#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৪.১৫
#WriterঃMousumi_Akter
আমার মতো আইলসার কাছে দিয়েছে কাপড় আয়রণ করতে।আমি এমনি তে ভাল একটা পারি না তার উপর কাপড় কিছু হলেই রক্ষে নেই।নিজে তাই ঘুচিমুচি কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়। আমার ড্রেস সব শুভ ভাইয়া আয়রন করে দেয়।কাপড় আয়রন এর ভয়ে ড্রেস ধুয়ে পানি চিপে না ফেলে পানি অবস্থায় নেড়ে দেই যাতে কাপর ঘুচিমুচি না হয়।এ নিয়ে আম্মু অনেক বার গালিগালাজ করেছে আমাকে।আম্মু আমাকে বলে এত বড় মেয়ে কাপড় ও ঠিক ভাবে শুকাতে দিতে পারিস না।পোশাক কোকড়ানো দেখলে আম্মু বকাঝকা দিয়ে নিজেই আয়রণ করে দেয়।এটা নিয়ে আম্মু কম কথা শুনায় নি।আম্মু বলে, বিহানের পা ধোয়া পানি খেতে পারিস না।এটা আম্মুর একটা জাতীয় ডায়লগ এ পরিণত হয়েছে।ছেলে মানুষ নিজের ড্রেস নিজে পরিষ্কার করে, বিহানের কাপড়ের ভাজ ভাঙে না।আর কত ব্লা ব্লা ব্লা তার ভাতিজা ইজ গ্রেট ভাতিজা।
বিহান ভাই এর পোশাক আর আমি বসে আছি উনার বিছানায়।বিহান ভাই মাল্টিপ্লাগ এনে দিলেন।এখন কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভাবছি।চার চার টা গেঞ্জি আয়রণ এর পরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই উনার রুমে রাখা ডিভান এর উপর বসে বসে ফোন চাপছেন আর মাঝে মধ্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করছি।এই নিয়ে আটটা গেঞ্জি আয়রণ করলাম।কিন্তু আট টার মাঝে চার টা পুড়ে গিয়েছে।খুব বেশী পোড়ে নি একটু পুড়ে গিয়েছে বিহান ভাই কে না বলে সুন্দর ভাবে ভাজ করে রেখে দিলাম যাতে উনি বুঝতে না পারেন।এর পরের টা আয়রণ করতে গিয়ে সেটা আরো বিদিগিস্হা ভাবে পুড়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে টি-শার্ট এর দিকে তাকিয়ে রইলাম হঠাত খেয়াল করি উসখো খুশকো চুল নিয়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এর পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।উনার ভাব লক্ষণ কি এই আয়রণ দিয়ে কি আমাকে আয়রণ করে দিবেন নাকি।উনাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম দেখুন,আমার কোনো দোষ না আমাকে দিয়ে জোর করিয়ে কাজ করালে তো নষ্ট হবেই তাইনা।এ কাজ আমি পারি নাকি।
বিহান ভাই কপাল এর চামড়া টান টান করে বললেন,আচ্ছা এ কাজ তাহলে পারিস না।আমাকে অত্যাচার করতে পারছিস না বলে আমার টি-শার্ট এর উপর অত্যাচার করছিস।আচ্ছা দিয়া তুই কি তোর বংশের মতো হয়েছিস নাকি।তোর কাকা তোহার বাবা এক দোকানদারের সাথে ঝামেলা হইছে দোকানদার কে না পেয়ে তার কর্মচারীকে মেরেছে।কথায় আছে না মানুষ তার জাতের মতো হয়।তোর বাপ কাকারা যা করে বেড়ায় তুই তো তাই ই করছিস।আমাকে কিছু করতে না পেরে রিতীমত আমার গেঞ্জি কে অত্যাচার তাইনা।
“আমিও উদিগ্ন হয়ে বলে উঠলাম,আপনি জানেন ওই দোকানদার কি করেছে।”
“বিহান ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ভেরি সরি আমি জানতে চাইছি না তোদের পারিবারিক কাহিনী।তোদের যে কাহিনী শুরু হলে আর শেষ হবে না।দিয়া তুই চট করে যা তো ফুপ্পি যে নাড়ু পাঠিয়েছে ওইটা রান্নাঘর থেকে নিয়ে যায়।”
কি রাগ হয় নিজের ইচ্ছামতো খানিক টা বলে জাত গুষ্টির অপমান করে দিলেন আর আমি বলতে গেলেই থামিয়ে দেন।আমিও খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বললাম,”আপনাকে শুনতেই হবে।”
“বিহান ভাই বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন যেতে বলেছি আমি।”
“রান্নাঘর থেকে নাড়ুর বাটি টা নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে দিলাম।”
“বিহান ভাই এমন ভাবে তাকালেন উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গেলো।উনার এই বিশ্রি তাকানো দেখে বুঝলাম না কাহিনী কি?মিনিট খানিক তাকিয়ে থেকে বললেন,এভাবে দিলে কি বাটি সহ গিলে ফেলবো।আমি কি তোর মতো খান বংশের পেটুক নাকি।তোরা তো খেতে খেতে নড়াইল জেলার অর্ধেক ই খেয়ে ফেললি।ভাজ্ঞিস মানুষ খাওয়ার নিয়ম নেই তাহলে এ জেলায় একটা মানুষ ও জীবীত থাকতো না তোরা ছাড়া।সব তোদের পেটে যেতো”
“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে বললাম,সমস্যা কি আপনার।আর একবার যদি বাজে কথা বলেন আমি কিন্তু এক্ষুণি চলে যাবো এখান থেকে।”
“সাহস থাকলে যা পা কেটে রেখে দিবো।টিফিন বাটির মুখ খুলে দে না হলে খেতে পারছি না।উফফ গড শ্বশুর এর মেয়ে দিন দিন কি তার জামাই এর আদর সোহাগ এর অভাবে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে।তার এই রাগি জামাই কেই উলটা রাগ দেখায়।ভাবা যায় এগুলা।অবশ্য হওয়াটা স্বাভাবিক কারণ সে সানি লিওনির মস্ত বড় ফ্যান।এমন রোমান্টক গান দেখলে এমন তো হবেই।আই ফিল ইওর পেইন দিয়া।”
“আপনি এই কথা গুলো কাকে বলছেন বিহান ভাই।”
“ওই যে প্রেয়সী, প্রেয়সী কে বলছি বলেই একটা নাড়ু মুখে দিয়ে খেতে খেতে বললেন আহা ফুপ্পির হাতের নাড়ু কি স্বাদ।”
“মনে মনে বললাম, কিভাবে কথাটা ঘুরিয়ে দিলেন বিহান ভাই।ইনডিরেক্ট আমাকে শ্বশুরের মেয়ে বলেন আমি কি সেটা বুঝি না শ্বশুরের ছেলে।”
“বিহান ভাই কে বললাম এবার আমি আসি বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।”
“বিহান ভাই বললেন,আম্মু বাসায় নেই
দিয়া একটা দুধ চা বানিয়ে নিয়ে আয় তো।”
“উনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রান্নাঘরে গেলাম দশ মিনিটের মাঝে দুধ চা বানিয়ে এনে উনার সামনে ধরলাম।”
“বিহান ভাই চা একটু মুখে দিয়ে বললেন,
নাহ এটার টেস্ট ভালো হয় নি।তুই এক কাজ কর একটা লাল চা বানিয়ে নিয়ে আয়।”
“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে আবার ও গেলাম।আবার লাল চা বানিয়ে নিয়ে এলাম।”
“নাহ দিয়া এ টাইমে আমি চা খাই না।এক মিনিট আগে আমার চা খাওয়ার টাইম শেষ হয়ে গিয়েছে।যা একটা কোল্ড কফি নিয়ে আয় তো।আমি আবার সব খাদ্য খাবার মেইন টেইন করে চলি তো।”
“ধৈর্য ধরে আবার ও গেলাম কোল্ড কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম আর উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম এই নিন আপনার কফি।”
“তুই কি গাধী আমি কোল্ড কফি খাই এ টাইমে। দ্রুত গিয়ে ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।কিরে আবার রেগে যাচ্ছিস নাতো।শোন স্বামির সেবা যত্ন করা ফরজ। কর কর জান্নাত পাবি।”
“আপনি কি আমার স্বামি ?”
