এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা ৬৩.

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬৩.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই এর গলার উপর পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছি।ঘুমের মাঝে কখন পা উনার গলার উপর পড়েছে আমি বুঝতেই পারি নি।উনি বার বার পা সরিয়ে দিচ্ছেন তো আমি বার বার উনার গলার উপর ই পা দিচ্ছি।এমনি তে প্রচন্ড শীত তার মাঝে আমি কম্বল টেনে উনাকে আলগা করে দিচ্ছি বার বার।আর বেডময় ঘুরাঘুরি করতে করতে উনার পায়ের দিকে আমার মাথা চলে গিয়েছে এক পা উনার গলায় তো আরেক পা উনার পেটের উপর।পর পর দুই রাত উনার ওটি থাকায় ঠিক মতো ঘুমোতে পারেন নি উনি।ঘুমোনোর আগে আমাকে বলে দিয়েছে আজ যেনো তাকে মোটেও বিরক্ত না করি আমি।বিরক্ত করলে খবর আছে মানে বিশাল লম্বা খবর আছে।বার বার উনাকে বিরক্ত করার জন্য উনি আমার পা ধরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজে কম্বল মুড়ি দিয়ে আরাম করে সুয়ে পড়লেন।উনি কি আমাকে ফুটবল ভেবে লাথি মারলেন।এই ঠান্ডায় আমাকে কিভাবে ফ্লোরে লাথি মেরে ফেলে দিলেন।আজ এর একটা হেস্ত নেস্তো করেই ছাড়বো।ফ্লোরে পরা স্যান্ডেল পরে গায়ে শাল জড়িয়ে নিয়ে রুমের বড় লাইট অন করে দিলাম।তাতেও দেখি উনার ঘুমের কোনো ডিস্টার্ব হচ্ছে না।উনার কানের কাছে বক্স রেখে ফোনে ব্লু টুথ অন করে জোরে গান চালিয়ে দিলাম বুক চিন চিন করছে হায় মন তোমায় কাছে চাই।তুমি ছুয়ে দিলে হায় আমার কিযে হয়ে যায়।বিহান ভাই আমার দিকে রক্তজবার ন্যায় লাল চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বক্স টা বন্ধ করে দিয়ে বললেন তোকে কিন্তু আমি চিড়িয়াখানা রেখে আসবো দিয়া।বার বার নিষেধ করেছিলাম আজ আমাকে একটুও বিরক্ত করবি না।তোর জন্য আজ একটুও ঘুমোতে পারিনি আমি।আমি কোমরে হাত বেঁধে বললাম আপনি আমাকে লাথি মেরেছেন কেনো আগে সেটা বলুন।

‘লাথি মারবো না অসভ্য দের মতো গায়ের উপর পা দিয়ে ঘুমোস কেনো তুই।আর কম্বল টেনে এক পাশ পিঠের সাইডে দিস আরেক সাইড গায়ে দিস আমি কি করবো?’

‘তাই বলে আমাকে নিচে ফেলে দিবেন?’

‘হাসের মতো প্যাক প্যাক না করে লাইট অফ করে আমার পাশে চুপ চাপ ঘুমো একটুও সাউন্ড করবি না।সাহস কি তোর সেটাই ভাবছি তুই এই মধ্য রাতে আমার কানের কাছে বক্স প্লে করেছিস।’

‘দেখুন আমি কাল ই মামি কে বলে দিবো?’

‘আমি কি তোর মামি কে ভয় পাই?যাকে ইচ্ছা বলিস বাট এখন একটা কথা ও বলবি না। বললে মুখে টেপ মেরে দিবো।আমার মাথায় পেইন করছে সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। ‘

‘আমি ঘুমোবো না আর আপনাকেও ঘুমোতে দিবো না।’

‘বাইরে ভূত আছে এই মধ্য রাতে বাইরে রেখে দরজা লক করে আমি ঘুমিয়ে যাবো বুঝেছিস।’

‘উনাকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই।এখন উনার মাথা ঠিক নেই বাইরে রেখে আসার আগে চুপ চাপ সুয়ে পড়ি কাল দেখবো।লাইট অফ করে উনার পাশে গুটি সুটি মেরে সুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পরে উনি আমার চুলের গোছা টেনে ধরে বললেন,এই দিয়া ওঠ তো। আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম আহা চুল ছাড়ুন তো আমার ঘুম পাচ্ছে।’

‘আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন তুই ঘুমোবি অসভ্য মহিলা ওঠ বলছি।’

‘উঠবো কেনো?’

