এবং_স্ত্রী
পর্ব_৭
#Jannatul_ferdos
আজ নিরুপমার বাবা নয়ন রাহমান,লতিফ আর ঝুমুর তাদের বাড়িতে আসবে।পারুল বেগম আসবে না।নিরুপমা খুশি হলে ও একটা হৃদয় থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।সৎ মায়ের কথাই নয়ন রাহমান নিরুপমাকে তেমন ভালোবাসতেন না।কিন্তু তিনি তো নিরুপমাকে মা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই বিয়ে করেছিলেন।পারুল বেগমকে ইচ্ছা করেই বিয়ে করেছিলেন যাতে পারুল বেগম বুঝে যা তার ঝুমুর ও নয়নের সৎ মেয়ে।তিনি ঝুমুরকে নিজের মেয়ের মতো দেখলে পারুল ও নিরুপমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখবে।সবই ঠিক চলছিল কিন্তু পারুল বেগম তার বাবাকে বশ করে ফেলল।এক বছর যেতে না যেতেই নয়ন রাহমানের অসহ্য উঠে উঠল নিরুপমা। একবার লতিফকে নিয়ে খেলছিল অসাবধানতাবশত লতিফ নিরুপমার থেকে ব্যথা পায়।নয়ন রাহমান বাড়িতে আসলেই পারুল বেগম যা নয় তাই বলে নালিশ করে।নিরুপমা নাকি তার ছেলেমেয়েদের দেখতে পারে না।প্রায় মারে।আজ ও ইচ্ছা করেই ব্যথা দিয়েছে।সেদিন নয়ন রাহমান নিরুপমাকে এতো মেরেছিল বলার বাইরে।নিরুপমার অতীত এর কথা মনে পড়তেই চোখ বেয়ে পানি পড়ে।অনেক অন্যায় করেছে নয়ন রাহমান তার সাথে।কিন্তু যতোই হোক বাবা তো বাবাই।বাবা ভাই বোন আসবে খুশিতো হওয়ারই কথা।নিরুপমা সেই সকালের খাওয়ার শেষ করে রান্না ঘরে ঢুকেছে।নিজে হাতে বাবা,ভাইবোনকে রান্না করে খাওয়াবে যদি ও বিশেষ করে লতিফের উদ্দেশ্যে এতো আয়োজন কারন ওই বাড়িতে একমাত্র লতিফই ছিল যে ওর পাশে ছিল ওকে ভালোবেসেছিল সাপোর্ট দিয়েছিল। বিয়ের পর ও বাড়িতে আর যাওয়া হই নি। লতিফ ও পড়ালেখার চাপে আসতে পারে নাই।
“নিরু অনেক রেঁধেছ এইবার যাও মুসকানকে সামলাও। তোমার মেয়েটা কারোর কাছে থাকতে চায় না। যাও তো যাও ওর কান্না থামাও…..তানিমা বেগম এসে নিরুপমাকে বললেন
নিরুপমা গিয়ে মুসকানকে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলো।প্রবীর খান আজ বাড়িতেই।শরীরটা কালকে থেকে খারাপ হওয়াই অফিসে যায় নাই।নিরুপমাকে দেখে তিনি ডাক দিলেন…
” বউমা
“হ্যা বাবা বলেন
তিনি নিরুপমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন…
” আমি তোমাকে কিছু কথা বলি মা।মন দিয়ে শুনবে
“জ্বী বাবা বলেন
“অরিত্রাকে উৎস ভালোবেসে বিয়ে করেছিল।মেয়েটা খুবই ভালো ছিল তোমার মতো।সবাইকে হাসি খুশি রাখা সবার দিকে নজর রাখা সবকিছু। যখন শুনলাম আমি দাদু হতে চলেছি বাড়িতে নতুন সদস্য আসছে বাড়ির সকলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু দিন যেতে লাগল অরিত্রার শারীরিক কন্ডিশন খারাপ হতে লাগল।ডাক্তার বলেছিল যে এমন একটা সময় এবরশন করা যাবে না।অরিত্রার প্রাননাশের ভয় আছে।কিন্তু ডেলিভারিতে প্রব্লেম হবে।খুশির সাথে সাথে সকলের মধ্যে একটা চিন্তা, ভয়ের চিহ্ন বিরাজমান হলো।সময় মতো অরিত্রার পেইন উঠলো। হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর আর অরিত্রা মা ফিরে আসলো না।ডাক্তার বলল তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নাই তাকে বাঁচাতে….. কথা গুলো বলে হুর হুর করে কেঁদে দিলেন প্রবীর খান
“বাবা কাঁদবেন না।নিজেকে সামলান
” উৎস তাকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল।মুসকানের দেখা শুনা করতে পারত না সে। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছিল।তোমার শ্বাশুড়ি মা তা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান।পরে আমরা চিন্তা করলাম যদি উৎসকে ওর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হয় ওর একজন ভালোবাসার মানুষ দরকার।যে তাকে অরিত্রার কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।কিন্তু ও বিয়ে করতে রাজি ছিল না তোমার শাশুড়ী মা ই কসম দিয়ে অরিত্রা মারা যাওয়ার ২ মাসের মাথায় উৎসকে বিয়ে করায়।তোমার বাবা আমার পরিচিত। তোমাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। আমার উৎসের জন্য তোমার থেকে ভালো স্ত্রী আর কেউ হতে পারবে না।আর না পারবে মুসকানের ভালোমা হতে। আমরা জানি ও তোমাকে মেনে নিতে পারছে না।হয়তো খারাপ ব্যবহার করে কিন্তু বিশ্বাস করো মা উৎস এমন না।ও মানুষটা খুবই ভালো।তুমি পারবে না মা মুসকানের মা হয়ে উঠার সাথে সাথে উৎসের স্ত্রী হয়ে উঠতে?…..প্রবীর খান নিরুপমার হাত ধোরে আকুতি স্বরে বললেন
“হ্যা বাবা আমি পারব অবশ্যই পারব।আপনার দোয়া করবেন
” দোয়া করি রে মা।
প্রবীর খানের রুম থেকে বের হয়ে মুসকানকে নিয়ে তার রুমে যায় নিরুপমা। আজ উৎসকে ও অফিস যেতে দেয়নি তনিমা।বাড়িতে তার শ্বশুর বাড়ির মানুষ আসছে সে না থাকলে হয়?
“কোথায় ছিলে এতোক্ষন.?….ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখে উৎস প্রশ্ন করলো
” জাহান্নামে… মুসকানকে দোলনায় শুয়ে দিতে দিতে বলল নিরুপমা
“ত্যাড়া উত্তর দাও কেন?… উৎস এবার ফোন থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে নিরুপমাকে রেগে জিজ্ঞেস করলো
” আমি ত্যাড়া তাই
“নিরুপমা আমাকে রাগাবে না একদম
” হুহ আসছে আমার পন্ডিত মশাই তাকে রাগাবে না…নিরুপমা ভেঙ্গিয়ে বলল
“থাপ্পড় একটা ও মাটিতে পড়বে না বেয়াদব মেয়ে
” আমি বুঝি বসে থাকবানি?….ভ্রু কুচকে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল নিরুপমা
“তুমি আমাকে মারব?তুমি তোমার স্বামীকে মারবে?
” তারমানে আপনি স্বীকার করলেন আপনি আমার স্বামী?
“স্বীকার করার কি আছে?আমি মানি না এই বিয়ে কিন্তু বিয়ে তো হয়েছে সেইদিক থেকে স্বামীই হলাম তাই না
” একটু কি ভালোবাসা যায় না উৎস?….নিরুপমা ক্ষীন দৃষ্টিতে করুন সুরে বলল
“না
” কেন?
“আমি আর কতোবার বলব আমি অরিত্রাকে ভালোবাসি?
” ভালোবাসবেন ঠিকি হয়তো সেদিন আমি আর থাকব না।পস্তাতে হবে সেদিন আপনাকে
“আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না
” যদি কখনো ভালোবেসে ফেলেন কি করবেন?
“বাসব না
” যদি বাসেন?
“যদির কথা নদীতে ফেলাও
” আহা ধোরে নেন কখনো ভালোবেসে ফেললেন আমাকে কি করবেন?
“আমি এই ভাবনা ও মাথায় আনব না।আর আনতে চাচ্ছি না।প্লিজ গো
সৃষ্টির এক অনবদ্য সৃষ্টি তুমি
তোমার মায়ায় পড়ে হয়েছি আবেগি!
ঝুম বৃষ্টিতে হাটতে চাই ধোরে তোমার দুটি হাত
খুব বেশি কিছু চাওয়া কি এই আমার?
হয়তো এক গোধুলি লগ্নে তোমার কাধে মাথা রেখে
শান্তভাবে অনুভব করবো তোমাকে!
কোনো একসময় টং এর দোকানে গিয়ে
কড়া লিকার এর চা খাবো দুজনে!
হঠাৎ করে প্রবল জোরে বৃষ্টি নামবে
তুমি আমার হাত ধোরে নিয়ে যাবে
কোনো এক আশ্রয়স্থলে!
কিন্তু আমি তোমার হাতটি ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়বো
ভিজতে শুরু করবো সেই বৃষ্টিতে!
কাকভেজা বৃষ্টির মধ্যে তুমি মুগ্ধ নয়নে
আমাকে অবলোকন করবে!
আর আমি দৌড়ে গিয়ে অবস্থান করবো তোমার বুকে
ব্যাস এইতো সামন্যটুকু চাওয়া!
এই সামান্য চাওয়া টুকু আপনি পূরণ করবেন না উৎস?
” তুমি যাবা?
“যদি কখনো আমি আপনার আগে মরে যাই অন্তত একটাবার জড়িয়ে ধোরে মিথ্যে হলে ও বইলেন নিরুপমা তোমাকে ভালোবাসি।কিছু ইচ্ছা অপূর্নই থেকে যাবে! শুধু পূর্নতার আশায় খুঁজে বেরানো এই মন কোনোদিন মিলিয়ে যাবে।কিন্তু অনূভুতি গুলো থেকে যাবে কোনো এক পাতায় কোনো এক পুরাতন অধ্যায়ে।ভালোবেসে যাবো ততোদিন যতোদিন এই দেহে প্রাণ আছে আর অপেক্ষা করবো আজীবন আপনার ভালোবাসা পাওয়ার।
চোখের পানি মুছতে মুছতে নিরুপমা উৎসের সামনে থেকে চলে আসে।উৎসের কি একটু ও খারাপ লাগছে?নাকি লাগছে না?তার মন কি কখনোই গলবে না?নিরুপমাকে কি সে কখনোই ভালোবাসবে না?কখনোই স্ত্রী এর মর্যাদা দেবে না?
চলবে!
আপনার নেক্সট না বললে ও আমি নেক্সট দেব।Nc Nxt এগুলা না দিয়ে প্লিজ বড় করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন।এতো কষ্টের লিখার সার্থকতা স্বরুপ।