“আমার মতো কেউ ই তো হবে নাকি।একই কথা।রেগে যাস না কফি টা নিয়ে আয়।”
“আবার গেলাম ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে উনার হাতে এগিয়ে দিলাম।”
“কফি টা খানিক সময় রেখে দিয়ে বলেন এটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।খাওয়া যাচ্ছে না দিয়া।”
“প্রচন্ড রেগে গিয়ে উনার কলার চেপে ধরে মুখের মধ্য কফি ঢেলে দিলাম। উনার মুখ গড়িয়ে কফিতে উনার গেঞ্জি ভিজে গেলো।উনার কলার চেপে ধরাতে উনি আচমকা পড়ে গেলেন বেডের উপর সেই সাথে আমিও গিয়ে উনার বুকের উপর পড়লাম।রাগে চোখ মুখ ঝা ঝা করছে আমার।উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।কি অসভ্য মানুষ ভাবা যায় ইচ্ছা করে কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।উনার হাতে চিমটি কেটে উঠে চলে গেলাম।আর যেতে যেতে বললাম আমাকে কি কাজের মহিলা পেয়েছেন।বিহান ভাই বললেন,ঘরের বউ বললেও তো মানবি না। ”
বাড়িতে রাগে রাগে এলাম আমাকে আধাঘন্টা ধরে একবার রান্নাঘর একবার উনার ঘর করিয়েছেন।এটা একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব।পায়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছে আমার।আমাকে যেনো উনার বাসার কাজের মহিলা পেয়েছে।আর জীবনেও উনাদের বাড়ি যাবো না।উনি ঢাকা না গেলে আর বাড়ি থেকে বেরোবো না।
বাড়িতে এসে ফ্যানের নিচে টান টান হয়ে সুয়ে রইলাম।রাগে কি অস্হির লাগছে আমার।এমন সময় রিয়া এলো আমার রুমে।আমার মুড অফ দেখে রিয়া বললো কিরে বিহান ভাই কিছু বলেছে দিয়া।আমি রিয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম দয়া করে ওই রাক্ষস এর নাম বলিস না প্লিজ।রিয়া আমাকে বললো দিয়া একটা জিনিস ভাবছি কি জানিস বিহান ভাই এর প্রেমিকা কে হবে?উনি তার সাথে ঠিক কি বিহ্যাভ করবেন।উনি কি আদেও প্রেম করবেন কখনো।এত গুলো মেয়ের ক্রাশ বলে কথা।
আমি রিয়াকে বললাম,প্রেম তো বাড়ির কাছে আমি সব মেয়েদের কাছে গিয়ে পই পই করে বললো চিরকুমারী থাক বইন তোরা তবুও ওই বিশ্রি মানুষ এর সাথে কেউ রিলেশন এ যাস না।আনরোমান্টিক ঘাড় ত্যাড়া জঘন্য মানুষ একটা।
“রিয়া আবার বললো,আচ্ছা দিয়া যদি বিহান ভাই বাই এনি চান্স তোর বর হয় কি করবি।”
“এটা কক্ষনো সম্ভব নয়।সেদিন আমি কচু গাছে গলায় দড়ি দিবো।তার থেকে আলিপ যথেষ্ট ভালো আছে।”
“দিয়া আবার আলিপ এর নাম বলছিস আমি কিন্তু রেকর্ড করেছি।”
“তুই ফোন দে রিয়া।আজ তোর ফোন আমি কুচি কুচি করে ফেলবো।এটা বিহান ভাই শুনলে আবার কি থেকে কি হয়ে যাবে।”
রিয়া ফোন নিয়ে এক দৌড় দিলো।আমি ওর পেছনে ছুটবো তখন ই দেখি বিহান ভাই নিচে আয়রা কে কোলে নিয়ে রিয়ার আম্মুর সাথে কথা বলছে।উনাকে দেখেই ঘরের দরজা লক করলাম।আজ কিছুতেই আর দরজা খুলবো না।না মানে না।
“আম্মু এসে প্রচন্ড জোরে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে।এই দিয়া এত সকালে দরজা লক ক্যানো?”
“আম্মু আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।রাতে খাবো না আমি”।
“তোর না কয়েক দিন পরে পরীক্ষা রাত আট টা বাজে কিসের ঘুম।চড় মেরে গাল লাল করে দিবো।দরজা খোল এক্ষুণি।”
আম্মুর জোরাজুরিতে দরজা খুলতেই দেখি আম্মুর পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।গায়ে অফ হোয়াইট শার্ট পরা,শার্টের হাতা গোটানো,পরণে জিন্স মাসআল্লাহ দেখতে কিউট লাগছে।আম্মু বিহান ভাই কে ডেকে এনেছেন আমার লেখাপড়ার কি অবস্থা সেটার তদন্ত করানোর জন্য।মানুষ আর পেলো না আম্মু উনাকেই ডেকে এনেছে।উনাকে দেখে না পাচ্ছে হাসি না পাচ্ছে কাঁন্না।উনি কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম বিহান ভাই চা, না কফি খাবেন আর হ্যাঁ গায়ের জামা খুলে দিন আয়রন করে দেই।কথার বলার সঙ্গেই অদ্ভুত কথা বলে উঠলেন উনি,তোর আমার বডি দেখতে ইচ্ছা করছে ছিঃদিয়া ছিঃ।
এই যে আবার শুরু হয়েছে উনার বাজে কথা।
এবার উনি বলে উঠলেন,
“দেখি কি লেখাপড়া করছিস।শুনলাম প্রচন্ড ফাঁকি মারছিস।এই নে শীট গুলা দেখ।তোর জন্য খুজে খুজে এনেছি।এখানে কিছু ম্যাথ আছে স্টার চিহ্ন দেওয়া ওগুলো কর।”
“ম্যাথ গুলা দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো এত কঠিন ম্যাথ।এমনি তেই ম্যাথ ভাল লাগে না।”
“বিহান ভাই আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে রইলেন।আমি ম্যাথ করতে গিয়ে পাগল হওয়ার উপক্রম।যাও বা পারতাম উনি থাকাতে সব সূত্র ভুলে গিয়েছি।খাতায় শুধু আঁকিবুকি করছি।”
“বিহান ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,কি ব্যাপার কিছুই তো পারছিস না পরীক্ষায় তোর জন্য বিশাল একটা রসগোল্লা অপেক্ষা করছে।এমনি তে তোরা খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝিস না বিশাল গোল্লা টা পরিবারের সবাই মিলে ভাগ যোগ করে খেয়ে নিস।”
এমন সময় কলম টেবিলের নিচে পরতেই দুজনে নিচু হয়ে কলম তুলতে গিয়েই শরীর পশম শিউরে উঠলো আমার।
বিহান ভাই এর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট স্পর্শ লেগে গেলো আমার।এটা শুধু স্পর্শ ছিলো সেটা নয়।এটা ডিরেক্ট একটা চুমু ছিলো।উনি কি ইচ্ছাকৃত চুমু দিলেন আমায়।
চলবে,,,,
(যারা গল্পটা পড়েন রেসপন্স করবেন।আমার আইডির সমস্যার জন্য পোষ্ট দিতে পারি নি এতদিন।ভুল বুঝবেন না কেউ।হ্যাপি রিডিং)
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৫.
#WriterঃMousumi_Akter
নড়াইল জেলার এক ঐতিহ্যবাহী মেলার নাম “সুলতান মেলা”চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান কে কেন্দ্র করেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।এইদিনে সব কাজিনরা মিলে আমরা নৌকা ভাড়া করে নৌকা বাইচ দেখতে যায়।শহর জুড়ে মানুষের ছড়াছড়ি থাকে।সকাল সকাল বিহান ভাই এর দেওয়া শাড়ি,চুড়ি গুলা পরে সুন্দর ভাবে সাজগোজ করলাম। উদ্দেশ্য বিহান ভাই কে তাক লাগিয়ে দিবো ভীষণ ভাবে।কপালে কালো ব্লু টিপ,পরনে ব্লু শাড়ি,দু হাত ভর্তি কাচের চুড়ি মাথায় গাজরা ঠোটে লিপিস্টিক দিয়ে পরিপূর্ণ সাজ দিলাম।সুন্দর করে কয়েক টা ছবি তুলে বিহান ভাই এর হোয়াটস এপ এ পাঠিয়ে দিলাম।অনেকক্ষণ রিপ্লের অপেক্ষা করে ব্যার্থ হলাম।মেসেজ তো সিন ই করেন না।এক ঘন্টা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিন্তু সে মেসেজ ই সিন করে না কিন্তু কেনো?অবশেষে মেসেজ দিলাম তোমার দেওয়া শাড়িতে শুভ্র রঙে রাঙিয়েছি নিজেকে।বিহান-দিয়া থেকে দিহান হয়েছি। ভাবতে ভাবতে দেখি আকাশের কোনায় কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে।আকাশ পানিতে ভরপুর এক্ষুণি বৃষ্টিকন্যারা মাটিতে এসে লুটিয়ে পড়বে।
আধভেজা হয়ে তোহা আপু,রিয়া আর মেহু আপু আমার রুমে এসে প্রবেশ করলো।আমরা অনলাইনে লালশাড়ির অর্ডার দিয়েছিলাম।সবাই এক কালারের শাড়ি পরবো সেই প্লান ই ছিলো।
“রিয়া,মেহুপু,তোহাপু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তিনজনে কি ভূত দেখছে নাকি।রিয়া বলে উঠলো,কিরে দিয়া যে শাড়ি নিয়ে এত কাহিনী সেই শাড়ি পরেছিস।”
“হ্যাঁ পরেছি।উনার দেওয়া গিফট বলে কথা।তোদের বিচারক বিহান ভাই কে ডেকে নিয়ে আয়।আমি ভয় পায় নাকি হুহ।”
“মেহুপু বলে উঠলো,দেখ দিয়া কথা ছিলো তিনজনে এক কালার শাড়ি পরবো আর তুই প্রিয়জনের দেওয়া শাড়ি তাতো হবে না।”
“আমার পক্ষে একটুও শাড়ি খোলা সম্ভব নয়।আমার উনি আসবে আজ মেলায়।আমাকে এ শাড়িতে না পেলে কষ্ট পাবে সে।”
“দিয়া প্রেম করলে কিন্তু প্রিয়জন কে যত্ন করতে হয়।তার দেওয়া গিফট সারাজীবন যত্ন করে রাখতে হয়।বাইরে এই বৃষ্টি কাঁদায় এই শাড়ি পরে গেলে শারীটার বারোটা বাজবে।এটা দেখে তোর প্রিয়জন আরো কষ্ট পাবে।ভাববে তার জিনিসের কোনো গুরুত্ব নেই তোর কাছে।এই শাড়ি টা যত্ন করে তুলে রাখ।বিশেষ কোনো দিনে তার সামনে পরে যাস।”
বাইরে আসলেই অনেক বৃষ্টি কাঁদা বিহান ভাই এর শাড়ি টা নষ্ট হয়ে যাবে। শাড়িটার গুরুত্বের কথা ভেবে অন লাইন থেকে আনা লাল শাড়ি টা পরে নিলাম।তিনজনে সেইম সাজে বেরোলাম।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কাজিন গুষ্টি।সবার চোখ এড়িয়ে আমার চক্ষুযুগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়লো বিহান ভাই দিকে।কালো জিন্স পরা গায়ে কালো হুডি টাইপ গেঞ্জি যার সামনে পকেট।বিহান ভাই হুডির পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।বাতাসে চুল গুলো সামনে থেকে উড়ছে।ফর্সা শরীরে কালো জিন্স আর গেঞ্জি আহা দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।।হাতে থাকা কালো হেলমেট টা মাথায় পরে নিলেন।
