“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-18
“জীবন আর পরিবর্তন একে অপরের পরিপূরক। যেখানে জীবন আছে সেখানে পরিবর্তনও আছে।আর এই পরিবর্তনের সূত্রাকার অতিত কে ঘিরেই শুরু হয়।অতিতই হলো এই পরিবর্তনের চাবিকাঠি।তাই বলে অতিত নিয়ে পড়ে থাকলে তো চলবে না।অতিতে হয়তো তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস,ছ্যাকা খেয়ে বোকা হয়েছিস,পরীক্ষায় লাড্ডু পেয়েছিস,প্রিয়জনদের কাছে বারবার ধোকা খেয়েছিস।কিন্তু এটা কোনও সমস্যা না।সমস্যা হলো এসবের কারণে নিজেকে দমিয়ে রাখা।হতাশ হওয়া।সব কিছু শেষ এসব ভাবা।”
–যেখানে সব কিছু শেষ হয় সেখান থেকেই শুরুটাও হয়।আর তখনই ভুলগুলো শুধরানোর সুযোগ এসে পড়ে জীবনে।
‘জীবনে হেরে যাওয়া মানেই শেষ হয়ে যাওয়া না,প্রিয়জনগুলো চলে যাওয়া মানেই জীবন মূল্যহীন নয়।মনে রাখতে হবে,বিধাতা যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।উনি এক দরজা বন্ধ করলে রহমতের আরেক দরজা অবশ্যই খুলে দেয়।তাহলে হতাশ হয়ে কি হবে।’
“মনে রাখতে হবে,খেলার শুরুতেই চার উইকেট পড়ে যাওয়া মানে এ নয়,খেলা শেষ বা হেরে যাওয়া।পুরোটা খেলা ধৈর্যের সাথে দেখে হার বা জিত যাই হোক তাকে সদয় একসেপ্ট করা।
জীবনটা কোনও টিভি সিরিয়াল নয় যে, দু চার পর্বে কাহিনী শেষ করে দিতে পারবে।জীবন যতোদিন থাকবে, জীবনকে উপভোগ করে চালিয়ে যেতে হবে।যা-ই হোক জীবনে, অনাঙ্কাকিত বা কাঙ্ক্ষিত সব কিছু দৃঢ়তার সাথে মানিয়ে নিতে হবে।”
–জীবন কিন্তু একটাই প্রিয়ু,আর এই জীবনে কখন কার গাড়ী চলার পথে বন্ধ হয়ে যাবে কেউ বলতে পাড়ি না।এই ছোট জীবনে মান-অভিমান চলবে,তাই বলে তা সারা জীবন বহন করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
মানুষ মানেই ভুল।কোনও মানুষই পার্ফেক্ট না।আয়নদাও না। তাই হয়তো রাগের মাথায় অনেক ভুল করে ফেলেছে।তোকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু তোকে এটাও মানতে হবে,এই আয়নদাই তোকে সব থেকে বেশি আঘলেও রেখেছিলো।তোর চাওয়া কোনও কিছু অপূর্ণ রাখেনি।
‘কিন্তু হয়তো অপরিনত তুই আয়নদার চাওয়াটা,তার চোখের চোখের ভাষাটা কখনো বুঝিসই নিই।’
“ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো হতে দেখা সহয না।তাও আবার যেমন তেমন ভালোবাসা না।আয়নদা বরারবই তোর প্রতি অনেকটা অবসেসড,প্রোটেক্টিভ ছিলো, ইনসিকিউর ও ছিলো।তাই তো তোর আর রোহানের সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি।”
“-জানিস সেদিন তোর বাসা থেকে রাগ করে এসে আয়নদা নিজেকে তিনদিন ঘর বন্ধি করে রেখেছিলো।আমরা অনেক চেষ্টা করেও আয়নদাকে রুম থেকে বের করতে পারিনি।শেষ মুহুর্তে কিছু বুঝতে না পেরে তোর বাড়ীতে ছুটে এসেছিলাম।আমরা ভেবেছিলাম তুই পাড়বি এই মুহুর্তে আয়নদাকে রুম থেকে বের করতে।কিন্তু তোর বাড়ী তালা দেখে সব আশা শেষ হয়ে গেলো সেদিন।”
