#এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১১
দরজা খুলে মায়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আগাগোড়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নিভ্রান।মা তো সবসময় তাকে জানিয়ে আসে।এমন হুটহাট এসে পড়েনা কখনো।আর আসলেও এত সকালে কেনো?একবার নিজের রুমের দরজার দিকে পরখ করে নিয়ে মুখে জোরপূর্বক হাসি ফোটালো সে।বললো,
—“মা তুমি”?
—“যাক,তোকে অবাক করে দিতে সফল হলাম তবে।”প্রসন্ন কন্ঠে কথাটা বলে নাহিদা পাশে দাড়ানো ড্রাইভারকে তার ব্যাগটা ভেতরে রেখে দিতে বললেন।নিভ্রান নিশ্চুপ।মাথায় ঘোলাটে অনুভুতিদের সমাবেশ বসেছে।ড্রাইভার চলে যেতেই সে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,
—“আমাকে আগে জানালে না যে?”
নাহিদা ড্রইংরুমের বড় সোফায় যেয়ে বসলেন।ব্যাগ থেকে ছেলের জন্য নিজ হাতে রান্না করে আনা খাবারের বাক্সগুলো কাঁচের টেবিল ভরে সাজাতে সাজাতে বললেন,
—“তুই জানানোর সুযোগ দিয়েছিস?কতবার করে ফোন দিলাম রাতে?একবারো তো ধরলিনা।খালি ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা।মায়ের ফোনটা ধরার সময়ও নেই।”
বিরক্ত মস্তিষ্কে মনে করার চেষ্টা করলো নিভ্রান।কালরাতে বাসায় আসার পরে ফোন নিজের রুমেই রেখেছিলো।রাত্রি শোয়ার পর আর সেখানে যাওয়া হয়নি তারমানে ফোনটা এখনো ওই রুমেই আছে।হয়তোবা সাইলেন্ট করা সেজন্য রাত্রি রিংটনের আওয়াজ পায়নি।
—“এত সকালে এলে যে?”
—“তোর বাবার গাড়ি লাগবে।সে নাকি কোন কাজে যাবে সারাদিনের জন্য।তাই আমি সকালেই চলে এলাম।একটুপর তো সে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লে আর আসতে পারবোনা।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিভ্রান।মা কে কি এখনই বলে দিবে বাসায় একটা মেয়ে আছে?নাকি রাত্রির ঘুম ভাঙাবে আগে?
মনে মনে দোটানা নিয়েই ঘরের ভেতর পা বাড়ালো সে।রাত্রি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।যেনো কতকাল পর এক পশলা শান্তির ঘুম এসে ধরা দিয়েছে চোখদুটিতে।একটা পায়ের অনেকখানি বেরিয়ে আছে ব্ল্যাঙ্কেটের নিচ দিয়ে।হাঁটু থেকে গোড়ালির মাঝামাঝি অংশটা পর্যন্ত কাপড় নেই।শাড়ি উঠে গেছে।নিভ্রান এগিয়ে গিয়ে ব্ল্যাঙ্কেটটা নিচ পর্যন্ত নামিয়ে দিলো।পায়ের পাতায় আলতো করে ছুঁয়ে দিতেই বুঝতে পারলো মেয়েটার শরীর হিমের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।যেনো কোনো মৃত মানুষ।চমকে উঠে দ্রুত এসির রিমোটটা নিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলো সে।এখন ঠান্ডা একটু কম লাগবে।
ব্যালকনিতে ভেজা কামিজটা শুকাতে দিয়েছিলো রাত।এতক্ষণে শুকিয়ে গিয়েছে।নিভ্রান সেটা নিয়ে আসতে আসতেই দরজা খোলার শব্দ হলো।অবিরাম চলতে থাকা হৃদস্পন্দনটা নিজের অজান্তেই একটু খানি বাধাপ্রাপ্ত হলো।
—“বাবা,তুই একটু ওগুলো…”কথাটা মাঝপথেই থেমে গেলো।নাহিদার প্রসারিত হাসিটা সংকুচিত হতে হতে একটা সময় ঠোঁটের ভাঁজেই মিলিয়ে গেলো।চোখেজোড়া উপচে পড়া বিস্ময় আর অবিশ্বাস নিয়ে চেয়ে রইলো বিছানার মাঝে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।সাইড টেবিলে রাখা নিভ্রানের ফোনের দিকে নজর পড়তেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।এই জন্যই তার ছেলে কালরাতে ফোন ধরার সময়টাও পায়নি।
তীব্র তাচ্ছিল্য নিয়ে সে বাজে ভঙ্গিতে বললো,
—“তুই এতো খারাপ হয়ে গেছিস নিভ্রান?ছিহ!”
—“মা তুমি কিছু না জেনে উল্টাপাল্টা বলবানা।”নিভ্রানের সরাসরি প্রতিবাদ।
—“জানার কি আছে?এই মেয়েকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ সারারাত এখানেই ছিলো।এর অর্থ কি অন্যকিছু দাড়ায়?”
নাহিদার উচ্চস্বরে বলা কথায় ঘুম ভেঙে যায় রাত্রির।কিছু কিছু অনাকাঙ্খিত শব্দও কানে আসে।মাথা রীতিমত ঘোরাচ্ছে।ধরফরিয়ে উঠে বসেসে।হত্ববিহল,বিমূড় চোখে চেয়ে থেকে ঘটনার অর্থোদ্বার করার চেষ্টা করে।
নিভ্রান ঢোক গিলে।রাত কখনোই নিজের সম্পর্কে আজেবাজে মিথ্যা অভিযোগ মেনে নিবে না।মেয়েটা প্রবল আত্নসম্মানী।
রাত্রির ঢিলেঢালা ব্লাউজ কাঁধ থেকে নেমে গেছে অনেকটা।শাড়ির আচঁল ঠিক নেই।নাহিদা সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে নাক সিঁটকালেন।এই মেয়ের নোংরা গায়ে তার শাড়ি?মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।রাত্রি দিকে চেয়ে সে তিরস্কার করে বললেন,
—“ছিহ্,নির্লজ্জ মেয়ে।”
রাত্রি সেই দৃষ্টি অনুসরন করেই দ্রুত কাপড় ঠি ক করলো।নিভ্রান চটজলদি এগিয়ে গেলো।হাতের কামিজটা রাত্রির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—“আপনি জামা বদলে আসুন রাত।আমি দেখছি।”
রাত্রি দাঁতে দাঁত চেপে করুন চোখে তাকালো।সেই চাহনী একঝাঁক প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে নিভ্রানের দিকে।নিভ্রান দৃষ্টি সরালো।আলতো করে রাত্রির মাথার উপর হাত রেখে বললো,
—“কিছু হয়নি।আমি সামলে নিবো।আপনি এখন কিছু বলেননা।”
নাহিদা ঘৃনাভরা চোখে চেয়ে রইলো।তার ছেলে এতোটা বদলে গেছে?আসলে ভুলটা তারই।ছেলে বিগত কয়েকটা বছর ধরে একা থাকছে অথচ সে তেমন করে খোঁজখবর রাখেনি।ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিলো সে কোন ভুল করবেনা।ছেলের চরিত্র সম্পর্কে অবগত আছেন তিনি।কিন্তু আজ যে তা ভুল প্রমানিত হয়ে গেলো।
—“মা তুমি চলো আমার সাথে।”
নাহিদা তেঁতো কন্ঠে বললেন,
—“মায়ের থেকে এখন এই রাত কাটানোর মেয়ে তোর কাছে বেশি হয়ে গেলো নিভ্রান?”
“রাত কাটানোর মেয়ে”শব্দগুলো যেনো নিমিষেই স্তব্দ করে ফেললো রাত্রিকে।কি শুনছে এসব?
মাথায় ভোঁতা যন্ত্রনা হচ্ছে।নিভ্রান জোরপূর্বক নাহিদাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রাত্রি জামাকপড় নিয়ে ঝড়ের গতিতে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
____________
ড্রইংরুম ঠান্ডা।এসির বাতাস হু হু গতিতে বাড়ছে।নাহিদা থমথমে চেহারায় বসে আছে।নিভ্রান তার পাশে বসলো কথা বলার জন্য।বললো,
—“মা শোনো,ও কোনো..”
রাত্রি বেরিয়ে এলো ঠি ক তখনই।পরণে কালরাতের কামিজ।মাথায় সুন্দর করে ওড়না টানা।ফ্রেশ হতে বোধহয় দু’মিনিটও সময় নেয়নি মেয়েটা।চোখের সাদা অংশ গাঢ় লাল।নিভ্রান তপ্ত শ্বাস ফেললো।কন্ঠে এলোমেলো ভাব,”রাত,আপনি বসুন।মা আসলে ভুল বুঝেছে..”
—“কিছু ভুল বুঝিনি আমি।এই মেয়েটা..”
রাত্রি তার মাঝেই গমগমে গলায় বলে উঠলো,
—“আমি বসতে চাচ্ছিনা।আপনি কালরাতটা থাকতে দিয়েছেন সেজন্য অনেক ধন্যবাদ।আসছি।”
নিভ্রান উঠে দাড়ালো।দ্রুত রাত্রির পথ আটকে বললো,
—“রাত দেখুন…”
রাত্রি চোখ বন্ধ করলো।মাথা ঝুঁকিয়ে ফেললো।নাহিদার সেই হীনভরা চাহনী সে নিতে পারছেনা।নিজেকে সত্যিই খুব খুব নোংরা মনে হচ্ছে।প্রচন্ড লজ্জা অপমানে নিজের ওড়নার ছেড়ে দেয়া আঁচলটা খামছে ধরে সে জোরালো গলায় বললো,
—“দয়া করে যেতে দিন।”
~চলবে~
[আজকে একটু ব্যস্ত থাকায় বড় করে লিখতে পারিনি।খুব ছোট হয়েছে জানি।তাছাড়া পর্বটাও সম্পূর্ণ হয়নি।আগামীকাল একটু তাড়াতাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ❤️]