বিহান ভাই আড়চোখে বার বার চাইছেন আমার দিকে।
“তিয়াস ভাইয়া বললো, আটা ময়দা যা ছিলো সব মেখেছিস তো তোরা।মনে হচ্ছে একটু কম হয়ে গিয়েছে।”
“মেহু আপু বললো,ভদ্র ভাবে কথা বল মহিলা কোথাকার।”
“তিয়াস ভাইয়া ভড়কে গেলেন আপুর কথা শুনে ‘মহিলা কে মহিলা'”
“মহিলা ছাড়া কি মহিলাদের প্রতি আসক্ত পুরুষ তুই।এই নিয়ে কয় হালি স্যাকা খাইলি বল তো মহিলাদের দ্বারা।”
“বিহান ভাই আপনি কিছু বলেন, আজকালকার মহিলাদের চেনার উপায় আছে বলেন বিবাহিত অবিবাহিত সব নাক ফুল পরে সব শাড়ি পরে।এই যে তিন মহিলা যাচ্ছে কে বুঝবে বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।”
“বিহান ভাই বললেন,মেহু,তোহা,রিয়া ঠিক আছে বাট সাংঘাতিক হলো দিয়া।শুধুই সাংঘাতিক হলে ভুল হতো সাংঘাতিক মহিলা একটা।কাল রাতে পড়াতে গেছিলাম যা করেছে আমার সাথে।”
“আমি চট করে বলে উঠলাম,একদম বাজে কথা বললেন মিথ্যাবাদী একটা।যা করার আপনি করেছেন।এখন বলছেন আমি করেছি।”
“তুই এমন ভাবে চিল্লায়ে বলছিস আমি করেছি এটার মিনিং কি হয় বুঝিস। আশে পাশে এত মানুষ তারা কি ভাববে আমাকে নিয়ে।দেখ সাইডের এই কিউট মেয়ে গুলো তাকিয়ে আছে।ওরা কি ভাবছে আমাকে নিয়ে আমি ঠিক কি করেছি। ছিঃহেট ইওর মাইন্ড দিয়া।”
“আমার মাইন্ড হেট করবেন কি জন্য শুনি।আমি বলেছি একটা আপনি ভেবেছেন অন্যর টা হেট করে নিজের মাইন্ড করুন না।”
আমাদের সাইড দিয়ে হেটে যাওয়া মেয়ে গুলো খলখল করে হেসে উঠলো।আর বিহান ভাই এর দিকে লাজুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।আচ্ছা রস্তা ভরা ছেলে তা রেখে উনার দিকেই বা তাকিয়ে আছে ক্যানো?মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে।আমাদের ঝগড়া দেখে বিভোর ভাই রা আমাদের থেকে হাত দূরে সামনে চলে গিয়েছে। ওদের পিছ পিছ আমরা।
“বিহান ভাই কে বললাম,আপনার দিকে তারা তাকিয়ে আছে কেনো?”
“আই থিংক ক্রাশড তারা।”
“নিজেকে কি ভাবেন কি? আপনার দিকে মেয়েরা তাকালেই সেটা ক্রাশ হয়ে যায় অদ্ভুত ব্যাপার।”
মেয়ে গুলো আমার কথা শুনে আমাদের দিকে তাকিয়ে আরো হাসছিলো।তাদের কি খেয়ে কাজ নেই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
“বিহান ভাই বলে উঠলেন,আচ্ছা মহিলা মানুষ এত জোরে কথা বলিস ক্যানো?শহরের সব মানুষ এর এটেনশন তোর দিকে।”
“মেয়ে গুলা বিহান ভাই কে বললো আপনার ওয়াইফ নাকি।”
“না”
“তাহলে ”
“আমি বলে উঠলাম বোন।আমি উনার একমাত্র বোন।”
“বিহান ভাই বললেন না আপু তিনি আমার বোন না এটা তার রাগ হলেই বলে।”
“আচ্ছা তাহলে গফ বুঝছি।”
“আমি রেগে মেগে বলে উঠলাম,এই আপু আপনাদের প্রব্লেম কি?কি দেখে মনে হচ্ছে আমি উনার গফ। ”
“এই যে উনি উনি করছো।মেয়েরা উনি কাকে বলে সেটা সবাই জানে।”
কি আজব উনিতে কি সমস্যা বুঝলাম না।
“এমন সময় আলিপ পেছন থেকে এসে আমার আর বিহান ভাই এর সাথে হাঁটতে শুরু করলো।”
“বিহান ভাই কেমন আছেন?”