‘আমার পা টিপে দে বলছি।সুন্দর ভাবে হাত পা ম্যাসাজ করে দে আমি ঘুমোবো।’

‘আমি এসব করতে পারবো না আর আমি এসব পারি না।’

‘বাইরে রেখে আসবো তাহলে, ভূত তোর পা টিপবে।’

‘প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উনার পা টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গেলাম।’

পরের দিন ভোরে দেখি আমি উনার বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়ে আছি।এখানে কখন এলাম আমি।উনি ঘুমোচ্ছেন ঘুমন্ত এই মানুষ টা ভালবাসার জন্য একদম পারফেক্ট।কখন যত্ন করে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছেন বুঝতেই পারি নি।আমার পায়ে আবার মোজা ও পরিয়ে দিয়েছেন।উনার নাক ধরে টেনে বললাম এই উঠবেন না।

‘উনি ঘুমের জড়তা নিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন আজ উঠবো না এভাবেই থাকবো।’

‘হসপিটালে যাবেন না।’

‘না আজ ছুটি নিয়েছি আমি।’

‘কেনো?’

‘কারণ আজ শ্বশুরের মেয়ের কলেজ ছুটি তাই শ্বশুরের জামাই ও আজ ছুটি নিয়েছে তার মেয়েকে আদর করার জন্য।’

‘ছিঃলজ্জা নেই আপনার।’

‘লজ্জা থাকলে কি আর বাবাকে বলতাম বিয়ে করবো অনেক বছর আগে ভেবে রেখেছি সে হলো দিয়া।’

‘আপনি ঘুমোন আমাকে রান্না করতে হবে।’

‘এত কাজ করতে হবে না।রান্না আমি করবো তোমার দায়িত্ব আমার বুকের হার্টবিট এর স্পন্দন শোনা ওকে।’

‘এই পাগলটে মানুষ টা বড্ড অবুঝ হয়ে যায় মাঝে মাঝে।কোনো কথায় শোনানো যায় না।’

——————————————————
–মেহু তোমার শরীর ঠিক আছে তো?প্লিজ কোনো অসুবিধা হলে আমাকে বলো।এই টুকু বয়সে বাচ্চা হবে তোমার।আমার তোমাকে দেখলেই অনেক কষ্ট হয়। ভেতরে এক জন কে নিয়ে কিভাবে পারছো তুমি?

–শুভ তুমি এত চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।তাছাড়া আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ভীষণ কেয়ার করে আমার বুঝলে।তুমি এত চিন্তা করো কেনো?

–কেনো চিন্তা করবো না বলোতো?তোমাকে হারানোর ভয়ে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলাম।এখন তুমি অসুস্থ আমি বাইরে গেলে তোমার চিন্তায় অনেক খারাপ লাগে।

–কিচ্ছু হবে না আমার। আমার একটা ছেলে হোক শুধু। দিয়া বলেই দিয়েছে নাম কিন্তু সে রাখবে।

–হুম দিয়া তো সারাক্ষণ ফোন দিয়ে বলছে মেহু আপুর খেয়াল রাখবা ভাইয়া।আমাদের পুচকে যেনো ভাল থাকে।দিয়ার মন টা এখানেই পড়ে আছে।
——————————————————–
বিহান ভাই আজ ছুটি নিয়েছেন।আমার অধোয়া যত কাপড় আছে সব ধুয়ে ছাদে নেড়ে দিয়েছেন।সাথে নিজের কাপড় ও ধুয়েছেন।ভাগ্য করে এমন হজবেন্ড পেয়েছি।সব কাপড় ধোয়া হলে তেলের বোতল এনে আমাকে বসিয়ে মাথায় তেল দিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছেন।

‘উনি মজা করে বলছেন একটা উকুন এনে দিলে দশ টা চুমু দিতে হবে কিন্তু রাজি।’

