“এখনো_ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-10
“সেই পিচ্ছি মেয়েটি যখন কিশোরীতে পরিনত হচ্ছিলো,তখনি ছেলেটিও অনুভোব করতে লাগলো কিছু মানুষের লোলুপ দৃষ্টি প্রতিনিয়ত মেয়েটির দেহের উপর পড়ছে।আর পড়বেই না কেনো,দিন দিন সেই পিচ্ছি মেয়েটি যে মারাত্মক ভাবে সুন্দর হয়ে বেড়ে উঠছিলো।ঠিক সদ্য ফোটা কোনও পদ্ম ফুলের মতো।ওর সুন্দর মুখখানি,ওর চুল,আর সব থেকে যা ভয়ংকর ছিলো ওর উঠতি পড়া যৌবন।যা যেকোনও পুরুষের মনে ঝড় তুলতে এনাফ ছিলো।ছেলেটিরও তখন পাহাড় সমান ধৈর্যের পরীক্ষা চলছিলো,নিজেকে সংযোত করার, মেয়েটি থেকে নিজেকে দূরে রাখার।”
–কতোটা কষ্ট হতো জানিস, নিজেকে বারবার এটা বুঝাতে হতো,আমি কোনও রেপিস্ট নই।তাহলে নিজেকে কেনো সংযোত করতে পারবো না।একজন ধর্ষকের নিজেকে সংযোত করার সমর্থ থাকেনা বলেই তো ধর্ষণ করে।আর আমি মানুষ কোনও জানোয়ার না।
“এতে করে ছেলেটির অস্থিরতা যেনো আরো বেড়ে গেলো।মেয়েটির প্রতি ছেলেটির আকর্ষণ টান আরো বাড়তে লাগলো।ছেলেটি দিনদিন ডেসপেরিট হতে লাগলো মেয়েটিকে কাছে পেতে।
মেয়েটির দিকে কারো কুদৃষ্টি কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারতো না।কারণ মেয়েটির সব কিছু দেখার, অনুভোব করার, ছোঁয়ার অধিকার শুধু তার আর কারো না।আর সে কাউকে তার জিনিসটি ধরতেও দেবেনা।”
–আয়নের মুখে হঠাৎ এমন সব কথা শুনে প্রিয়ু ভীষণ লজ্জা পেতে লাগলো।লজ্জায় একেবারে যেনো নেতিয়ে পড়ছে।আর পড়বেই না কেনো,আয়নকে ও কেবলই দাদার চোখে দেখেছে এতোবছর।এমন না আয়ন সুন্দর না।আয়নের সোন্দর্যের কাছে প্রিয়ু নিজেকে কিছুই মনে করেনা।সে তো একদম একজন পার্ফেক্ট ম্যান।যে কোনও মেয়ে আয়নের জন্য পাগল হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রিয়ু!সে তো কখনোই সেই নযরে তাকায়নি আয়নের দিকে।তাহলে!
কিন্তু আয়ন যে ওর সব কিছু খুব গভীর দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসছে এতোবছর ধরে তা প্রিয়ু আজ বুঝতে পারছে।এটা ভাবতেই প্রিয়ু লজ্জায় মাথাটা তুলতেও পারছে না আয়নের সামনে।
“সবার দৃষ্টিতো আমি সংযোত করতে পারবো না,তাই তোকে আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করতাম।তোকে একা কোথাও যেতে দিতাম না।তোর পুরো লাইফটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলাম।”
–হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুর সামনে হাটুগেরে বসে ওর দুহাতকে নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে নিলো।তাকা প্রিয়ু আমার দিকে, তাকা সোনা!