“ভাল।তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আজ দিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে তাইনা ভাইয়া।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আর ব্যাকা হাসি দিলেন।যে হাসির মানে আলিপের এই প্রশংসা তার পছন্দ নয়”
“আলিপ আবার বলে উঠলো,দিয়া তোমার দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।আজ তো খুব সুন্দর সেজেছো চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।”
“বিহান ভাই একবার রাগি মুডে তাকিয়ে দ্রুত হেঁটে বিভোর ভাই দের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।এটার মানে আলিপের এইসব প্রশংসায় সে বিরক্র তাই আমাকে আলিপের কাছে রেখেই নিজে দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন।”
“আমিও দ্রুত হেঁটে ওদের সাথে হাঁটা শুরু করলাম।কারণ এই আলিপের সাথে হাঁটলে আজ নৌকার নিচে ডুবিয়ে মারবেন উনি।”
“বিভোর ভাই বললেন, ঝগড়া শেষ।”
বিহান ভাই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে এটা বুঝালেন টপিক্স টা চেঞ্জ করতে।
“বিভোর ভাই আবার ও বলে উঠলেন, এইজন্য আটার এত দাম বেড়েছে।দেখ মাইয়া গুলা মুখের শ্রি কি করেছে।”
“রিয়া বললো,এইজন্য আপনাদের প্রেম জীবনেও হবে না বলে দিলাম।এত দামি মেকাপ কে ত্রিশ টাকার ময়দার সাথে তুলনা করছেন।একটা ব্রান্ডের মেকাপ কিনে তারপর বইলেন।”
“বউ কে মেকাপ এর পরিবর্তে খাটি সয়াবিল তেল কিনে দিবো মুখে মাখতে।”
বিভোর ভাই এর কথা শুনে এক গাল হেসে দিলাম।
“তিয়াস ভাই বলে উঠলেন,কি ব্যাপার আলিপ শুধু মেয়েদের শাড়ি গিফট করছিস ব্যাপার কি?আমরা কি ফাউ নাকি।”
“বিভোর ভাই বলে উঠলেন,আলিপ কি আর সাধে দিছে সিওর দিয়াকে পটানোর জন্য বাকি গুলারেও দিছে।ঘুষ দিছে সবাইকে”
বিহান ভাই স্হির চোখে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।আলিপের দিকে তাকিয়ে বলেন,আলিপ শাড়ি গিফট করেছো।
আলিপ ভাইয়া লজ্জা ভাব নিয়ে বললেন ইয়ে ভাইয়া।
বিহান ভাই আলিপ কে থামিয়ে দিয়ে বলেন বুঝেছি।
বিহান ভাই এর চোখে মুখে অগ্নিরুপ।এই শাড়ির টাকা আলিপ দিছে আগে জানতাম না।এটা আবার বিহান ভাই এর সামনে ফাঁশ হলো।এখন কি হবে।বিহান ভাই মাথা থেকে হেলমেট টা জাস্ট খুললেন চোখে মুখে কি প্রচন্ড রাগ।হেলমেত খুলে খুল গুলো হাত দিয়ে উজিয়ে দিচ্ছেন।বিহান ভাই এর চোখ মুখ সবার সাথে হাসি খাশি থাকলেও আমার দিকে তাকানোর সময় অগ্নিরুপ তার।কেউ না বুঝলেও আমি বুঝছি বিহান ভাই এর ব্যাপার টা।
এরই মাঝে শুভ ভাইয়া হাজির হলো।শুভ ভাইয়াকে মেহু আপু ধরলো ফুচকা খাবে।তাদের মাঝে যে একটা ভাব চলে আমরা বুঝি।সবাই ইনজয় করলেও বিহান ভাই এর মুড ভীষণ অফ।এইযে উনার মুড অফ হয়েছে আর ঠিক ই হবে না।শুভ ভাইয়া ফুচকার অর্ডার দিলেন সবাই খেলেও বিহান ভাই খাবেন না।আমি ইচ্ছা করে প্রচুর ঝাল দিলাম বিহান ভাই এর ফুচকাতে।ঝাল লাগলে যদি একটু কথা বলেন।নাহ তাও কথা বলেন না।প্রচন্ড ঝাল দেওয়া ফুচকা দস পিছ খেয়ে উনার এক ফ্রেন্ড কে ফোন দিলেন।সে বাইক নিয়ে এলে বিহান ভাই তার বাইকে উঠে চলে গেলেন।মনের মাঝে খুব খারাপ লাগছে।উনার রাগ কে তো কোনোভাবে কনভাইস করা যাবে না।তাহলে কি করবো আমি।
বাড়িতে অনেক মন খারাপ নিয়ে ফিরলাম।বাড়ি ফেরার সাথে বিভোর ভাই এর আম্মু ফোন দিলো আমাকে।
আমি হ্যালো বলতেও মামি বললো দিয়া আজ কি কিছু হয়েছে?
কেনো মামি?
বিহান বাড়িতে ঢুকেই ফুলদানি লাথি মেরে ফেলে দিছে।বক্সিন রুমে প্রচন্ড রাগি মুডে বক্সিন করেই যাচ্ছে।বিহানের চোখ মুখ রাগে যেনো বেরিয়ে যাচ্ছে।ফর্সা মানুষ রাগে চোখ মুখের বেহাল অবস্থা। রাগে ওয়ালে নিজের হাত নিজেই ঘুষি দিচ্ছে।ছেলের টোটাল মুড অফ।কারো সাথে কোনো কথা নেই।সকালেই নাকি ঢাকা ফিরে যাবে।দিয়া তুই কি কিছুই জানিস।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম না মামি কিছুই জানিনা আমি।
ঘুম আসছে না রাত বারোটা বাজে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বিহান ভাই অফ লাইনে আছেন।
উনার ফোন নাম্বারে ফোন দিলাম।
“ফোন টা কয়েক বার কেটে দেওয়ার পর রিসিভ করেই বলে উঠলেন, ফোন দিয়েছিস ক্যানো?”
“কি করছেন?”
“মাঝ রাতে এটা বলতে কল দিয়েছিস।”
“রেগে আছেন?”
“যা বলার এক মিনিটের মাঝে বলবি জাস্ট এক মিনিট।”
“না তখন ওভাবে চলে আসলেন যে।”
“তোর সাহস হয় কিভাবে মধ্য রাতে কল দিয়ে আজাইরা প্রশ্ন করার।তোর এসব ফাউ বক বক শোনার মতো টাইম আমার হাতে নেই।নেক্সট যদি এভাবে কল দিস ব্লক দিয়ে রাখবো।”
“এত বাজে বিহ্যাভ করছেন কেনো বিহান ভাই?সব সময় কিছু না শুনেই বকাবকি করেন শুধু।আপনি কি আলিপ এর ব্যাপারে রেগে আছেন”
“জাস্ট সাট আপ।মধ্য রাতে প্রেম কাহিনী শোনার মতো ইচ্ছা আমার নেই।তোর প্রেম কাহিনী শুনে আমি কি করবো।আমি একটুও ইন্টারেস্টেড নয় দিয়া।তুই কি আমার গফ না বউ কোনটায় তো না।তাহলে আমার জেলাসি আসবে কেনো?আমার সময়ের অনেক মূল্য। তোর মতো একবার আলিপ,একবার আহিন,একবার বিভা আপুর ফ্রেন্ড এইগুলা করার টাইম নেই আমার।জাস্ট ফোন রাখ। ”
চলবে,,
(গল্পে সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ)