। গিয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আমার বাবা মাটিতে বাঁকাচোরা হয়ে বসে আছে। তার মাথাটা আমার দাদী তথা আপানের কোলে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাবা হয়ত আপানের কোলে মাথা গুঁজে রেখেই মাটিতে বসেছিলেন। এই মুহূর্তে তার মুখ বেঁকে গেছে। সাথে এক হাত ও পা।
আম্মু চিৎকার দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠল, ” এই, আপনি এমন করছেন কেন ? একটু শান্ত হন, প্লিজ। কিছু হয়নি। কিছু হয়নি।”
রুমকির ধাক্কায় সম্বিত ফিরল আমার। সে আমার শার্টের আস্তিন ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে, ” আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন। বাবাকে হাসপাতালে নিতে হবে তো। তাড়াতাড়ি বাবাকে মাটি থেকে তুলুন না।”
চলবে….