প্রিয়ু নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো,কিন্তু আয়নের গলার ব্যাকুলতা প্রিয়ুকে তাকাতে বাধ্য করলো।
“আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,কবে কখন কিভাবে নিজেকে তোর সাথে এতোটা জরিয়ে ফেলেছি।সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি প্রিয়ু।যখন বুঝেছি তখন থেকে মনের মধ্যে এক বিশাল ঝড়ের সাথে লড়াই করে আসছি।আমি ভীষণ ক্লান্ত প্রিয়ু।নিজের সাথে নিজেই লড়াই করে।আমি আর পারছি না,প্লিজ আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিস না।”
–প্রিয়ু স্ট্যাচুর মতো বসে আয়নের কথাগুলো শুনছিলো।আজ প্রথম প্রিয়ু আয়নের চোখে জল দেখতে পেলো।কেনো জানি প্রিয়ুর ভালো লাগলো না,ভেতরে কোথাও গিয়ে ব্যাপারটা লেগেছে।প্রিয়ুর মনটাও যেনো কেমন কেমন করতে লাগলো।অদ্ভুত অনুভূতি ভালো লাগার না খারাপ লাগার অবুঝ প্রিয়ু বুঝে উঠতে পারছে না।কিন্তু প্রিয়ু এতোটুকু ঠিকই বুঝেছে,কতোটা ভালোবাসলে প্রিয় মানুষটি থেকে দূরে থাকা যায় তার ভালোর জন্য।
“কিন্তু হোটেল রুমের সেদিনের ঘটণায় প্রিয়ু নিজের মনকে আবার ঘুড়িয়ে ফেললো।নিজেকে আবার শক্ত করে আয়নকে নিচু গলায় প্রশ্ন করলো,
তাহলে আমার সাথে এমন কেনো করলে আয়নদা।তুমি তো রেপিস্ট নও।এতো বছর তোমার কতো কাছে ছিলাম আমি,হয়তো মাঝে মাঝে আমাদের মাঝে তেমন দূরত্বও ছিলো না।কিন্তু তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি।তুমি নিজেকে কতোটা সংযোত করে রাখতে।তাহলে সেই তুমি ক কিভা বে আয়নদা।
সেদিনের ঘটনার আগ পর্যন্ত তুমি আমার জন্য দাদাই ছিলে কিন্তু তোমার সেই প্রস্তাবটা কতোটা বাজে লাগছিলো আমার কাছে জানো।কতোটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলে আমায়।আমার মরে যেতে মন চেয়েছিলো একয়েক দিন।”
–শশশ,সোনা! একদম না।আয়ন প্রিয়ুর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে ওকে চুপ করতে বললো।এসব কথা আর কখনো বলবি না।আয়ন হাটুগেরে অবস্থায়ই প্রিয়ুকে একদম ওর মুখের সামনে টেনে আনলো।
প্রথমত আমি তোর দাদা নই প্রিয়ু,কাজিন ব্রাদার।আর তোর মুখ থেকে এই দাদা ডাকটা একদমই শুনতে চাই নিই কখনো আমি।নাহি আমার পছন্দ।
তাই এখন থেকে শুধু আমার নিজের নাম ধরেই ডাকবি।আর আমি যেহেতু তোর আপন ভাই না তাহলে এখানে আমাদের সম্পর্কটাকে ঘৃর্ণার বা অস্বস্তিকর কিছুই দেখছি না আমি।আমি মানি,আমার সেদিন তোর সাথে এমন করা ঠিক হয়নি বিয়ের আগে।আর আমি নিজে কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি তোর সাথে এমন করবো।তোকে হার্ট করতে চাইনি সোনা।
কিন্তু!কিছুক্ষন চুপ থেকে আয়ন–সেদিন যা কিছু হয়েছিলো এর কারণ কি তুই নিজে না,বল।তুই নিজে স্বীকার করেছিস।তোর অনেক ছেলেদের সাথে নাকি গভীর সম্পর্ক ছিলো।আর এতে আমার কিছু যাওয়ার আসার কথা না।তুই কি বুঝতে পাড়ছিলি প্রিয়ু সেদিন তুই কি কি বলছিলি।তার মানে কি ছিলো তুই বহুত ছেলের সাথে শুয়েছিলি।আয়নের গম্ভীর কন্ঠ।
“প্রিয়ু স্থদ্ধ হয়ে গেলো,আয়নের কথায়।ও বলেছিলো কিন্তু এসব মিনস্ করে নয়।”
–তোর এসব কথায় সেদিন আমার অবস্থা কি হয়েছিলো জানিস।পুরো পৃথিবী জালিয়ে ফেলতে মন চাইছিলো।যেখানে আমি তোর ছায়াও কাউকে ধরার এলাউড করবো না,সেখানে তুই অন্য ছেলেদের সাথে ভাবতেও আমার শরীরে কাটা ধরে যেতো।আমি সেদিন দেশ না ছাড়লো তোকে মেরে ফেলতাম সোনা।প্রিয়ুর মুখে একহাত রেখে।
আমার ভেতরের জানোয়ারটাকে তুই বের করে দিয়েছিলি।আর সেই জানোয়ারটাই সেদিন তোর সাথে এসব করতে পেরেছে, আমি না!
“ত ততার মানে কি তুমি স সেদিন আমার ভার্জিনিটি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলে।প্রিয়ু ছলছল চোখে আয়নের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।”
__________
“দিনেশ দাঁড়িয়ে আছে,একটা বাচ্চাদের কিন্ডারগার্ডেন স্কুল এর সামনে।রোদের তাপে দিনেশের পড়নের সার্টটা কেমন ভিজে লেপ্টে গেছে শরীরের সাথে।তবুও চোখে,মুখে নেই কোনও ক্লান্তি বা বিরক্তবোধ।
দিনেশ নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে যখন ব্যস্ত তখন আশেপাশে মেয়ে হতে শুরু করে,বাচ্চাদের মায়েরা ব্যস্ত দিনেশকে দেখতে।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবার পালা।স্কুলের ঘন্টা বেজে গেলো।ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে বের হচ্ছে।কেউ কেউ তো তাদের মায়ের আচলের নিচে গিয়ে মুখ লুকাচ্ছে।দিনেশ মুগ্ধ হয়ে দেখছে এসব।প্রায় যখন সব বাচ্চারা চলে গেলো,স্কুলটিও প্রায় খালি,তখনি সাদা কামিজ পড়া একটি মেয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে বের হলো।”
–অতিরিক্ত গরমের কারনে চুলগুলো এলোমেলো করে কোনও রকম বেধে রেখেছে মেয়েটি।মেকআপ বিহীন তৈলাক্ত ত্বকটি রোদের আলোয় কেমন চিক চিক করছে।তবুও চেহারায় এক অদ্ভুত মায়া লেগে আছে।
“গেট থেকে বের হয়ে দিনেশকে দেখেই মেয়েটি ভয় পেয়ে গেলো।পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে দিনেশ খপ করে মেয়েটির হাতের কনুই ধরে ফেলে।
-মেয়েটি চারপাশ একবার তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে দিনেশের দিকে তাকায়।কাপাকাপা কন্ঠে বলে উঠে,কি করছেন কি স্যার।এটা একটা পাবলিক প্লেস, প্লিজ এখানে এমন কিছু করবেন না জাতে আমার সম্মান নষ্ট হয়।”
“দিনেশ হাতটা ছেড়ে দিয়ে গাড়ীর দরজাটা খুলে দিলো।তুমি যদি না চাও আমি এমন কিছু করি। তাহলে চুপচাপ গাড়ীতে উঠে পড়ো।”
–কিন্ত আমার….আর কিছু বলতে পাড়লো না মেয়েটি।আজ দিনেশ প্রচণ্ড রেগে আছে যা ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর রাগবেই না কেনো।
তিতির দিনেশকে মোবাইলে ব্লক করে রেখেছে।ফেসবুক ডিএক্টিভ করে রেখেছে।আগে যেখানে থাকতো সে এলাকাটাও ছেড়ে নতুন এলাকায় এসে এই স্কুলে শিক্ষিকা পদে জয়েন হয়েছে।তিতি দিনেশের সাথে দেখা বা কথা হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।তিতি ভাবতেই পারেনি,দিনেশ যে এতো তারাতারি ওকে খুঁজে বের করে ফেলবে।
হঠাৎ দিনেশের ধমকে চিন্তা থেকে বের হয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো তিতি।
“তিতির দিনেশের পি এ ছিলো এক সময়।অফিসে দিনেশের ছোট বড় সব কাজগুলো তিতির খুব যত্ন করে করতো।দিন দিন দিনিশও যেনো তিতিরের অভ্যস্ত হয়ে পড়ছিলো।”
–টল,হ্যান্ডশাম দিনেশকে দেখে অফিসের বেশিরভাগ মেয়েই হিমরি খেয়ে পড়তো।আর সেখানে তিতির দিনেশের দিকে তাকিয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পাড়তো না লজ্জায়।কেনো জানি তিতিরের মুখ দিয়ে কথাই বের হতো না।ব্যাপারটা দিনেশের খুব ভালোই লাগতো।
