“এখনো_ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-04
আয়ন মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে।আর আয়নের ঠিক সামনের সোপায় বসে আছে মায়া।আয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়নের গালে পরে আরো একটা থাপ্পড়।
‘পাশে বসে থাকা অনিক আর তিয়াশ ভাইকে এমন বিড়ালের মতো চুপসে থাকতে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।’
-আয়ন তাদের দিকে রাগিচোখে তাকিয়ে,তোরা বলেছিস আপু কে তাই না।তোদের তো আমি পরে দেখবো।দাঁতেদাঁত চেপে।
–ছোটু একদম চুপ।আমি আর কোনও কথা শুনতে চাইনা।ছোটু তোর ধারনা আছে তুই কি করেছিস।যে মেয়েটাকে তুই এতোদিন আগলে রাখতি,আজ তুই নিজেই এতো বড় আঘাত দিলি ওকে।আর এসবের পরেও ভাবিস ও তোকে ভালোবাসবে।এভাবে সম্পর্ক হয়না ছোটু।কেনো তুই বুঝিস না।ও তোর সাথে থাকতে চায়না।প্রিয়ু তোকে ভালোবাসে না।
“আয়ন ভাইদের ইশারা করলে ওরা উঠে আয়নের রুমে বসে থাকা প্রিয়ুর কাছে চলে যায়।কারন আয়ন ওর বোনের সাথে একা কথা বলতে চায়।
তাই আয়ন হাটুগেরে মায়ার সামনে এসে বসে, ওর হাত দুটা ধরে।আপু আমি জানি প্রিয়ু আমাকে ভালোবাসে না,কিন্তু কি করবো বলো।আমিতো ওকে এখনো ভালোবাসি।
ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতে কস্ট হয় আপু।ওকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাও মরনের সমান লাগে।এভাবে ধুকে ধুকে আমি বাঁচতে চাইনা আপু।আমিও সবার মতো খুশি থাকতে চাই,ভালো থাকতে চাই।বল সে অধিকার কি আমার নেই।আমি জানি আমি ওকে এবার একটু বেশিই আঘাত করে ফেলেছি,আমার রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি।কিন্তু আমিই ওর ঘা এর মলম হবো একদিন।প্লিজ আপু,আমাকে একবার বুঝার চেস্টা কর।”
-মায়া ভাইয়ের গালে হাত রেখে,কিন্তু ছোটু এই অবুঝ মেয়ে তোর ভালোবাসাকে কখনো বুঝেই নেই।তাইতো বার বার তোর থেকে দূরে সরে যেতে চায়।তাহলে কিভাবে তুই এই মেয়ের সাথে সংসার করবি।
“মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে আয়ন..আপু এবারি লাস্ট।আমি ওকে বুঝাবো আমার ওর প্রতি ভালোবাসাটা কতোটা গভীর।আই প্রমিস,এবার যদি আমি ব্যর্থ হই,আমি ওকে নিজেই মুক্ত করে দিবো।আমার ছায়াও ওর উপর পরতে দিবো না।প্লিজ আপু মনে করো এটা আমার শেষ চাওয়া।”
–মায়ার চোখদুটোও আজ জলে ছলছল করছে।।ভাইয়ের কস্টগুলো নিজ চোখে দেখেছে।এই মেয়েটার জন্য ভাইয়ের পাগলামি গুলো সহ্য করেছে।তবুও কেনো প্রিয়ু আয়নের ভালোবাসাটা বুঝতে চায়না।কেনো আয়নকে আপন করে নিতে ওর এতো আপত্তি।ভাইয়ের খুশির জন্য মায়া রাজি হয়ে যায়।
ঠিক আছে ছোটু।কিন্তু তুই ওকে বাসায় নিয়ে যাবি কবে।ও আমাদের বাড়ীর বউ,তাই আমি চাই পরিবারে ওর একটা স্থান হোক।আর প্রিয়ু তার প্রাপ্য সম্মান টুকু পাক।যতো তারাতারি পারিস ওকে নিয়ে বাসায় চলে আস,আমি তোদের জন্য অপেক্ষা করবো।এ কথা বলেই মায়া চলে গেলো।
“প্রিয়ুর দুপাশে বসে প্রিয়ুকে দেখেই যাচ্ছে,অনিক আর তিয়াশ।”
–কি হলো তোমাদের, আমাকে কি পেত্নীর মতো লাগছে, যে এভাবে তাকিয়ে আছো।আর তোমরা এখানে কি করো।যাও না!তোমাদের আয়ন দাদার কাছে।তোমরা দুজনও তো কম না।উনি একটা শায়তান হলে,তোমরা শয়তানের হাড্ডি।
