“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-২১

0
3617

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-21

“আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই,তুমি তাই গো,
আমারো পরানো যাহা চায়।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই,কিছু নাই গো।
আমারো পারানো যাহা চায়….”

–আয়ন মুগ্ধা হয়ে তাকিয়ে আছে নীল শাড়ী পড়া মেয়েটির দিকে।বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে আসছে সেই মেয়েটির মুখের হাসির ঝিনিঝিনি শব্দ।কি মিষ্টি সেই হাসি।শুনলেই পরানটা জুড়িয়ে যায়।সকালের মিষ্টি রোদ্রও যেনো আজ তার সাথে হাসছে।হাওয়ায় উড়ে হঠাৎ যখন মেয়েটির শাড়ীর আঁচলটি পানিতে ছুতে নিলো,তৎক্ষনিক হাত দিয়ে ধরে ফেলে।আঁচলটি সামলাতে তখন কোমড়ে গুজে নেয় মেয়েটি।এতে করে তার ফর্সা পেটটি হালকা উকি দিয়ে একটু গভীর নিশ্বাস ছাড়ে এই গরমে।এ যেনো এক পরম তৃপ্তি।হাতে তার লাল চুড়ি যা শাড়ীর আঁচলের সাথেই মেচিং করে পড়া।ঠোঁটের লাল লিপস্টিক টা যেনো রক্ত জবাকেও হার মানাবে আজ।খোঁপায় বাধা তার চুলগুলো,কিছুটা রাগ করে যেনো বের হয়ে পড়ছে।আর তা বারংবার মুখে এসে সেই নারীটিকে বিরাক্ত করছে।চোখের নিচের কাজলটি এই হালকা গরমে ঘেমে কিছুটা লেপ্টে গেছে।আর এতে যেনো এই নারীটিকে আরো আবেদনীয় করে তুলছে।লাল শাপলা গুলোর মাঝে নীল শাড়ী পরিধান প্রিয়ুর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছে আয়নের আজ।
‘-সিগ্ধ সকালের হালকা গরমকে উপেক্ষা করে প্রিয়ু নৌকায় বসে আছে হাতে কিছু লাল শাপলা নিয়ে।এই বিলটি পুরো লাল শাপলা দিয়ে ভরা।যেদিকে চোখ যাবে চোখে পড়বে লাল সবুজের মাখামাখি।এ যেনো কোনও শাপলা জগতের স্বর্গ।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।লতাপাতা ভরা বিলের পানিতে ফুটে উঠা শাপলা গুলোর মাঝে নৌকায় ভাসতে ভাসতে শাপলার শোভা দেখার পাশাপাশি মন কেড়ে নেয় এই স্বচ্ছ পানিতে সাঁতরে বেড়ানো হাঁসগুলো।মাঝে মাঝে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি,কিছু ফড়িং এর লাফালাফি নিমিষেই মনটাকে প্রফুল্লতা ভরিয়ে দেয়।উদাসীন মনটাও যেনো আজ গাইতে থাকে।’

“দূর থেকে গাড়ীতে হেলান দিয়ে আয়ন একদৃষ্টিতে প্রিয়ুকে দেখে যাচ্ছে।তার স্থির চোখের দৃষ্টি যেনো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।মনের ভেতরের যন্ত্রপাতির ক্রিয়াগুলো যেনো থেমে থেমে চলছে,যদি না এখন একে সারানো হয় কি যে হবে আল্লাহই ভালো যানে।কিন্তু এই নীল শাড়ী পড়া প্রিয়ুসী কি বুঝবে আয়নের ভেতরের সেই জ্বালা।আজ অনেক দিন পর যে আয়নের ভেতর আবার তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে।যা এতোদিন আয়ন ধমিয়ে রেখেছিলো প্রিয়ুকে কিছুটা স্পেস দিতে।কিন্তু আজ প্রিয়ুকে এই রুপে দেখে আয়নের ভেতরের সুপ্ত চাহিদাটাও যেনো আবার নড়ে উঠলো।আয়ন আজ ভেতরে ভেতরে ভীষণ তৃষ্ণার্ত অনুভোব করেছে।ওর গলা শুকিয়ে ঠোঁটগুলো কাঠ হতে লাগে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে আবারও ধমানোর বৃথা চেষ্টা করে চলছে।
কিন্তু আজ আর না আজ তোকে চাই আমার প্রিয়ু,খুব করে চাই।তবে আমি আসবো না,তুই নিজেই আসবি।আজ নিজেই তুই ধরা দিবি এই আয়নের কাছে।আই প্রমেজ সোনা।আজ তোকে ধরা দিতেই হবে।তোর জীবনে রোহান নামের চ্যাপটারটা যাতে আর কোনও ভাবে এ্যান্টার করতে না পারে সেই ব্যবস্তাও করে দিবো।এটা বলেই আয়ন একটু বাকা হেসে,চোখে সানগ্লাসটা পড়ে নেয় সূর্যের তাপের উত্তাপের কারণে।আয়নের একদম সহ্য হয় না এই তাপটা।তাইতো প্রিয়ুকে একাই নৌকায় উঠতে হলো।সূর্যের এই তাপ আয়নের স্কিনে একদম সহ্য হয় না।কেমন লালচে বর্ণ ধারণ করে,প্রিয়ু তা আগেই যানে।তাইতো আয়নকে সাথে আসতে দেয়নি।
আয়ন জোড়ে চিৎকার করে ডাক দেয় প্রিয়ুকে।আর মাঝিকে বলে নৌকা ব্যাক করতে।টাইম শেষ।এখানে আর থাকা সম্ভব না।রোদ একটু বেশিই প্রখর হচ্ছে।আর এই তাপে প্রিয়ুর ফর্সা মুখটাও লাল হয়ে যাচ্ছে।যা আয়নকে বাধ্য করছে প্রিয়ু থেকে দৃষ্টি না সরাতে।”

গতকাল সকালে…

–প্রিয়ু কলেজ শেষ করে দিশাকে সাথে করে মাত্র বের হয়।আর তখনই তিয়াশের গাড়ী এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।তিয়াশকে দেখেই দিশা একটু ঘাবড়ে এদিক ওদিক তাকায়।হয়তো কাউকে খুঁজার চেষ্টা করছে।
তিয়াশ গাড়ী থেকে নেমেই ওদের সামনে দাঁড়ালে,দিশা প্রিয়ুকে বায় বলে চলে যেতে নিলো।কিন্তু তিয়াশ দিশার হাতটি ধরে ফেলে।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে দিশা।তাই এখানে কোনও সিনক্রিয়েট করবে না,অসুবিধা কিন্তু তোমারই হবে।চোখ পাকিয়ে বলে তিয়াশ।যা দেখে দিশা এমনেই ভয় পেয়ে যায়।
“এরপর প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করে গাড়ী আসবে নাকি আমি ড্রপ করে দেবো তোকে।”
–না ভাই,আমাকে নিতে আসবে,তোমরা যাও।I think you should speed time alone now..
“তিয়াশ একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুকে বায় বলেই,দিশাকে একটু জোড় করেই গাড়ীতে উঠালো।দিশা ব্যাচারী কিছুক্ষন প্রিয়ুর দিকে নিরিহ ভাবে তাকিয়ে ছিলো।চোখের ইশারায় বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছিলো প্লিজ দোস্ত আমাকে এই লোকটা থেকে আজ উদ্ধার কর।তুই না আমার প্রাণের দোস্ত।কিন্তু প্রিয়ু দিশার ভাবমূর্তি বুঝেও না বুঝার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলো।মুখে তার দুষ্ট হাসি।”