‘একটার সাথে দশ টা এ কেমন চাওয়া।সুদ খাবেন আপনি?জানেন না সুদ খাওয়া মহা পাপ।হারাম খাবেন।’

‘বউ আমার হালাল।বউ এর সব ই হালাল।’

‘সুন্দর ভাবে মাথায় তেল দিয়ে চুলে উকুন খুজে চলেছেন।অনেক খোজাখুজির পরেও কোনো উকুন পেলেন না।এবার হতাস হয়ে বললেন তাহলে কি আমি চুমু পাবো নাহ।’

‘উনার এই ভীষণ মন খারাপ দেখে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড় দিলাম।’

‘উনি অস্ফুটে হাসি দিয়ে বললেন তোমার সাথে আমার এই খুনসুটি আর দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসা চলুক আমরণ।তোমার আমার যাত্রা হোক ভালবাসার মহাযাত্রা।একটা দীর্ঘ জীবন পাড়ি দিতে চাই তোমার সাথে।’

বিহান ভাই আমাকে ডেকে বললেন,বিভোর কিছুক্ষণের মাঝেই পৌছে যাবে।চলেই এসছে প্রায়।আমি রান্না করছি তুমি আমার পাশে থেকে হেল্প করলেই চলবে।রিয়া আর কাকিমা কে ফোন দাও এখানে আসতে।

এরই মাঝে আম্মুর ফোন। আম্মুকে বললাম বিভোর ভাই এর কাছে নাড়ু পাঠিয়েছো তো আম্মু।

হ্যাঁ দিয়া সব কিছুই পাঠিয়েছি।বিহানের সাথে কিন্তু একটুও ঝগড়া করবি না।ওর সব কথা শুনে চলবি।আম্মু মেহু আপুকে ডেকে বলছে এই মেহু হরলিক্স টা খেয়ে নে মা।আর যেনো খাওয়ার কথা বার বার বলতে হয় না।

আম্মুকে বললাম আম্মু মেহু আপু কি খাবার খেতে চাই না।

আম্মু বললো নারে দিয়া ওর শুধু বমি হয়।তোর বাবা তার একমাত্র ভাগনি কে কি কম ভালবাসেন।সারাক্ষণ মেহুর জন্য এটা সেটা নিয়েই আসছে বাট মেয়েটা খেতেই পারে নাহ।ওর শরীর টা অনেক শুকিয়ে গিয়েছে।

আম্মুকে বললাম একটুও চিন্তা করোনা আম্মু তুমি।মেহু আপু ঠিক ই সুস্থ হয়ে উঠবে।

‘বিহান ভাই এর হাতে হাতে রান্নায় হেল্প করছি।উনি খুন্তি চালাতে চালাতে বললেন,আচ্ছা তুই আমাকে ভাই ডাকা বন্ধ করবি কবে?’

‘আপনার নামের পাশে ভাই ছাড়া বড্ড বেমানান বুঝলেন।এটা এক প্রকার মুখস্থ বিদ্যার মতো হয়ে গিয়েছে।ভেবেছি আজন্ম এই ভাই বলেই যাবো।’

‘হ্যাঁ দুইদিন পর বাচ্চার মা হয়ে যাবি তখন ও ভাই ডাকিস।’

‘আরে শুনেন না মেহু আপু চাইছে তার একটা ছেলে সন্তান হোক।’

‘মেহুর ছেলে ই হবে দেখে নিস।’

‘ভাবছি ভাইয়ার ছেলে হলে আর আমার মেয়ে হলে আর জীবনেও বাবার বাড়ি যাবো নাহ।মেয়ে বিয়ে দিয়ে তার পর যাবো।’

‘কেনো?’

‘যে ভুল আমি করেছি আমার মেয়েকে সে ভুল করতে দিবো নাহ।আমার মা ঘন ঘন যদি বাবার বাড়ি না যেতো তাহলে কি আর তার ভাতিজা আমার সাথে প্রেম করার সুযোগ পেতো।হিসাব করে পেয়েছি মামাতো ভাইয়েরা সারাজীবন ভাই সেজে থেকে যায় আবার ফ্রিতে ফুফাতো বোনদের সাথে প্রেম ও করে যায়।’

‘আমি আবার কবে প্রেম করলাম।প্রেম আমার উপর পড়েছিলো।আমি প্রেমের উপর পড়িনি।’

‘আপনি প্রেমে পড়েন নি?’

‘নাহ আমি কোনো প্রেমে ট্রেমে পড়িনি।বাট ভয়ানক ভাবে ভালবেসে ফেলছিলাম। ভয়ানক মায়ায় পড়েছিলাম সেখান থেকে আর বেরোনোর চেষ্টা ও করি নি।’

‘আচ্ছা উনি এমন ম্যাজিকের মতো কথা জানেন কিভাবে?সব কথায় প্রচুর ম্যাজিক।যা শুনেই প্রেমে পড়ে যায় বারেবার আমি।’

‘রিয়া কাকিমনি আর আয়রা এসছে।আয়রা এসেই বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরে বলছে তোমার বউ আছে তুমি কাজ করছো কেনো?’

‘পাক্কা বুড়ি।আমার বউ কালো হয়ে যাবে তাই রান্না করতে দেয় না বুঝলে।’

‘তুমি তোমার বউ এর চেয়ে সুন্দর জানো বিহান ভাই।’

‘আমি আয়রা কে বললাম তোর না খবর আছে।আমি কালো বলে আমাকে পছন্দ হয় না তাইনা?’

কিছুক্ষণের মাঝেই বিভোর ভাই প্রবেশ করলেন।বিভোর ভাই এর হাত থেকে জিনিস পত্র গুলো নিয়ে গল্প শুরু করলাম।রান্না শেষ হলে সবাইকে খেতে দিলাম।

বিভোর ভাই কাকিমনিকে বলছেন শ্বাশুড়ি এবার তো আমার জব হয়েছে মেয়ে দিবেন না।কাকিমনি হেসে বললো মেয়ে তো দিয়েছি তুমি নিয়ে নাও।

বিভোর ভাই কে বললাম মামি কি কি পাঠিয়েছি বিভোর ভাই।

রিয়া বললো মা না ডেকে এখনো মামি।

বিহান ভাই বললেন বর কে ভাই ডাকে আর শ্বাশুড়ি কি ডকবে মা।

কাকিমনি হেসে বললো বিহান আর দিয়া বড় হবে কবে যে।

আমাদের বেডরুমে বসে গল্প করছি আমরা।অনেক দিন পর আমাদের আড্ডা জমে উঠেছে।বিহান ভাই কে বললাম,ওগো শুনছেন।উনি চোখ উলটে পালটে আমার দিকে গোল গোল চোখ করে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলেন।

‘আমি আবার ও বললাম ওগো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো গো স্বামি।’

‘কিছু খেয়েছিস দিয়া?’

‘পতিপরমেশ্বর আমাকে কি খাওয়ার কথা বলছেন গো।আমি কি খাবো।’

‘বিভোর -রিয়া দেখ তো দিয়াকে কি জ্বীনে ধরেছে কিনা?এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলছে কেনো?’

‘ক্যানো স্বামি এমন মনে হচ্ছে কেনো আপনার?’

‘বিভোর রিয়া না থাকলে তোর এখন খবর ছিলো সিরিয়াসলি বলছি।’

‘বিভোর ভাই আর রিয়া মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে।আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম ভাই ডাকলে বকে আবার ওগো হ্যাগো বললেও বকে।’

‘উনি আশ্চর্যজনক ভাবে বললেন তুই ভাল হবি কবে দিয়া।’

‘ভাল হবো আমাকে আগামি বছর মহিলা মেম্বার প্রার্থি হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়ে দিবেন।’

‘হোয়াট দ্যা জোকস।’

‘কিসের জোকস শুনি।আমি যদি বলি আমার স্বামি আপনাদের ফ্রি চিকিৎসা করবে আপনারা আমাকে ভোট দিন।তাহলে কি আমি ভোট পাবো না বলুন।’

উনি মনে হয় এক্ষুনি জ্ঞান হারাবেন আমার কথা শুনে।উনি ভ্রু যুগল কুচকে বললেন হাইরে আমার বউ।

চলবে,,

(আজকের পর্বে সবাই রেসপন্স করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here