#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৩.
#WriterঃMousumi_Akter
“প্রিয়,,
কখনো ভাবিনি তোমার থেকে এমন চমৎকার গিফট পাবো।এই গিফট শুধু গিফট ই নয় আমার জীবনে তোমার আগমনের সূচনা। তোমাকে নিয়ে কত শত বার কবিতা লিখেছি কিন্তু তোমাকে বলতে পারি নি।তুমি আমার সেই অনুভূতি যার উপর রেগে গেলেও অন্য রকম অনূভুতি জাগ্রত হয়।যার রাগ আমার কাছে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আমি অপেক্ষা করছি তোমার উত্তরের।আমার মন তোমাকে জানান দিতে চাই ভালবাসি প্রিয়।তোমার লেখা চিঠি টা কতশত বার পড়েছি তার ঠিক নেই।যতবাড় পড়েছি লজ্জায় চিবুক নেমেছে আমার।
ইতি আমি।”
চিঠিটা বিশ্রি ভাবে পড়ে বিহান ভাই এর মুখের উপর ছুড়ে মারলো তোহা আপু।মেহু আপু,তোহা আপু,বিভোর ভাই,তিয়াস ভাই,এরা সবাই মিলে বিহান ভাই কাছে নালিশ দিয়েছে আমি নাকি প্রেম করছি।যে চিঠিটা পড়ে শোনালো চিঠিটা আমার ই লেখা বিহান ভাই এর জন্য।গালে হাত দিয়ে বসে আছি আমি আর আমার চারপাশে বসে আছে বিচারক বিহান ভাই সহ গোয়েন্দা টিম আমার কাজিনরা।নিজের প্রিয়জন কে লেখা চিঠি যদি হাঁটের মধ্য পড়া হয় তাহলে কি বিশ্রি লাগে বলুন।রিয়া,মেহু আপু, তোহা আপু বার বার রিপ্লে করছে চিঠির উত্তর। আমার যা অবস্থা সেটা বলার মতো নয়।বিহান ভাই চিঠিটা হাতে নিয়ে কপাল ভাজ করে বিরক্তির সহিত তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বিহান ভাই কে বেশ ভাবান্তর লাগছে কি ভাবছেন উনি।বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বললেন কিরে দিয়া কাহিনী কি।বেশ সুন্দর ভাবে টাইপ করে লিখেছিস।তোহা আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দেখ দিয়া হাতের লেখা কিন্তু তোর ই এটা অস্বীকার করে লাভ নেই।মেহু আপু বললো,বিহান ভাই জানেন আপনার হাতে যে উপন্যাস সে দিয়া কে একটা লাভ লেটার সহ এই উপন্যাস টা দিয়েছে।আপনার কাছে বিচার দিলাম এখন দিয়া কে কি শাস্তি দিবেন বলুন।আজ যদি দিয়াকে শাস্তি না দেন তাহলে কার্ফু জারি করবো।
ওদের কথা শুনে আমার যা অবস্থা এখন সেটা বলার উপায় নেই।বিহান ভাই কে কিভাবে বলি ওই চিঠি আপনাকেই লেখা।উনার ভেতরে রাগ আস্তে আস্তে কুন্ডলী পাকাচ্ছে।কি মানুষ চিন্তা করা যায় আহিন আমাকে উপন্যাস দিয়েছে এই নিউজ শুনে ঢাকা থেকে চলে এসছেন।আহিনের ব্যাপার টা শুধু বিহান ভাই ই জানেন।বিহান ভাই আমাকে বলেন,দিয়া এই চিঠি ফুপ্পি কে দেখাবো নাকি?বিহান ভাই কে বললাম না প্লিজ বিহান ভাই আপনার যা ইচ্ছা শাস্তি দিন তবুও আম্মুকে দেখাবেন না।তাহলে আম্মু আমার ফোন কেড়ে নিবে।আম্মু এমনি তে সারাক্ষণ বকা ঝকার উপর রাখে তার উপর এই চিঠি দেখে আজ কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে।বিহান ভাই অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন,সবার সামনে কান ধরে বিশ বার উঠ বস করে এক পা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকবি এটা প্রথম শাস্তি।এর পর তোর সে উনার চিঠি আর কি গিফট দিয়েছে সেটা দেখে বাকি শাস্তি দিবো।আমি জানি বিহান ভাই এর কথা না শুনলে উনার রাগ আরো সাংঘাতিক হয়ে যাবে।মাত্রই কান ধরে কয়েক বার উঠবস করেছি এর ই মাঝে মেহু শাড়ি,চুড়ি গুলা এনে বিহান ভাই এর হাতে দিয়ে বিহান ভাই এর চিঠিটা বিশ্রি ভাবে পড়তে লাগলো।বিহান ভাই যেনো থমকে গেলেন।মেহুর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন ভ্রু কুচকে। উনি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।বিহান ভাই আমাকে থামিয়ে দিলেন কান ধরে উঠবস করা থেকে।বিহান ভাই এর অবস্থা দেখে এক ভয়ানক হাসি পেলো আমার।আমাকে কান ধরে উঠবস করানো তাইনা।এইবার বোঝো ঠ্যালা।মেহু চিঠির প্রতিটি লাইন খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তে লাগলো।মেহুর পড়া শেষ হলে রিয়া,রিয়ার শেষ হলে তোহা আপু একেক করে পড়েই যচ্ছে।তিয়াশ ভাই বলে উঠলো,যে চিঠি দিয়েছে ওর গুষ্টি সহ উদ্ধার করবো কোন মফিজ তার ঠিক ও নেই আবার আমার বোন কে চিঠি দেওয়া।বিহান ভাই তিয়াস ভাই এর কথা শুনে তিয়াস ভাই এর দিকে কপালের চামড়া ভাজ করে তাকিয়ে রইলেন।তোহা আপু বলে উঠলো নিশ্চয় সে মফিজ আজন্ম ব্রাশ করে না।বিভোর ভাই বলে উঠলো কোন ক্ষ্যাতের মুলা তার ঠিক নেই।এই চিঠি যে লিখেছে তার মতো মখলেজ এর সাথে আমার বোনের বিয়ে দিবো না।আরো কিছু বিশেষ গালির বন্যা বয়ে গেলো।
“আমি হালকা কেশে বিহান ভাই কে বললাম ইয়ে বিহান ভাই,আবার কি কান ধরে উঠবস করবো।”
“বিহান ভাই কি যে বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। এইদিকে আমার হাসি চেপে রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”
“সিরিয়াসলি বিহান ভাই এর মুখের যা অবস্থা। আমি তো বুঝতে পারছি উনার কি বাজে ফিলিংস হচ্ছে।”
“বিহান ভাই চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,আমি এখন আসি ঢাকা থেকে এসছি রেস্ট নিতে হবে।”
“সবাই অবাক হয়ে গেলো বিহান ভাই এর মাঝে কোনো রিয়াকশন নেই।”
“তোহা আপু বললো,দিয়াকে আর শাস্তি দিবেন না।”
“বিহান ভাই এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,শাস্তি দিতাম বাট ছেলেটার রুচি আছে বুঝলাম।অখাদ্য না তোদের থেকে ভাল আছে।সো দিয়া কে প্রেম করার পারমিশন দিলাম।দিয়া তোর যদি প্রেম করতেই হয় তাহলে এই ছেলের সঙ্গেই করবি।এই ছেলের সঙ্গে প্রেম করলে জিতবি বলে দিলাম।”
সবাই বিহান ভাই এর সাথে কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।বিহান ভাই বেরোনোর পরে কাজিন গুষ্টির দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললাম কি ব্যাপার আমার বিরুদ্ধে এত বড় যন্ত্র তাইনা?বিহান ভাই কে সেই ঢাকা থেকে ডেকে আনা হয়েছে।আজ থেকে তোদের সব কটার খবর আছে।
–বিভোর ভাই বলে উঠলেন,অদ্ভুত ব্যাপার দিয়া।বিহান কে জ্বীনে ধরে নি তো।
–রিয়া বলে উঠলো,হ্যাঁ ধরেছে আপনাকেও ধরবে আমার বান্ধবী সিজুকা জ্বীনে।
–হাইরে সিজুকা তোর বান্ধবী বোঝে না ক্যান আমার তোরে না তোর বান্ধবী কেই ভাল লাগে।
–রিয়া বললো,বিভোর ভাই কি ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই মিন করলেন।
‘মেহু আপুকে শুভ ভাইয়া দাঁড় করালেন এই মেহু ভেতরে কিসের মিটিং হলো রে।’
‘শুভ ভাই আর বইলো না দিয়া কে কেউ একজন গিফট দিয়েছে তার ই নালিশ দিয়েছিলাম বিহান ভাই এর কাছে।’
‘তুই এত কিপ্টা ক্যান রে।আমাকেও তো মাঝে মধ্য গিফট টিফট দিতে পারিস।’
‘আজ আমি শপিং যাবো তোমার জন্য বিশেষ কিছু গিফট কিনবো।’
‘বিশেষ কি?’