“আরে বাহ,প্রিয়ু আমরা কি করলাম।আমরা তো একটু অবাক হলাম।একচুয়েলি তোকে কখনো শাড়ীতে দেখিনি।বাট আজ লাল বেনারসিতে তোকে হেব্বি লাগছে।তাইতো একটু দেখছিলাম।কিন্তু তুই তো সব সময় দুই লাইন বেশি বুঝিস।তোর জন্য আয়নদাই ঠিক আছে।কি বলিস অনিক,চোখ মেরে।”
–রাইট তিয়াশ।আমিতো অলওয়েজ এটাই বলি,প্রিয়ুর জন্য আমাদের আয়নদাই বেস্ট।
“প্রিয়ু রাগি চোখে তাকালে তিয়াশ আর অনিক দুজনেই কেটে পরতে নেয়।কিন্তু সামনে আয়নের সাথে ধাক্কা খেতে নিয়েও নিজেকে সামলিয়ে ফেলে।”
–চোখ কোথায় থাকে তোদের।পকেটে!।
“না ভাই আসলে….থাক আর বলতে হবে না।গাড়ীতে গিয়ে বস,আমি প্রিয়ুকে নিয়ে আসছি।আমরা বাড়ী যাবো এখনই।”
–আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আছে, লাল বেনারসি পড়া।চুলগুলো খোপা করে বেলিফুলের মালাগুলো চুলে।মুখে নেই তেমন কোনও সাজসজ্জা। কি অদ্ভুত দুলহান!তবুও এই দুলহান কে আয়নের চোখে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।শাড়ীতে আজ প্রিয়ুকে একদম বিয়াতি মেয়েদের মতো লাগছে।হিরার নাকফুলটা যেনো প্রিয়ুর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আয়ন জানে প্রিয়ু আয়নের সাথে কোনো কথা বলবে না এখন।তাই নিজেই প্রিয়ুর হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
প্রথমে প্রিয়ু একটু ছাড়ানোর চেস্টা করলেও এখন আর করছে না।কারন প্রিয়ু জানে আয়নের ভালোবাসার এই জাল থেকে মুক্তি এখন আর সম্ভব না।তাই চুপচাপ আয়নের গাড়ীতে গিয়ে বসে পড়লো।অনিক ও তিয়াস পেছনের সিটে আর আয়ন ও প্রিয়ু সামনে বসেছে।কিছু সময়ের মধ্যেই আয়নের গাড়ী নূর ভিলায় এসে পড়লো।নূর আয়নের দাদীর নাম।মূলত আয়নের দাদা আয়নের দাদীকে অনেক ভালোবাসতো,তাই এই বাড়ীটি তার নামই করা হয়েছে।নূর ভিলা।
____________
ফ্লাশব্যাক
“প্রিয়ু হসপিটালে গিয়ে দেখে আরভিন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। তাই প্রিয়ু ডিসিশন নিলো,আরভিনকে নিয়ে এই শহর ছেড়েই চলে যাবে আজই।যাতে আয়নের ছায়াও না পরে আর ওর জীবনে।তার উপর আয়ন এবার যা করেছে তার জন্যতো আয়নকে ক্ষমাই করবে না কোনও দিন প্রিয়ু।অনেক কস্টে এই দুদিন আয়নের সব কথা মেনে চলছে,শুধু একটা সুযোগ এর জন্য।প্রিয়ু ওর বান্ধবী দিশাকে আগেই ফোন করে আসতে বলেছে হসপিটালে ,সাথে একটা বোরকাও আনতে বলেছে।কারন বাহিরে আয়নের গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।আর তারা প্রিয়ুকে কোথাও যেতে দিবে না।”
–প্রিয়ু আরভিনের কাপড় চোপর বদলিয়ে নিজে বোরকা পরে নিলো।আরভিন অবশ্য যেতে চায়নি,কিন্তু বোনের ধমকে আর কিছু বলার সাহস পেলো না।পারুলকে মিথ্যা বলে,বাহিরে পাঠিয়ে দিলো প্রিয়ু।
“দিশার সাথে আরভিনকে কৌশলে হসপিটাল থেকে বের করে দিলো।আর তাদের পিছে পিছে প্রিয়ুও বের হয়ে গেলো।বোরকার কারনে আয়নের গার্ডরা প্রিয়ুকে চিন্তে পারেনি।প্রিয়ু ভেবে নিলো ওর প্লান সাকসেস হয়েছে।
প্রিয়ু দিশার সাথে মিলে আগেই এই প্লানিং করে রেখেছিলো।দিশার আংকেল এর রিসোর্ট আছে,সিলেটে।ওটা দেখাশোনার জন্য লোক লাগবে।থাকা খাওয়া সব ফ্রি।তাই প্রিয়ুও রাজি হয়ে যায়।ওদের টার্গেট বাস স্ট্যান্ড।আর ওখানে কোনও রকমভাবে পৌছাতে পারলে আয়ন আর ওকে পাবে না।যেমন প্লান তেমন কাজ।প্রিয়ু আরভিনকে নিয়ে সিলেটে যাওয়ার বাসে উঠে পরে।আর কিছুক্ষণের মধ্যে বাস চলতেও শুরু করে।প্রিয়ু দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয় এটা ভেবে এবারও আয়নকে বোকা বানাতে পেরেছে ও।”
–মাত্র ঢাকা ত্যাগ করবে বাসটা এমন সময় গাড়ীটা জরে ব্রেকমেরে থেমে যায়।প্রিয়ুসহ বাসে বসা সবাই ভীষন ভয় পেয়ে যায়।প্রিয়ু সামনে তাকিয়ে দেখে বাসের সামনে তিনটা মাইকো দিয়ে রোড ব্লক করে রেখেছে কেউ।প্রিয়ু কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়নের গার্ডরা বাসে উঠে প্রিয়ুর সামনে এসে,
“ম্যাডাম প্লিজ নামুন।স্যার বাহিরে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।বাধ্য হয়ে প্রিয়ুকে বাস থেকে নেমে যেতে হলো।”
“প্রিয়ু নামার সাথে সাথে বাসটা চলে গেলো।আরভিন আয়নদা করে চিল্লিয়ে দৌড় দিলো।আরভিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রিয়ু আয়নকে দেখে শুকনো একটা ডোক গিললো।আয়ন আরভিনকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে যেনো কি বললো,আরভিন মাথা হেলিয়ে আয়নের কথা অনুযায়ী রবিনের সাথে চলে গেলো।
আরভিনকে রবিনের সাথে যেতে দেখে প্রিয়ু ছুটে আসে বাধা দেওয়ার জন্য।কিন্তু ততোক্ষণে আরভিন বসে থাকা গাড়ীটি চলে গেলো।প্রিয়ু গাড়ীর পিছনে ছুটতে নিলে আয়ন প্রিয়ুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।”
–প্রিয়ু চিৎকার করতে থাকে,আমাকে ছাড়ো আয়নাদা।আরভিনকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে।এমন হাজারো প্রশ্ন করে চিৎকার করছে প্রিয়ু।
“আয়ন দুহাত দিয়ে প্রিয়ুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যাতে প্রিয়ু নড়তে না পারে,কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,ওর যেখানে যাওয়ার কথা সেখানেই গিয়েছে।তোর জিদের কারনে আমি ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দিবো না।তাই ওর চিন্তা ছেড়ে দে।আর আমাদের কথা চিন্তা কর এখন থেকে।”
–প্রিয়ু কিছু বলতে মুখ খুলতে নিলে,আয়ন একটা রুমাল ধরে প্রিয়ুর মুখে।মুহুর্তে প্রিয়ু আয়নের বুকে লুটিয়ে পরে।
“আয়ন এখনো প্রিয়ুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো।তাই প্রিয়ুর কপালে পড়া থাকা চুলগুলো হাতদিয়ে সরিয়ে একটা কিস করে।এরপর প্রিয়ুকে কোলে তুলে গাড়ীতে নিয়ে বসালো।গাড়ী চললো আবার আয়নের গেস্ট হাউজের দিকে।”
–কিছুক্ষন পর প্রিয়ুর জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবার আয়নের বাড়ীতে পায়।প্রিয়ু উঠেই দরজা খুলতে নিলে,তখনই দরজা খুলে আয়ন ভেতরে ডুকে।হাতে কিছু সোপিং ব্যাগ।প্রিয়ু চিৎকার করে বলতে গিয়ে ও থেমে যায়,সেদিনের কথা মনে করে।আয়নের সামনে চেঁচিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ না।তাই শান্ত হয়ে আয়নকে জিঙ্গেস করলো আরভিন কোথায়।
“আয়ন সোপিং ব্যাগগুলো থেকে জিনিসগুলো বের করতে করতে বললো,আমি এক কথা দ্বিতীয় বার বলি না প্রিয়ু,সেটা তুই ভালো করেই জানিস।তাই প্রশ্ন বন্ধকরে চুপচাপ রেডি হয়ে নে।”
–রেডি কিসের জন্য।আর এসব কি।এটা তো…..?
“বিয়ের শাড়ী,আমি জানি।আজ আমাদের বিয়ে,তাই বিয়ের শাড়ীতো হবেই।”(আয়ন)
–আমি তোমাকে বিয়ে করবো না,আগেও বলেছি।এখন আবার জিঙ্গেস করার মানে কি।
“আয়ন প্রিয়ুকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় ,প্রিয়ুর দিকে একটু ঝুকে,তোর কি বিয়ে ছাড়া আমার সাথে বাশর করতে খুব ভালো লাগে।আমার কিন্তু কোনও সমস্যা নেই।তুই আমার সাথে থাকলেই চলবে।সেটা বিয়ে হোক বা না হোক।
এমনেও তুই আর পালাতে পারবি না।কারন আরভিন কোথায় আছে,সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না।আর আমাকে ছাড়া ওর কাছে তোর যাওয়াও সম্ভব না।তাই বলছি ১০ মিনিটের মধ্যে চুপচাপ রেডি হয়ে নে।আমার রাগ আরো বাড়ালে ভালো হবে না কিন্তু।আয়ন বলেই চলে গেলো।”
–প্রিয়ু উঠে বসে ভাবতে থাকে আবার শুরু হয়ে গেলো,আমার জীবনে তোমার আধিপত্য আয়নদা। যেখানে আমার কোনও চাওয়া পাওয়া নেই।নেই কোনও মতামত।আমাকে সবসময় তুমি মোমের পুতুল ভাবো। যাকে তুমি ইচ্ছামতো যখন খুশি তখন নাচাতে চাও।
লাল বেনারসি শরীরে জড়িয়ে,বেলিফুলের গুচ্ছ খোপাতে বেধেছে প্রিয়ু।সাজের মধ্য ঠোটে হালকা লিপস্টিক আর দুহাতে দুটো চুড়ি। আর নাকে পড়েছে ডায়মন্ডের একটা নোজপিন।এতেই আয়নায় ফুটে উঠেছে প্রিয়ুর সৌন্দর্য।আয়নায় দাঁড়িয়ে যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন তখন আয়ন প্রিয়ুর সামনে গিয়ে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।এবার বক্স থেকে একটা আংটি বের করে প্রিয়ুর অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়।আর তখনই প্রিয়ুর ধ্যান ভাঙ্গে আর প্রিয়ু এক দৃষ্টিতে আংটিটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রিয়ু কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়ন প্রিয়ুর হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে।এখানে এসে আয়ন নিজেই প্রিয়ুর আচলটা দিয়ে ঘুমটা দিয়ে দেয়।প্রিয়ু ড্রয়িংরুম এ বেশ কিছু মানুষ দেখতে পেলো।এর মধ্য একটা পরিচয় মুখ দেখতে পেলো।
-ইলিয়াস চাচা এখানে।
“হুম,মামা নেই বলে,মামার জায়গায় ইলিয়াস চাচা কন্যা দান করবে। ”
–আমাকে তার পাশে বসিয়ে কিছুক্ষণ পর কবুল বলতে বলা হলো।আমি আধো ঘন্টা লাগিয়ে কবুল বললান।
“আয়ন পারে না আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুক।তবুও দাঁতেদাঁত চিপে বসে ছিলো।হয়ে গেলো আমার বিয়ে।তাও আবার এই ইবলিসটার সাথে।”
–আয়নদা যখন লোকগুলোকে বিদায় দিতে এগিয়ে গেলো তখনই মেন দরজা দিয়ে মায়া আপু হাজির।মায়া আপুকে দেখে আয়ন যথারীতি ঘাবড়ে গেলো।কারন আয়নদা একমাত্র নিজের এই বোনটার রাগকে ভয় পায়।পুরো দুনিয়াতে আয়নদা একমাত্র মায়া আপুকেই একটু মানে।এতোটা তো উনি উনার বাবা মারও কথা শুনে না।কিন্তু মায়া আপু একবার বললে,নিজের প্রাণটাও উজার করে দেবে।বোনের প্রতি তার এই অবিরাম ভালোবাসা আমাকে বরাররই ভাবাতো।মায়া আপু এসেই তার গালে একটা থাপ্লড় দিয়ে দিলো।আসেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে আকস্মিক ঘটনায়।আর আমি ভয়ে ডোক গিললাম।কারন এই ঘটনা যদি অন্য কেউ করতো,তাহলে নিশ্চিত আজ তার লাশ পরে থাকতো এখানে।কিন্তু মায়া আপু বলে,পরিবেশটা এখনো নিরব।আয়ন চোখের ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বললো।
“মায়া আপু আয়নদার সাথে কোনও কথা না বলে,সোঝা বাড়ীর ভেতরে ডুকে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো আয়নদার রুমে।আমাকে জিঙ্গেস করার সাথে সাথে আমিও সব বলে দিলাম তার ইবলিশ ভাই আমার সাথে কি কি করেছে।রিভেঞ্জ নেওয়ার এইতো সময়।”
_________________
প্রিয়ু আর আয়ন দাঁড়িয়ে আছে ড্রয়িংরুমে।কিছুক্ষণ আগে মায়া ওদের বরন করে নিলো।কিন্তু আসমা বেগম এর চেহারায় রাগ এখনো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।আয়নের পিতা ইরফাত মুহামুদ ভাবনাহীন ভাবে বসে আছে।হয়তো ধারনা ছিলো এমন একদিন হবে।তাই তার আপাততো কোনও রিয়েকশন নেই।
আর প্রিয়ু ভয়ে আয়নের পিছনে লুকিয়ে পড়লো।আসমা বেগমকে দেখলে কেনো জানি প্রিয়ুর গলা শুকিয়ে যায়।সব সময় কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে।তার কথাতেও কিছুটা তিক্ততা ভেসে উঠে সবসময়।
–এই মা ছেলের ভয়ে একদিন প্রিয়ু স্ট্রোক করবে এমন মনে হয়।আয়ন এখনো প্রিয়ুর হাতটা ধরে আছে।প্রিয়ু বড়দের সামনে এভাবে হাত ধরে থাকায় কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে।তাই বার বার চেস্টা করছে আয়নের মুঠো থেকে নিজের হাতটা ছুটানোর।কিন্তু আয়নের ভয়ংকর চাওনিতে প্রিয়ু রোবট হয়ে গেলো।
আয়নও এখন বিরক্ত কেউ কিছু বলছে না বলে।তাই সব আশা ছেড়ে প্রিয়ুর হাতটা ধরে উপরে যেতে নিলে,আসমা বেগমের কথায় দাঁড়িয়ে যায়।আয়ন চোখের ইশারায় মায়াকে বলে,প্রিয়ুকে নিয়ে যেতে ওর রুমে।মায়া প্রিয়ুকে নিয়ে চলে যায়।কারন এখানে মা ছেলের যুদ্ধ চলবে।যা প্রিয়ুর দেখা ঠিক মনে করে না আয়ন।
“আয়ন তুই এটা কিভাবে করলি।তাও আবার এই মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো তোর।এতো কিছু হবার পরও তুই প্রিয়ুকে কিভাবে বিয়ে করলি।”
–মা আমি আগেই বলেছি,আমি ওকে ভালোবাসি।
“আয়ন সেদিনের কথা কি ভুলে গিয়েছিস,এই মেয়ের চরিত্র ঠিক না।না জানি কতো ছেলেদের সাথে………আয়ন আর বলতে দিলো না।স্টোপ মা।
আমি প্রিয়ুর সম্পর্কে আর একটাও আজেবাজে কথা শুনতে চাইনা।সময় হলে একদিন তুমিও যেনে যাবে।আর একটা কথা আমার প্রিয়ু সেই ফুলটার মতোই পবিত্র,যেটাকে আমি অনেক যত্নে বড় করেছি।আর এটা তোমার ছেলে বলছে,তুমি তোমার ছেলের কথা বিশ্বাস করবে নাকি বাকি লোকদের সেটা তোমার ব্যাপার।
আয়ন চলে জেতে নিলে,আসমা বেগম আবার বলে উঠে,%এখন নিলীমার কি হবে আয়ন।তুই কেনো ওই মেয়েটাকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখালি।”
–আমি কাউকে স্বপ্ন দেখতে বলিনি মা,আমি ওকে বার বার না করে দিয়েছি,কিন্তু শুনেনি।
আর মা তুমি!তুমি এখন এসব বলছো। তুমি সেই দিন কসম দিয়ে নিলীমার সাথে আমার এংগেজমেন্টটা করিয়েছো।তাহলে এখন তুমি বুঝো।আমাকে বলে লাভ নেই।
“আয়নের রুমে প্রিয়ু বসে আছে।তার পাশেই মায়া বসে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আছে।মায়া বুঝতে পারছে প্রিয়ুর ভেতরে অনেক কিছু চলছে।একসাথে এতোকিছু মেনে নেওয়া সত্যিই কস্টকর কারো জন্য।প্রিয়ুর হাতটা ধরে,
-জানিস প্রিয়ু আয়ন না আগে থেকেই অনেক জিদ্দি ছিলো।এসবের কারনে বাবার হাতে কম মার খায়নি।একদিনতো বাবা বেল্ট দিয়েও মেরেছে ওকে।তখন আয়ন হয়তো নাইন বা টেন এ পরতো।
এলাকার কোনও এক ছেলে আমাকে নিয়ে নাকি বাজে মন্তব্য করে ছিলো।আয়ন জানতে পেরে ছেলেটাকে সেদিন খুব মারে।এমন অবস্থা করেছিলো যে, ছেলেটাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়েছিলো।এই ঘটনা বাবার কানে আসলে বাবাও সেদিন প্যান্টের বেল দিয়ে আয়নকে মারে।আমরা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করছিলাম।কারন আয়ন নিজেই হাতের ইশারা করে সামনে আসতে না করে দেয় আমাদের।ও চায়না ওর কারনে বাবা আমাদেরকেও শাস্তি দেখ।
কিন্তু আশ্চর্য হলাম এটা দেখে যে, আমার ভাই সেদিন মুখ দিয়ে একটা শব্দ করাতো দূরে থাক, চোখের এক ফোটা পানিও ফেলেনি।কেনো জানি আয়নকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি।এমনকি ছোট বাচ্চারা যে বয়সে কান্নাকাটি করে সবাইকে ঝালাতো,সেখানে আয়ন ছিলো সম্পূর্ন উল্টা।ওর মুখের গাম্ভীর্য ওকে সবার থেকে আলাদা করে দিতো সবসময়।”
–কিন্তু জানিস যেদিন থেকে তুই ওর জীবনে এসেছিস,ওর জীবন পাল্টে গেলো।আমার গম্ভীরমুখ করা ভাইটাকেও হাসতে দেখেছি।সবার সাথে মিশতে দেখেছি।নিজেকে নিয়ে ভাবতে দেখেছি।ওর হাসিখুশি মুখ দেখে আমরাও শান্তি পেতাম।কিন্তু জানিস প্রিয়ু গতো দুবছর আমার ভাইটা যেনো কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।ওকে রাতে রাতে কাঁদতে দেখেছি।কতোরাত জেগে থাকতে দেখেছি।আমি জানি প্রিয়ু ছোটু তোর সাথে যা করেছে,তা ক্ষমার যোগ্য না।আর আমি বলবোও না তুই ওকে এতো সহযে ক্ষমা করে দে।শুধু বলবো,যা শাস্তি দেওয়ার ওর সাথে থেকেই দে।এতে আমার ভাইটা অন্তত বেঁচেতো থাকবে।তা না হলে তোর দহনে ও পুড়ে পুড়ে মরে যাবে প্রিয়ু।
আর ওর লাশের সাথে তোকে আরও চারটা লাশের ভার বহন করতে হবে মনে রাখিস।
মায়া চলে গেলো,আর প্রিয়ু আবার ভাবনায় ডুব দিলো।
চলবে……।
[বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ]