“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-২৯

0
3171

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-29

আয়ন প্রিয়ুকে সেই বাড়ীতে নিয়ে এলো,যেখানে ওদের বিয়ে হয়েছিলো।প্রিয়ু কিছুতেই নূর ভিলায় যেতে রাজি না,আয়ন বুঝতে পাড়ছে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে,তা না হলে প্রিয়ু এমন আচরণ করার কথা না।তাছাড়া কি কারণে প্রিয়ু গার্ড থেকে লুকিয়ে ভার্সিটির পিছন গেট দিয়ে বের হয়েছে তাও তো জানতে হবে।কিন্তু আয়ন চায়না বাড়ীতে কেউ কিছু জানুক।ওদের ঝগরা,মান-অভিমান কাউকে জানাতে আগ্রহ না আয়ন।

–“প্রিয়ুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়েই আয়ন ফ্রাস্টেড বক্সটা নিয়ে এলো।প্রিয়ুর পায়ের কাছে বসে,পাটা ধরতে নিলেই প্রিয়ু পাটা সরিয়ে ফেলতে নেয়।আয়ন শক্ত হাতে পাটা ধরে ফেলে,ক্ষতো স্থানটা পরিষ্কার করে,ব্যান্ডেজ করে দেয় নিজ হাতে।প্রিয়ুকে তখনো মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখে আয়নও প্রিয়ুর পাশে বসে প্রিয়ুকে নিজের দিকে ঘুড়ানোর চেষ্টা করে বললো,কি হয়েছে সোনা।এতো রাগ কেনো।আমি কি কিছু করেছি।”

–প্রিয়ু আয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকালো এবার।প্রিয়ুর চোখে জল দেখে আয়ন ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে সোনা বল,আমায়।কাঁদছিস কেনো।বল কি হয়েছে,প্রিয়ুর মুখটি ধরে।

–“প্রিয়ু চোখের জলটা মুছে ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটা বের করে আয়নের সামনে ছবিগুলো তুলে ধরলো।
আয়ন ছবিগুলো দেখে, “এসব কে পাঠিয়েছে তোকে।”
‘-সেটা পরে জানলেও হবে,আগে বলো সত্য কিনা।’
–“তোর কি মনে হয়।”

আমার কি মনে হয় তুমি আজ জিঙ্গেস করছো।এমনি কিছু ছবি আর ভিডিও দেখে একদিন তুমি আমার উপর আঙ্গুল তুলেছিলে।মনে আছে।আজ দুবছর পর ঘটনা আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।বলো,আমি কি রিয়েকশন করবো।তুমি কি আসা করো আমার কাছে।সেদিন তুমি আমার কোনও কথা শুনোনি।আজ তুমি কি বলবে।

–আয়ন চুপ থেকে প্রিয়ুর কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো এতোক্ষণ ,প্রিয়ুর বলা শেষ হলেই আয়ন মুখ খুলে,”আমি জানি সেদিন আমার ভুল হয়েছে।আমি তোকে ভালোবাসতাম।তাই হঠাৎ করে আসা এসব আমি মেনে নিতে পাড়িনি প্রিয়ু।আমি আগেও বলেছি এসব।আমার ভেতরে প্রচণ্ড ঝড় উঠছিলো,যা সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছিলো।আর আমি আমার সেই ঝড়কে থামাতে তোকে আঘাত করি।বিশ্বাস কর যা করেছি ভালোবাসার আঘাত সহ্য করতে না পেরে করেছি।আমার মনে হয়েছিলো তুই আমাকে ধোকা দিয়েছিস,বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস।আর তুই ও তখন ছবিগুলোর সত্যতা জানিয়েছিলি,তাই আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু আজকের এসব ছবিগুলো সব মিথ্যা।আমি তোর কসম করে বলছি প্রিয়ু।তোকে ছাড়া আমার কখনো কোনও মেয়ের প্রতি কিঞ্চিত পরিমান ইন্টেরেস্ট আসেনি।বিশ্বাস কর সোনা।

“–ঠিক আছে আমি মানলাম।তোমার সব কথা আমি বিশ্বাসও করলাম।এখন এটা বলো,তুমি আমার সাথে এতোবড় নাটক কিভাবে করলে।ভালোবাসো আমায় তাই না,তাহলে রুচিতে বাদলো না কেনো এসব করতে।”

“কি করেছি আমি।আয়ন কিছুটা অবাক হয়।”

–“ও তুমি স্বীকার করবে না,তাই তো।তোমার তো আবার প্রমাণ দরকার।ওয়েট!প্রিয়ু ওর ফোনে আজ সকালে আসা অডিওটি ওন করলো।
অডিওটি শুনে আয়ন বুঝে গেছে,কেউ খুব চালাকির সাথে এসব করছে,এখান থেকে বের হবার পথ খোলা রাখেনি।কিন্তু আয়নের টেনশন হচ্ছে ও ওর অবুঝ বউকে কিভাবে বুঝাবে এসব কেনো করছে।বুঝালেও কি বুঝবে।আয়ন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে প্রিয়ুর সামনে হাটু গেড়ে বসে, প্রিয়ুর হাত দুটো নিজের মুঠোতে নিলো।প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পাড়লো, প্রিয়ু আয়নের উত্তরের আশা করছে।আয়নও আজ আর কোনও ভনিতা ছাড়া সব স্বীকার করে নিলো।”
–হ্যা আমি মানছি,আমি এসব প্লানিং করে করেছি।আরভিনের সেদিন কিছু হয়নি।আমি ডাক্তারকে বলে তোকে মিথ্যা বলিয়েছিলাম।যাতে তুই আমার কাছে আসতে বাধ্য হোস।আমি জানতাম এই শহরে আমি ছাড়া তোর কোনও গতি নেই,তাই বিপদে পড়লে তুই সবার আগে আমাকেই স্মরণ করবি।বলতে পাড়িস এটা আমার বিশ্বাস ছিলো।আর তাই হয়েছিলো। তুই নিজ থেকে আমার কাছে এসেছিলি।

“প্রিয়ু আয়নের কথাগুলো শুনে চোখের জলগুলো আর ধরে রাখতে পাড়লো না,এবার ছেড়েই দিলো।আয়নের হাতের মাঝে রাখা নিজের হাতটিও ছুটিয়ে নিতে চাইলো।কিন্তু আয়ন আরো শক্ত করে ধরে ফেললো,তাই প্রিয়ু নিরাশ হয়ে আয়ন থেকে ছুটার আশাও ছেড়ে দিলো।”

–“আয়নের কথা শেষ হয়নি এখনো তাই আবারও বলা শুরু করলো,”তুই দুবছর আমার থেকে দূরে ছিলি।এই দুবছরে আমার ভেতরে কষ্টের সাথে একটা চাপা রাগও জন্ম হয়েছিলো।জেদ হতে লাগলো তোকে নিজের কাছে নিয়ে আসার,তবে সোজা ভাবে না।একটু বাকা ভাবে,যাতে তুই বুঝতে পারিস আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন তোকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করে।তুই সেদিন যখন বলেছিলি তোর অন্য ছেলেদের সাথে গভীর সম্পর্ক ছিলো।তাই তোকে বুঝাতে চেয়েছিলাম গভীর সম্পর্ক কাকে বলে।আর মনে একটা আশাও ছিলো এরপর তুই চাইলোও আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পাড়বি না।আমি তোর যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিতে ছেয়েছিলাম।তোকে এভাবে নিজের আপন করে।”

–প্রিয়ু রাগে কটমটিয়ে এবার আয়নের দিকে তাকালো।তুমি কি জানো তুমি একটা জঘন্য মানুষ।আমার লাইফের সব থেকে প্যারা তুমি।কেনো এসেছো আমার জীবনে।আমাকে জ্বালানো ছাড়া আর কোনও কাজ নেই তোমার।কি মজা পাও,আমার সাথে এমন করে।আবার বলো আমাকে ভালোবাসো।এটাকে ভালোবাসা বলে না,এটা তোমার জিদ।আমি কেনো তোমাকে ছেড়ে চলে গেলাম।তোমার ইগো হার্ট হয়েছে,আর তারই বদলা আমার থেকে নিয়েছো।আর এখন এসব কে ভালোবাসার নাম দিচ্ছো।তুমি যতোই বলো আমাকে ভালোবাসো,আমি বিশ্বাস করিনা।আর এই জীবনে আমিও তোমাকে আর ভালোবাসবো না।কিছুক্ষণের জন্য তোমার মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছিলাম,কিন্তু সময় থাকতে চোখ খুলে গিয়েছে।আমার সাধ্য থাকলে তোমার চেহারাও দেখতাম না আর কোনও দিন।চলে যাও তুমি এখন এখান থেকে।আমাকে একটু একা ছেড়ে দেও।প্লিজ।”

–“আয়ন নিরলস ভাবে কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসেছিলো।প্রিয়ুর প্রত্যেকটি কথা সত্য ও জানে কিন্তু তার সাথে এটাও সত্য প্রিয়ুর প্রতি ওর ভালোবাসা।যা কোনও ভাবে কমেনা।বরং দিনদিন যেনো প্রিয়ুর আসক্তিতে নিজেকে আরো জড়িয়ে ফেলছে।আয়ন মুখ তুলে এবার প্রিয়ুর দিকে তাকালো,কেঁদে কেঁদে কি হাল করেছে মেয়েটি।এতো ছিঁচকাঁদুনী কেনো এই মেয়ে।একটু কি কম কান্না করা যায় না।ওকে দেখলে মনে হবে আয়ন ওকে কতো অত্যাচার করে।খেতে দেয়না,ভালোবাসা দেয়না,শুধু কষ্ট আর কষ্ট।অথচ এই মেয়েটি প্রতিনিয়ত আমার মনের রাজ্যে রাজ করে আসছে,তবুও নাকি ও জনমদুখিনী।ও নিজেকে জনমদুখিনী বললে আমি নিজেকে কি বলবো,ভালোবাসার কাঙ্গালি।নাকি ভিখারি।”

–“আয়ন একটা দীর্গ শ্বাস ছেড়ে,প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিলো।প্রিয়ু অবশ্যই আসতে চায়নি,কিন্তু তবুও কিছু করতে পাড়লো না আয়নের শক্তির কাছে।প্রিয়ুর হাত দুটো মুঠোতে নিয়ে কপালে কপাল রেখে বললো”,সত্যি করে বলতো ভালোবাসিস আমায়।”

“এমন সময় এমন কথা শুনে প্রিয়ু কিছুটা বিস্ময় হয়ে আয়নের দিকে তাকালো।কিন্তু বেশিক্ষণ এই চেখের দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব না প্রিয়ুর।তাহলে এই চোখের গভীরে প্রিয়ু তলিয়ে যাবে আবার।ভুলে যাবে আয়ন কি করেছে ওর সাথে।কিন্তু প্রিয়ু চায় না,কিছু ভুলতে।ও তো চায় আয়নকে শাস্তি দিতে।কড়া শাস্তি।যে শাস্তিতে আয়ন কাঁদবে।হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদবে তাহলে হয়তো প্রিয়ুর মনের প্রশান্তিটা ফিরে পাবে।এবার আর আয়নের কথায় গলবে না,একদম না।
মনকে স্থির করে ফেললো প্রিয়ু।”
–“কি হলো বল।কথা বল সোনা।আমি কিছু জানতে চাইছি।”
‘-প্রিয়ু আয়নকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে, মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো অন্য দিকে।না বাসি না!আমি তোমাকে কেনো ভালোবাসবো।ভালোবাসার মতো কিছু করেছো তুমি।শুধু ধোকা ছাড়া কি পেয়েছি।বলো!বলছো না কেনো এখন।

–“আয়ন হঠাৎ প্রিয়ুকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।এই মুহুর্তে আয়নের মুখ দেখে যে কেউ বলতে পাড়বে,প্রিয়ুর জবাবে যে আয়ন সন্তুষ্ট না।মনটা আজ ভেঙ্গে গেলো আবার।আর তা ভাঙ্গতে সাহায্য করেছে প্রিয়ু নিজে।প্রিয়ুকে বোঝানোর মতো আর কোনও কথা নেই আয়নের কাছে।তাই আয়ন অনেক শান্ত কন্ঠে প্রিয়ুর মাথায় হাত রেখে বললো,”শুনেছি স্ত্রীর জন্য করা স্বামীর দোয়া নাকি কবুল হয়,তাই আজ আমিও তোকে দোয়া করে দিলাম,আল্লাহ যাতে তোকে খুব শীঘ্রই বিধবা করে দেয়।আর আমার থেকে তোকে মুক্ত করে দেয় একবারের জন্য।”
এটা বলেই, আয়ন আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না, বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো এখান থেকে।
–“প্রিয়ু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো,আয়ন এটা কি বলে গেলো।ও কখনো এটা চাওয়া তো দূরে থাক,কল্পনাও করেনি।না চাইতেও প্রিয়ুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।অচেনা ভয়ে বুকের ভেতরে কেমন কুঁকড়ে যেতে লাগলো।সত্যি কি আল্লাহ কবুল করে নিবে এই দোয়া।
………………………………
সেদিন প্রিয়ুকে ঐ বাসায় রেখেই আয়ন চলে আসে নূর ভিলায়।আর এসে সবাইকে জানায় প্রিয়ুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।কারণ টা ছিলো আয়ন সেই অচেনা ব্যক্তিটিকে বুঝাতে চাইছিলো,তার প্লান সাকশেস ফুল হয়েছে।প্রিয়ু আবার আয়নকে ছেড়ে পালিয়েছে।আয়ন আর প্রিয়ুর সম্পর্কে আবার ফাটল ধরেছে।আয়ন খুব ভালো করেই বুঝতে পাড়ছে অচেনা ব্যক্তিটি হয়তো তার আশেপাশেই আছে।কারণ ওর আর দিনেশের মাঝের কথা বাহিরের কেউ শোনা পসিবল না,তার মানে কাছের কেউ তো আছে যে চায়না আয়ন আর প্রিয়ু একসাথে থাকুক।তাই বারবার শুধু ওদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করছে।তাকে সামনে আনার জন্যই আয়ন প্রিয়ুর গায়ব হবার কথা নিজেই ঢোল পাড়িছে।

–‘প্রিয়ুকে ওই বাসায় রেখে গতো কয়েকদিন প্রিয়ুর সাথে কোনও যোগযোগ করেনি।প্রিয়ুকে কিছুটা সময় একলা ছেড়ে দিয়েছে আয়ন ভাবার জন্য।অনেক সময় কাছে থাকার চেয়ে দূরে গিয়ে ভালোবাসার অস্থিত্ব জানানো যায়।আয়ন তাই করছে।তবে প্রতিনিয়ত প্রিয়ুর খবর নিচ্ছে আয়ন।প্রিয়ু না জানলেও আয়ন জানে প্রিয়ু কি করছে,না করছে।”
তাই আজ সকালে যখন প্রিয়ু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তখন আয়ন আর কিছু না ভেবে প্রিয়ুকে বাসায় নিয়ে আসে।আয়ন জানতো এতে অনেকের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে,কিন্তু আয়নের চিন্তা আপাততো সেদিকে না।সবাইকে ও কিছু না কিছু বলে সামলিয়ে ফেলবে,কিন্তু এই ত্যাড়া মেয়ে জ্ঞান ফিরে যখন আয়নকে সামনে দেখতে পাবে তখন কি করবে, আয়ন তা ভেবেই টেনশন করছে।’

“গরম শেষ হয়ে হালকা শীতের প্রকোপ পড়ছে মাত্র।এসির কারণে রুমটা কেমন হিম শীতল হয়ে গিয়েছে।আয়ন তাই এসিটা বন্ধ করে,রুমের জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিলো।পরিবেশ ঠান্ডা বলে,রুমটিতেও হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে,শীতলতা বজায় রাখলো।রুমটি দক্ষিণ এর দিকে মুখ করা বলে,রুমটিতে সহযেই বাতাস চলাচল করতে পারে।আয়ন বালকানিতে দাঁড়িয়ে অনেকদিন পর একটা সিগেরেট ধরালো।আজকাল খাওয়া হয়না তেমন,প্রিয়ুর জন্য।কিন্তু আজ খুব ইচ্ছা জাগলো মনে,তাই চাওয়াটা সাথে সাথে পূর্ণ করে ফেললো।আয়ন জানে প্রিয়ু জেগে থাকলে আরো রাগ করতো এটা নিয়ে,এমনেই আজকাল মেয়েটি রাগ নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরে।আজকাল এই মেয়ের রাগকে এতো কেনো ভয় লাগে আমার আল্লাহই জানে।এ কেমন প্রেমে পড়েছি আমি।এমন একটা পিচ্ছি মেয়ের জিদের কাছে বারবার নতো হতে হয় আমাকেই।মানুষ বলে,বিয়ের পর নাকি প্রেমের গতি কমে যায়।আকর্ষণ কমতে থাকে দুজন মানুষের।কিন্তু কিছু প্রেম আছে যা ভুলার না।প্রেমের সাধের তৃপ্তি যেনো সহযে মিটে না।বরং উঠতি বয়সে প্রেমের সাধের জন্য যেমন মনটা মারিয়া হয়ে যায়,তেমনি ইচ্ছা জাগে একসময় প্রৌঢ় বয়সেও।তখন মানুষ আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে।প্রেম বরারবই চক্ষুলজ্জাহীন হয়।সমাজ,পরিবার কিছুই যেনো এটি চোখে দেখে না।তাই তো আজকাল দেখা যায় একজন যথেষ্ট বয়স্ক মানুষ তার মেয়ের বয়সি নারীর প্রেমে পড়তেও দ্বিধা করে না।কারণ মানুষ বরাবর তার মন আর শরীর এর চাহিদার কাছে ব্যর্থ।বলে না শরীর বুড়া হয় কিন্তু মন সে তো এখনও যেনো সেই যুবক বয়সের মতো সতেজ।তাইতো ইচ্ছা আর চাহিদা যেকোনও বয়সেও জাগতে পারে।যেমন আমারও জেগে ছিলো,এই মেয়েটিকে দেখে অনেক বছর আগে।তখন হয়তো প্রেমে পড়ার মতো তেমন কিছুই ছিলো না এই মেয়েটির মাঝে,তবুও যেনো এক শক্ত বাঁধনে আমি ওর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু ভুল শুধু এতোটুকুই ছিলো,আমার প্রেমের তাপ আমি ওর উপর পড়তে না দেওয়া।যদি দিতাম তাহলে হয়তো আমাদের জীবন একটু অন্যরকম হতো।লোকে সত্যিই বলে জীবনে কিছু কথা থাকে যা সহযে কাউকে বলা যায় না,বলতে পাড়লে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো।মনের ভেতরের কষ্টগুলো কাউকে প্রকাশ করা যায়না।লতার মতো বেড়ে উঠা অনুভূতি গুলোও,একসময় যত্নের অভাবে কেমন নুইয়ে যায়।ভালোবাসাটা তেমনি,একে যতো যত্ন করা হবে ততো এর বিস্তৃতি বেড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে দিবে,কিন্ত একটু অবহেলা আর অযত্ন হাজার বছরের ভালোবাসাও চোখের পলকে যেনো হারিয়ে যায়।আমি হারাতে চাইনা প্রিয়ু।আমি আমার শেষ বয়সেও তোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই।আমি পৌঢ় বয়সেও তোর প্রেমে দ্বিতীয় বার পড়তে চাই।আমাকে হারাতে দিস না প্রিয়ু।আমাকে বাঁচাতে দে একটু।”
………………………………
প্রিয়ুর জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আয়নের রুমে আবিষ্কার করে।ওর আর বুঝতে বাকি থাকে না কে ওকে এখানে এনেছে।কিন্ত আয়ন যেমন ভেবেছিলো,প্রিয়ু তেমন কোনও রিয়েকশন করলো না,বরং চোখ বুলিয়ে পুরো রুমটিকে একবার দেখে নিলো।হাজার মুখে যাই বলুক,প্রিয়ু জানে এ কয়েকদিন এই রুমটি আর এই রুমের মানুষটিকে প্রিয়ু খুব মিস করেছে।কখন কিভাবে প্রিয়ু নিজেও জানে না,আয়নের বাঁধনে নিজেকে বাধিয়ে ফেলছে।যা এতো দিন আয়নের কাছে থেকেও বুঝে নি প্রিয়ু।কিন্তু আয়ন থেকে দূরে গিয়ে খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পেরেছে।এই শয়তান,ফাজিল,নির্দয় মানুষটিকে প্রিয়ু মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসে ফেলছে।থাকতে পারবে না,এখন আর আয়ন কে ছাড়া।এতোদিন পর নিজের রুমে এসে প্রিয়ু অনেক খুশি,এখানে যেনো একটা প্রশান্তি আছে।রুমের প্রতিটি জিনিসে আয়নের স্পর্শ অনুভোব করছে প্রিয়ু।পুরো রুম জুড়ে যেনো আয়নের শরীরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে।রুমে আয়ন নেই,তবুও যেনো সব কিছুতেই আয়নকে খুঁজে পাচ্ছে প্রিয়ু।চোখদুটো বন্ধ করেই বেডে উপর আধো হেলান দিয়েই আয়নের অস্তিত্বের অনুভূতি ফিল করছে।

–“আয়ন বালকানি থেকে এসে দেখে প্রিয়ু জেগে গিয়েছে।প্রিয়ুকে শান্ত দেখে আয়নও একটু রিলেক্স হলো।কিছু না বলেই রুম থেকে চলে গেলো। প্রিয়ুর জন্য কিছু খাবার আনতে।কিন্তু নিচে এসে দেখে আরেক এলাহি কান্ড।মহিনী ফুফুর সাথে তিয়াশের ঝগড়া চলছে।আর ঝগড়ার কারণ হলো নিলীমা।মহিনী ফুফু নিলীমাকে তিয়াশের বউ বানাতে চায়।কিন্তু তিয়াশ এক কথায় না বলে দেয়।কারণ ও দিশাকে ভালোবাসে।”

–দিশার কথা শুনে মহিনী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।দিশাকে তার একদম পছন্দ না।এক তো প্রিয়ুর বান্ধবী,তার উপর দিশার বাপ সামান্য একটা কম্পানিতে জব করে মাত্র।তার মানে মেয়ের বাড়ীর লোক ফকির,আর এই ফকিরের মেয়েকে সে কিছুতেই পুত্রবধূ বানাতে রাজি না।তাই সে তিয়াশকে দিশাকে ভুলে যেতে বলে।আর নিলীমাকে বিয়ে করতে বলে।কারণ নিলীমা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।তার মানে বিয়ের পর সব তিয়াশেরই হবে এসব।তিয়াশের কপাল খুলে যাবে।তাকে আর আয়নের কম্পানিতে জব করতে হবে না।বরং নিজেই এমন অনেক কম্পানির মালিক হয়ে যাবে।এতো বড় সুবর্ণ অফার কোনও গাধাই মানা করতে পারে,তবে মহিনী এতো পাগল না।সোনার ডিম পাড়া মুরগীকে ছেড়ে ওই ফকিরের মেয়েকে তিয়াশের জীবনে কিছুতেই আসতে দিবে না।তার জন্য যা কিছু করার করবে।তিয়াশ নিজের মাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে।কিন্তু মহিনী ফুফু তিয়াশের কোনও কথাই শুনতে রাজি না এই মুহুর্তে ।”

–“আয়নের মাথা কাজ করছে না,মনে মনেই বিরবির করতে লাগলো,কাল পর্যন্ত যে মেয়ে আমার পিছনে ঘুরতো।আজ সেই মেয়েরই প্রস্তাব চলছে আমারই ভাইয়ের সাথে।একদিকে সারা আরেক দিকে নিলীমা।এরা কি আমার ভাইদের ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখে না।আয়ন মনে হয়, বুড়ো বয়সে এরা তোর তালাক করেই ছাড়বে।আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো এদের হাত থেকে।

চলবে…।

[যারা বারবার কমেন্ট করে বলছেন,আয়ন আর প্রিয়ুর ভুল বুঝাবুঝির অবসান করে দিন।এতো বিচ্ছেদ আর ভালো লাগে না,তাদের বলছি,গল্পে সব ঠিক থাকলে গল্পটি শেষ হয়ে যাবে।তাই বারবার এসব বলে লেখিকাকে বিব্রত করবেন না।যখন সময় হবে সব ঠিক এমনেই হয়ে যাবে।তাই ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here