অফিসের এতো স্মার্ট মেয়েদের মাঝে তিতিরকে বেমান লাগলেও তিতিরের কাজ তিতিরকে দেখতে বাধ্য করতো সবাইকে।যা দিনেশকেও মুগ্ধ করতো।আসলে স্মার্টনেস পোশাকে আসেনা।আসে তার চরিত্রে, তার শালিনতায়,তার রুচির মাধুর্যে।তাইতো সেলোয়ার কামিজ পড়া এই মেয়েটি দিনেশের চোখে যেনো বার বার বিঁধতো।
“এছাড়া বাকি সব মেয়েদের মতো তিতিরও ক্রাশড খেয়ে বসে ছিলো,নিজের বসের উপর।লুকিয়ে লুকিয়ে দিনেশকে দেখা,দিনেশের চাওয়ার আগে সব কিছু রেডি করে রাখা এ যেনো নিত্যদিনের রুটিন ছিলো তিতিরের।
দিনেশ মেয়েদের মধ্যে খুব প্রফুলার ছিলো,তার একটি কারণ হচ্ছে দিনেশ নিজেও মিডিয়া জগৎ থেকে এসেছে।
এখনো অনেকের রিকোস্টে মাঝে মাঝে টিভির বিভিন্ন শোতে দেখা যায় দিনেশকে।ওর পার্সোনোলিটি, ওর লুক সব কিছুই যেনো জাস্ট ওয়াও!তাইতো তিতিরের মতো মেয়েও দিনেশকে না দেখে পাড়তো না।”
–দিনেশ এসব বুঝেও কিছু বলতো না।তিতিরের এই লুকোচুরি,ওর লজ্জায় লাল হওয়া মুখখানি দেখে দিনেশের খুব ভালোই লাগতো।
এর কারণ একটাই ছিলো তিতিরকে দিনেশের চোখে অন্য রকম লেগেছে।অন্য মেয়েরা যখন দিনেশের দিকে তাকিয়ে থাকতো,দিনিশের মাঝে মাঝে খুব অস্বস্তি লাগতো।কারণ একটাই।মেয়োরা শুধুই ওর বিশাল দেহ আর টাকাটা দেখে আকর্ষিত হতো।যা তাদের লোলুপ দৃষ্টি বলে দিতো।
এমন হাজারো মেয়েদের সাথে দিনেশ মিশেছে।তাই নারীর চোখের দৃষ্টি পড়া দিনেশের কাছে কঠিন কিছু না। তিতিরের চোখের ভাষাও দিনেশ খুব শীঘ্রই বুঝে গিয়েছিলো।
“হঠাৎ গাড়ীটি থেমে গেলে,তিতিরও তার ভাবণার জগৎ থেকে ফিরে এলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে চারপাশে তেমন কিছুই নেই নির্ঝন একটা জায়গা।তিতির কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো,দিনেশ ওকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছে এসব ভেবে।
‘তোমার দহণে পুড়ছি আমি,
তোমার তৃষ্ণায় মরছি।
তোমার দেওয়া কস্টগুলো দু’হাত দিয়ে কুড়িয়েছি।
ভালো যখন বাসবেই না,কেনো বা কাছে এলে
বুকের ভেতর ভালোবাসার তৃষ্ণা বাড়িয়ে কেনো
চলে গেলে।’
-দিনেশ গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো বলছে।হঠাৎ চকিতে তিতিরের দিকে তাকালো।দিনেশের এই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তিতিরকে ভেতর থেকে কাপিয়ে দিলো।
“বলো তিতির বল!ধর্ম কি আসলেই ভালোবাসা থেকে অনেক বেশি বড়।তাহলে বল পৃথিবীতে যতো শিল্প আছে,সৌন্দর্য আছে, নিদর্শন আছে তাতে কেনো ধর্মের হাত নেই।ভালোবাসার হাত কেনো আছে।
জানো কি যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষকে নির্মম ভাবে খুন করা বিশাল ক্ষমতাশীল মোঘল সম্রাটকেও ভালোবাসার জন্য মাথা নতো করতে হয়ছিলো।আর প্রেমের নিদর্শন হিসেবে তাজমহল দিয়ে গিয়েছে জগতের কাছে।
প্রত্যেকটি মানুষ যদি শুধু ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকতো তাহলে সবাই উন্মাদ হয়ে পাগল হয়ে যেতো।একজন আরেক জনকে টেনে হিচড়ে খেতো।ভালোবাসা আছে বলেই তা হয় না।
–তিতিরকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো দিনেশ।বলো তিতির শুধু এই কারণে তুমি আমার থেকে দূরে যেতে পারো না।তোমার বুঝতে হবে সবার আগে আমি মানুষ।আমার ভেতরেও তোমার মতো একটা মন আছে,যেখানে প্রতি মুহুর্ত শুধু তোমাকে স্মরণ করে।আমার শরীরের রক্তও তোমার রক্তের মতো লাল।ধর্ম যেহেতু আমাদের সব কিছু আলাদা করেছে,তাহলে তোমার আল্লাহ আর আমার ভগবান কেনো প্রত্যেকটা মানুষকে এক রকম করে বানিয়েছে বলো।