“ওই যে হাফ প্যান্ট যাকে বলে আন্ডার…..”
“থাক বুঝছি।ও গুলো আমার আছে অনেক। তোর দেওয়া লাগবে না।”
_______________________________
পরেরদিন মা তার আদরের ভাতিজার জন্য নাড়ু বানিয়েছে।তার ভাতিজা এলেই কিছু না কিছু বনাবেই আর ঘুরে ঘুরে আমাকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটা পৌছে দেওয়ার জন্য।আম্মু টিফিন বক্স ভরে নাড়ু ভরে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো যা তো দিয়া বিহান কে দিয়ে আয়।আম্মুকে ডিরেক্ট বলে দিলাম ভেরি সরি আম্মু এটা কিছুতেই পারবো না।আমার এখন একটুও ভাল লাগছে না।আম্মু তার ভাতিজার মতোই ঘাড় ত্যাড়ার উপরের যা আছে সেটায়।আম্মু আমাদের দুই ভাই বোনের থেকে বিহান ভাই কে বেশী ভালবাসেন প্রায় বলা চলে।আম্মু আমাকে বলে দিলো ঠিক আছে আমি যাচ্ছি রান্নাঘরের যে থালা বাটি আছে সব ধুয়ে রাখবি আমি যেনো এসে দেখি সব ধোয়া হয়ে গিয়েছে।তোর বাবা শুভর কাছে ছোট মাছ পাঠিয়েছে ওগুলো না কাটলে নষ্ট হয়ে যাবে ওগুলো কাটবি আমি গেলাম।আমি মাছ গুলো চেক দিয়ে দেখি আমার আজ সারাবিকাল সারারাত লাগবে তাও শেষ হবে না।আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম আম্মু দাও আমিই যাচ্ছি তাও এই মাছ আমি কাটতে পারবো না।এর থেকে ভালো বিহান ভাই এর কয়েক টা বকুনি খেয়ে আসি।চুল ছেড়ে দিয়ে ড্রেস টা চেঞ্জ করে নিয়ে হলুদ কামিজ আর লাল ধুতি সালোয়ার পরে বেরোলাম।বিহান ভাই কে অনেক দিন না দেখলে যেমন ছটফট করি তেমনি উনি এলেই আমার অশান্তি শুরু হয়।সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে থাকতে হয়।এখন তাও একটু কম বকেন ওহ বাবা আগে কথায় কথা থাপ্পড় দিতেন।উনার কোন কিছু স্পর্শ করলে রোদে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন।ছোট বেলা থেকে এক প্রকার ভয় জমে আছে মনের মাঝে।আবার বেহায়ার মতো আমি উনাকে দেখেই ক্রাশ খেতে থাকি।
মামাদের বাড়ি পৌছালাম বাড়িতে প্রবেশ করে দেখি বিভোর ভাই এর আম্মু গেট এ দাঁড়িয়ে আছেন।মামিকে দেখে স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললাম,মামি আম্মু নাড়ু পাঠিয়েছে আপনাদের জন্য বলেই বিভোর ভাই দের বাটি টা মামির হাতে তুলে দিলাম।বিভোর ভাই এর আম্মু ও ভীষণ ভালো।আমাকে খুব ভালবাসেন।আবার বিহান ভাই কেও খুব ভালবাসেন।বিহান ভাই বাড়িতে আসলে বিভোর ভাই এর আম্মু যেনো বেশী খুশি হন।এমন কাকিমা কোথাও দেখা যায় না আজকাল।বিভোর ভাই এর আম্মুর তুলনা নেই এদিক দিয়ে।মামি আমাকে বলেই দিলেন দিয়া রাতে বিহানের জন্য খাসি রান্না করবো।বিহান খাসির মাংস ভালো পছন্দ করে তুই কিন্তু থেকে যাবি।মামিকে বললাম,মামি তোমাদের ছেলে বাড়িতে এসছে তাকেই খাওয়ায় যাতে রাগ দেখাতে জোর পায় শরীরে।মামি হেসে দিয়ে বলেন আমাদের ছেলে বিয়ের পরে ভাল হয়ে যাবে দেখে নিস।
মামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিহান ভাই দের বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম।মামি মামি করে ডাকছি কোনো সাড়াশব্দ নেই।মনে হচ্ছে বাসায় কেউ নেই।রান্না ঘরে নাড়ুর বক্স টা রেখে জোরে বললাম মামি রান্নাঘরে নাড়ুর বাটি রেখে গেলাম পরে নিয়ে নিও।
এমন সময়ে যমরাজ হাজির।বিহান ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন উস্কো খুশকো চুল নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে। উনি মাত্রই মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়ে এসছেন।থ্রি কোয়ার্টার পরা গায়ে লাল গেঞ্জি।উনার আপাদমস্তক ভাল ভাবে দেখলাম।এই খেলাম আরেক বাড়ি উনাকে এই লুকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।এতক্ষণ উনি চুপ ছিলেন আমার জন্য মঙ্গলজনক ছিলো ব্যাপার টা।এবার উনি মুখ খুললেন।টাওয়াল টা আমার গায়ের উপর ফেলে দিয়ে বললেন,এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাছিস কেনো? এই শহরের পরিবেশ নষ্ট করছিস তুই।
-উনার কথার উত্তর দিতেই মুখ খুললাম,কারণ ষাড় কথাটা হজম হলোনা আমার।
‘মানুষের কানে সমস্যা থাকলে তো জোরে জোরে ডাকতেই হবে।’
‘এই হ্যালো কার কানে সমস্যা? বাই এনি চান্স তুই আমাকে বলছিস না তো।’
‘আরে না না বিহান ভাই আপনাকে কেনো বলবো।যারা শুনেও ডাক শোনে না তাদের বলছি।’
‘ওকে ফাইন।তুই এটা কি পরেছিস দিয়া? এটা কোন ডিজাইনের সালোয়ার।এটার নাম কি?কেমন একটা অদ্ভুত লাগছে দেখতে।’
‘এটার নাম ধূতি সালোয়ার বুঝেছেন।অদ্ভুত লাগছে মানে।’
‘হ্যাঁ তোকে মন্দিরের পুরোহিত দের মতো লাগছে।আর খুব ই বাজে লাগছে ইউ নো।’
‘ওকে ধন্যবাদ এবার আমি আসি।’
‘ওয়েট আসবি মানে।তোর জাত গুষ্টি আজ আমাকে যেভাবে গালি গালাজ করেছে এই জিন্দেগীতে ভুলবো না আমি।এত বড় অপমান জীবনে কেউ আমাকে করে নি।এইজন্য বলি রাজাকার এর বংশ।রাজাকার না হলে একটা ছেলেকে ঘরের মাঝে ফেলে এইভাবে কেউ অত্যাচার করে।রাগ যা হচ্ছিলো আমার তখন বলার মতো না।এই সব কিছু তোর কেয়ারলেস ভাবের জন্য হয়েছে তাই এই জন্য শাস্তি যা পাওয়ার তুই পাবি।না হলে চিঠি আমার হাতেই আছে।ফুপ্পিকে দেখাবো কিন্তু তোমার মেয়ে তোমার জামাই কে চিঠি লিখছে।’
‘আমি জানতাম এখানে এসছি এমন ই কিছু হবে।জঘন্য ভাবে হেসে দিয়ে বললাম তা আমাকে কি করতে হবে এখন বিহান ভাই।’
‘আমার রুমে যা বেডের উপর আয়রন করার জন্য আমার ৩০ টার মতো টি-শার্ট রাখা আছে ওগুলো আয়রন করতে থাক আর কয়েক টা প্যান্ট আছে।’
মানে উনি আমাকে কি উনার খাস দাসি পেয়েছেন। এগুলা আয়রণ করতে গিয়ে পুড়ে যাবে আবার কি না কি শুনাবেন তার ঠিক নেই।
চলবে,,
(আরো লিখতে ইচ্ছা হচ্ছিলো বাট হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।আজকের পর্ব লিখতে গিয়ে নিজেই কতবার হেসেছি তার ঠিক নেই।হ্যাপি রিডিং গাইস।ভালবাসা রইলো সবার জন্য)