–তিয়াশের গাড়ী চলে যাওয়ার পর প্রিয়ু নিজের ফোনটা বের করলো ড্রাইভার কাকা কে কল দেওয়ার জন্য কিন্তু ঠিক তখনই আরেকটা গাড়ী এসে দাঁড়ালো প্রিয়ুর সামনে।তবে এই গাড়ীটি প্রিয়ুর চেনা না।তাই একটু বিরাক্ত হয়ে সরে যেতে নিলো,কিন্তু গাড়ী থেকে নামা ব্যক্তিটিকে দেখে কিঞ্চিত ভ্রুটা কুচকালো।কারণ মাথায় ক্যাপ,চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাস্ক পরিধান করা একটা লোক বের হলো গাড়ী থেকে।প্রথমে লোকটিকে চিনতে না পাড়লেও পরক্ষণে লোকটিকে চিনতে প্রিয়ুর একটুও সময় লাগলো না।মুখ দিয়ে বিরাক্তকর কন্ঠে বললো…রোহান।
_____________
“রোহানকে প্রিয়ু এখানে একদমই আশা করেনি।রোহানের আচানক এখানে আশার কারণটাও বুঝতে পারছে না।তবুও মুখে কিছু না বলে, প্রিয়ু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আর প্রচণ্ড রাগ উঠছে ড্রাইভার কাকার উপর।আজই কি সব একসাথে হওয়ার কথা ছিলো।প্রিয়ু ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রাইভার কাকা কে কল দিতে যাবে,আর তখনই রোহান প্রিয়ুর সামনে এসে দাঁড়ালো।”
–রোহানকে নিজের এতো কাছে দেখে,প্রিয়ু দুপা পিছনে চলে গিয়ে,বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,কি সমস্যা।আর আপনি এখানে কি করেছেন।আমার কলেজে আপনার কোনও কাজ আছে বলেতো মনে হয় না।আর এ কেমন বেশভূষা ধারণ করছেন।আপনি কি কোনও জঙ্গিবাদী দলের সদস্য নাকি।”
“রোহান চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে পকেটে ভরে নিলো।একটু মুচকি হেসে জবাব দিলো।পাবলিকের মধ্যে অনেকেই আমাকে চিনে,আর কোনও মিডিয়া দেখে ফেললে তোমার জন্যও সমস্যা হবে।তাই আর কি এমন লুক ধারন।যাই হোক কথা ছিলো তোমার সাথে একটু।এখানে পাশেই একটা নতুন কফিসোপ হয়েছে।কফি খেতে খেতে কি আমরা কথা বলতে পারি।”
–না!প্রিয়ুর সোজা উত্তর।আপনার আমার সাথে কোনও কথা থাকতে পারে বলে মনে হয় না।আর প্লিজ আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন।এটা আপনার জন্যই ভালো হবে।না হলে….প্রিয়ু কিছুক্ষন চুপ থাকলো।ছাড়ুন।
আশা করি আপনি বুঝে গিয়েছেন।এটা বলেই প্রিয়ু রোহানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,রোহান আবার বলে উঠে।আমি কি তোমাকে ড্রোপ করে দিয়ে আসতে পারি প্রিয়ু।প্লিজ।”
“প্রিয়ু ঘুড়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই,একটা পাজেরো এসে প্রিয়ুর গা গেষে দাঁড়ায়।এই গাড়ীটি প্রিয়ু চিনে।ভয়ে প্রিয়ুর আত্মাটা একটু কেপে উঠলো।এটারই ভয় পেয়েছিলো এতেক্ষণ।বলে না যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই রাত পোহায়। গাড়ীর দরজা খুলে বের হলো আয়ন।
“-রোহান আয়নকে চিনে,তবে বর্তমানে প্রিয়ুর সাথে আয়নের সম্পর্ক কি তা জানে না।তাছাড়া আয়ন মডেলিং জগতে নামকরা একজন লোক,তাকে না চেনার প্রশ্নই উঠে না।আর রোহান জানে প্রিয়ু আয়নের কাজিন।ব্যাশ।”
–আয়ন এসেই রোহানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রিয়ুর গালটা ধরে বলে,তুই ঠিক আছিস।প্রিয়ু নিজের নার্ভাসনেসটা লুকিয়ে হালকা মাথা নাড়লো।আয়ন প্রিয়ুকে একহাতে জড়িয়ে গাড়ীর দিকে নিয়ে যেতে নিলে রোহানের ডাকে তারা থেমে যায়।
‘-আর প্রিয়ুর তখন মন চাইছিলো রোহানকে ধরে কোনও গাড়ীর নিচে ফেলে দিতে।এ এক মহা ঝামেলা।আয়নদা সে দিনই আমাকে শাসিয়ে বলে ছিলো,রোহান থেকে দূরে থাকতে।তা না হলে রোহানের অবস্থা খারাপ করে ফেলবে।আর এই ছেলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনে বলছে।আয় ভাই আমাকে মার!শালা কুত্তা।যতো মরা আমার উপর পড়ে।’