–তিনদিন পর ভাই যখন রুম থেকে বের হলো,তখন তার হাতে ছিলো একটা ল্যাকেজ।কারো সাথে কোনও কথা না বলেই আয়নদা সেদিন দেশ ছেড়েছিলো।শুধু যাওয়ার আগে মায়া আপুকে বলেগিয়েছিলো,’আমি ইতালিতে চলে যাচ্ছি দি।তোমরা আমাকে কিছুুদিন ফোন করে ডিস্টার্ব করো না।আর ভালো থেকো।’
-এর পর ছয়মাস আয়নদা বাড়ীর কারো সাথে কোনও কথা বলেনি।ফোনে অনেকবার আমরা কথাবলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বার বার ব্যর্থ হওয়া ছাড়া কিছুই পাইনি জানিস।
“শুধু তুই একা কষ্ট পাসনি প্রিয়ু, আয়নদাও পেয়েছে।হয়তো বলবি তোর থেকে কম।কিন্তু আয়নদার এই কষ্টটাই আয়নদাকে পুড়িয়ে শেষ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।ভুল শুধু একার দাদার ছিলো না তোরও সমান তালে ছিলো।তুইও তো একবার দাদার কথা চিন্তা করিসনি।খুলে বলার চেষ্টা করিসনি কোনও কিছু।রোহানের কথাও লুকিয়েছিস।তাহলে তোরও কোনও অধিকার নেই আয়নদাকে শাস্তি দেওয়ার।”
“প্রিয়ু নিশ্চুপ।”
–কিছুক্ষন চুপ থেকে তিয়াশ আবার বলা শুরু করলো,দাদা যেদিন তার ভুল বুঝতে পারে,সাথে সাথে বাংলাদেশে ব্যাক করে।আর এসেই তোকে খোঁজার চেষ্টা করে।কিন্তু এরপর তোর বারবার আয়নদাকে ফিরিয়ে দেওয়া এবার দাদা মেনে নিতে পাড়েনি।মনের ভেতর তোকে পাওয়ার একটা জিদ চেপে ধরে।তাইতো আবার একটা ভুল করে বসে রাগের মাথায়।
“প্রিয়ু এবার ছলছল চোখে তিয়াশের দিকে তাকায়।তার মানে তোমরা জানতে সেদিন আয়নদা হোটেলে….।”
–প্রিয়ুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে।না!আমরা আগে জানতাম না।পরে যেনেছি।সেটা যেভাবেই হোক।তাইতো অবস্থা বুঝে মায়াদি কে সেদিন আমরাই নিয়ে গিয়েছিলাম।
“কিন্তু আমি এসব ভুলতে পারছি না ভাই।প্রিয়ুর কান্না এসে গেলো।গলাটা ধরে গেলো।”
–ভুলতে না পাড়লে সামনে এগোবি কিভাবে।সারা জীবন কি সম্পর্কটাকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখবি।প্রিয়ু বোন আমার সময় মরিচিকার মতো।সঠিক সময় সঠিক কাজ না করলে পড়ে প্রস্তাতে হবে।
“কিন্তু আয়নদা যা করেছে সেটা গুনাহ। আমাকে অপবিত্র করেছে।”
–জানি!কিন্তু সেই আয়নদাই তোদের সম্পর্কটাকে পবিত্র নাম দিয়েছে।আমি আয়নদা হয়ে সাফাই করছি না।আয়নদা যা করেছে তা একদম অনুচিত।কিন্তু প্রিয়ু অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তো স্বয়ং আল্লাহ তাআালাও ক্ষমা করে দেয়।তাহলে তুই কেনো পাড়বি না।যেহেতু আয়নদা এখন অনুতপ্ত।
“প্রিয়ু কিছুটা বিস্মিত হয়ে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।”
–দাদাকে মাপ করে দে।নিজেদের সম্পর্ক টাকে আর একটা সুযোগ করে দে।দাদাকে একবার আপন করে নে।কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করতে হয়।আর পাপ পূর্ণের হিসাব রাখার আমরা কে।তার জন্য উপরওয়ালা আছে তো।আল্লাহর উপর ছেড়ে দে সব।আয়নদার ভেতর যদি কোনও ময়লা থাকে,তাহলে তার শাস্তি উপরওয়ালাই দিবে।তোকে ভাবতেও হবে না।
“প্রিয়ু নিশ্চুপ……।”
