এবং_স্ত্রী
পর্ব_১২
#Jannatul_Ferdos
খুব ভোরে উৎসের ঘুম ভাঙ্গে।মাথাটা কেমন ভাড় ভাড় লাগছে।পাশে তাকিয়ে দেখে নিরুপমা নিচে বসে বিছানার উপরে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।উৎসের মাথায় এখনো জলপট্টি দেওয়া।উৎসের ভিতরে অনুতপ্ত বোধটা চড়া দিয়ে উঠেছে।যে মেয়েটাকে সে এতোটা অপমান করলো সেই মেয়ে সারারাত জেগে তার সেবা করেছে।অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।নিরুপমার ঘুম ভাঙ্গতে দেখে উৎস আবার ঘুমের ভান করে।নিরুপমা উঠে উৎসের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর নেই শরীরে।মাথা প্রচুর ব্যথা করতেছে।রাতে ঘুম হয় নাই।তাই সে আর বসে না থেকে প্রেমার রুমে যায় একটু ঘুমিয়ে নেবে।
নিরুপমা যেতেই উৎস উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।শরীরটা এখন ও দুর্বল। কালকে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বোধ হয় জ্বর এসেছে।ফ্রেশ হয়ে আবার শুয়ে পড়লো।এক হাত কপালে রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে উৎস।চোখের কোনা দিয়ে নোনা জল গড়িয়েছে পড়ে।তার মনের ভিতরে কেমন জানি করছে।মন চাচ্ছে নিরুপমাকে সুযোগ দিতে কিন্তু আবার মনে পড়ে না তাকে সুযোগ দিলে যদি মুসকানকে অবহেলা করে?কি করবে উৎস বুঝতে পারবে না।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার।
সকাল ৮ টা বাজে।নিরুপমা এখনো ঘুমোচ্ছে।প্রেমা গিয়ে তনিমা বেগমকে বলেছেন নিরুপমাকে যেন না ডাকে।প্রেমা ভালো করেই জানে নিরুপমা কাল উৎসের রুমে ছিল।নিরুপমা উঠে গেলে প্রেমার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর সে নিরুপমার পিছনে গিয়ে দেখতে পায় উৎসের জ্বর আর নিরুপমা সেবা করছে।সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তার ভাই নিজের ভালো নিজে বুঝতেছে না।
সকালের নাস্তা করতে বসেছি নয়ন রাহমান,পারুল বেগম,লতিফ আর ঝুমুর। নিরুপমাকে না দেখে নয়ন রাহমান জিজ্ঞেস করলেন..
“নিরুকে দেখতাছি না সকাল থেকে
” রাতে উৎসের জ্বর ছিল।রাত জেগে ওর সেবা করেছে তো একটু ঘুমাচ্ছে…তনিমা বেগম প্রবীর খানকে ভাত দিতে দিতে বললেন।
“সেকি জামাইয়ের জ্বর আইলো কেমনে?
” বলতে পারি না ভাই।প্রেমা উৎস উঠলো?
“হ্যা আম্মু আসতেছে বললো
” খাবার দিয়ে আসতাম গিয়ে
“বলেছিলাম ও বললো যে ও নিজেই আসবে
” ঠিক আছে
খাওয়া দাওয়া শেষ করে পারুল বেগম পান চিবুতে লাগলেন।এই বাড়ি থেকে এতো সহজে তিনি যেতে নারাজ।কিন্তু বলতে ও পারছে না।কিন্তু এখন একটা কারন পেয়েছেন তিনি।
“বলছিলাম ঝুমুরের বাপ জামাই তো অসুস্থ আমরা বিকেলে যাই গা?
” তুমি কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো?জামাই বাড়িতে নিজে সেধে থাকব?
“আহা লজ্জার কি হলো গো । জামাইডা অসুস্থ মনডা তো চাইতেছে না যাই গা
” তোমার থাকতে ইচ্ছে হলে থাকো আমি থাকতে পারুম না
নয়ন রাহমান উঠে চলে গেলেন।পারুল বেগম তখন মুখ বাকা করে বললেন-
“যা যা আমি যাইতাম না। নিরুপমার ঘর না ভাইঙ্গা যাইতাম না আমি।বড় ঘরে বিয়া কইরা আছে ভাবছিলুম আমারই লাভ হইবো কিন্তু বেয়াদব মাইয়াডা আমারে গুনে না।
নিরুপমা ঘুম ভাঙ্গে ১০ টার দিকে।এতোক্ষণ মুসকানকে প্রেমা সামলিয়েছে।নিরুপমা উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেয়।এরপর একবার উৎসের রুমে উঁকি মারে উৎস ঘুমাচ্ছে।মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।তখন আচমকা নিরুপমা হাতে টানে খায়।পারুল বেগম তাকে হেঁচকা টান দিয়েছে।
” আহ কি করছো মা আর একটু হলেই তো পড়ে যেতাম
“আহালো তোর তো ঘুম যায় না।বলি বাড়ি যামু না নাকি?তোর লাইগা বেলা ১০ টা অব্দি বইয়া আছি
” তোমারে কেউ বসে থাকতে বলছে?চলে যেতে
“আহ কথা তো শুনবি
” কি বলবা বলো কাজ আছে আমার
“শোন এইদিকে আয়…তিনি নিরুপমাকে একটু আড়ালে নিয়ে গেলেন
” বলো
“জামাই তো তোরে ভালোবাসে না আমি জানি।বিয়ার প্রথমের থেইকাই তো রাজি না।আসার পর ও দেখলুম তোর লগে কথা কয় না।কাল তো তোরা আলাদা রুমে ও ঘুমালি দেখলাম
” না জেনে কথা বলো না মা।কাল উনি অসুস্থ ছিল তাই মুসকানকে নিয়ে অন্যরুমে ছিলাম
“তুই বাপু যতো যাই কইস না ক্যান জামাই কিন্তু তোর আঁচলের তলায় নাই।পোড় কপালি তোর কপালে তো জামাইয়ের সোহাগটা ও নাই।আমি বলি কি শোন একজন হুজুর আছে।তাবিজ দেয় ৭ দিনের মধ্যে জামাই বশ হয়ে যায়।তখন তোরে ছাড়া কাউরে চিনবো না দেহিস।যতো যাই হোক তোর কি জামাইয়ের আদর, ভালোবাসা,সোহাগ পাইতে মনডা চায় না?হুজুরের তাবিজে মেলা কাজ দেয়
নিরুপমার এতোট রাগ হচ্ছে যে তার শরীর কাঁপছে।এই মহিলা যে এতোটা বদ তার ভাবনা বাইরে ছিল।ইবলিশ শয়তান ও বোধহয় তার কাছে হার মানবে।সে তাকে উৎসকে তাবিজ করার কথা বলছে?
” তুমি আর একটা কথা ও বলবে না।ফালতু মহিলা। না তুমি একজন মা হওয়ার যোগ্য আর না তুমি একজন নারী হওয়ার যোগ্য।আমার স্বামীর ভালোবাসা আমি পাই কি না পাই বা কিভাবে পাই তোমাকে কেউ বলছে আমার ব্যাপারে নাক গোলাইতে?নাক গোলাইতে গোলাইতে তো একবারে নাকই নাই করে ফেলেছো।বদ মহিলা কোথাকার বের হও আমার বাসা থেকে।তোমার এই শয়তানি মুখ কখনো দেখাবে না আমাকে।আর আমার বাড়িতে ও আসবে না তুমি।উৎস বা মুসকানের থেকে ও দূরে থাকবে।
“তুই বেশি বাড়াবাড়ি করতাছোস নিরুপমা
” বাড়াবাড়ির দেখছোটা কি হ্যা?ফাজিল মহিলা।তোমাকে মা বলে আর কতো সম্মান করবো হ্যা?তুমি কি আদৌ সম্মান পাওয়ার যোগ্য?
নিরুপমা আর পারুলের চিল্লাচিল্লিতে বাড়ির বাকি সদস্য ছুটে আসে।পারুল বেগম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।ভাগ্যিস প্রবীর খান বাড়িতে নেই তাহলে আজ আর সম্মান বলতে কিছুই থাকতো না।নিরুপমা রাগে কাঁপতেছে।প্রেমা আর তনিমা বেগম তাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন।
“নিরু কি হয়েছে তোর মায়ের সাথে এমন কেন করছিস?
” কি হয়েছে তুমি তোমার পেয়ারের বউয়ের কাছে জিগাও।আমার সংসার ভাঙ্গতে এসেছে সে।তোমার বউ যেন আর কখনো আমার বাড়ি মুখো না হয় বলে দিলাম।অসভ্য মহিলা।
“মাকে কেউ এভাবে বলে নিরুপমা… তনিমা বেগম কিছু ধমক দিয়ে বললেন?
” কে মা আম্মু? এই মহিলা?এই মহিলা ডাইনির থেকে ও অধম। ছোট থেকে আমাকে তিলে তিলে মারতে মারতে এসেছে।আমার সুখ কখনোই তার সহ্য হয় নাই আজ ও হচ্ছে না।ওনাকে আমার চোখের সামনে থেকে সরাও।
নিরুপমা তনিমা বেগমকে জড়িয়ে ধোরে কান্না করতে থাকল।
নয়ন রাহমান পারুল বেগমকে নিয়ে যান। মহিলা কিছুতেই যাবে না গালিগালাজ করতেই আছে।নয়ন রাহমান তাকে জোর করে উৎসদের বাসা থেকে বের হয়।
চলবে!!