এবং_স্ত্রী
পর্ব_২৪
#Jannatul_Ferdos
ড্রয়িং রুমে বসে আছে দিলরুবা চৌধুরি,রুবায়েত, নিরুপমা। আর নিরুপমার মুখোমুখি বসে আছে উৎস।তখন দিলরুবা উৎসকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হয়।সে সোজা রান্না ঘরে চলে আসে।আর এসেই নিরুপমা আর রুবায়েত এর কথা শুনে।
নিরুপমা কিছু বলছে না।২ হাতের তালু চুলকাচ্ছে।উৎস যে তাকে আস্ত গিলে খাবে তা সে খুব ভালো করেই বুঝতেছে।
“ফুফু আমি নিরুপমার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।
“আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই
” জীদ করো না নিরুপমা চলো দরকার আছে
“না বললাম তো আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই
উৎস এবার নিরুপমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে ভিতর গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় দিলরুবা আর রুবায়েত একটু অবাক হলে ও পরে দুজন হট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে।
উৎস নিরুপমাকে নামিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধোরে।নিরুপমার হার্টবিট উঠানামা করছে।উৎসের ঘন নিশ্বাস তার তার মুখের উপরে পড়ছে।সব যেন মাতাল হাওয়ার মতো ঝড়ো বাতাস বইছে।নিরুপমার ইচ্ছে করছে সেই ঝড়ো হাওয়াতে ভাসতে।কিন্তু না তা সে পারবে না।
” দূরে সরে দাঁড়ান উৎস
উৎস এবার আরো কাছে যায়..
“কেন আমি কাছে থাকলে তোমার খুব বেশি অসুবিধে হচ্ছে?
নিরুপমা চুপ থাকে।
” কেন ছেড়ে চলে এলে নিরুপমা….চোখ ভর্তি পানি নিয়ে উৎস জিজ্ঞেস করলো।কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসছে
“এর উত্তর আপনার অজানা?
” অজানা নয় নিরুপমা কিন্তু ভুলতো মানুষ মাত্রই করে আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারতে?অন্তত মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে ও তো থেকে যেতে পারতে?
“মানুষের ভুলকে ১ বার ক্ষমা করা যায়, না হয় ২ বার ক্ষমা করা যায় কিন্তু আপনি?আপনি তো বার বার ভুল করেছেন।আমি শত চেষ্টা করলে ও আপনার মনে জায়গা করতে পারব না উৎস। আমাদের দূরে থাকাই ভালো।
” ফিরে চলো নিরুপমা
“না….নিরুপমার দৃঢ় উত্তর।
” প্লিজ
“কেন?কেন ফিরব আমি?একজন বাইরের মানুষের কথায় মার খাওয়ার জন্য?নাকি আপনার স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার জন্য আপনার পায়ে পরে থাকার জন্য?কোনটা বলুন?আজ নিরুপমাকে আপনার মেয়ের প্রয়োজন তাই নিরুপমাকে খুঁজতে এসেছেন?
” না নিরুপমা তা না
“তা না হলে কি?
” কারন
“কারন?
” কারন আমি তোমাকে… উৎস আর বাকিটা বলতে পারে না কোনো এক অদৃশ্য সত্তা তাকে বলতে বাধা দেয়।সেই দেওয়ালের সাথে হাতে জোরে একটা গুতা দেয়।রাগ হচ্ছে তার।সে চেয়ে ও বলতে পারছে না নিরুপমাকে সে ভালোবাসে।এখন যদি এই কথা গুলো বলে তাহলে নিরুপমা বলবে তাকে করুনা করছে।তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিথ্যে নাটক করছে।
“নিরুপমা শান্ত হয়ে বসো।কিছু কথা বলি
নিরুপমার কোনো হেলদুল নাই।
” প্লিজ নিরুপমা বসো
নিরুপমা এবার গুটি গুটি পায়ে এসে বসে উৎসের পাশে।উৎস নিরুপমার দুহাত ধোরে বলতে শুরু করে..
“যা হয়েছে আমাকে মাফ করে দাও নিরুপমা আমি ভুলে করেছি।শেষ বারের মতো তোমার কাছে ক্ষমা এবং সুযোগ চাইছি প্লিজ?
নিরুপমা কিছু বলে না চুপ করে থাকে..
” সেদিন আমি কলেজে গেলে মেরুন কালারের বোরকা পড়া ছিলে তাই না নিরুপমা?
নিরুপমা এবার চকতি ফিরে তাকায় উৎসের দিকে।এতো বেশি অবাক হয়েছে সে বলার বাইরে।দুচোখে শুধু হাজার ও প্রশ্ন।উৎস তাহলে তাকে আগে থেকেই চিনে ফেলেছিল?উৎস তার চোখের ভাষা বুঝতে পারে।
“হুম আমি চিনে ফেলেছিলাম তোমাকে।কিন্তু ক্লাস রুম থেকে না কারন সেই সময় অনেক মেয়ে ছিল সবাইকে ফলো করার সুযোগ হই নি।আমি যখন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ করেই তোমার দিকে নজর যায়।তুমি তখন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেট বরাবর আসছিলে। তোমার মুভমেন্ট দেখেই কেন জানি মনে হচ্ছিল ওইটা তুমি।কাছাকাছি আসলে আমি তোমাকে বুঝতে দেই না যে আমি তোমাকে দেখেছি। বিশ্বাস করো নিরুপমা ভার্সিটিতে ঢোকার পর থেকেই বুকের মধ্যে কেমন করছিল ধুক ধুক আওয়াজ হচ্ছিল।কিন্তু যে মোমেন্টে তুমি আমাকে পাশ কাটিয়ে গেলে হৃদস্পন্দন এতো বেশি বেড়েছিল যে বলে বোঝাতে পারব না।আমার চোখ তোমাকে চিনে নিয়েছিল, আমার মন তোমাকে চিনে নিয়েছিল, আমার হৃদয় তোমাকে চিনে নিয়েছিল।তারপর আমি তোমাকে ফলো করি তুমি বুঝতে ও পারো না।তখন দেখি তুমি এই বাসায়।আচ্ছা নিরুপমা খেয়াল করেছো মুসকানের জন্মদিনের দিন কিন্তু আমার বাকি ২ ফুফু ছিল না কিন্তু আমি বড় ফুফু ছিল।তোমরা হয়তো ভেবেছো তারা আসে নি কিন্তু না তাদের বলি নাই।বাকি ফুফুরা জানে বড় ফুফুকে বলব আর কেন বলব তাও জানত।এরপর আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পর ইচ্ছা করেই প্রেমা তোমার কাছে মুসকানকে দেয়।কারন অনেকদিন ধোরে তুমি মুসকানকে কাছে পাও না।তুমি যখন মুসকানের সাথে কথা বলছিলে আমি প্রতিটি কথাই শুনেছিলাম।আমি ইচ্ছা করেই ফুফুকে জোর করেছিলাম থেকে যাওয়ার জন্য।আমি জানতাম তুমি রাজি হবে না।তাও করেছি কেন জানো?হারানোর ভয়ে কারন ভার্সিটি থেকে আমি তোমার মুখ দেখি নাই। ফুফুদের বাড়িতে ভার্সিটিতে পড়ে এমন মেয়ে আরো ২ জন আছে।আমি সিউর থাকলে ও হারানোর ভয়ে মনে একটা দ্বিধা ছিল যদি আমার নিরুপমা না হও তুমি তখন?এরপর যখন রুবায়েতকে ফোন দেওয়ার জন্য ইশারা করলে সেটা ও আমি দেখেছিলাম।তোমার কি খেয়াল আছে তুমি ফুফুকে ফুফু ডেকে আবার মামি ডেকেছিলে?জানো এতো হাসি পেয়েছিল কিন্তু তাও চেপে রেখেছিলাম। এর পরের বার আমি ইচ্ছা করেই বলি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসার কথা।তোমার শোচনীয় অবস্থা দেখার জন্য।আমি চাইলে এমনিতেই এ বাড়িতে আসতে পারতাম।কিন্তু চেয়েছিলাম এমন এক সময় আসব যে সময়ে তুমি লুকিয়ে যাওয়ার ও সময় হবে না।তোমার মনে আছে নিরুপমা বৃষ্টি নামলেই তুমি খিচুড়ি রান্না করতে?আমি জানতাম আজ ও তাই হবে সেই সুযোগটাই কাজে লাগলাম।
নিরুপমা স্তব্ধ বনে গেল একটা মানুষ কখনো কাউকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে তার মুভমেন্ট এ তাকে চেনে সম্ভব না।উৎস কখনোই নিরুপমার দিকে লক্ষ্য করে দেখত না।তাহলে কিভাবে সম্ভব?সব তাক গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
“নিরুপমা?
চিন্তা মগ্ন নিরুপমা উৎসের ডাকে একটু কেঁপে উঠে।
” হু হ্যা জ্বি বলেন
“ফিরে চলো
” কিন্তু…. নিরুপমা আর কিছু বলে উঠার আগেই উৎস নিরুপমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলে একটা গভীর চুমু খেয়ে বলে…
“এই জিনিসটা খুব মিস করেছি এতোদিন। আমি বাইরে আছি জামা কাপড় গুছিয়ে চলে এসো….একটা মুচকি হাসে দিয়ে বেরিয়ে যায় উৎস।
চলবে!!!!
Nice,next ছাড়া ও কি গঠনমূলক মন্তব্য আশা করতে পারি না?এতো কষ্ট করে গল্প লিখি কিন্তু আপনার কষ্ট করে কমেন্ট করতে পারেন না।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।