এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা ৬১.

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬১.
#WriterঃMousumi_আক্তের

বাড়িতে আমাদের দুই ভাই বোনের বিয়ে সীমাহীন হাসি আনন্দের মাঝ দিয়ে শুরু হলো বিয়ের সানাই।বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে বিহান ভাই এর হাতে হাত ধরিয়ে দিলেন।এক পশলা সুখ যেনো গায়ে হাওয়া দিয়ে গেলো আমার।গহীন অন্ধকার থেকে ঝলমলে আলো এসে পড়লো মনের আঙিনায়।আমার সাথে বার বার কি হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না। যেটা হচ্ছে সেটাই মেনে নিচ্ছি।বিহান ভাই আমার হাত চেপে ধরে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।উনার চোখে মুখে আনন্দের ছড়াছড়ি এত খুশি আগে দেখি নি আমি উনার মাঝে।বাড়িটা ফুলে ফুলে বেলুনে বেলুনে সজ্জিত ুকরা হয়েছে।বড় কার্ডে লেখা আজ বিহান দিয়ার গায়ে হলুদ,অপর পাশে লেখা আজ শুভ আর মেহনুবার গায়ে হলুদ।মেহু আপু আর আমাকে ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।রিয়া আর তোহা আপু বিভা আপু আয়রা সবাই হলুদের শাড়ি পরেছে।সবার মাঝ থেকে মামিকে ডেকে বললাম একটু শোনো না মামি তোমার ছেলে কিভাবে উদয় হলো বলবে একটু প্লিজ।

মামি বললেন,তোর মামা তো ভয় ই পেয়ে গেছিলো রে দিয়া।আমি যখন তোর বিহান ভাই কে জানালাম এদিকের সব ঘটনা বিহান তোর মামাকে ফোন দিয়েছে সাথে সাথে।ছেলে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলছে বাবা আমি বিয়ে করতে চাই আর আমার বিয়ে আজ ই ঠিক করবে তুমি সেটা আর কেউ না দিয়া।দিয়াকে বিয়ে করবো আমি।এটা আমার বহুবছর আগের সিদ্ধান্ত। দিয়ার বাবাকে গিয়ে এক্ষুণি বলো বিয়ে ভেঙে দিতে।

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে তোর মামার যে অবস্থা। তোর মামা বললো কিন্তু দিয়ার যে বিয়ের সব ঠিক ঠাক।

ছেলে রেগে বললো ভেঙে যাবে দিয়ার বিয়ে।দিয়ার বিয়ে ভেঙে গেলে তোমরা আমার সাথে দিয়ার বিয়ের কথা বলবে।না হলে আমি সরাসরি বলবো দিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা।

তোর মামা ফোন কেটে মাথায় হাত দিয়ে ঠুস করে বসে পড়লো।কি করা যায় ভেবে পাগল তোর মামা।ওইদিকে প্রেয়সী বলেছিলো যে আঙ্কেল বিহান আমাকে পছন্দ করে কিন্তু লজ্জায় আপনাদের বলতে পারছে না তাই আমি বলছি।তোর মামা শুনেই বিশাল খুশি তার ছেলে কাউকে পছন্দ করে।উনি তো বুঝতেই পারে নি প্রেয়সী এত বড় মিথ্যা বলবে।প্রেয়সী বিভিন্ন ইমোশনাল কথা বললে তোর মামা বলেছিলো ঠিক আছে নিজের ছেলে যখন পছন্দ করেছে আপত্তির কি আছে?

মামিকে কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা মামি প্রেয়সী আর বিহান ভাই এক সাথেই বিদেশ গেছিলো।

হ্যাঁ বিহান আমাকে আর বিভোর কে সবটা খুলে বলেছে।ঢাকা মেডিকেল থেকে সাতজন এক সাথে গেছিলো বিদেশ।বিহান ওর ফোন রেখে ইমারজেন্সি মিটিং এ ছিলো সেই সুযোগে প্রেয়সী তোকে উলটা পালটা বলেছে।বিহানের এক কলিগ প্রেয়সীর সব কথা শুনে নিয়েছিলো আর সে বিহান কে জানিয়েছিলো সব টা।বিহান সাথেই সাথেই তোকে কল ব্যাক করেছিলো তোর ফোন আর অন পাই নি।পরে আমার ফোন দিয়ে ইচ্ছাকৃত মজা করেছিলো।

অভিমান নিয়ে বললাম তোমার ছেলে সব সময় এমন করে মামি।আমাকে ইচ্ছাকৃত কষ্ট দেয় তোমার ছেলে।

আমার ছেলে তোকে খুব ভালবাসে দিয়া।নিজের বাবার মুখের উপর এভাবে কেউ বলে।

বিভোর ভাই ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি করছে।বিভোর ভাই আমাকে বলছেন দিয়া মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়া ছবি উঠাবো।বিভোর ভাই কে বললাম নির্বান স্যার বিয়েটা কেনো ভাঙলেন জানেন বিভোর ভাই।

বিভোর ভাই হেসে দিয়ে বললেন সব বিহান কা কামলা।বিহানের সাথে বুদ্ধিতে কেউ কোনদিন পারবে না দিয়া।আমরা অহেতুক চিন্তা করেছিলাম।তোদের যে গ্রামে বিয়ে হয়েছিলো ওখানের কয়েকজনের সাথে বিহানের যোগাযোগ ছিলো।বিহান তাদের কাছে নির্বাণ এর নাম্বার দিয়ে দেয়।আর তারাই নির্বাণ কে জানায় যে তুই আর বিহান বিবাহিত। নির্বাণ বিলিভ না করে ওই গ্রামে যায় খোজ খবরের জন্য তোদের ছবি দেখালে সবাই তোদের চিনতে পারে।সেখানে নির্বাণ প্রমান পেয়ে যায়।অতপরঃবিহান কে ফোন দিয়ে সে ভীষণ ভাবে সরি বলে।বাকিটা তোর উনি মানে বিহান বলবে এখন ঠিক হয়ে দাঁড়া তো দিয়া।

লেবু গাছের ডাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি পেছন থেকে বিহান ভাই এসে আমার দুই গালে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।পেছনে তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই।উনাকে দেখে ইচ্ছাকৃত একটু ভাব নিলাম তাছাড়া প্রচন্ড টেনশন দিয়েছেন উনি আমার।এর শাস্তি আমি দিয়েই ছাড়বো।বিহান ভাই আমার গালে হলুদ লাগিয়ে নিজের মুখ দিয়ে আমার মুখে ঘষে নিজের মুখেও হলুদ লাগালেন।খানিক টা হলুদ আমার গলায় লাগিয়ে দিলেন।

গায়ে হলুদের পর্ব শেষ রাতে মেহেদী অনুষ্টান চলছে।বাড়িময় আত্মীয়ের মাঝে কাজিন দের বিভিন্ন নাচ গানের অনুষ্টান চলছে।রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করছে,আয়রা ছোটাছুটি করছে,তোহা আপুর মন একটু খারাপ হলেও নিজেকে সাম লে নিয়েছে,তিয়াশ ভাইয়া মেয়েদের সাথে মজা করেই যাচ্ছে।।আমি আমার রুমে চেঞ্জ করতে এসছি সারদিন ভারী শাড়িতে খুব অসহ্য লাগছে।রুমে এসছি থ্রি পিছ পরে গায়ে শিতের কাপড় পরতে।আমার পিছ পিছ বিহান ভাই এসেই আমার মুখ চেপে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনার ওই শক্ত পক্ত হাত ছড়াতে পারছি না।

–উনি আমাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বললেন এত রাগ কেনো বউ?

-কোনো রাগ নেই আমাকে ছেড়ে দিন আপনি? বলেই উনার কোল থেকে নামার চেষ্টা করছি।

-উনি বললেন রাগ করেছো ভাল কথা তাই বলে কি কোলে তুলতে পারবো না।

-খানিক টা রাগ নিয়ে ছল ছল চোখ নিয়ে আধ কাঁন্না গলায় বললাম ছাড়ুন আমাকে। কেনো এসছেন আপনি?

-এই অভিমানি মুখটার অভিমান ভাঙাতে।বিয়ের দিন এইভাবে কেউ অভিমান করে।

-আপনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে?জানেন আরেক টু হলেই হার্ট ফেইল হয়ে যেতো আমার।

-হার্টের ডাক্তার আমি।আমার বউ এর কিচ্ছুই হতে দিতাম না।তুমি কি জানো আমাদের এই বিয়েটা গোপন রাখতে কতটা পরিশ্রম করে তোমার ফ্যামিলিতে তোমার সম্মান রেখেই তোমাকে আরেকবার আমার জীবনে স্বাগতম জানাচ্ছি।এই কষ্টের পর কোথায় আমার ক্লান্তি দূর করবে তা নয় শুধু অভিমান করছো।

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানেন।

-জানতাম না এত ভালবাসে আমার বউ আমাকে।আই প্রমিজ দিয়া আজকের পরে আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না।ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে চুমু দিয়ে বললেন এখন থেকে প্রতিটি সকালে এই আমার উষ্ণ ছোয়া পাবে।গালে,চোখে,ঠোঁটে আদরের ছোয়া দিয়ে ঘুম ভাঙাবো রোজ সকালে।