“আমি জানি না এতো কিছু,প্লিজ আমাকে এভাবে প্রশ্ন করে বিভ্রত করবেন না।আমি বাসায় যাবো।তিতির নিরবেই কেঁদে উঠে।”
–আমাকে এভাবে পাগল করে তুমি কিভাবে ভালো থাকতে পারো তিতির।তোমার কি একবারও আমার প্রতি মায়া হয়না।
তিতিরের মুখটা নিজের মুখের সামনে নিয়ে এলো দিনেশ।শুষে নিয়ে নিলো তিতিরের চোখের জল গুলো পরম আবেশে।কপালের সাথে কপাল রেখে বলে উঠলো,ধর্মের দোহাই দিয়ে তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না তিতির।আমি দেবো না।তার জন্য যদি আমাকে তোমার সাথে কঠোর হতে হয় তাও হবো।
_____________
“প্রিয়ুর কথায় আয়ন কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রিয়ুকে বোঝার চেষ্টা করছে।হঠাৎ যেনো প্রিয়ু অনেকটা বুদ্ধিমান হয়ে গিয়েছে।আয়ন কি জবাব দিবে সত্যিই বুঝতে পারছে না,আর সত্যটাও যে প্রিয়ুকে বলা যাবে না এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।এতে প্রিয়ুকে আয়ন আরো হারিয়ে ফেলবে।
আয়নের মনে কিছুটা সংশয় ছিলো প্রিয়ুকে নিয়ে,আর তা দূর করতেই আয়ন প্রিয়ুকে সেদিন সেই নোংরা অফারটা করেছে।”
–সেদিন হোটেল রুমে আয়ন যখন প্রিয়ুকে নিয়ে এসেছিলো,তখন আয়নের মস্তিষ্কে শুধু একটা কথাই ঘুড়ছিলো–‘আমার অনেক ছেলেদের সাথেই গভীর সম্পর্ক আছে আয়নদা।আমার মনে হয়না এতে তোমার কিছু যাওয়া আসার কথা।এটা আমার জীবন। ডিশিসনও আমার আর আমি এখন বাচ্চা নই।’
“প্রিয়ুর এই চারটে কথা আয়নকে মুহুর্তেই বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলো।তাইতো আয়ন এই দেশ ছেড়ে সব কিছু ছেড়ে বাহিরে চলে গিয়েছিলো।ওখানে গিয়েও আয়ন শান্তিতে থাকতে পারেনি।বার বার প্রিয়ুর কথাগুলো আয়নের কানে বাঝতে থাকতো।অনেক ভেবে আয়ন ডিশিসন নেয়,প্রিয়ুকে যেহেতু ভোলা সম্ভবই নয় তাই ওকে কাছে রেখেই শাস্তি দেবে আয়ন।তাইতো আবার দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশে।”
–প্রিয়ুর সাথে সেদিন আয়ন প্রথম মিলনেই বুঝতে পারে প্রিয়ু এখনো আগের মতোই পবিত্র।কিন্তু আয়ন বুঝার আগেই সব কন্ট্রোলের বাহিরে চলে গিয়েছিলো।প্রিয়ুর নেশায় পড়ে গিয়েছিলো আয়ন সেদিন।
যাকে ভালোবাসবে,তার সাথে দেহের আকর্ষণ থাকতেই পারে।অতিরিক্ত ভালোবাসার সাথে দেহের চাহিদাও বেড়ে যায়।তখন তাকে কন্ট্রোল করতে সবথেকে বেশি কস্টকর হয়।
আর আয়নতো তার ভালোবাসার মানুষটির এতো পাশে থেকেও তাকে গভীর ভাবে কখনো ধরতে পারেনি।এমন না আয়নের মন চায়নি।প্রিয়ুকে ও যতোই আগলে রাখুক, দিনশেষে ও একজন পুরুষই ছিলো।তাই প্রিয়ুকে পাওয়ার ইচ্ছাটা ওর মন মস্তিষ্কে প্রবলভাবে ছিলো।
“তাই সেদিন হোটেল রুমে প্রিয়ুকে এতো কাছে পেয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি আয়ন।প্রিয়ুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে,নিজের পুরুষত্ব টা প্রমান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আয়নের ভেতরে একটা জেদ যেনো সেদিন চেপে ধরেছিলো।কেনো প্রিয়ু আয়নকে রেখে আরেক জনের কাছে ভালোবাসা খুঁজতে যেতে হলো।একবার শুধু মুখ দিয়ে বলতো প্রিয়ু,সব কিছু ওর পায়ের সামনে এনে দিতো আয়ন।কিন্তু না প্রিয়ু তা করেনি।”
–কি হলো আয়নদা জবাব দিচ্ছো না কেনো—।”
“-আয়ন হেসে দেয় প্রিয়ুর কথায়।আমার তোর ভার্জিনিটি পরীক্ষা করার কোনও প্রয়োজন কখনোই ছিলো না প্রিয়ু।তবে আমি তোর উপর রেগে ছিলাম,ভীষণ রেগে।
রোহান আর ওসব পিকে ছেলেগুলোর সাথে তকে দেখে।নিজেকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু পারিনি।আর পারবোই বা কিভাবে যখনি আমার রাগ উঠতো,তখন আমার রাগকে পানি করার মেডিসিন তুই ছিলি।আর সেই তুই যখন আঘাত করলি আমি দিশাহীন হয়ে গিয়েছিলাম।নিজেকে শান্ত করার জন্য তোকো খুব প্রয়োজন ছিলো।আর ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলাম।
__________
“তিশাশ অফিসের লিফটে উঠে মাত্র বাটন টিপ দিতে যাবে,তখনি একটা মেয়ে চিৎকার দিয়ে ইশারা করে ছুটে আসছে লিফটটা জাতে বন্ধ না করে।তিশাস লিফট টা বন্ধ হতে আটকে দিলো।আর মেয়েটিও যেনো ঝড়ের গতিতে লিফটে প্রবেশ করলো।তিয়াশ মেয়েটিকে সামনে দিয়ে দেখতেই পারেনি কে?”
–প্রচণ্ড গরম,আর তার উপর অনেকটা পথ হেটে এসেছে বলে দিশার ঘাম গুলো কেমন চুয়েচুয়ে পড়ছে ওর শরীরর দিয়ে।এতে করে দিশার কামিজটা শরীরে একদম লেপ্টে লেগে আছে।
তিয়াশ দিশার পেছনে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।আর ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দিশাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো স্ক্যানিং করে ফেললো।একদম পারফেক্ট বডি সাইজ।শুধু…. বলে থেমে গেলো।
“হঠাৎ লিফটা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেলো।কাল থেকেই লিফটা সমস্যা করছে।তিয়াশ সিকিউরিটিকে বলেও গিয়েছিলো কি সমস্যা চেক করাতে।কিন্তু লিফটের অবস্থা দেখে মনে হয়না এরা কিছু করেছে।তিয়াশ খেয়াল করলো মেয়েটি আরো বেশি ঘামছে তাই বার বার নিজের ওড়না দিয়ে ঘাম মুছার চেষ্টাও করছে।”
–তিয়াশ মানবতার ক্ষাতিরে পিছন থেকেই জিঙ্গেস করলো।হ্যালো মিস আপনি ঠিক আছেন।দেখুন ভয় পাবেন না।লিফট এখনি চালু হয়ে যাবে।এটা বলতে না বলতে লিফটের লাইটগুলোও বন্ধ হয়ে গেলো।
” আর দিশা ভয়ে তিয়াশকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।তিয়াশ তো মুহুর্তেই ফ্রিজ হয়ে গেলো।হঠাৎ ওর মনে হলো মেয়েটি বিরবির করে কিছু একটা বলছে।
কানটা একটু খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে,বুঝতে পারলো মেয়েটির অন্ধকারের ফোভিয়া আছে।এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে দেখেই মেয়েটি না পেড়ে একজন অচেনা ছেলেকে জরিয়ে ধরেছে,তিয়াশের বুঝতে বাকি রইলো না।কিন্তু হঠাৎ হাতের বাধন হালকা হলে,তিয়াশ বুঝে যায় মেয়েটি জ্ঞান হারিয়েছে।পড়ে যাওয়ার আগেই তিয়াশ মেয়েটিকে ধরে ফেলে।”
–পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফ্লাশলাইটটা ওন করে মেয়েটির মুখের দিকে ধরলো।ফ্লাশলাইটের আলোতে মেয়েটির মুখ দেখে তিয়াশ একটু মুচকি হাসলো।তখন তাড়াহুড়াতে ও মেয়েটিকে খেয়াল করেনি কে?তাই চিন্তেও পারিনি।তবে মেয়েটির ব্যাকসাইড দেখেই চেনা চেনা লাগছিলো ওর।
চলবে…।