“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-25
“বিয়ের আয়োজন খুব ভালো করেই শেষ হলো।আজ রিসেপশনের পার্টির জন্য বড় একটা হোলরুম বুক করা হলো।চারদিকে হাজার মানুষের ভিড়।আয়ন একটু হিমশীম খাচ্ছে এতো মানুষকে একসাথে এটেন্ড করতে গিয়ে।তাছাড়া আয়নের বিয়ের খবরটা ছড়ানোর পর এই পার্টির ম্যান কেন্দ্রবিন্দু যেনো আয়ন আর প্রিয়ু হয়ে গিয়েছে।চেনা-অচেনা সব গেস্টরা এসে আগে আয়ন আর প্রিয়ুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তারপর যাচ্ছে অনিক আর সারার দিকে।তাছাড়া মিডিয়া তো আছেই।আর কিছুক্ষণ পরপর কেউ না কেউ এসে প্রিয়ু আর আয়নের সাথে সেলফি তুলার রিকোস্ট করছে ‘পিক ক্যাপচার’ করার জন্য।কম বেশি সবাই এমন করবে প্রিয়ু ভেবেছিলো,কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটা অতিরিক্ত হবে প্রিয়ু বুঝতে পারেনি।এখন অনেকটা অস্বস্তি বিরাজ করছে ওর পুরো মুখে।
–তার উপর পার্টিতে আসা গেস্ট,সবাই যেনো আয়ন আর প্রিয়ুকেই ঘিরে রেখেছে।হয়তো আয়নের হঠাৎ নিজের বিয়েটার এনাউসমেন্ট অনেকের কাছেই আশ্চর্য ছিলো।কেউ কেউতো বিশ্বাসই করতে পাড়ছিলো না।তাই সবাই নিজ চোখে আয়নের পার্টনারকে দেখে যাচ্ছে।প্রায় তিন ঘন্টা ধরে প্রিয়ু আয়নের সাথে দাঁড়িয়ে গেস্টদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।প্রিয়ুর এখন খুব রাগ উঠছে।আর নিজের সব রাগগুলো একসাথে দলা বেধে আয়নের গলায় ঝুলিয়ে দিতে মন চাইছে।কিন্তু আফসোস তা করা যাবে না।তাই কপাটরাগ দেখিয়ে আয়নের দিকে তাকালো প্রিয়ু।
“আয়ন ভ্রুকুচকে ইশারা করে সমস্যা কি?প্রিয়ুর এমন তাকানো দেখে।”
–কি দরকার ছিলো,নিজের বিয়ের কথা ঢোল পাড়ানোর।নিজে ঢোল পাড়িয়ে এখন আমাকে চৌকিদারি করতে দাঁড়িয়ে রেখেছো এখানে।যত্তসব আজাইরা কারবার।পার্টিতে সবাই কতো মজা করছে আর আমাকে দেখো স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি।
“আয়ন মুখে একটু হাসি টেনে সবার চোখের আড়ালে প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে কাছে টেনে,ফিসফিসিয়ে বললো,আচ্ছা আমি ঢোল পাড়ছি।কালরাতের কথা মনে নেই।নাকি আমি সব ডিটেলস খুলবো।কাল আমাকে ইমোশনে ফেলে কতো কিছু বলেছিলি মনে নেই।নাকি আমার মুখে শুনতে চাস।প্রথম থেকে লাস্ট পর্যন্ত বলবো।কোথা থেকে যেনো শুরু করেছিলাম আমরা কিস..প্রিয়ু আর বলতে দিলো না।”
–ব্যাস!আর এতো চোপা মারতে হবে না।আমি বুঝে গেছি বাকিটা।