–আয়ন পিছনে ঘুড়ে,রোহানের দিকে তাকালো।খুব politely ভাবে জবাব দিলো।কিছু বলার আছে আপনার মিস্টার রোহান।
“রোহান হেসে আয়নের কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে হাত মিলালো।আয়নও তা স্বাচ্ছন্দ্যে একসেপ্ট করলো।”
–প্রিয়ুর মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আয়নের এমন শান্ত রুপ সম্পর্কে খুব একটা পরিচিত নয়।
“আয়ন হাতদুটো প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে শান্ত ভাবে বললো,বলুন মিস্টার রোহান।কি বলবেন।”
–একচুয়েলি, আমার প্রিয়ুর সাথে কথা ছিলো।বাট আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেন নিই।কিন্তু প্রিয়ু আমাকে চিনে।
“আয়ন হেসে জবাব দিলো,আমি আপনাকে খুব চিনি।বরং আপনার থেকেও বেশি আমি আপনাকে চিনি।”
–মানে!আমি বুঝতে পারলাম না।
“ছাড়ুন ওসব।আপনি বলুন,হঠাৎ আমার ওয়াইফের সাথে আপনার কি এমন তলব পড়লো,যার কারণে আপনি ওর কলেজ পর্যন্ত ছুটে আসলেন।”
–ওয়াইফ!মানে!আমি যতোটুকু জানি আপনি প্রিয়ুর কাজিন হন।ঠিক।
“হুম,ঠিক বলছেন আপনি।তাতে কি।তাই বলে কি হ্যাসবেন্ড হতে পাড়বো না।প্রিয়ু বর্তমানে আমার ওয়াইফ।আর আমার ওয়াইফের সাথে আপনার কোনও কথা থাকতে পারে বলে মনে হয় না।আর এটা আমার পছন্দও না।কড়া জবাব আয়নের।”
–রোহান কিছুক্ষণ প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে এবার দৃষ্টি আয়নের দিকে আনলো।সেটা মনে হয় প্রিয়ুকে ডিসাইড করতে দিলে ভালো হয় মিস্টার আয়ন।কারণ ও আপনার ওয়াইফ।কোনও নিলামে কেনা প্রোপার্টি না যে,নিজের কোনও মর্জি চালাতে পারবেন না।
“আয়নের এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো,ও হয়তো ভুল শুনেছে।কারণ আজ পর্যন্ত আয়নের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কেউ করেনি।আর এখানে এই ছেলে দুদিন হলো স্টার হয়েছে,আর এখনই আয়নকে টেক্কা দিতে চায়।এসব ভেবে আয়নের রাগটা যেনো বাড়তে লাগলো।”
–পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রিয়ু আয়নের হাতটি ধরে ফেললো।আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,মিস্টার রোহান আমি আগেও বলেছি,আপনার সাথে আমার কোনও কথা নেই।প্লিজ দূরে থাকুন আমার থেকে।
“আয়ন তাচ্ছিল্য কন্ঠে রোহান কে বললো,আশা করি উত্তর পেয়ে গিয়েছেন মিস্টার রোহান।”
‘রোহান নিশ্চুপ।’
–আয়ন প্রিয়ুকে সাথে নিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়লো।পুরো রাস্তায় আয়ন আর কোনও কথা বললো না প্রিয়ুর সাথে।প্রিয়ু একদুবার চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু হাতে কিছুই আসে নিই।আয়ন প্রিয়ুকে বাড়ীতে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলো অফিসে।প্রিয়ু কিছুটা আপসেট হলেও মনে মনে ভেবে নিলো,রাতে বাসায় আসলে বুঝিয়ে বলবে সব।
“সেদিন রাতে আয়ন একটু দেরি করেই বাসায় এসেছিলো।আর এসেই প্রিয়ুকে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আয়ন একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুর পাশে দাঁড়ালো।আর তখনই টেবিলে উপরে রাখা একটা চিরকুট চোখে পড়লো আয়নের।আয়ন চিরকুটটা খুলে দেখে এতে কিছু লিখা আছে…

“আম সরি আয়নদা।আমি সত্য রোহানকে আসতে বলেনি।আমি জানি না,ও আমার কলেজের ঠিকানা কোথায় পেয়েছে।প্লিজ বিলিভ মি।”

–চিরকুট পড়ে,অনেকটা শান্তি লাগছে আয়নের।সত্য বলতে ও চেয়েছিলো এই ব্যাপারে কথা বলতে।কিন্তু তার আগেই প্রিয়ু ওর জবাব দিয়ে দিয়েছে।আয়নের মনটা খুশি হয়ে গেলো।তাই আয়ন ডিসাইড করলো প্রিয়ুকে কাল সারপ্রাইজ দিবে।সারাদিন ওর এই মিষ্টি পরীটিকে নিয়ে ঘুড়বে।অনেক আগে প্রিয়ু আবদার করছিলো আয়নের কাছে,শাপলা বিল দেখতে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তখন আয়ন প্রিয়ুর এমন আবদারকে একদম নাকচ করে দিয়েছিলো।আর তাই প্রিয়ুকে সকালে জোড় করে ঘুম থেকে তুলেই আজ শাপলা দেখাতে নিয়ে আসলো আয়ন।
____________
“তিয়াশ একটা লেকের পাড়ে গাড়ীটি থামালো।আশেপাশে তেমন কেউ নেই,তবে চারপাশটা গাছপালা দিয়ে ঘেড়া।পুরো রাস্তায় না দিশা কিছু বলেছে,না তিয়াশ।এখনো গাড়ীতে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।দিশার এমন আচরণ তিয়াশ নিতে পাড়ছে না।সবই তো ঠিক ছিলো।দিশাকে সেদিন রাজিও করে ফেলেছিলো।তাহলে হঠাৎ আবার কি হলো।”
–কথায় বলেনা,প্রত্যেক মানুষের সহ্যের একটা সীমা থাকে।আর মানুষটি সে পর্যন্তই নিজেকে আটকে রাখতে পারে।তিয়াশ কিছুটা রাগী কন্ঠে দিশাকে জিঙ্গেস করলো,সমস্যা কি তোমার।এমন অচেনা বিহেভ করছো কেনো।আর কোন সাহসে তুমি আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে দিয়েছো।তুমি কি মনে করো।নাম্বার ব্লক করলেই সম্পর্ক শেষ।আমি কিছু জিঙ্গেস করছি দিশা এন্সার মি ডেম।গাড়ীতে একটা বাড়ী দিয়ে।
“ছিঁচকাঁদুনী দিশা তিয়াশের এমন কঠোর আচরণ একদম নিতে পারেনি।তাই ভয়ে আবার কেঁদে দিলো।”
–ও গোড!দিশু তুমি এতো কান্দো কিভাবে বলবে।তোমার ট্যাংকি কি কখনো খালি হয়না।এতো পানি পাও কই।বুঝতে পারছি,এই তোমার কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনদিন পানির বিল বাড়াচ্ছে।গরীব মানুষের হায় লাগবে তোমার উপর।ওদের উপর একটু দয়া করো।
“তিয়াশের টিটকারি মারা কথায় দিশার মেঝাঝ আরো বিগড়ে গেলো।দুহাত দিয়ে তিয়াশকে মারতে নিলে,তিয়াশ ধরে ফেলে দিশাকে কাছে টেনে নেয় নিজের।হালকা ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে,প্লিজ দিশু একবার বলো,কি হয়েছে।না বললে জানবো কি করে।আমার কাছে এক্সট্রা কোনও পাওয়ার নেই তোমার মনের কথা জানবার।”
–দিশা এতোক্ষন পর শান্ত হয়ে তিয়াশকে বলতে লাগলো।আপনার মা আমাকে পছন্দ করে না।সেদিন হাসপাতালে আপনাকে দেখতে যাওয়ায় উনি অনেকগুলো কথা শুনিয়েছেন।আর এও বলেছে,আমার মতো এমন অনেক মেয়েই আপনার পিছে লেগে থাকে।কিন্তু তাতে কোনও লাভ নেই।কারণ আপনার মায়ের মর্জি না থাকলে আপনি কাউকে একসেপ্ট করবেন না।আর আমাকে উনার একদম পছন্দ হয় না।আমার মতো মিডেলক্লাশ ফ্যামেলি মেয়েকে উনি কোনো দিনও গ্রহণ করবে না।আমাকে আপনার জীবন থেকে সরে যেতে বললো।
“মায়ের এমন আচরণ সম্পর্কে তিয়াশ খুব ভালো করেই অবগতো।মায়ের এমন আচরণের কারণে তিয়াশকে প্রায়ই লজ্জিত হতে হয় সবার কাছে।যেমন আজ হলো।তিয়াশ দিশাকে নিজের থেকে সরিয়ে,দিশার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে উঁচু করলো।দিশু আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো।আমি মায়ের হয়ে সরি বলছি।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার হাতটি কখনো ছাড়বো না।কখনো যদি আমি বাধ্য হই তোমাকে ছাড়তে,তাহলে আমার লাইফে “এই তুমিটার জায়গা “অন্য কেউ পাবে না।আমি আসতেই দিবো না।এতোটুকু কি বিশ্বাস করতে পারো।”
–দিশা খুশি হয়ে তিয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।তিয়াশও যেনো আজ অনেকদিন পর মনে একটু শান্তি ফিরে পেলো।
“বেশ কিছুক্ষন সময় তারা একসাথে কাটালো।তিয়াশ দিশার চশমাটা নিজের সার্ট দিয়ে পরিস্কার করে পড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো।আচ্ছা দিশু কারণটা কি এটাই ছিলো নাকি আরো কিছু আছে।কেনো জানি তিয়াশের বিশ্বাস হচ্ছে না,এই কারণে দিশা এতোদিন ওকে এভোয়েড করেছে।সব কিছু থেকে ব্লক করেছে।কারণ ওর মায়ের স্বাভাব সম্পর্কে দিশারও কিছুটা আইডিয়া আছে।তাহলে এতো রিয়েক্ট কেনো।এই ব্যাপারটাই ভাবাচ্ছে তিয়াশকে।”
–দিশা তিয়াশের দিকে তাকিয়ে, আস লে।
“হুম বলো কি?”
–সেদিন হসপিটাল থেকে বেড়াবার সময়, হসপিটালে বাহিরে নিশান্তের সাথে দেখা হয়।আর নিশাান্ত বলে,আপনার উপর হামলাটা নাকি ও করিয়েছে।আমি যদি আপনার সাথে ব্রেকআপ না করি তাহলে পরবর্তী হামলা আরো ভয়ানক হবে।আমি চাইনা,আমার জন্য আপনার কোনও ক্ষতি হোক।তাই আপনাকে একেবারে এভোয়েড করতে লাগলাম।আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।সরি!
“হুম, তাহলে এ ব্যাপার।তুমি চিন্তা করোনা।ও নিশান্ত কিছুই করতে পারবে না আমার।ও কেবল তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।একটা প্রমেজ করো দিশু।
–কি? ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে তিয়াশের দিকে দিশা।
“যতো যাই কিছু হোক তুমি কখনো এই সম্পর্কটাকে ভাঙ্গার চেষ্টাও করবে না।যদি কখনো তুফান আসে,তাহলে আমাদের সম্পর্কটাকে সময়ের হাতে ছেড়ে দিবে।দেখবে সময়ই সব ঠিক করে দিবে।”
দিশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।তিয়াশও খুশিতে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে।তবে নিশান্তের ব্যাপারটা তিয়াশকে ভাবাচ্ছে এখন।

চলবে…..

—–কমেন্ট করতে ভুলবেন না—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here