-উনার বুকে মাথা গুজে বললাম এবার ছাড়ুন কেউ আসবে না হলে।

পরের দিন হাসি আনন্দের মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।মেহু আপু আর ভাইয়া বাড়িতেই থেকে গেলো।আমি চলে আসলাম বিহান ভাই এর বাড়িতে।মামা বাড়িতে ছোট বেলা থেকে রোজ যাতায়াত কিন্তু আজকের আসাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার।প্রকৃতির কি কঠিন নিয়ম একটা সাক্ষর এ নিজের জীবন অন্যর হয়ে যায়।

বাসর ঘরে বসে আছি গাড় লাল লেহেঙ্গা পরে গা ভর্তি গহনার ছড়াছড়ি। অপেক্ষা করছি কাঙ্খিত সেই মানুষ টার জন্য।আজ দীর্ঘ দিন পর অবসান ঘটলো সকল প্রকার অশান্তির।গায়ে সোনালী কালারের পাঞ্জাবি পরে ঘরে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।পুরা রুম তাজা ফুলে সাজানো।মিষ্টি ঘ্রাণে ভরপুর ঘর।উনি রুমে প্রবেশ করে বুকে হাত বেধে এক হাত থুতনি তে ঠেকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়াতেই ভীষণ লজ্জা পেলাম আমি।উনি রুমের বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করলেন।ডিম লাইটের সাদা আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে।আজ মনে হয় শীতের মাত্রা অনেক বেশী পড়েছে আমি ঠক ঠক করে কাঁপছি শীতে।উনি বেডের উপর বসে একটা কাশি দিয়ে বললেন,আমার দিকে তাকাবে না আজ তুমি।উনার কথার ধরণ পুরোটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দুই হাত মুঠো করে ধরে বললেন,এই রাগী,বদ মেজাজী, জেদী ছেলেটা কে সত্যি তুমি ভালবাসলে দিয়া।তুমি কিভাবে আমাকে সহ্য করো দিয়া।বাকি জীবন আমাকে সহ্য করার দায়িত্ব নিলে।আমিও কি করবো বলো আমার যে ঘুরে ঘুরে তোমাকেই জ্বালাতে ভাল লাগে।

-উনার দিকে লাজুকতা নিয়ে তাকিয়ে বললাম,এই রাগি আর জেদী ছেলেটার ভাল বাসাতেও এতটা জিদ আগে জানতাম না।আমার মতো আনম্যাচুরিটি সম্পন্ন একটা মেয়েকে সারাজীবন কিভাবে সহ্য করবেন।

-সহ্য করবো কজ উই আর মেড ফর ইচ আদার।রোজ বকবো আর রাত হলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমোবো।

-এই প্রচন্ড শীতে হঠাত বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।বিহান ভাই গায়ের সেরওয়ানি খুলতে খুলতে বললেন,তোমার আমার শুভক্ষণে বৃষ্টির আগমন হয় বার বার।বৃষ্টি আমাদের ভালবাসার এক বিশাল সাক্ষি তাইনা দিয়া।আমাদের ভালবাসার প্রতিটি মুহুর্তে ওদের আগমন।

-উনাকে বললাম ভিজবেন বৃষ্টিতে?

-উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলবেন ভিজবো তোমার ভালবাসায়।বাইরের বৃষ্টিতে নয়।পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট নারী কে আজ অসংখ্য ধন্যবাদ মিসেস বিহান হওয়ার জন্য।

আমি উঠে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলেন।নিজেও বিছানায় কম্বল টেনে সুয়ে পড়লেন।ভীষণ আদরের সাথে আমাকে আলিঙ্গন করলেন উনার বুকের সাথে।কপালে চুমু দিয়ে উন্মুক্ত পেটে হাতের আঙুল ডুবাচ্ছেন উনি।আমি বার বার বিদ্যুতের ন্যায় শিউরে উঠছি।গা ভর্তি গহনা একটা একটা করে খুলে দিলেন।সমস্ত গহনা খুলে একটা রিং পরিয়ে হাতে চুমু দিলেন।প্রচন্ড শীতে উনি আরো ঘনিষ্ট ভাবে আলিঙ্গন করে নিলেন আমাকে।ধীরে ধীরে আলতো পরশ দিচ্ছেন উনার ঠোঁট দিয়ে পেটে, গালে,মুখে।বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির থেকে উনার চুম্বনের বৃষ্টি আমার শরীরে বেশী গতি বেগে পড়ছে।ক্রমশ বাড়ছে উনার পাগলামি।উনার প্রতিটি স্পর্শতে অনুভব হচ্ছিলো নেশাক্ত এক ভালবাসা।যে নেশার ডুবসাগরে ডুব দিয়ে পাড়ি জমালাম দুজনে গভীর ভালবাসার তুফানে।ভালবাসাময় রাতের গভীর ভালবাসার সাক্ষী এই শীততাপ রাত।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here