–বোন আমার, আমি তোর খারাপ চাই না।আয়নদাকে ভালোবাসি,তার মানে এ নয় তোর খারাপ চাইবো।তুই শুধু এক কদম বাড়া।আয়নদা নিজেই তোকে কাছে টেনে নিবে।তোর জন্য আয়নদার ভেতরের ছটফটানি আমরা দেখেছি প্রিয়ু।দয়া কর,আমার ভাইটার উপর।মাপ করে দে।
প্রিয়ু উত্তরে কিছুই বললো না,হঠাৎ দাঁড়িয়ে ঝিলটির আরো একটু কাছে চলে গেলো।তিয়াশ ও প্রিয়ু ঝিলের পাশে বসেই এতোক্ষন কথা বলছিলো।
“নিজের জীবনের এতোটুকু বয়সে এতোকিছু ঘটে যাওয়ায় প্রিয়ু কোনও সিদ্ধান্ত মন থেকে নিতে পারেনা এখন।অনেকটা দ্বিধায় ভুগছে প্রিয়ু।হঠাৎ কারো হাসির শব্দে প্রিয়ু পিছনে ঘুড়ে তাকায়,আর তখনি প্রিয়ুর চোখ পড়ে,লম্বা এবং সুবিশাল বডির অধিকারী সুদর্শন পুরুষ আয়নের উপর।প্রিয়ুর যেনো হঠাৎ থমকে যায়।নিজেই মনে মনে বলে উঠে,
‘-নিঃসন্দেহে আয়নদা একজন সুদর্শন পুরুষ।না জানি কতো মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই ছেলেটি।আর এই হাজার মেয়েদের ক্রাশ শুধু আমাকে ভালোবাসে।শুধু ভালোবাসে না,আমাকে কোনও রাজ্যের রাজকুমারীর মতো ট্রিট করে সর্বদা।প্রিয়ুর মুখের উদাসীনতা মুহুর্তে কেটে গেলো এসব ভেবেই,প্রিয়ুর মুখে একচিলতি হাসি এসে পড়ে।”
“আসলে কিছুক্ষন পর তিয়াশ,অনিক ও দিশা চলে যাবে।আয়নের কাছে বিদায় নিয়ে যখন প্রিয়ুকে খুঁজতে গেলো,তখনই তিয়াশ লক্ষ্য করলো প্রিয়ু ঝিলটির পাড়ে একা বসে আছে।অনিক আর দিশাকে আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে,তিয়াশ এসে বসলো প্রিয়ুর পাশে।আনমনা হয়ে বসে থাকার কারনে প্রিয়ু বুঝতে পারেনি প্রথমে। কিন্তু তিয়াশের শান্ত কন্ঠ প্রিয়ুকে সম্বিৎ ফিরতে বাধ্য করলো।
আর তখনই তিয়াশ প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে এসব বললো।
তিয়াশ জানে না প্রিয়ুর মাথায় কিছু ঢুকেছে কিনা।কিন্তু ভাইয়ের খুশির জন্য তিয়াশ বারবার চেষ্টা করে যাবে।
____________
“দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেলো।প্রিয়ু আর আয়নের সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীতে পরিণত না হলেও এ কয়েকদিনে প্রিয়ু অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে আয়নের সাথে।আয়ন কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার পর প্রিয়ুর লাইফটা ও আগের মতো নরমাল হতে লাগে।আয়ন যেনো ওর হারানো প্রিয়ুকে আবার ফিরে পাচ্ছে।অন্তত চেষ্টাতো করছে।”
‘তাইতো আয়নও একয়েক দিনে জোড় করে প্রিয়ুর কাছে যেতে একবারও চেষ্টা করেনি।যার কারণে প্রিয়ুও আয়নকে নিয়ে নতুন করে ভবতে বাধ্য হচ্ছে।’
–প্রতিদিন আয়নই প্রিয়ুকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে যায়।আর আসার সময় বাড়ীর গাড়ী নিতে যায়।প্রিয়ুর গাড়ীতে করে আসা যাওয়া একদম পছন্দ না,কিন্তু কি করবে,ব্যাচারী আয়নের ভয়ে কিছু বলতেও পারেনা।
“আজ প্রিয়ু আয়নকে বলে,দিশাকে সাথে নিয়ে কলেজ শেষ করে মার্কেটে এসেছে কিছু কেনাকাটি করার জন্য।বাকি সব মেয়েদের মতো প্রিয়ুরও মার্কেটিং করতে খুব ভালো লাগে।প্রিয়ুর মতে মার্কেটই এমন একটি জায়গা যেখানে প্রিয়ু ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিবে বিনা টেনশনে।
-দিশাকে নিয়ে লেডিস কর্ণারে ঘুড়তে ঘুড়তে হঠাৎ প্রিয়ুর চোখ পড়লো জেন্টস কর্নার সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলের উপর।মুহুর্তেই প্রিয়ুর মাথা গরম হয়ে গেলো ছেলেটিকে দেখে।সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললো।ছেলেটি আর কেউ না রোহান ছিলো।”
–মনতো চাইছে,সামনে গিয়ে থাপ্পড়াইতে থাপ্পড়াইতে এই শয়তানটার গাল ফাটিয়ে ফেলি।কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে ফেললো পরক্ষণে প্রিয়ু।
‘কারণ আয়নদা জানতে পাড়লে,আমাকে চিবিয়ে খাবে।তাও আবার নুন মরিচ ছাড়া।না না প্রিয়ু কেটে পর।এটা তোর অতিত।আর অতিত বর্তমানকে নষ্ট করতেই সামনে আসে।আর আমি কোনও অতিত আমার লাইফে চাইনা আর।’
-প্রিয়ু ঘুড়ে হাটা ধরলেই হঠাৎ কানে ভেসে আসে সেই পরিচিত কন্ঠ।আর তখনই প্রিয়ু থমকে দাঁড়িয়ে যায়।তার মানে রোহানও প্রিয়ুকে দেখে ফেলেছে।এই মুহুর্তে প্রিয়ুর কি করা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না।
“প্রিয়ুর চিন্তাশক্তির মাঝে বেগাত গঠিয়ে,আবারও পরিচিত কন্ঠটি কানে এসে বারি খেলো,তবে এবার অনেক কাছ থেকে।”
–প্রিয়ু আস্তে আস্তে পিছনে ঘুড়লো।দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ব্যক্তিটির উপর।সামনের ব্যক্তিটির চোখ দুটো প্রিয়ুর দিকেই তাকিয়ে আছে।
“কেমন আছো প্রিয়ু।”
–প্রিয়ু নিজেকে মুহুর্তেই শক্ত করে নিলো,অনেক হয়েছে আর পালানোর কোনও মানে হয়না।তাছাড়া আমি এমন কোনও অপরাধ করেনি যে আমাকে মুখ লুকিয়ে পালাতে হবে।অতিত যেমনই হোক তাকে ফেস করতে শিখতে হবে আমাকে।তাহলেই জীবনে হতাশ হতে হবে না।এসব ভবনা নিয়েই প্রিয়ু নিজেকে সামলিয়ে বললো,ভালো।আপনি?
“এই প্রশ্নের উত্তর রোহান আর দিলো না।আমরা কি বসে কথা বলতে পারি।”
–না,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,দ্রুতো উত্তর দিলো প্রিয়ু।আমি এখন আসি।
“আশাহত হলেও,তা প্রকাশ করলো না রোহান।প্লিস প্রিয়ু জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য।”
…………
“সোপিং মলের কফিসোপ সাইডে বসে আছে প্রিয়ু আর রোহান।দিশাকে বুঝিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রিয়ু।
প্রিয়ুর মুখে বিরক্ত আর চিন্তার ছাপ।কেনো?প্রিয়ু নিজেও জানে না।যে মানুষটিকে প্রিয়ু খুঁজেছে এতোদিন,আজ সেই মানুষটি ওর সামনে বসে আছে,অথচ প্রিয়ুর সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রিয়ু বারবার মোবাইল চেক করছে।কারণ আয়ন ম্যাসেজ করেছে,ও নিজে আসছে প্রিয়ুকে নিতে।তাই প্রিয়ু আয়নের ফোনের অপেক্ষা করছে।ওর আর কোনও দিকে মন নেই আপাততো।”
–রোহান ব্যাপারটা খেয়াল করেছে।কিন্তু কিছুই বললো না।কারণ সেই অধিকারটি যে আর নেই এখন।তাই নিরবতা ভেঙ্গে রোহানই বলা শুরু করলো।আম সরি প্রিয়ু।
“প্রিয়ু এবার রোহানের দিকে তাকালো।বিস্মিত চোখে প্রশ্ন করলো,কেনো?”
–রোহান মাথাটা নিচু করে,আমি জানি,আমি তোমার অপরাধী। তোমাকে না বলে হঠাৎ করেই আমার চলে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি।আসলে আমি নিরুপায় ছিলাম।তুমিতো যানো আমার একটা স্বপ্ন ছিলো,গায়ক হবার।হঠাৎ চোখের সামনে নিজের স্বপ্নটাকে পূরণ হতে দেখে কিছুই খেয়াল করেনি।অনেক বড়,মিউজিক ডায়রেক্টার আমাকে তার এলব্যামে গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো।কিন্তু তার শর্ত ছিলো,কন্ট্রাক্ট এর এই একবছর আমি না বিয়ে করতে পারবো,না প্রেম।তাদের সাথে আমার এই নিয়ে কন্ট্রাক্ট হয়।তাই ইচ্ছা থাকা সত্যেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তখন।কিন্তু একবছর পর আমি তোমার এলাকায় গিয়ে দেখি তুমি নেই।আশেপাশে জিঙ্গেস করেও তোমার খোঁজ পায়নি।এরপর তোমার সাথে কি কি হয়েছে জানতে পারি।আমি আসলেই মন থেকে দুঃখীত প্রিয়।
“প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে,রোহানের এমন দেবদাস মার্কা কথায়।কিন্তু কেনো?কিছুদিন আগেও প্রিয়ু রোহানের জন্য কিছু অনুভোব করতো।মন দ্বিধায় ভুগতো আয়ন আর রোহানকে নিয়ে।ওর মন বারবার জানতে চাইতো রোহান কেনো এমন করলো।অথচ আজ!আজ প্রিয়ুর এসব শুনতে একদমই ভালো লাগছে না।আজ তো রোহানের সাথে বসে কথা বলতেও অর্ড লাগছে প্রিয়ুর।কিন্তু কেনো?এতো পরিচিত এই মানুষটিকে অপরিচিত লাগছে।
প্রিয়ু আর রোহানকে টলেরেট করতে পাড়বে না,তাই কিছুটা বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,হয়েছে আপনার,নাকি আরো কিছু বাকি আছে।আর থাকলেও আমি শুনতে রাজি না।”
–আর তখনই প্রিয়ুর ফোনটা বেজে উঠলো,প্রিয়ু তড়িৎ গতিতে ফোনটা কানে ধরে।আ’ম কামিং,টু মিনিট।ফোনটা কেটে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে আবার থেমে যায়।পিছনে ঘুড়ে,রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ইউ নো রোহান,আপনি একটা স্বার্থপর, বেঈমান।ভালোই হয়েছে আপনার আর আমার সম্পর্ক আগে বাড়েনি।হলে ভবিষ্যৎ এ নিজের স্বার্থের জন্য আপনি আমার সাথে যে আর কি কি করতেন তা ভাবতেও ভয় লাগে।কিন্তু এখন আর আমার এসব নিয়ে কিছু যায় আসেনা।তবে আমার সাথে অন্যায় করার মূল্যও আপনি একদিন পাবেন, খুব করে পাবেন।আমি সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
“-প্রিয়ু এসব বলেই,দৌঁড় দিলো,পার্কিং এর দিকে।কারণ আয়ন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।দেরি হলে,আয়ন নিজেই প্রিয়ুকে খুঁজতে চলে আসবে।তখন আরেক ভেজালে পড়তে হবে।তার আগেই প্রিয়ু আয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।
প্রিয়ুর মন আয়নের দিকে যে ঝুকে যাচ্ছে বোকা প্রিয়ু সেটার আভাষ এখনো পায়নি।
___________
“ঘুমন্ত দিশাকে দেখে তিয়াশ আরো একবার মনে হয় প্রেমে পড়ে গেলো।ডিনার শেষ করে ওরা গাড়ীতে উঠার কিছুক্ষণ পরই দিশার চোখ লেগে গেলো।গাড়ীর মিরর নামানো বলে,বাতাসে দিশার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে।আর তিয়াশ গাড়ী চালানোর ফাঁকেফাঁকে তার ঘুমন্ত পরীটিকে দুচোখ ভরে দেখে নিচ্ছে।”
–কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়তেই তিয়াশ মুচকি হাসলো।কারণ ডিনারের নিয়ে যাওয়ার জন্য দিশাকে এক প্রকার জোড় খাটিয়েই বাড়ী থেকে বের করতে হয়েছে তিয়াশকে।
“তিয়াশের সাথে ডিনার করতে দিশা কিছুতেই যাবে না তাও আবার এতোরাতে।যেখানে দিশা সন্ধ্যার পর বাড়ী থেকেই বের হয়না,সেখানে নাকি এই ফাজিলটার সাথে ডিনারে যাবে।অসম্ভব!
“-দিশার এখনো সেই করুন সময় আসেনি।নিজের সাথে নিজেই কিছুক্ষন বকবক করলো দিশা।”
–তাইতো তিয়াশকে মানা করেই দিশা বিছানায় উপুৎ হয়ে শুয়ে পড়তে লাগলো হুমায়ূন আহমেদ এর দারুচিনি উপন্যাসটি।গল্পের প্রতি একটু বেশি জোক দিশার।
বিভিন্ন রাইটারে গল্প উপন্যাসগুলো পড়তে দিশার খুব ভালো লাগে।বলতে গেলে এগুলোই ওর পরম বন্ধু।যা ওকে কখনো নিরাশ করেনা,ধোঁকাও দেয়না।তাই এদেরকে ভরসা করা যায়।”
–হঠাৎ দিশার অনুভোব হলো,রুমে ও ছাড়াও কেউ আছে।মুখ ঘুড়িয়ে দেখবে তার আগেই রুমের লাইট বন্ধ হয়ে পুরো রুমটি অন্ধকারে ছেয়ে যায়।দিশার যেহেতু অন্ধকারের ফোবিয়া আছে।তাই ও খুব বিচলিত হয়ে ফোন খুঁজতে লাগে।কয়েক সেকেন্ড সময়ই দিশার অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে।
“হালকা ঠান্ডা আবহাওয়া সত্যেও দিশা ঘামছে।ফোন না পেয়ে দিশা দরজার দিকে ছুটতে গেলো।কিন্তু দরজা খুলার আগেই একজোড়া হাত দিশাকে ধরে ফেললো।
মুহুর্তে দিশা ভীষন ভয় পেয়ে গেলো।হার্টটা দ্রুতো বিট করতে লাগলো।যা কিছুটা অস্বাভাবিক।দিশা চিৎকার দেওয়ার শক্তিটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে।মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে,সামনের ব্যক্তিটিকে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে থাকা সামান্য শক্তি দিয়ে আঘাত করতে লাগলো।
–কিন্তু হঠাৎ কিছু জ্বলে উঠলো,গ্যাসলাইটের হালকা মৃদ আলোতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিয়াশের মুখটা জ্বলজ্বল করছে।
“তিয়াশকে দেখে দিশা কিছুটা স্বস্তি পেলেও তা মুখে স্বীকার করলো না।তাই কপট রাগ দেখিয়ে, চোখগুলো বড় বড় করে তিয়াশকে একটা ধমক দিলো,সাহস করে।এটা কি ধরনের অসভ্যতা।এক্ষনি আমার হার্ট ফেল হয়ে যেতো।
আর একমিনিট আপনি রুমে আসলেন কি করে।আমিতো সব লাগিয়ে রেখেছিলাম।
–সেটা জানা কি খুব বেশি ইম্পোরটেন্ট দিশাপাখি।নো!আমি মনে করি না।ইম্পোরটেন্ট হচ্ছে তোমার এখন আমার সাথে থাকার কথা তাহলে তুমি এখানে বসে কি করছো।আমি এতো আশা করে দুজনের জন্য এতোকিছু আয়োজন করলাম,আর তুমি আমার আশার মাঝে পানি ঢেলে দিলে।খুব নির্দয় তুমি দিশা।খুব!
“দেখুন..।”
–দেখছি তো।এই দেখো আমি এখনো তোমার দিকেই তাকিয়ে আছি।
“উফ!দিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,কেনো বুঝতে পাড়ছেন না।আমার দাঁড়া আর প্রেম হবে না।একবার করেই স্বাদ মিটে গেছে।আর চাইনা আমার।”
–ওটা প্রেম ছিলোনা দিশাপাখি।ওটা জাস্ট তোমার আবেগ ছিলো।বাচ্চাকালে এমন আবেগে অনেকেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলে,তাই এটাকে সিরিয়াস নেওয়া কোনও প্রয়োজন নাই।
দিশাকে টেনে নিজের কাছে এনে তিয়াশ,প্রেম কি?তা আমি তোমাকে বুঝবো।প্রেমের অমৃত স্বাধ আমি তোমাকে গুলিয়ে গুলিয়ে একটু একটু করে খাওয়াবো।আর তখন তুমি নেশায় পড়ে যাবে।
‘তিয়াশ আরো একটু কাছে এসে,দিশার কানে ফিসফিসিয়ে, এই তিয়াশের নেশা।’
আর তিয়াশের নেশা যখন মাথায় চড়বে না পাখি,তখন মাথা হ্যাং হয়ে যাবে।তখন না পাড়বে ছাড়তে,না পাড়বে ভুলতে।না চাইতেও ভালোবেসে ফেলবে তখন।
–দিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো,এক অদ্ভুত অনুভূতি ছুঁয়ে দিয়ে গেলো পুরো শরীরে।যা দিশা আগে কখনো পায়নি।নিশান্তের সাথে থেকেও না।তাহলে! তিয়াশের কাছে আসায় এমন লাগছে কেনো।দিশা নিজের ফিলিংসটা সম্পূর্ণ লুকানোর চেষ্টা করে,কাপাকাপা কন্ঠে বললো,ন নো চানন্স।
“সেটা দেখা যাবে সময় হলে,এখন রেডি হয়ে নেও তারাতারি।আমাদের যেতে হবে।তিয়াশ লাইটটা ততোক্ষনে জ্বালিয়ে দিলো।”
–দিশা এখনো ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কি হলো।যাও।
“আপনার উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো।আপনি আমাকে ভালোবাসেন,বা আমার উপর ক্রাশড খেয়ে বসে আছেন,এ কথাটি মানতে পাড়ছি না।দিশা নির্বিকারে প্রশ্নটি করলো।কারণ নিজের মনের কনফিউজড দূর করতে ওর।
“কেনো?কেনো মানতে পাড়ছো না।”
–এই শ্যামবর্ণ চশমা পড়া মেয়েটির মাঝে আপনি কি দেখলেন,যা এতো বছর নিশান্তের চোখেও পড়েনি।শুধু নিশান্ত কেনো।অন্য কোনও ছেলের চোখেও পড়েনি।জানেন আমার জন্য মা বিয়ের সমোন্ধ দেখছে,কিন্তু আমার ছবি দেখেই অনেকে মুখের উপর বলে দিয়েছে,তাদের কালো মেয়ে চালবে না।তাহলে আপনি কেনো নিজের টাইম নষ্ট করছেন।নাকি নিশান্তের মতো ভাবছেন,কিছুুদিন টাইমপাস করে ফেলে দিবেন।
“-দিশার কথায় তিয়াশের কিছুটা রাগ হলেও,তা প্রকাশ করলো না।কারণ তিয়াশ অবস্থা বুঝে ব্যবস্তা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পড়ে।যেখানে সেখানে রাগ দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করতে মোটেও ইচ্ছুক না।আর দিশার মনের অবস্থাটা খুব ভালো করেই বুঝতে পাড়ছে,তাই দিশাকে রাগ দেখিয়ে না,বুঝানো প্রয়োজন।”
“কৃষ্ণ কলি আমি তারে বলি
কালো তারে বলে গায়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।”
তিয়াশ মাথাটা নিচু করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা কৃষ্ণকলি কবিতার চারটি লাইন বলে দিশাকে উদ্দেশ্য করে।আবার দিশার কাছে এসে,
আমার কাছে গায়ের চামড়া কোনও মেটার করেনা দিশা।যদি করতো তাহলে বিদেশ গিয়ে কোনও ধলা মেয়ের সাথে প্রেম করতাম।আমিতো তোমার এই শ্যামবর্ণের মায়ায় পড়ে গিয়েছি।তোমার কাজলকালো আঁখি দুটোর মাঝে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে।তাইতো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোই লাগে না।কি করবো বলো।আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি তাও আবার গভীর ভাবে।
চলবে…।