“আয়নের হাসি পাচ্ছে প্রিয়ুর এমন করুন মুখটি দেখে।আয়ন জানতো এমনেই হবে।প্রিয়ুকে সবার সামনে আনা মানে প্রিয়ুর স্বাধীন ভাবে চলা ফেরায় বেগাত ঘটা।প্রিয়ু এতোদিন যেভাবে মন চেয়েছে ঘুরছে ফিরছে।কিন্তু আজকের পর থেকে ব্যাপারটা একদম পাল্টে যাবে।এতোদিন প্রিয়ু শুধু প্রিয়ু চিলো।কিন্তু আজকের পর থেকে প্রিয়ুকে কেউ নিজের নামে চিনবে না।চিনবে মিসেস মাহবুভ রুপে।তাইতো আয়ন এতোদিন চুপ ছিলো।কিন্তু কালরাত প্রিয়ুর অভিমান ভাঙ্গাতে গিয়ে প্রিয়ুকে সবার সামনে আনতে হলো।আয়ন বুঝতে পাড়ছে হঠাৎ করে এসব ফেস করা প্রিয়ুর জন্য একটু অস্বস্তিকর।কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।”
–রাগ করিস কেনো সোনা।আমিতো তেমন কিছুই করলাম না।জাস্ট আমার আইডিতে তোর আর আমার বিয়ের একটা পিক দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলাম সবার সাথে।যেমনটা তুই চেয়েছিলি।আর দেখ কি অবস্থা।এবার বুঝলি কেনো আমি চুপ হয়ে ছিলাম।তোর হ্যাসবেন্ড এর নামটি কোনও সাধারণ নাম না,বুঝলেন মিসেস মাহবুভ প্রিয়ুর নাক টেনে।”
–আআ….কি করছো।এভাবে কেউ নাক টানে সবার সামনে।আমাকে কি তোমার বাচ্চা মনে হয়।
“আয়ন আরো একটু কাছে গিয়ে প্রিয়ুর কানের কাছে মুখ নিয়ে,ছিঃ সোনা!কিসব বলছিস।বাচ্চা ভাবলে কি কাল রাতে এতো কিছু করতে পারতাম।বিশ্বাস না হলে আজও এর ডেমো দেখাবো,রাতে রুমে গিয়ে।ওকে সোনা।রেডি তো তুই।”
–আয়নের লাগাম ছাড়া কথার জ্বালায়,প্রিয়ু রাগ দেখিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।আর মনে মনে কিছু গালিও দিলো আয়নকে।আয়ন যে ইচ্ছে করে কাল রাতের কথা তুলে প্রিয়ুকে বিব্রত করে লজ্জা দিচ্ছে বারবার তা প্রিয়ু খুব ভালো করেই জানে।আর প্রিয়ুও যে লজ্জা পাচ্ছে তা প্রিয়ুর লাল লাল গাল দুটো দেখে যে কেউ বলে দিবে।
“তাই মনে মনে ভেবে নিয়েছে প্রিয়ু আয়নের পাশেই আজ আর ঘেঁষবে না।কিন্তু নিজের কথায় বেশিক্ষণ কায়েম থাকতে পাড়লো না প্রিয়ু।নিলীমাকে আয়নের দিকে আসতে দেখে প্রিয়ু নিজে গিয়েই আয়নের পাশে দাঁড়িয়ে আয়নের একহাত জড়িয়ে ধরলো।আয়ন ব্যাচারাতো প্রথমে হাবলার মতো প্রিয়ুর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো।ব্যাপারটা বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লেগে গেলো।কিন্তু সামনে আসা নিলীমাকে দেখে সব বুঝে গেলো।তার বউটার মনে হঠাৎ ওর প্রতি এতো দরদ কেনো আসলো।
“হ্যালো আয়ন।কেমন আছো।”
–ইয়া,ইয়া।আমরা ফাইন,ফাইন।আয়ন বলার আগেই প্রিয়ু জবাব দিলো।
“এই মেয়ে, মাথা ঠিক আছে তো।নাকি তার সব ছিঁড়া।আমি আয়নকে জিঙ্গেস করছি তোমাকে না।তুমি কেনো উত্তর দিচ্ছো।”
–কারন আপনার আয়ন তো পুরোটাই আমার।তাই আমি মানে উনি,আর উনি মানে আমি।আমরা দুশরীরে এক জান।দেখেন না কেমন চিপকে দাঁড়িয়ে আছি দুজন এক সাথে।ঠিক না আয়ন সোনা।প্রিয়ু একচোখ টিপ মারে আয়নকে।
‘প্রিয়ুর কান্ড দেখে আয়ন বিষম খেলো।হালকা কাশি দিয়ে প্রিয়ুর সাথে তাল মিলালো।’
“নিলীমা কিঞ্চিত অবাক হলো।আয়নের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আয়নের মতো এমন হার্ড পার্সোনোলিটির একজন লোক কিভাবে একটা মেয়ের এসব বাচ্চামো সহ্য করে দমে গিয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে।লোকে ঠিকই বলে,প্রেম চালাক কেও গাধা বানিয়ে দেয়।মুখে একটু মেকি হাসি টেনে আয়নের দিকে তাকিয়ে নিলীমা জিঙ্গেস করলো।এই মেয়ে কি আবার ড্রিংকস করেছে আয়ন।”
–আয়ন কিছু বলার আগে,আবার প্রিয়ুই জবাব দিলো। না না আপু এখনো করিনি।কিন্তু ওই যে দেখুন ওখানে সব ব্যবস্তা করা আছে।আজও যদি কাউকে আবার ঝাড়তে মন চায় তাহলে করে নিবো।
“নিলীমা রেগে আয়নের দিকে তাকালো।আয়ন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রিয়ুকে আস্তে একটা ধমক দিলো।হাজার হোক নিলীমা এখন গেস্ট ওদের।আর গেস্টদের অপমান করা একদম উচিৎ মনে হয়না আয়নের।আয়নের ধমকে প্রিয়ু রেগে গেলো,আর আয়নকে একা রেখেই চলে গেলো ওখান থেকেই।”
–নিলীমা ঠোঁটে একটু বাকা হাসি রেখে আয়নকে বললো,ম্যাচিউরিটির ‘m’ ও এখনো আসেনি তোমার বউয়ের মাঝে।সামলিয়ে রেখো।তা না হলে লোকের কাছে বারবার লজ্জিত হতে হবে।
“নিলীমার এমন কথায় আয়নের মুখটা শক্ত হয়ে উঠে।প্রিয়ুর সম্পর্কে কোনও কথাই আয়নের সহ্য হয় না,তাই তৎক্ষনিক জবাব দিয়ে দিলো নিলীমাকে।সেটা আমি বুঝে নিবো নিলিমা তোমাকে ভাবতে হবে না এসব নিয়ে।পার্টিতে এসেছো।এন্জয় করো।ওকে।”
___________
“তিয়াশ কখন ধরে দিশার পিছনে পিছনে ঘুরছে।অথচ দিশা এমন বিহেভ করছে যেনো তিয়াশকে ও চিনেই না।তিয়াশের এখন মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে।দিশার এমন বিহেভিয়ার একদম সহ্য হচ্ছে না।
দিশা প্রিয়ুর সাথে সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ তিয়াশের উপর চোখ পড়লো।তিয়াশ কোমড়ে হাত দিয়ে দিশার দিকেই অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।দিশার মনে হলো তিয়াশ যেনো আজ চোখ দিয়েই ওকে ভস্ম করে ফেলবে।এতো দূর থেকেও সেই উত্তাপ অনুভোব করছে দিশা।শুকনো একটা ঢোক গিললো।দিশা যানে ওকে এর শাস্তি পরে ভোগ করতে হবে।কিন্তু এই সময় ব্যাপারটা মাথায় নিলো না।কারণ দিশা বুঝতে পাড়ছে তিয়াশের মা দিশাকে তিয়াশের আশেপাশে মোটেও সহ্য করছে না।কয়েকবার ইনডাইরেক্ট ভাবে তা বুঝিয়েও দিয়েছে।দিশা চায় না ওকে নিয়ে মা ছেলের মধ্যে কোনও ঝগড়া হোক বা পার্টিতে কোনও সিনক্রিয়েট হোক।তাই আপাততো বিয়েতে তিয়াশকে এড়িয়ে চলাটা ভালো মনে করলো।কিন্তু এই তিয়াশ বাচ্চাদের মতো ওর পিছুপিছু ছুটছে।যা দিশাকে আরো বিব্রত করছে।আশেপাশের মানুষগুলোও কানাঘুষি করছে।কিন্তু এতে তিয়াশের কোনও রিয়েকশন নেই।তিয়াশের এমন পাগলামো গুলো দেখে দিশা ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও তা তিয়াশকে বুঝতে দিচ্ছেনা।”
–হোলরুমের একটা কর্নার সাইডে তিতির দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের কতো মানুষের ভিড়,কিন্তু তবুও যেনো প্রচণ্ড একাত্মবোধ ফিল করছে তিতির।মনের ভেতরের উত্তান পতন কাউকে বুঝতে না দিলেও,ওর শুকিয়ে যাওয়া মুখখানি বলে দিচ্ছে ওর ভেতরের জ্বালাপোড়া।জ্বালাটা কাল রাত থেকে যেনো আরো দশগুণ বেড়ে গিয়েছে।যখন থেকে লোরিনকে দিনেশের রুম থেকে বরে হতে দেখেছে।
কালরাতে তিতির যখন কোন একটা কাজে রুম থেকে বের হলো, তখনই তিতির দেখতে পেলো লোরিন দিনেশের রুম থেকে বের হচ্ছে।লোরিনের গায়ে তখন ছিলো সিলেভলেস ওয়ান পিছের একটা শর্ট নাইটি।যার ফলে,শরীরের অনেকাংশই উন্মমুক্ত ছিলো তার।তিতির বুঝতে পাড়লো না,এমন একটা নাইটি পড়ে নিজেকে মোহেনীয় বানিয়ে রাতে একটা পর পুরুষের রুমে যাওয়ার কারণ কি।তিতির নিজের কৌতুহল আটকাতে না পেরে, দিনেশের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভেজানো দরজাটা হালকা ফাঁক করে যা দেখলো,তাতে তিতিরের বুকটা ধক করে উঠলো।নিশ্বাসটা গলার মাঝেই আটকে গেলো।কেউ যেনো গলা চেপে ধরেছে তিতির।মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পাড়লো না।কিন্তু চোখের জল আর বাধ মানলো না।তিতির ভাবতে পারিনি এমন কিছু ওর চোখে পড়বে।
কারণ দরজায় দাঁড়িয়ে তিতিরের চোখ পড়লো দিনেশের উদাম শরীরটার দিকে।দিনেশ খালি গায়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে সার্ট পড়ছিলো আর তখনি তিতির দিনেশের খোলা পিঠে লোরিনের লিপস্টিক এর দাগ দেখতে পেলো।এটা দেখার পর তিতির আর এক মুহুর্তেও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়লো না।নিজের রুমে এসেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।সারারাত তিতির আর ঘুমাতে পারেনি।তিতির বিশ্বাসই হচ্ছে না দিনেশ এমন কিছু করতে পারে।কিছুুদিন আগেও যে ছেলে ওকে ভালোবাসি বলে মারিয়া হয়ে যাচ্ছিলো আজ সেই ছেলেই অন্য মেয়ের সাথে।ভাবতেই অবাক লাগছে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো সত্যি কি ভালোবাসা ছিলাম আমি দিনেশের নাকি শুধুই ভালোলাগা।সারারাত কেটে গেলো শুধু এই চিন্তায় চোখের পানিতে।তাইতো আজ পার্টিতে এসেও তিতির একদম চুপচাপ বসে আছে।কারো সাথে কথা বলার কোনও আগ্রহ একেবারেই নেই।কখন পার্টি শেষ হবে তার প্রতিক্ষা করছে।
“আর এদিক দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দিনেশ পুরোটা সময়ই তিতিরকে লক্ষ্য করছে।তিতির মুখ দেখেই আন্দায করতে পাড়ছে কিছু একটা হয়েছে,যা ঠিক না।কিন্তু কি?”
–আয়ন নিজের বাচ্চা বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে ব্যস্ত।কখন ধরে প্রিয়ুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু প্রিয়ু দূরত্ব বজায় রেখে রেখে হাটছে।মনে হয় আয়নের শরীরে কোনও ছোঁয়াচে রোগ আছে,প্রিয়ু ঘেষলে তারও হবে।আয়ন অনেকবার চোখের ইশারায় সরিও বলেছে।কিন্তু প্রিয়ু পাত্তা না দিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কারণ আপাততো আয়নের সরি একসেপ্ট করার মুডে নেই।আয়ন ওকে নিলীমার সামনে ধমক দিয়েছে।দিতে মন চাইলে পড়ে দিতো।ওই ডাইনীর সামনে কেনো?নিশ্চয় ওই ডাইনী এটা দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে।এসব কারণেই প্রিয়ু মুখটা ভার করে ঘুরছে।
_____________
“পার্টি শেষ হবার পর প্রিয়ু সোজা নিজের রুমে চলে এসেছে।আর এখনো মুখ ভার করেই বিছানা ঠিক করছে ঘুমানোর জন্য।”
–আয়ন রুমে এসে প্রিয়ুকে বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখেই,ভীষণ হাসি পেলো ওর।কিন্তু আপাততো লোহা গরম,এখন হাসলে এই লোহা লাভা হয়ে প্রথমে ওকেই জ্বালাবে।তাই চুপচাপ ফ্রেস হতে চলে গেলো।ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ু শুয়ে পড়েছে।আয়ন একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুর বেডের কাছে হাটু গেড়ে বসলো।
“প্রিয়ু মাথায় হাত বুলিয়ে আয়ন, সরি বললো প্রিয়ুকে।লক্ষি সোনা আমার।দেখ পার্টি থেকে এ পর্যন্ত কতোবার সরি বললাম।এতো সরি তো আমি, আমার ইহজীবনে কাউকে বলিনি।কিন্তু প্রিয়ু কিছু বলছে না।প্রিয়ুকে চুপ দেখে আয়নের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো,আয়ন টুপ করে প্রিয়ুর ঠোঁটে একটা কিস করে দিলো।”
–আর এতে প্রিয়ু মরিচের মতো জ্বলে উঠলো।লাফ দিয়ে উঠে বসে,আয়নের দিকে নিজের রাগী চোখে তাকায়।
“আর এটা দেখে আয়নের আবার হাসি পায়।কারণ প্রিয়ু রাগলে একদম কিউটের ডিব্বা লাগে।আয়নের মন চায় তখন প্রিয়ুর নরম,সোপ্ট, মসৃণ গাল দুটো টেনে দিতে।কিন্তু এখন নিজের এই চাওয়াটা আপাততো সাইডে রাখলো প্রিয়ুসীকে মানাবার জন্য।”
–আয়ন প্রিয়ুর হাতদুটো টেনে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো।সরি তো জান।আর বোকা দিবোনা।ধমকও দিবো না।এই যে কানে ধরে সরি বলছি প্লিজ।আয়ন এক কান ধরে ইশারায় দেখালো।প্রিয়ু অভিমানে মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো এতো সহযে ও মাপ করবে না।
“আয়ন প্রিয়ুর মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে,আবার একটা কিস করলো ঠোঁটে।প্রিয়ু যেনো আবার অবাক হলো,আয়নের এমন হুটহাট চুমতে।”
–তখন ও আমাদের গেস্ট ছিলো প্রিয়ু।আর গেস্টদের এভাবে কারণ ছাড়া অপমান করাটা কি ঠিক বল।
“প্রিয়ু মাথা নাড়ায়,তার মানে না।প্রিয়ু নিজের ভুলটা বুঝতে পারে।আসলেই তখন এ কাজটা করা ঠিক হয়নি।এটা ওর বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই না।তাই ও নিজেও সরি বলে আয়নকে।”
–আয়ন আবার প্রিয়ুর ঠোঁটে একটা কিস করে,ইটস ওকে সোনা।আমি জানি তুই নিলীমাকে পছন্দ করিস না।আমিও করি না।কিন্তু কি করবো বল,মায়ের বন্ধুবীর মেয়ে,তার উপর ওদের কোম্পানির সাথে আমাদের অনেক বড় একটা প্রজেক্ট জড়িত,তাই না চাওয়া সত্যেও ওকে সহ্য করতে হয়।
“ও সব সময় তোমার গায়ে পড়ে কথা বলে,কিন্তু তুমি কিছু বলো না।আমার এসব একদম পছন্দ না।প্রিয়ু মুখটা আবার ভার করে আয়নকে অভিযোগ করে।”
–আয়ন যানে প্রিয়ুর মনে আয়নের জন্যও একটা সোফ্ট ফিলিং আছে,কিন্তু সেটা আজও ভালোবাসা কিনা আয়ন যানে না।প্রিয়ু এখনো ওর মনের কথা প্রকাশ করেনি।কিন্তু বলে না,কিছু অনুভূতি লুকানো যায় না,ভালোবাসা তেমনি এক মিষ্টি অনুভূতি।ইচ্ছা করলেও লুকানো সম্ভব না।আজ প্রিয়ুর জেলাছি তাই প্রকাশ করছে।আয়ন যেমন প্রিয়ুকে নিয়ে পজেসিভ তেমনি প্রিয়ুও অন্যকারো সাথে আয়নকে দেখতে চায়না।প্রিয়ু হয়তো যানেই না ও আয়নকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে।
“আয়ন আবার ওর প্রিয়ুসীর ঠোঁটে একটা কিস করে বললো,আমার নিজেরও একদম পছন্দ না,সোনা।তাই তো ওর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি।কিন্তু ওকে তোর ভাষায় কি বলে জানিস,ছেঁচড়া মেয়ে! আমার বিয়ে হয়েছে যেনেও পিছ ছাড়ছে না দেখিস না।”
–প্রিয়ু আরো কিছু বলতে নিবে কিন্তু আয়ন আবার প্রিয়ুর ঠোঁটে কিস করলো,কিন্তু এবার আর ছাড়লো না।তার মানে আয়ন আর কিছু বলতে আগ্রহ না।আর প্রিয়ুও নিজের অজান্তেই দুহাত দিয়ে আয়নকে টেনে নিলো নিজের কাছে।একদম কাছে।ব্যাপাটা আয়নকে একদমই অবাক করলো না,বরং খুশি হয়ে প্রিয়ুকে শক্ত হাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আজ প্রিয়ু সক্রিয়ভাবে আয়নের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।সুখের এক আদিম খেলায় মেতে উঠলো ওরা দুজন।
_____________
“বিয়ের পর পরই অনিক আর সারাকে হানিমুনে পাঠিয়ে দিলো আয়ন।অনিক অবশ্য যেতে চায়নি,কিন্তু দাদার আদেশে অনেকেটা বাধ্য হলো।”
–আর আয়নকেও আবার অফিসের কাজে মন দিতে হলো।অনেকদিন ছুটি কাটানোর পর অনেক কাজ পেন্ডিং পড়েছিলো।তাই অফিসে এসে শ্বাস নেওয়ার সময়ও পায়নি।তার উপর অনিকও নেই,তাই আয়ন আর তিয়াশের উপরই চাপ পড়লো সব।পর পর দুটো মিটিং এটেন্ড করে আয়ন অনেকটা ক্লান্ত নিয়ে নিজের কেবিনে এসে বসলো।হঠাৎ প্রিয়ুর কথা মনে পড়তেই ফোনটা হাতে নিলো।প্রায় বিশটা মিসকল তাও আবার আননোন নাম্বার থেকে।আয়ন একটু অবাক হলো।একটু চিন্তা করে নাম্বারটিতে কল দিলো।অপর পাশ থেকে রিসিভ করা ব্যক্তির কন্ঠ শুনেই আয়ন চমকে গেলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে শুনলো অপর পাশের ব্যক্তিটির ফোন করার কারণ।আয়ন ফোনটা কোনও রকম কেটেই দ্রুতো অফিস থেকে বের হয়ে গেলো কাউকে কিছু না বলে।
“আজ কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তার অপর পাশে ফুসকার স্টোল দেখে প্রিয়ু ডানেবামে না থাকিয়ে রাস্তা পার হতে নিলেই হঠাৎ একটা বাইকের সাথে ধাক্কা লেগে প্রিয়ু ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়।এতে খুব বেশি ব্যাথা না পেলেও পায়ে আর মাথায় ভালোই ব্যাথা পায়।দিশা দৌড়ে এসে প্রিয়ুকে ধরে।দিশা আর ওর কিছু ক্লাশমেট এর সাহায্যে গাড়ীতে উঠে বসে প্রিয়ু।দিশা ড্রাইভারকে বলে তারাতারি হসপিটালে নিয়ে যেতে।দিশা একহাতে প্রিয়ুকে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফোনটা বের করে আয়নকে কল করতে থাকে।”
–ডাক্তার প্রিয়ুকে কিছুতেই সুই দিতে পাড়ছে না।ও সুইয়ের কথা শুনেই বাচ্চাদের মতো কেঁদে চলছে সেই কখন ধরে।আয়ন কেবিনে এসে প্রিয়ুকে এভাবে কাঁদতে দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো।প্রিয়ুর কাছে এসেই,কি হয়েছে সোনা।কাঁদছিস কেনো।সব ঠিক আছে তো,খুব পেইন করছে কি?কোথায় করছে আমাকে বল প্লিজ।এখনি কমে যাবে।একদম ঠিক হয়ে যাবি।আমি আছি না।প্রিয়ুকে হালকা জড়িয়ে ধরে,রাগী চোখে ডাক্তারের দিকে তাকায়।সমস্যা কি?এখনো ওর ট্রিটমেন্ট করেন নিই কেনো?”
–স্যার তেমন চিন্তার কিছু না।তবে পেইন কমানোর জন্য একটা ইনজেকশন দিতে হবে।কিন্তু পেশেন্ট ইনজেকশনের নাম শুনেই বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি।
“বাচ্চাদের মতো কি?ওতো বাচ্চাই।আপনার কি ওকে দেখে বুড়ি মনে হচ্ছে আয়ন কিছুটা রেগে।কথা না বলে কাজ করুন।আয়ন ইশারায় ডাক্তারকে সুই দিতে বললো।
–আয়নের কথা শুনে ডাক্তার ব্যাচারাও আহম্মক হয়ে গেলো।কি বলে এই লোক।এতো বড় ধামড়ী মেয়েকে নাকি উনার বাচ্চা মনে হয়।ডাক্তার মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও কিছুই বললো না।চুপচাপ নিজের কাজ করে চলে গেলো।
“প্রিয়ু যখন আয়নের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছিলো,তখনই আয়নের ইশারায় ডাক্তার সুইটা দিয়ে ফেলে।প্রিয়ু ছোটবেলা থেকেই সুই দিতে ভয় পায়,তাইতো সুই এর ভয়ে ডাক্তার দেখাতেও যেতো না।আজও তাই হলো।”
–এক এক করে সবাই চলে যায়,আয়ন আর প্রিয়ুকে একা রেখে কেবিনে।আয়ন প্রিয়ুকে শান্ত করে ওর মুখটা তুলে জিঙ্গেস করলো কিভাবে হয়েছে এসব।প্রিয়ুর সব বলতে দেরি আয়নের ঝাড়ি দিতে দেরি হলো না।সব সময় বাচ্চামো,বড় হবি কবে।কতোদিন বলেছি এভাবে তিড়িংতিড়িং করে চলা ফেরা করবি না।কিন্তু তুই কথা শুনলে তো।আজ থেকে তোর সব বন্ধ।খুব বেশি বাড় বেড়েছিস।কিছু বলি না বলে মনে করিস না,আমি ভালো হয়ে গিয়েছি।শুধু নিজেকে শান্ত রাখছি।না হলে তোকে আছাড় মেরে হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে ফেলতাম এতোক্ষণ।
“আয়নের ধমকে প্রিয়ু রেগে আয়নকে দূরে সরাতে নিলো নিজের থেকে।কিন্তু একচুলও সরাতে পারলো না।আয়ন নিজের জায়গাই দাঁড়িয়ে আছে।”
–‘হয়েছে,ব্যাশ! এতোটুকুই শক্তি।মশা আসছে হাতিকে সরাতে আয়ন হাসতে হাসতে বললো এবার।’
“একতো এক্সিডেন্ট হয়ে কতো জায়গায় ফাও ব্যাথা পেয়েছে,তার উপর আয়নও বকছে সেই কখন থেকে।আরে ভাই কেউ ইচ্ছা করে কি নিজের এক্সিডেন্ট করে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।এই লোকটা একটা বদজাত।”
–প্রিয়ুকে মুখ ভার করে থাকতে দেখেও আয়ন আজ আর প্রিয়ুর রাগ ভাঙ্গালো না।চট করে প্রিয়ুকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো কেবিনের বাহিরে।প্রিয়ু কিছু বলতে মুখ খুললেই,আয়ন টুপ করে একটা চুমো দিয়ে দেয় ওর ঠোঁটে।আর এতেই কাজ হয়ে যায়।
চলবে….।