“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-35
দরজা খুলে কেউ রুমে প্রবেশ করলো।মাত্র ভোর হতে শুরু হয়েছে।তাই জানালার পর্দার আড়ালে কিছু আলো উকি দিয়ে রুমটার অন্ধকারকে কিছুটা হলেও দূর করার চেষ্টা করছে।আবছা আলোয় খুব সাবধানে আয়ন রুমে ডুকেই নিজের কোটটা খুলে বিছানার দিকে তাকালো।কিন্তু বিছানা খালি দেখে আয়নের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।আয়নের মনে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন আসলো,”প্রিয়ু কোথায়।”
চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখার সময় রুমের এক কর্নারে কাউকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেলো।আয়ন দৌড়ে সামনে গিয়ে আরো একবার চমকে গেলো, কারণ মাটিতে পড়ে থাকা মানুষটি আর কেউ না, প্রিয়ু।আয়ন একটু খেয়াল করে দেখলো ও মাটিতে পড়ে নেই।বরং নামাযে সেজদা থাকায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।আয়ন খনিকটা বিস্মিত প্রিয়ুর এই অবস্থা দেখে।
–“তৎক্ষনিক প্রিয়ুকে কোলে তুলে,বিছানায় শুয়ে দিলো।পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাশটি থেকে কিছু পানি নিয়ে প্রিয়ুর মুখে ছিটিয়ে দিলো।”
‘মুখে আচানক পানির ছিটায় প্রিয়ুর জ্ঞান ফিরে আসলো।চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকাতেই,নিজের সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে প্রিয়ু প্রথমে বিশ্বাস করলো না।নিজের হ্যালুসিনেট মনে করে,চুপ হয়ে পাশ ঘুড়ে শুয়ে পড়লো।কারণ প্রিয়ু জানে আয়ন আসে নি।এটা শুধু মাত্র ওর কল্পনা।নিশ্চয়ই আয়নকে স্পর্শ করতে গেলেই আয়ন ধোঁয়াশার মতো উড়ে যাবে।তাই আয়নকে হারানোর ভয়ে প্রিয়ু আয়নকে ধরবেই না।কল্পনাই হোক তবুও তো কিছু সময়ের জন্য মানুষটা ওর সামনে তো আছে।থাকুক না।’
–“প্রিয়ুর এমন আচরণ আয়ন একদমই আশা করেনি।ভেবেছিলো,জ্ঞান ফিরলেই আগে প্রিয়ুকে কিছু বকাঝকা করবে।নিজের এই কি হাল করেছে এই মেয়ে।এই মেয়েটি নাকি আবার পেগনেন্ট।একে সামলাতেই আমার ধম যায় আসে।আর এখন আমাকে জ্বালানোর জন্য আরো একটাকে নিয়ে আসতাছে।সব ওর প্লানিং। অল্প বয়সে মনে হয় আমাকে পাগলখানাই যেতে হবে অবশেষে।আয়ন নিজের মনেই কিছু গল্প গুঁজছে।প্রিয়ুকে কিছু বলতে নিবে,তার আগেই প্রিয়ু নিজেই বলা শুরু করে দিলো।”
“তুমি অনেক খারাপ আয়নদা,অনেক অনেক খারাপ”।প্রিয়ু নিরবে কেঁদে গেলো,ওর চোখের জলটি আয়ন দেখতে পেলো না।
–“আয়ন ব্যাভাচেকা খেলো,প্রিয়ুর মুখে আবার আয়নদা শুনে!আবার আয়নদা বলার মানে কি।দুদিন পর আমার বাচ্চার মা হবে যে,তার নাকি এখনো আমি আয়নদা লাগি।উফঃ ফাজিল মেয়ে একটা,মন তো চাইছে থাপ্পাড়াইয়া গাল দুটো লাল করে ফেলি।শুধু আমার সন্তান ওর মাঝে আছে বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেলো,না হলে আজ সত্যিই এই কাজটি করেই দিতাম।এই মেয়ে আমাকে জ্বালাবার কিছু বাদ দেয়না।কাল আমার সন্তান হলে,নিশ্চিত এই মেয়ে আমারই সন্তানকে শিখিয়ে দিবে আমাকে মামা বলতে।শয়তান মেয়ে একটা।এসব ভাবতেই,হঠাৎ প্রিয়ুর ফোঁপানিতে আয়নের কপাল কুঁচকে গেলো।আয়ন বুঝতে পাড়লো না কি হয়েছে।আমি তো কথা গুলো মনে মনে বলেছি,তাহলে ও কাঁদছে কেনো।শুনেছে নিই কিছু এই মেয়ে।এমনেই তো ছিঁচকাঁদুনী,শুনলে তো বন্যা বয়ে যাবে আমার রুমে।সন্দিহীন চোখে তাকালো প্রিয়ুর দিকে।”
-কিন্তু প্রিয়ু এখনো আয়নের দিকে একবারও তাকায়নি আর,পাশ ঘুড়ে শুইয়ে থেকেই,আয়নের কাছেই আয়নের অভিযোগ নিয়ে বসলো,”তুমি একদম খারাপ,খুব বাজে লোক।আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব মজা লাগে তাই না।তাহলে এসে দেখো আমি অনেক কষ্টে আছি।আমি বারবার চলে গিয়ে তোমাকে কষ্ট দিতাম বলে,তার প্রতিশোধ নিচ্ছো তাইনা।তাইতো নিজেও চলে গেলে আমাকে ফেলে।দেখতে চাইছো আমি কষ্ট পাই কিনা।প্রিয়ু মুখ ঘুড়িয়ে আয়নের দিকে অশ্রুনয়নে তাকিয়ে বললো,”দেখো আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি।আমি আর কখনো কোথাও যাবোনা তোমাকে ছেড়ে।প্রমিজ।তবুও ফিরে আসো।”
“আয়ন বিস্মিত হয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।আর ফিরে আসো মানে কি?আমি কোথায় গেলাম।আর আমি তো ওর সামনেই বসে আছি।পাগল নি।আগে তো হাফ মেন্টেল ছিলো,এখন মনে হয় পুরো মেন্টেল হয়ে গেছে।আল্লাহ আমার সন্তানগুলোকে রক্ষা করো।আয়ন মনে মনে দোয়া চেয়ে নিলো একবার।”
–“আমার আর ভালো লাগছে না আয়নদা।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া।বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।এখন তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না,কিছুতেই চলবে না।প্লিজ ফিরে আসো।আমি তোমার সব কথা শুনবো।কখনো তোমার অবাধ্য হবো না।তোমাকে অনেক ভালোবাসা দিবো।প্লিজ ফিরে আসো।এসব বলেই প্রিয়ু ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।
সত্যিতো!কিছুক্ষণ পর আবার মত পাল্টাবি নাতো।হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে প্রিয়ু শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ওর বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যিই কি আয়ন ওর সামনে,নাকি ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে এখনো।
–“আয়নের কোনও রিয়েকশন নেই,ও সিউর প্রিয়ু আজ মাতাল।তবে কিছু না খেয়েই।আয়ন নিরলস ভঙ্গিতে শার্টের টাইটা খুলতে খুলতে প্রিয়ুরকে জিঙ্গেস করছে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।আমি কি আগের থেকে আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছি।নাকি আমার রুপ ঝলঝল করছে।”
“ত তু মি সত্যি আ আমার সামনে বসে আছো।”
‘-আয়নের চেহারায় এবার ভীষণ বিরক্ত ফুটে উঠেছে।কি সব আবল তাবল বকছিস।ঠিক আছিস তো।আর সত্যি কি?এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হয় ভূত দেখতে পেয়েছিস।এমনেই সারারাত জেগে মাথাটা খারাপ,আরো খারাপ করিস না তো প্রিয়ু।তুই বরং ঘুমা,তোর এখন ঘুমের খুব প্রয়োজন বলেই আয়ন উঠে দাঁড়ালো।প্রিয়ুর সাথে তর্ক করার সত্যিই ওর এনার্জি নেই এখন।তাই নিজের শার্টটা খুলে আলমারি থেকে কাপড় বের করে ঘুড়তে নিলেই আচানক প্রিয়ু এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।আকস্মিক ঘটনায় আয়ন সামলাতে না পেড়ে দুকদম পিছে আলমারির সাথে লেগে যায়।হঠাৎ প্রিয়ুর কান্নার শব্দ ওর কানে আসে।আয়ন এবার ভয় পেয়ে যায়।ব্যস্ত হয়ে প্রিয়ুকে সামলাতে লাগে।কি হয়েছে প্রিয়ু এমন করছিস কেনো।আয়নের মনের সংশয়,বেবির কোনও সমস্যা হয়নি তো।তাই প্রিয়ুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে জিঙ্গেস করে পেট ব্যাথা করছে নাতো,শরীর খারাপ লাগছে নাতো।
প্রিয়ু মাথা দুপাশে নেড়ে আয়নকে আবার জড়িয়ে ধরে।আয়ন এবার একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে প্রিয়ুকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।কি হয়েছে সোনা,এমন কেনো করছিস।’
–“তুমি একটা বাজে লোক।”
আয়নও হেসে হা জবাব দেয়।হুম,আমি জানিতো,আমি একটা বাজে লোক,খারাপ লোক।এ আর নতুন কি।আমি সব জানি।কিন্তু এই বাজে লোকটি আবার কি করছে যার জন্য আমার বউটা কাঁদতে কাঁদতে সমুদ্র বানিয়ে ফেলছে।
–প্রিয়ুর এবার মেঝাজ বিগড়ে গেলো,আয়ন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আয়নের খোলা বুকে এলোপাথাড়ি কিল মারতে লাগলো,অসভ্য লোক,কাল সারারাত কোথায় গিয়ে মুখ কালা করেছো।সারারাত কতো টেনশনে ছিলাম জানো।বাড়ীর সবাই অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তোমার হদিস পায়নি কেনো বলো।
আয়ন প্রিয়ুকে থামাতে ওর হাত দুটো ধরে ফেলে,এবার বুঝতে পারছে ম্যাডাম ওর এমন পাগলামো কেনো করছে।আসলেই বড় ভুল হয়ে গেছে।একবার ফোন করে জানানো উচিৎ ছিলো।আয়ন নিজেই এখন প্রিয়ুকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো।আম সরি সোনা।সত্যি খেয়াল ছিলো না।অনেক ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম।আর তার সাথে এতো বৃষ্টি।তাছাড়া আমি ভাবতেই পারিনি আমার জন্য যে তুই এতো টেনশন করবি।
–আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,আমার মনে হলো তোমার দোয়া কবুল হয়ে গিয়েছে।প্লিজ আর এমন করো না।আমি টেনশনে মরে যাবো।
‘-আয়নের এখন মনে পড়লো,প্রিয়ু এতোটা কেনো ঘাবড়ে গিয়েছে।আয়ন প্রিয়ুকে বিছানায় বসিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলো,”একটা কথা মনে রাখবি প্রিয়ু হায়াত মরণ সব উপরওয়ালার হাতে।তোর আর আমার সামান্য মুখের কথায় কিছুই হবে না।যতোদিন আমার হায়াত থাকবে,আমাকে কেউ তোর থেকে আলাদা করতে পারবে না।তাই এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করা একদম বাদদিয়ে রিলেক্স।এখন এসব চিন্তা এমনেও তোর জন্য ঠিক না,তাই আজকের পর থেকে এমন আর করবি না ঠিক আছে।
–“এমন ভাবে বলছো মনে হয়,আমি কতো অসুস্থ।আমি একদম ঠিক আছি।তুমি ফ্রেস হয়ে আসো।
আয়ন মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো আবার আলমারির সামনে গিয়ে প্রিয়ুর রিপোর্টটা বের করলো।আয়নের মতে এটাই উপযুক্ত সময় প্রিয়ুকে সব বলার।দেরি করা একদম উচিত হবে না।এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।আয়ন ফাইল হাতে,প্রিয়ুর সামনে দাঁড়ালো।প্রিয়ুর মুখের দিকে একবার ভালো করে তাকালো,মুখটা একদম শুকিয়ে আছে।নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি।আয়ন প্রিয়ুর হাতে ফাইলটা ধরিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
“–প্রিয়ু দেখলো,এটা সেদিনের টেস্টের রিপোর্ট।প্রিয়ু ভয় পেয়ে গেলো,ওর আবার কোনও রোগশোক হয়নি তো।তাই আয়ন নিজের মুখে বলতে পাড়ছে না বলে রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়েছে।কাপাকাপা হাতে ফাইলটা খুলতেই,সামনে পেগনেন্সির রিপোর্ট টা চোখে পড়লো প্রথমে।প্রিয়ু অবাক হয়ে রিপোর্ট টির দিকে তাকিয়ে থাকে।”
আয়ন ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ু গম্ভীর মুখ করে রিপোর্ট টির তাকিয়ে আছে।মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝা বড় দায় খুশী হয়েছে কিনা,নারায।আয়ন দীর্গ একটা শ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো,ও ভেবেই নিয়েছে প্রিয়ু হয়তো এই বাচ্চার আগমণে খুশি না।মনটা কেনো জানি ভারী হয়ে গেলো।স্বপ্নগুলো আবার ভেঙ্গে যাবে নাতো।
………………….
তিতির বিধ্বস্ত হয়ে শুয়ে আছে,এখনো ওর হুস নেই।তিতিরকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে দিনেশকে সারারাত জাগতে হয়েছে।ক্লান্ত তিতির এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।দিনেশ বিছানা ছেড়ে বালকানিতে এসে একটা সিগেরেট ধরালো।টেনশনে ওর আর ঘুম হবে না।কারণ দিনেশ জানে,এই ঘুমপড়ী এখন শান্ত হয়ে আছে,ঘুম থেকে উঠে না জানি কি এলাহি কান্ড করে।ঘূর্ণি ঝড় শুরু করে দিবে।
–সিগেরেট এর ধোঁয়ার সাথে নিজের টেনশন গুলো উড়িয়ে দিতে চায় দিনেশ এই মুহুর্তে।কিন্তু এতোই কি সহয সব কিছু।হলেতো জীবন কতো সহয হয়ে যেতো।দিনেশের কালরাতের কথা মনে পড়তেই মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।ও কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তিতিরকে এতো কাছে পাবে।এখন যখন পেয়েই গেছি ছাড়ার তো প্রশ্নই আসেনা।তিতি চাইলেও না।দিনেশ বুঝতে পারছে,যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি,কিন্তু হয়ে গেছে।মানুষ বরারবই তার প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি দূর্বল থাকে।আর মাঝেমাঝে এই দূর্বলতা এতো বেশি গ্রাস করে যে ঠিক বেঠিক চিন্তা করতেও সায় দেয়না মন।দিনেশের সাথেও তেমন ঘটেছে।তিতিরকে পাওয়ার অকুলতায় একটা ভুল করে বসে।কিন্তু এই ভুলের মাশুল দিতে হবে এখন ওকে।জীবনের এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।নিজের জীবনের এই সিদ্ধান্তটি জানাবার জন্য ফোন করলো কলকাতায় থাকা ওর বড় ভাই অরুপদার কাছে।পরিবার বলতে তো,শুধু এই একজন লোকই আছে দিনেশের।মা বাবা তো বছর পাঁচেক আগেই গত হয়েছেন।তাই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে ফেললো ভাইয়ের কাছে।
-“অরুপ দিনেশ আর তিতিরের ব্যাপারটা জানতো।নিজের এই ভাইটিকে তিতির নামের এই মেয়েটির জন্য পুড়তেও দেখেছে।ভাইয়ের কষ্ট নিবারণের কোনও মলম তার কাছে ছিলো না।কিন্তু প্রতি মুহুর্তে শান্তনা দিতে ভুলে নি।আজ সেই ভাইয়ের ধারা এতো বড় ভুল, না না ভুল না,পাপ হয়ে গিয়েছে।যতোটুকু অরুপ দিনেশের মুখ থেকে তিতির সম্পর্কে জেনেছে,তার মতে তিতির এই কলঙ্কের দাগ কিছুতেই মেনে নিতে পাড়বে না,না পাড়বে দিনেশকে মেনে নিতে।নিজের আত্মগ্লানিতে তিতির নিজেকে শেষ করে দিবে।আর তিতির কিছু হলে দিনেশও যে মরে যাবে।অরুপ পরিস্থিতির গম্ভীরতা খুব ভালো করে বুঝতে পাড়ছে।তাই দিনেশকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বললো,
“দেখ দিনেশ আমি ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।জানিসই তো আমি ধর্মে নয় কর্মে বিশ্বাসী।আমি মনে করি আমার কর্মই আমাকে স্বর্গ নরকের পথ দেখাবে।তাই আমি তোকে এই বিষয় জ্ঞান দিতে যাবো না।তোর যেটা ভালো মনে হয় তুই কর।আমি বাধা দেবো না।আমি মনে করি মানুষকে নিজের সুখের কথা আগে চিন্তা করা উচিত।পর জীবনে আবার মানুষ হয়ে জন্ম নিবো কিনা তারই তো গেরান্টি নেই।(পর জীবন সনাতন ধর্মে আছে যাকে পূর্ণজীবনও বলো,কিন্তু মুসলমানদের পর জীবন বলতে কিছু নেই।এটা বিশ্বাস করাও গুনাহ। তাই পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না)তাহলে এই জীবনে যতো পারিস নিজেকে সুখে করে রাখ,আর অন্যকেও সুখে থাকতে দে।তোর ডিসিশন যাই হোক,আমি তোর ভাই কালও ছিলাম, আজও আছি।”
–ভাইয়ের সাথে কথা বলে দিনেশের মন থেকে অনেক বড় বোঝ সরে গেলো।মনের সকল বিভ্রান্ত দূর হয়ে গেলো।এখন শুধু তিতির জাগার অপেক্ষিকা।
“দুজন হুজুর আর দিনেশের এখানে থাকা কয়েকজন পরিচিত বন্ধুদের সামনে দিনেশ আর তিতির বসে আছে।দিনেশ প্রথমে হুজুর দুজন থেকে আল্লাহর কলিমা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো,এর পর বন্ধুদের সাক্ষী রেখে তিতিরকে ইসলাম ধর্মমতে বিবাহ করলো।”
–তিতির এখনো অনেকটা শোকড এর মধ্যে আছে।সেই দুপুড়ে ওর নিদ্রা ভেঙ্গেছিলো।আর জাগ্রত হয়ে নিজের অবস্থা দেখেই তিতির বুঝে গিয়েছিলো,কালরাত কি হয়েছে।তখনই দিনেশকে ওয়াসরুম থেকে বের হতে দেখে ক্রোধে মাথা ভেটে যাওয়ার অবস্থা তিতির।দিনেশ ওর সাথে এমন করবে তিতিরের কল্পনার বাহিরে ছিলো এসব।কিন্তু দিনেশের ভাবলাহিন রিয়েকশন দেখে তিতির কি বলবে বুঝে উঠতে পাড়ছিলো না।তিতিরের ভাবনার মাঝেই দিনেশ পায়জামা পান্জবী পড়ে রেডি হয়ে গেলো।
তিতির বুঝতে পারছে না,”আমার এতো বড় সর্বনাশ করে এই লোক জামাই সেজে কোথায় যাচ্ছে।”
–তিতিরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই দিনেশ নিজের কাজ করছিলো।আসলে তিতিরের সাথে চোখ মিলাতে এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে দিনেশের।কালরাতে আবেশের বসে পড়ে যে ও কাপুরুষের মতো কাজ করেছে,যা ও আজ সকালে বুঝতে পাড়ছে।আসলে ওর আর সুজেতের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পেলো না।সুজেত যেমন তিতিরকে ভোগ করতে চেয়েছিলো।দিনেশও তো কাল রাত তাই করলো।তাই বর্তমানে ও ভীষণ অনুতপ্ত।নিজের এই অনুতপ্ত থেকে ওকে মুক্তি পেতেই হবে।
আয়নায় দাঁড়িয়ে পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করতে করতে তিতির দিকে চোখ পড়লো।দিনেশ এখান থেকেই তিতিরের চোখে নিজের জন্য একরাশ ঘৃর্ণা দেখতে পাচ্ছে।প্রিয় মানুষটির চোখে ঘৃর্ণা দেখার মতো কষ্ট কি আর আছে দুনিয়াতে দিনেশের এই মুহুর্তে জানা নেই।
–দিনেশ একটা পেকেট হাতে নিয়ে তিতির সামনে গিয়ে বসলো,তিতিরের হাতদুটো ধরতে নিলে,তিতির এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলে।দিনেশ দেখলো তিতির কাঁপছে,এটা যে ক্রোধে তা বুঝার আর কি বৈকি।দিনেশ তবুও শান্ত দৃষ্টিতে তিতির দিকে তাকিয়ে,”তিতির আমি জানি তুমি রেগে আছো।আর রাগারই কথা।আমি এখন তোমাকে কোনও এক্সপ্লেইন দিতে চাই না,আমি জানি এটা দিলেও কোনও লাভ হবে না।তুমি যা হারিয়েছো তা ফিরে পাবে না।কিন্তু বিশ্বাস করো তিতির আমি তোমাকে সমাজের চোখে কলঙ্ক হতে দেবো না।যে পাপ আমার ধারা হয়েছে,তার শুদ্ধও আমিই করবো।শুধু আর একবার আমার উপর বিশ্বাস করো।আই প্রমিজ সব ঠিক করে দিবো এবার।শুধু এবার কোনও প্রশ্ন ছাড়া আমার সাথে চলো।তার আগে ফ্রেস হয়ে এগুলো পড়ে আসো তারাতারি।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্লিজ তিতির।”
–তিতির তখনও জানতো না,দিনেশ কি করতে চাইছে।কিন্তু ও দিনেশকে কিছু বলতেও পাড়ছিলো না।দোষতো ওর নিজেরও ছিলো।নিজের বেকুবির কারণেই আজ নিজের সতীত্ব হারাতে হলো ওকে।তিতির আর কিছু ভাবতে পাড়ছে না,এই মুহুর্তে দিনেশের কথা না শুনা ছাড়া আর কোনও উপায়ও নেই তিতির কাছে।তিতির দেখতে চায় দিনেশ কি করবে,তারপর নিজের সিদ্ধান্ত নিবে তিতির।
“তিতির ভাবতেও পারেনি দিনেশ এমন একটা কাজ করবে।দিনেশকে তিতির ভালোবাসে এটা সত্যি,কিন্তু কোনও দিন দিনেশকে নিজের ধর্ম ত্যাগ করার কথা একবারও বলেনি।এটা বলা অনিবার্য তিতির জানে।ভালোবাসা মানুষটির জন্য নিজের ধর্ম,অস্থিত্ব ত্যাগ করার জন্য বিশাল একটা মন থাকতে হয়।এতোক্ষণ দিনেশের জন্য রাগ থাকলেও,এখন দিনেশের প্রতি একটা রিসপেক্ট কাজ করছে তিতির মনে।”
চলবে…।
পাঠক,আজকের পার্টটা হয়তো অনেকের কাছেই ভালো লাগবে না।কারণ গল্পের শুরুতে অনেকেই দিনেশের ধর্ম পরিবর্তন না করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলো আমাকে।কিন্তু এটা সম্ভব না।কারণ এতে দিনেশ আর তিতির মিল হতো না।ওদের কাহিনীটা ভিন্ন হতো।কোনও ধর্মেই ধর্ম ত্যাগ করার কথা বলা হয়নি।যার যার ধর্ম তার তার কাছেই শেরা।তাই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য না করাই ভালো।যার যেটা খুশি সেই ধর্ম পালন করবে এটা আমি আপনি বলার কেউ না।তাই সবাইকে নিজ নিজ মতো থাকতে দেওয়াই ভালো।
*গল্পকে কেবল গল্প ভাবুন।সিরিয়াস হবার কিছু নেই।এখানে কোনও ধর্মকে ছোট করা হয়নি।কেবল মিল করার জন্য একটা পন্থানুসরণ করতে হয়েছে।